ইসমাইল হোসেন বাবুঃ
ভালো বেতনের চাকরির প্রলোভনে আর্থিক প্রতারণা ও মানবপাচারে জড়িত থাকার অভিযোগে কুষ্টিয়ার আলোচিত রবিজুল ইসলামকে (৪২) গ্রেপ্তার করেছে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় (ইবি) থানা পুলিশ। আজ রবিবার (২০ জুলাই) সকালে অভিযান চালিয়ে তাকে গ্রেপ্তার করা হয় বলে নিশ্চিত করেছেন ইবি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মেহেদী হাসান।
রবিজুল ইসলাম কুষ্টিয়া সদর উপজেলার পাটিকাবাড়ি ইউনিয়নের মিয়াপাড়া গ্রামের আয়নাল মন্ডলের ছেলে। তিনি একে একে ৭টি বিয়ে করে আলোচনায় আসেন। তবে তার বিরুদ্ধে আরও ভয়াবহ অভিযোগ হলো– বিদেশে চাকরির আশ্বাস দিয়ে সাধারণ মানুষকে লিবিয়ায় পাচার করে সেখানে ভয়াবহ নির্যাতনের শিকার করে মুক্তিপণ আদায় করতেন।
ভুক্তভোগী কুষ্টিয়ার তানজির শেখ (২২) জানান, রবিজুলের মাধ্যমে ট্যুরিস্ট ভিসায় লিবিয়ায় গিয়ে তিনি সেখানে ৯ মাস ধরে টর্চার সেলে বন্দী ছিলেন। তাকে বিবস্ত্র করে বেধড়ক মারধরের ভিডিও পাঠিয়ে পরিবারের কাছে ৩৪ লাখ টাকা দাবি করা হয়। অমানবিক নির্যাতনের পর মুক্তিপণ দিয়ে তাকে দেশে ফিরিয়ে আনা হয়।
তানজিরের পরিবার জানায়, রবিজুল প্রথমে ১১ লাখ টাকায় তাদের সঙ্গে চুক্তি করলেও পরে আরও ২৫ লাখ টাকা দাবি করে। একপর্যায়ে রবিজুল আত্মগোপনে চলে যায়। পরবর্তীতে আরেক প্রতারক আলামিন ১৮ লাখ ৩০ হাজার টাকা নিয়ে মুক্তির আশ্বাস দেয়। শেষ পর্যন্ত পাঁচ লাখ টাকা মুক্তিপণ দিয়ে ছেলেকে ফেরত আনতে বাধ্য হন তানজিরের বাবা সিরাজ শেখ।
তানজিরের মা চম্পা খাতুন বলেন, রবিজুল আমাদের ছেলেকে মাফিয়াদের কাছে বিক্রি করেছে। ছেলের মরদেহের পাশে রাত কাটিয়েছি ভেবে বুক ফেটে যায়। ভুক্তভোগী মাহাবুল আলম জানান, রবিজুল তার ভাগিনা আসিফকে ইতালিতে পাঠানোর কথা বলে লিবিয়ায় নিয়ে গিয়ে নির্যাতন চালিয়ে মুক্তিপণ আদায় করে ফেরত পাঠায়। তার দাবি, অন্তত ৬০-৭০ জনকে একই কায়দায় প্রতারণা করেছে রবিজুল।
তানজিরের বাবা সিরাজ শেখ বলেন, ভালো চাকরির প্রলোভন দিয়ে আমার ছেলেকে লিবিয়ায় পাঠায় রবিজুল। তার সঙ্গে ১১ লাখ টাকার চুক্তি ছিল। প্রথমে ৫ লাখ টাকা দিই, এরপর আমার ছেলেকে লিবিয়ায় পাঠিয়ে দেন। এরপর বাকি ৬ লাখ টাকা পরিশোধ করি। এরপর ইতালি পাঠানোর কথা বলে আমার ছেলেকে মাফিয়া চক্রের কাছে বিক্রি করে দেন। ছেলে বন্দি থাকা অবস্থায় রবিজুল আরও ২৫ লাখ টাকা দাবি করেন। এর কিছুদিন পর রবিজুল বাড়ি থেকে পালিয়ে আত্মগোপনে যান। এরপর নলখোলা গ্রামের আলামিন নামে একজন আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ করে এবং আমার ছেলেকে ছাড়ানোর ব্যবস্থা করবে বলে প্রলোভন দেয়। তিনি ১৮ লাখ ৩০ হাজার টাকা নেন। এতে কোনো কাজই হয়নি। এরপরে মাফিয়াদের ৫ লাখ টাকা মুক্তিপণ দিয়ে আমি আমার ছেলেকে ছাড়িয়ে এনেছি। রবিজুল ও আলামিনের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চাই। একই সঙ্গে আমি আমার টাকা ফেরত পেতে চাই।
রবিজুলের বিরুদ্ধে কুষ্টিয়ার ইবি ও সদর থানায় ৫-৬টি, আলমডাঙ্গা, কুমারখালীসহ দেশের বিভিন্ন থানায় আরও একাধিক মামলা রয়েছে বলে জানান ওসি মেহেদী হাসান। তিনি বলেন, মানবপাচার ও আর্থিক প্রতারণার অভিযোগগুলো গুরুত্বসহকারে তদন্ত করা হচ্ছে। রবিজুলের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি ও অর্থ ফেরতের দাবি জানিয়েছেন অন্তত ১২টি ভুক্তভোগী পরিবার।
প্রিন্ট