দূষণ কমাতে দাশেরকান্দি পয়ঃশোধনাগার প্রকল্প হাতে নিয়েছিল ঢাকা ওয়াসা। চলতি বছরের ডিসেম্বরে প্রকল্পের কাজ শেষ হওয়ার কথা। অবশ্য এরই মধ্যে প্রকল্পের কাজ প্রায় শেষ। দৈনিক ৫০ কোটি লিটার পয়োবর্জ্যও পরিশোধন করা হচ্ছে।
ওয়াসা কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, বর্তমানে ঢাকায় প্রতিদিন ১৭৫ কোটি লিটার পয়োবর্জ্য উৎপন্ন হয়। প্রায় ২৪ হেক্টর জমির ওপর গড়ে ওঠা দাশেরকান্দি প্রকল্পের মাধ্যমে দৈনিক ৫০ কোটি লিটার পয়োবর্জ্য পরিশোধনে নগরবাসীকে সেবা দেওয়া শুরু হয়েছে। এখানে প্রতিদিন প্রায় ৫৮০ টন প্রক্রিয়াকরণ ক্ষমতাসহ একটি স্লাজ শুকানোর বার্নিং সিস্টেম আছে।
স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়াধীন ঢাকা ওয়াসার এই প্রকল্প। উন্নয়ন পরিকল্পনা প্রস্তাব (ডিপিপি) অনুযায়ী ২০১৫ সালের জুলাই মাসে শুরু হওয়া এই প্রকল্পের কাজ শেষ হওয়ার কথা ছিল ২০১৯ সালের ডিসেম্বরে। দুই দফা সংশোধনীতে প্রকল্পের মেয়াদ ২০১৫ সালের জুলাই থেকে ২০২৩ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত বাড়ানো হয়। তিন হাজার ৪৮২ কোটি ৪২ লাখ টাকার এই প্রকল্পের কাজ প্রায় শেষ। এখন বর্জ্য শোধন করা হচ্ছে নিয়মিত। প্রধানমন্ত্রীর সময় পাওয়ার পর প্রকল্প আনুষ্ঠানিকভাবে উদ্বোধন করা হবে বলে জানিয়েছেন প্রকল্প পরিচালক।
সম্প্রতি প্রকল্প এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, হাতিরঝিলের পানি শোধনের পর যাচ্ছে বালু নদে। প্রকল্পের অধীনে প্রগতি সরণিতে রামপুরা সেতুর পশ্চিম পাশে বর্জ্য তোলার একটি স্টেশন করা হয়েছে। রামপুরা থেকে আফতাবনগর হয়ে দাশেরকান্দি শোধনাগার পর্যন্ত প্রায় পাঁচ কিলোমিটার ট্রাংক স্যুয়ার লাইন হয়ে দাশেরকান্দিতে শোধনাগারে চলে যাচ্ছে ময়লা পানি।
এই প্রকল্পে চীনের এক্সপোর্ট-ইমপোর্ট ব্যাংক অর্থায়ন করেছে। বাস্তবায়ন করেছে চীনা প্রতিষ্ঠান হাইড্রো চায়না করপোরেশন।
দেখা যায়, দাশেরকান্দি পয়ঃশোধনাগার প্রকল্পের আওতায় রয়েছে রমনা থানার অন্তর্গত এলাকা, মগবাজার ওয়্যারলেস রোড, ইস্কাটন, নয়াটোলা, মৌচাক, আউটার সার্কুলার রোড, নয়াটোলা মহানগর হাউজিং এলাকা, উলন ও তৎসংলগ্ন এলাকা, কলাবাগান ও ধনমণ্ডি (পূর্বাংশ)। এ ছাড়া তেজগাঁও শিল্পাঞ্চল, তেজগাঁও এলাকা, নাখালপাড়া, নিকেতন, বাড্ডা, বনানী ও গুলশান (আংশিক) এলাকার পয়োবর্জ্য ও কিচেন ওয়াটার ওয়াসার এসএসডিএসের মাধ্যমে পাইপলাইনে হাতিরঝিল রামপুরার পাশে ওয়াসার স্যুয়ারেজ লিফটিং স্টেশনে পড়ছে।
ওয়াসার সূত্র মতে, ঢাকায় ৮৮১ কিলোমিটার পয়োনালা আছে। ঢাকার ২০ শতাংশ এলাকা পয়োনালার আওতায় এসেছে। এর বাইরে ঢাকার আর কোনো এলাকায় পয়োবর্জ্য নিষ্কাশনের ব্যবস্থা নেই। তবে পয়োনালার জন্য আলাদা প্রকল্প হাতে নেওয়া হচ্ছে।
ঢাকা ওয়াসার ভারপ্রাপ্ত ব্যবস্থাপনা পরিচালক (অপারেশন অ্যান্ড মেইনটেন্যান্স) এ কে এম শহীদ উদ্দিন গণমাধ্যমকে বলেন, দাশেরকান্দি শোধনাগার চালু হওয়ায় বালু নদের দূষণ অনেকাংশ কমে গেছে। সায়েদাবাদ ট্রিটমেন্ট প্লান্টে বিদ্যুৎ সাশ্রয় হচ্ছে।
প্রকল্প পরিচালক মো. মোহসেন আলী মিয়া বলেন, দাশেরকান্দি পয়োবর্জ্য শোধনাগার প্রকল্পে প্রতিদিন ৫০ কোটি লিটার পানি শোধন করে ৪৮ কোটি লিটার স্বচ্ছ পানি বালু নদে ফেলা হচ্ছে।