ঢাকা , সোমবার, ৩১ মার্চ ২০২৫, ১৭ চৈত্র ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম
Logo আজ ৩০শে মার্চ লালপুরের ঐতিহাসিক ‘ময়না যুদ্ধ দিবস’ Logo ফরিদপুরে সড়ক দুর্ঘটনায় একজনের মৃত্যু Logo সালথায় যুবদল নেতার উদ্যোগে ইফতার ও দোয়া মাহফিল অনুষ্ঠিত Logo মাদক সেবীদের পক্ষ নিয়ে সাংবাদিক পেটালেন যুবদল নেতা গেন্দা Logo সদরপুরে মোটরসাইকেল কিনে না দেওয়ায় আত্মহত্যা Logo দিনাজপুর গোর-এ-শহীদ ঈদগাহ ময়দানে পবিত্র ঈদ-উল ফিতর ২০২৫ নামাজের জামাত উপলক্ষে ব্রিফিং Logo ফরিদপুরের আলফাডাঙ্গায় কীটনাশক পান করে গৃহবধুর আত্মহত্যা Logo পবিত্র ঈদুল ফিতরের শুভেচ্ছা জানিয়েছেন বিএনপি নেতা শরীফ উদ্দিন Logo বোয়ালমারীতে ১০ গ্রামের বাসিন্দারা আজ উদযাপন করলেন ঈদুল ফিতর Logo মানবিক হাতিয়া সংগঠনের উদ্যোগে মাঝে ঈদ সামগ্রী বিতরণ
প্রতিনিধি নিয়োগ
দৈনিক সময়ের প্রত্যাশা পত্রিকার জন্য সারা দেশে জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে প্রতিনিধি নিয়োগ করা হচ্ছে। আপনি আপনার এলাকায় সাংবাদিকতা পেশায় আগ্রহী হলে যোগাযোগ করুন।

আফতাব উদ্দিন খানের নেতৃত্বে মুক্তিবাহিনীর সদস্য আমলাকে মুক্ত করেন

কুষ্টিয়া জেলার দৌলতপুর উপজেলার পিয়ারপুর ইউনিয়নের শেরপুর গ্রামের মঙ্গলপুর মাঠে এ যুদ্ধে নেতৃত্ব দেন তৎকালীন কুষ্টিয়া ই-৯ এর গ্রুপ কমান্ডার ও মিরপুর উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের সাবেক কমান্ডার আফতাব উদ্দিন খান ও সাবেক সহকারী কমান্ডার (দপ্তর) জলিলুর রহমান।

স্থানীয় বিভিন্ন সূত্র থেকে প্রাপ্ত তথ্যে জানা যায়, ২৫ নভেম্বর রাতে ই-৯ এর গ্রুপ কমান্ডার আফতাব উদ্দিন খান প্রায় ১শ’ জন সুসজ্জিত মুক্তিবাহিনীর একটি দল নিয়ে শেরপুরে সেনপাড়ায় অবস্থান করেন। বিষয়টি পাকবাহিনীরা আঁচ করতে পেরে মধ্যরাতে শেরপুরে আগুন ধরিয়ে দিয়ে বেপরোয়াভাবে গুলিবর্ষণ করে। মুক্তিবাহিনী পাকবাহিনীর অবস্থান জানতে পেরে মিরপুর ও দৌলতপুর থানার মধ্যবর্তী স্থান সাগরখালী নদীর তীরে তারা অবস্থান করেন। রাত ৩টায় তারা পাকবাহিনীর মোকাবেলার জন্য ক্রমান্বয়ে অগ্রসর হতে থাকেন। ২৬ নভেম্বর ভোর ৫টায় উভয় পক্ষ পরস্পর মুখোমুখি হয়ে ৬ ঘণ্টা ব্যাপী তুমুল যুদ্ধের পর পাকবাহিনী পিছু হটতে বাধ্য হয়।

এ যুদ্ধে ৬০ জন পাকসেনা নিহত এবং শেরপুর গ্রামের মৃত হাজ্বী মেহের আলীর ছেলে হাবিবুর রহমান নামে এক মুক্তিযোদ্ধা শহীদ হন। এ ছাড়াও একই গ্রামের মৃত পঁচা বিশ্বাসের ছেলে হিরা ও মৃত আবুল হোসেন বিশ্বাসের ছেলে আজিজুল নামের দুই মুক্তিযোদ্ধা গুরুতর আহত হন। কুষ্টিয়া জেলায় সংঘটিত সর্ববৃহৎ এ গেরিলা যুদ্ধে পাক হানাদার বাহিনীর পরাজয় এবং ক্ষয়-ক্ষতির কারণে দৌলতপুর ও মিরপুর থানার একটা বিরাট এলাকায় মুক্তিবাহিনীর অবস্থান আরো সুদৃঢ় হয়।

এর ফলে মুজিব বাহিনীর কমান্ডার নাজমুল করিম সুফি, গ্রুপ কমান্ডার হাবিবুর রহমান ও ইদ্রিস আলীর সহযোগিতায় পাহাড়পুর পুরাতন সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে মুক্তিবাহিনীর একটি শক্তিশালী ক্যাম্প স্থাপন করা হয়। কুষ্টিয়া সাব সেক্টর কমান্ডার তৎকালীন লে. খন্দকার নুরুন্নবী এই ক্যাম্প সরেজমিনে পরিদর্শন করে অনুমোদন প্রদান করে। শেরপুর যুদ্ধের পরে এলাকায় প্রচার ছিল সংশ্লিষ্ট এলাকায় ১ হাজার মুক্তিযোদ্ধা অবস্থান করছে।

৭ ডিসেম্বর ভোরে আফতাব উদ্দিন খানের নেতৃত্বে মুক্তিবাহিনীর সদস্য আমলাকে মুক্ত করেন এবং ওই দিন সন্ধ্যার পর আফতাব উদ্দিন খানের নেতৃত্বে মুক্তিযোদ্ধারা সুলতানপুর গ্রামের জিকে ক্যানালের পশ্চিমপাশে মৃত আবুল হোসেন জোয়ার্দ্দারের বাড়ী সংলগ্ন স্থানে অবস্থান গ্রহণ করেন।

তৎকালীন মিরপুর থানা কাউন্সিল বর্তমান উপজেলা পরিষদ ভবন এলাকায় ভারী অস্ত্রে সজ্জিত ২৫০ জন পাকবাহিনীর একটি শক্তিশালী ঘাঁটি ছিলো। পাকবাহিনীর এ ঘাঁটি হতে মুক্তিবাহিনীর অবস্থান ছিল খুব সন্নিকটে। পাকবাহিনী মুক্তিবাহিনীর অবস্থানের বিষয়টি জানতে পেরে রাতের আঁধারে পালিয়ে যেতে থাকে।

পালিয়ে যাওয়ার সময় মিরপুর থানার (পুলিশ ফাঁড়ি) সমস্ত কাগজপত্র পুড়িয়ে দেয়। যার ফলে ৮ ডিসেম্বর ভোরে ই-৯ এর গ্রুপ কমান্ডার আফতাব উদ্দিন খান ১৭০ জন মুক্তিযোদ্ধা নিয়ে মিরপুর থানায় স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশের জাতীয় পতাকা গান স্যালুটের মাধ্যমে উত্তোলন করেন। এরপর ৬৫ জন পাকহানাদার বাহিনীর দোসর ও রাজাকার পাহাড়পুর মুক্তিবাহিনীর ক্যাম্পে আত্মসমর্পন করেন। এ ভাবেই কুষ্টিয়া জেলায় বীর মুক্তিযোদ্ধাদের বিজয় সূচিত হয়।


প্রিন্ট
Tag :
এই অথরের আরো সংবাদ দেখুন

জনপ্রিয় সংবাদ

আজ ৩০শে মার্চ লালপুরের ঐতিহাসিক ‘ময়না যুদ্ধ দিবস’

error: Content is protected !!

আফতাব উদ্দিন খানের নেতৃত্বে মুক্তিবাহিনীর সদস্য আমলাকে মুক্ত করেন

আপডেট টাইম : ০৪:৪১ অপরাহ্ন, শনিবার, ২৬ নভেম্বর ২০২২
ইসমাইল হোসেন বাবু, কুষ্টিয়া জেলা প্রতিনিধিঃ :

কুষ্টিয়া জেলার দৌলতপুর উপজেলার পিয়ারপুর ইউনিয়নের শেরপুর গ্রামের মঙ্গলপুর মাঠে এ যুদ্ধে নেতৃত্ব দেন তৎকালীন কুষ্টিয়া ই-৯ এর গ্রুপ কমান্ডার ও মিরপুর উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের সাবেক কমান্ডার আফতাব উদ্দিন খান ও সাবেক সহকারী কমান্ডার (দপ্তর) জলিলুর রহমান।

স্থানীয় বিভিন্ন সূত্র থেকে প্রাপ্ত তথ্যে জানা যায়, ২৫ নভেম্বর রাতে ই-৯ এর গ্রুপ কমান্ডার আফতাব উদ্দিন খান প্রায় ১শ’ জন সুসজ্জিত মুক্তিবাহিনীর একটি দল নিয়ে শেরপুরে সেনপাড়ায় অবস্থান করেন। বিষয়টি পাকবাহিনীরা আঁচ করতে পেরে মধ্যরাতে শেরপুরে আগুন ধরিয়ে দিয়ে বেপরোয়াভাবে গুলিবর্ষণ করে। মুক্তিবাহিনী পাকবাহিনীর অবস্থান জানতে পেরে মিরপুর ও দৌলতপুর থানার মধ্যবর্তী স্থান সাগরখালী নদীর তীরে তারা অবস্থান করেন। রাত ৩টায় তারা পাকবাহিনীর মোকাবেলার জন্য ক্রমান্বয়ে অগ্রসর হতে থাকেন। ২৬ নভেম্বর ভোর ৫টায় উভয় পক্ষ পরস্পর মুখোমুখি হয়ে ৬ ঘণ্টা ব্যাপী তুমুল যুদ্ধের পর পাকবাহিনী পিছু হটতে বাধ্য হয়।

এ যুদ্ধে ৬০ জন পাকসেনা নিহত এবং শেরপুর গ্রামের মৃত হাজ্বী মেহের আলীর ছেলে হাবিবুর রহমান নামে এক মুক্তিযোদ্ধা শহীদ হন। এ ছাড়াও একই গ্রামের মৃত পঁচা বিশ্বাসের ছেলে হিরা ও মৃত আবুল হোসেন বিশ্বাসের ছেলে আজিজুল নামের দুই মুক্তিযোদ্ধা গুরুতর আহত হন। কুষ্টিয়া জেলায় সংঘটিত সর্ববৃহৎ এ গেরিলা যুদ্ধে পাক হানাদার বাহিনীর পরাজয় এবং ক্ষয়-ক্ষতির কারণে দৌলতপুর ও মিরপুর থানার একটা বিরাট এলাকায় মুক্তিবাহিনীর অবস্থান আরো সুদৃঢ় হয়।

এর ফলে মুজিব বাহিনীর কমান্ডার নাজমুল করিম সুফি, গ্রুপ কমান্ডার হাবিবুর রহমান ও ইদ্রিস আলীর সহযোগিতায় পাহাড়পুর পুরাতন সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে মুক্তিবাহিনীর একটি শক্তিশালী ক্যাম্প স্থাপন করা হয়। কুষ্টিয়া সাব সেক্টর কমান্ডার তৎকালীন লে. খন্দকার নুরুন্নবী এই ক্যাম্প সরেজমিনে পরিদর্শন করে অনুমোদন প্রদান করে। শেরপুর যুদ্ধের পরে এলাকায় প্রচার ছিল সংশ্লিষ্ট এলাকায় ১ হাজার মুক্তিযোদ্ধা অবস্থান করছে।

৭ ডিসেম্বর ভোরে আফতাব উদ্দিন খানের নেতৃত্বে মুক্তিবাহিনীর সদস্য আমলাকে মুক্ত করেন এবং ওই দিন সন্ধ্যার পর আফতাব উদ্দিন খানের নেতৃত্বে মুক্তিযোদ্ধারা সুলতানপুর গ্রামের জিকে ক্যানালের পশ্চিমপাশে মৃত আবুল হোসেন জোয়ার্দ্দারের বাড়ী সংলগ্ন স্থানে অবস্থান গ্রহণ করেন।

তৎকালীন মিরপুর থানা কাউন্সিল বর্তমান উপজেলা পরিষদ ভবন এলাকায় ভারী অস্ত্রে সজ্জিত ২৫০ জন পাকবাহিনীর একটি শক্তিশালী ঘাঁটি ছিলো। পাকবাহিনীর এ ঘাঁটি হতে মুক্তিবাহিনীর অবস্থান ছিল খুব সন্নিকটে। পাকবাহিনী মুক্তিবাহিনীর অবস্থানের বিষয়টি জানতে পেরে রাতের আঁধারে পালিয়ে যেতে থাকে।

পালিয়ে যাওয়ার সময় মিরপুর থানার (পুলিশ ফাঁড়ি) সমস্ত কাগজপত্র পুড়িয়ে দেয়। যার ফলে ৮ ডিসেম্বর ভোরে ই-৯ এর গ্রুপ কমান্ডার আফতাব উদ্দিন খান ১৭০ জন মুক্তিযোদ্ধা নিয়ে মিরপুর থানায় স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশের জাতীয় পতাকা গান স্যালুটের মাধ্যমে উত্তোলন করেন। এরপর ৬৫ জন পাকহানাদার বাহিনীর দোসর ও রাজাকার পাহাড়পুর মুক্তিবাহিনীর ক্যাম্পে আত্মসমর্পন করেন। এ ভাবেই কুষ্টিয়া জেলায় বীর মুক্তিযোদ্ধাদের বিজয় সূচিত হয়।


প্রিন্ট