গত ৩০ জানুয়ারি তৃতীয় ধাপে ঝিনাইদহের হরিণাকুন্ডু পৌরসভার নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। এতে আওয়ামী লীগের মনোনীত নৌকা প্রতীকের প্রার্থী মোঃ ফারুক হোসেন বিজয়ী হন। তিনি প্রায় আড়াই হাজার ভোটের ব্যবধানে স্বতন্ত্র প্রার্থীকে পরাজিত করে মেয়র নির্বাচিত হন।
তবে তাকে বিজয়ী করতে বেশ বেগ পেতে হয়েছে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের। নির্বাচনের শুরু থেকেই দলের একটি অংশের বিরোধীতার মুখে পড়েন তিনি। উপজেলা আওয়ামী লীগের তৎকালিন সভাপতি মশিউর রহমান জোয়ার্দার, বর্তমান পৌর মেয়র শাহিনুর রহমান রিন্টু, সহ–সভাপতি সাজেদুর রহমান টানু মল্লিক, যুগ্ম সম্পাদক অধ্যক্ষ শরিফুল ইসলাম, পৌর আওয়ামী লীগের সহ–সভাপতি মাহবুব রশিদ আজাদ, আওয়ামী লীগ নেতা রবিউল ইসলাম পিলু মল্লিক, যুবলীগের আহব্বায়ক আশরাফুল হক জুয়েল, কৃষক লীগের সভাপতি আব্দুল্লাহ আল বাকী শিলুসহ সাবেক সংসদ সদস্য শফিকুল ইসলাম অপুর অনুসারী সকল নেতাকর্মী দলীয় প্রার্থীর নৌকা প্রতীকের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়ে প্রকাশ্যেই স্বতন্ত্র প্রার্থীর জগ প্রতীককে জয়ী করতে জোরেশোরে মাঠে নামেন।
ফলে ব্যপক ক্ষোভের সৃষ্টি হয় তৃণমূলের নেতাকর্মী ও সমর্থকদের মাঝে। দাবি ওঠে নৌকাবিরোধী নেতাদের বহিস্কারের। ফলে গত ২৩ ও ২৬ জানুয়ারি দু’দফায় উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মশিউর রহমান জোয়ার্দার, বর্তমান মেয়র শাহিনুর রহমান রিন্টু, সহ–সভাপতি সাজেদুর রহমান টানু মল্লিক, যুগ্ম সম্পাদক অধ্যক্ষ শরিফুল ইসলামসহ ছয় নেতাকে সাময়িক বহিস্কার করা হয়।
এতে তৃণমূলের নেতাকর্মীরা উজ্জীবিত হলেও নৌকাকে পরাজিত করতে মরিয়া হয়ে ওঠেন বহিস্কৃত ওই নেতারা। তারা তাদের অনুসারীদের নিয়ে প্রকাশ্যে মাঠে নামেন স্বতন্ত্র প্রার্থীর জগ প্রতীকের পক্ষে। এদিকে নির্বাচনের শুরু থেকেই আওয়ামী লীগের মনোনীত নৌকা প্রতীকের প্রার্থী ফারুক হোসেনকে বিজয়ী করতে জোরেশোরে মাঠে নামেন সংসদ সদস্য তাহজীব আলম সিদ্দিকি সমি এবং জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও ঝিনাইদহ পৌরমেয়র সাইদুল করিম মিন্টুর অনুসারীর নেতাকর্মী ও সমর্থকরা।
নির্বাচন পরিচালনা কমিটির প্রধান সমন্বয়ক হিসেবে রাতদিন সভা–সমাবেশ, গনসংযোগ, পথসভা, উঠান বৈঠকসহ ভোটারদের দ্বারে দ্বারে ঘুরে বেড়ান জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সাইদুল করিম মিন্টু। আর তার সাথে জেলা আওয়ামী লীগের উপ–দপ্তর সম্পাদক ও উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান জাহাঙ্গীর হোসাইন এবং সংসদ সদস্যের প্রতিনিধি রওশন আলীও ছিলেন ভোট যুদ্ধের অগ্রভাগে।
সংসদ সদস্য এবং জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং তাদের অনুসারীদের অক্লান্ত পরিশ্রমে নির্বাচনে জয় পান আওয়ামী লীগের নৌকা প্রতীকের প্রার্থী ফারুক হোসেন। নির্বাচনে দলীয় প্রার্থীকে পরাজিত করতে বহিস্কৃত ওইসব নেতাদের ভুমিকায় ফুসে উঠছে তৃণমূলের নেতাকর্মী ও সমর্থকরা। স্থানীয় সরকার নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন বোর্ড কর্তৃক ঘোষিত দলীয় প্রার্থীর বিরুদ্ধে মানববন্ধন, উস্কানিমূলক বক্তব্যসহ প্রকাশ্যেই স্বতন্ত্র প্রার্থীর পক্ষে মাঠে নামেন তারা।
এমনকি ভোটগ্রহনের দিন শহরের চটকাবাড়িয়া কেন্দ্রে স্বতন্ত্র প্রার্থীর জগ প্রতীকের পক্ষ নিয়ে বর্তমান মেয়র শাহিনুর রহমান রিন্টু ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের ওপর আক্রমণ করে তাদেরকে মারধর করেন। এছাড়াও শহরতলির মান্দারতলা জোড়াপুকুরিয়া ভোট কেন্দ্রের ভিতরে নৌকার এজেন্টকে কুপিয়ে জখম করা হয়। আর এসবই বহিস্কৃত ওইসব নেতাদের ইন্ধনে হয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন পৌর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও ভোটযুদ্ধে জয়ী নৌকার প্রার্থী ফারুক হোসেন।
তিনি বলেন, উপজেলা আওয়ামী লীগের বহিস্কৃত সভাপতি মশিউর রহমান জোয়ার্দার, বর্তমান মেয়র শাহিনুর রহমান রিন্টুসহ সাবেক এমপি শফিকুল ইসলাম অপুর অনুসারী সকল নেতাকর্মী তাকে পরাজিত করতে স্বতন্ত্র জগ প্রতীকের প্রার্থীর পক্ষে জোরেশোরে প্রচারণা চালিয়েছেন। তারা ভোটগ্রহনের দিন বিভিন্ন কেন্দ্রে নৌকার লোকজনকে মারধর করেছেন।
দলের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়ে এমন কর্মকান্ডের তীব্র নিন্দা জানিয়ে তিনি সাময়িক বহিস্কৃত এসব নেতাদের দল থেকে স্থায়ী বহিস্কারের দাবি জানান। এ অভিযোগের বিষয়ে উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক (সাময়িক বহিস্কৃত) অধ্যক্ষ শরিফুল ইসলাম বলেন, আমি নৌকার ভোটের প্রচারণা চালোনোর সময় বহিস্কারের খবর পাওয়ার পর থেকে আর কারও পক্ষে ভোট করিনি।
এ ব্যাপারে জেলা আওয়ামী লীগের উপ–দপ্তর সম্পাদক জাহাঙ্গীর হোসাইন বলেন, প্রকাশ্যে দলীয় প্রার্থীর বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থীর পক্ষে কাজ করা এবং ছাত্রলীগের ছেলেদের মারধর ও নৌকার এজেন্টকে কুপিয়ে আহত করার ঘটনা অত্যন্ত নিন্দনীয়।
জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও ঝিনাইদহ পৌরসভার মেয়র সাইদুল করিম মিন্টু বলেন, নির্বাচনে দলীয় প্রার্থীর বিরুদ্ধে প্রকাশ্যে মানববন্ধন, উস্কানিমূলক বক্তব্য দেওয়া, নৌকার বিরুদ্ধে স্বতন্ত্র প্রার্থীকে ভোট দিতে উৎসাহিত করাসহ নানা অভিযোগ প্রমানিত হওয়ায় ওইসব নেতাদের দল থেকে সাময়িক বহিস্কার করা হয়েছে।
তারপরও তারা প্রকাশ্যেই নৌকার বিরুদ্ধে স্বতন্ত্র প্রার্থীর পক্ষে প্রচারণা চালিয়েছেন। নির্বাচনের দিন বহিস্কৃত আওয়ামী লীগ নেতা রিন্টু স্বতন্ত্র প্রার্থীর পক্ষ নিয়ে ছাত্রলীগের ছেলেদের মারধর করেছেন। উপজেলা আওয়ামী লীগের বহিস্কৃত সভাপতির ইন্ধনে ভোটকেন্দ্রের ভিতরে নৌকার এজেন্টকে কুপিয়ে আহত করা হয়েছে।
বহিস্কৃত এসব নেতাদের এমন কর্মকান্ডের কারণে তাদের স্থায়ী বহিস্কারের দাবিতে ফুসে উঠেছে তৃণমূলের নেতাকর্মীরা। তাদের এমন কর্মকান্ডের বিষয়ে কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দ অবহিত আছেন। স্থায়ীভাবে বহিস্কারের বিষয়টি প্রক্রিয়াধীন আছে বলেও জানান জেলা আওয়ামী লীগের শীর্ষ এই নেতা।
প্রিন্ট