সরকারি নিষেধাজ্ঞা থাকার পরও মধুমতী নদী থেকে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন থামছে না। মাগুরার মহম্মদপুর উপজেলার সদর ইউনিয়নের রায়পাশারচর এলাকায় নদী থেকে অবাধে বালু উত্তোলন চলছে। আশরাফুল ইসলাম নামে এক যুবলীগ কর্মী দলীয় প্রভাব খাটিয়ে ড্রেজার দিয়ে বালু তুলছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। তিনি পেশায় একজন স্বাস্থ্যকর্মী। মধুমতী নদীতে যেখানে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন করা হচ্ছে, থানা থেকে তার দূরত্ব মাত্র ৫০০ মিটারের মতো। তবুও প্রশাসন কেন ব্যবস্থা নিচ্ছে না তা নিয়ে এলাকায় সমালোচনা রয়েছে।
অবাধে বালু তোলায় হুমকির মুখে পড়েছে শেখ হাসিনা সেতু, মহম্মদপুর থানাসহ নদী তীরবর্তী রায়পাশা, জাঙ্গালিয়া ও গোপালনগর গ্রামের কয়েকশ বাড়িঘর, দুটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, মাদ্রাসা, গোরস্তান, শ্মশানঘাট, ফসলি জমি ও গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা। যা বর্ষা মৌসুমে নদীতে বিলীন হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।অভিযোগ রয়েছে, সরকারি চাকরি করেও এলাকায় বিভিন্ন সময়ে যুবলীগ কর্মী আশরাফুল দলীয় প্রভাব খাটিয়ে বালু উত্তোলন করছেন। বালু ব্যবসায় তাকে সহায়তা করেন উপজেলা আওয়ামী লীগের একজন নেতা।
বালু উত্তোলনের বিষয়ে তার বিরুদ্ধে জেলা প্রশাসক ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা দপ্তরে অভিযোগ দিয়েছে গ্রামবাসী। অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে ২৭ ডিসেম্বর ব্যবস্থা নিতে সহকারী কমিশনারকে নির্দেশ দেন নির্বাহী কর্মকর্তা রামানন্দ পাল। পরে ২৮ ডিসেম্বর ঘটনাস্থলে গিয়ে ড্রেজার ও উত্তোলিত বালু জব্দ করেন এবং মেশিনের সঙ্গে সংযুক্ত পাইপ ভেঙে ফেলেন সহকারী কমিশনার (ভূমি) হরে কৃষ্ণ অধিকারী। এরপর আবারও নতুন করে বালু উত্তোলন চলছে সেখানে।
পদ্মার শাখা নদী মধুমতী। নদীসংলগ্ন মহম্মদপুর থানা এবং নদীর বুকে শতকোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত হয়েছে বিশাল সেতু। যার নামকরণ করা হয়েছে শেখ হাসিনা সেতু। থানা এবং শেখ হাসিনা সেতু রক্ষার্থে নদীর এক পাশে দুই কিলোমিটার এলাকাজুড়ে কয়েকশ কোটি টাকা ব্যয় করে নদীভাঙন রোধে পানি উন্নয়ন বোর্ড বাঁধ নির্মাণ করেছে।
অন্যদিকে প্রভাবশালী মহল নদীর মাঝখানে ড্রেজার বসিয়ে প্রতিদিন লাখ লাখ টাকার বালু উত্তোলন করে বিক্রি করছে। এতে হুমকির মুখে পড়েছে শেখ হাসিনা সেতু, থানাসহ নদীতীরবর্তী রায়পাশা, জাঙ্গালিয়া ও গোপালনগর গ্রামের কয়েকশ বাড়িঘর, দুটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, মাদ্রাসা, গোরস্তান, শ্মশানঘাট, ফসলি জমি ও গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা। যা বর্ষা মৌসুমে নদীতে বিলীন হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। বালু উত্তোলনকারীরা স্থানীয় প্রভাবশালী হওয়ায় ভয়ে কেউ কিছু বলতে পারে না।
সরেজমিন দেখা যায়, নদীর মাঝখানে আবার ড্রেজার বসানো রয়েছে। সেখান থেকে পাইপ লাগিয়ে বালু জমানো হচ্ছে রাস্তাসংলগ্ন জমিতে। এখান থেকে প্রতিদিন ট্রাক ও ট্রলিতে বিক্রি করা হচ্ছে বালু। এ বিষয়ে অনেকে ক্ষোভের সঙ্গে জানান, থানার পাশে নদীতে কীভাবে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন হয় তা নিয়ে দুশ্চিন্তায় রয়েছেন তারা।
এলাকার গোলাম রসুল বিশ্বাস বলেন, নদীপাড়ে আমাদের বসবাস। আমাদের জমি সব নদীতে বিলীন হয়ে গেছে। এখন শুধু বসবাসের জায়গাটুকু আছে। ড্রেজার দিয়ে প্রতিদিন যেভাবে বালু ওঠানো হচ্ছে, তাতে মনে হয় আগামী বছর আমাদের ঘরবাড়ি নদীতে ভেঙে যাবে।
বালু উত্তোলনকারী আশরাফুল ইসলাম বলেন, আমি বালুর ব্যবসা করতে গিয়ে অনেক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছি। এই চালান শেষ করে আর নদী থেকে বালু ওঠাব না।
সহকারী কমিশনার (ভূমি) হরে কৃষ্ণ অধিকারী বলেন, ডিসেম্বরে ঘটনাস্থলে গিয়ে ড্রেজার, বালু ও অন্যান্য সরঞ্জাম জব্দ করে থানায় দিয়েছিলাম। সেটা থানা থেকে কীভাবে ফেরত পেল আমার জানা নেই।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রামানন্দ পাল বলেন, অভিযোগ পেয়েছি। ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে ব্যবস্থা নিতে সহকারী কমিশনারকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
মাগুরা জেলা প্রশাসক আশরাফুল আলম বলেন, অবৈধ ড্রেজার উচ্ছেদ অভিযান অব্যাহত রয়েছে। শিগগিরই এসব ড্রেজার স্থায়ীভাবে উচ্ছেদ করা হবে।
প্রিন্ট