মাগুরা শ্রীপুর উপজেলার ৩ নং শ্রীকোল ইউনিয়নের ৭ নং (ইউপি) মেম্বার এক সদস্যসহ তিনজনকে দেশীয় অস্ত্র দিয়ে কুপিয়ে মারাত্মক ভাবে জখম করে আহত করা হয়েছে।
গত মঙ্গলবার ২৩ আগস্ট রাত অনুমান ৯.১৫ টার সময় শ্রীপুর উপজেলার শ্রীকোল ইউনিয়নের ছোনগাছা-দোসতিনা এলাকায় এই মর্মান্তিক ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় গত ইউপি নির্বাচনে আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী হিসেবে জয় পাওয়া কুতুবউদ্দিন মিয়া চেয়ারম্যানের গ্রেপ্তারের দাবিতে মাগুরা শহরের ভায়না মোড় এলাকায় সড়ক অবরোধ করেন ছাত্রলীগ, যুবলীগসহ অঙ্গসংগঠনের নেতা-কর্মীরা।
আহত ইউপি মেম্বার সদস্যের নাম চাঁদ আলী সরদার (৩৮), পিং- মৃত বক্কার সরদার, গ্রাম- ছোনগাছা (পূর্বপাড়া)। তিনি শ্রীকোল ইউনিয়নের ৭ নম্বর ওয়ার্ডের মেম্বার সদস্য ও শ্রীকোল ইউনিয়ন যুবলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক। হামলায় তাঁর আপন দুই ভাই মাসুদুল সরদার (৪৫) ও ওবায়দুল সরদার (৫০) মারাত্মক ভাবে জখম প্রাপ্ত হয়ে আহত হয়েছেন। চাঁদ আলী সরদার ও ওবায়দুল সরদারকে রাতেই ঢাকায় পাঠানো হয়েছে। আর মাসুদুল সরদার মাগুরা ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট মেডিকেল কলেজ সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।
আরও পড়ুনঃ মাগুরা জেলা কারাগারের জেলার নূর মোহাম্মদ মৃধা অন্যন্য উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত চিত্র ফুটিয়ে তুলেছেন
সরেজমিনে বৃহস্পতিবার ২৫ আগস্ট আহত ব্যক্তিদের ভাই আরজু সরদার বলেন, গত ২৩ আগস্ট মঙ্গলবার বিকেলে মাগুরা জেলা আওয়ামী লীগের কার্যালয়ে ১৫ আগস্ট উপলক্ষে শোকসভা আয়োজনের বৈঠক ছিল। ২৭ আগস্ট ওই কর্মসূচি পালন করা হবে। এ উপলক্ষে শ্রীকোল ইউনিয়নের আওয়ামী লীগ ও অঙ্গসংগঠনের নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করেন চাঁদ আলী সরদার ও তাঁর ভাই মাসুদুল সরদার। বৈঠক শেষে বাড়িতে ফেরার পথে রাত ৯.১৫ টার সময় ছোনগাছা-দোসতিনা গ্রামের মাঝামাঝি ইসলাম খার মুদি দোকানের পাশেই অবস্থিত কালভার্ট ব্রীজের সাথেই দূর্বৃত্তরা পূর্ব থেকে ওৎপেতে থেকে তাঁদের ওপর হামলা করে। খবর পেয়ে আমার ভাই ওবায়দুল সরদার খোঁজ নিতে গেলে তাকেও কুপিয়ে জখম করা হয়। হামলার এ ঘটনায় বাচ্চু সরদার বাদী হয়ে আসামীদের গ্রেফতারের জন্য শ্রীপুর থানায় মামলা দায়ের করছেন।
মামলায় হুকুমের আসামি শ্রীকোল ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান কুতুবউদ্দিন মিয়া (৪৮), রাজন উভয় পিং- আকবর হোসেন মিয়া ও রানা। কুপানোর সময় উপস্থিত ছিলো, ছোনগাছা গ্রামের ইসলাম খা (৫০) পিং- আবুল খা, রুহুল মন্ডল (৬০) পিং- তাজো মন্ডল, রইস শেখ (৪৫) পিং- রুস্তম আলী, মন্নু শেখ (৪০) পিং- পাঞ্জাব আলী শেখ, কাবিল শেখ (৩৫) পিং- রুস্তম আলী শেখ, মানিক মন্ডল (৫০) পিং- আনছো মন্ডল, মোস্তফা মন্ডল (৩০) পিং- মানিক মন্ডল, শের আলী (৩৫) পিং- তাইজুদ্দীন মন্ডল, বিপুল শেখ (৩০) পিং- পাঞ্জাব আলী শেখ, নুর আলী মন্ডল (৪০) পিং- তাইজুদ্দীন মন্ডল, শহীদ শেখ (৪০) পিং- রুস্তম আলী শেখ, রাব্বি শেখ (২৫) পিং- শহীদ শেখ, হিরন মন্ডল (৩৫) পিং- জিরা মন্ডল, দোসতিনা গ্রামের কদর মোল্লা (৪৫) পিং- কুদ্দুস মোল্লা, হাবিব খন্দকার (৫০) পিং- এরশাদ আলী খন্দকার, জাফর খন্দকার (৫০) পিং- নওশের খন্দকার সহ আরও বেশকিছু অজ্ঞাত লোকজন। মেম্বার ও তার ভাইদেরকে চাপাতি, চাইনিজ কুরাল, রামদা, ছ্যানদা ও শড়কি দিয়ে কুপিয়ে জখম করেছে, ইসলাম খা, রইস, মন্নু, কাবিল, রুহুল, শের আলী, হাবিব, হিরন ও আসলাম। আরেকটি গোপন সূত্র থেকে জানা যায়, অজ্ঞাত লোকজনের মধ্যে ছোনগাছা গ্রামের চান আলী, টুপিপাড়া গ্রামের লাল্টু, আক্তার খা, রিপন নাটা, পূর্ব শ্রীকোল গ্রামের তুজাম, খামার পাড়া গ্রামের শ্যাম ফকির ও খামারপাড়া শিশু মার্ডার সহ জোড়া দাইর পোলের জোড়া খুনের এর মূল আসামি জুহুর ফকির ঘটনা স্থানে উপস্থিত ছিলো।
হাসপাতালের কর্তব্যরত চিকিৎসকেরা জানান, চাঁদ আলী ও ওবায়দুলের শরীরের বেশ কিছু জায়গায় ধারালো অস্ত্রের আঘাত আছে। এর মধ্যে ওবায়দুলের একটি পায়ের গোড়ালি প্রায় বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে। প্রাথমিক চিকিৎসা শেষে রাতেই তাঁদের দুজনকে ঢাকায় পাঠানো হয়েছে। খবর পেয়ে রাতেই আহত ব্যক্তিদের দেখতে হাসপাতালে যান মাগুরা-১ আসনের মাননীয় সংসদ সদস্য সাইফুজ্জামান শিখর সহ দলীয় নেতা-কর্মীরা। রাত ১১টার দিকে মাগুরা ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট হাসপাতালের সামনে থেকে ছাত্রলীগ ও যুবলীগের নেতৃত্বে একটি প্রতিবাদ মিছিল বের হয়। মিছিলটি ভায়না মোড় এলাকায় মহাসড়ক অবরোধ করে। এতে যশোর, ঝিনাইদহ ও ঢাকামুখী যাত্রী ও পণ্যবাহী গাড়ি আটকা পড়ে। মহাসড়কে আগুন জ্বালিয়ে সংক্ষিপ্ত সমাবেশ করেন কয়েক শ নেতা-কর্মী। সমাবেশে বক্তারা এ হামলার জন্য শ্রীকোল ইউপির চেয়ারম্যান ও শ্রীপুর উপজেলা যুবলীগের সাবেক সভাপতি কুতুবুল্লাহ হোসেন মিয়াকে দায়ী করেন।
আহত ওবায়দুল সরদারের ছেলে শাহাবুল সরদার বলেন, পূর্বশত্রুতার জেরে চেয়ারম্যান কুতুবুল্লাহর লোকজন তাঁর বাবা ও চাচাদের ওপর হামলা করেছেন। অভিযোগের বিষয়ে শ্রীকোল ইউপির চেয়ারম্যান কুতুবুল্লাহ হোসেন মিয়া শুক্রবার দুপুরে মুঠোফোনে বলেন, মামলায় আমার নাম কিভাবে আসলো এটা আমার বলার ক্ষমতা নেই। এখন এটা শুনতে হবে আমাদের সংসদ সদস্যর কাছে। মারামারির এই বিষয়ে আমি কোন অবগত ছিলাম না, মারামারির সময় আমি রাত ১০ টার সময় শ্রীকোল ইউনিয়ন পরিষদের অফিসে ছিলাম। আমার মোবাইল ফোনে ফোন আসে চাদ আলী সহ তার দুই ভাই কে কুপানো হয়েছে তখন আমি দ্রুত শ্রীপুর থানার ওসি সাহেবকে জানায়।
আরও পড়ুনঃ মাগুরা শ্রীপুরের আমতৈল মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে প্রধান অতিথি এমপি সাইফুজ্জামান শিখর
এ বিষয়ে সাইফুজ্জামান শিখর বলেন, ‘আমাদের কর্মী গুরুতর আহত হয়েছে। তাকে ঢাকায় পাঠানো হয়েছে। মাগুরার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. কলিমুল্লাহ বলেন, ‘তাৎক্ষণিকভাবে আমরা জানতে পেরেছি, পূর্বশত্রুতার জেরে ওই হামলা হয়েছে। ওই ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে শহরে কিছুক্ষণ মহাসড়ক অবরোধ করে বিক্ষুব্ধ লোকজন, পরে অবরোধ তুলে নেয়। এ বিষয়ে শ্রীপুর থানার ওসি প্রিটন সরকার বলেন, মেম্বার চাঁদ আলীর মামলার আসামিদের ধরার চেষ্টা চলছে এবং কেসের আইও সঠিক ভাবে তদন্ত করিতেছে।
প্রিন্ট