ঢাকা , সোমবার, ২১ জুলাই ২০২৫, ৬ শ্রাবণ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম
Logo মহম্মদপুরে বিএনপির পথসভা ও মিছিল অনুষ্ঠিত Logo চাঁপাইনবাবগঞ্জে সাপের কামড়ে কৃষকের মৃত্যু Logo পাংশায় পুলিশের অভিযানে ৪ মামলার আসামী সাইদুল অস্ত্র-গুলিসহ গ্রেফতার Logo রাজবাড়ী সদরে জন্ম মৃত্যু নিবন্ধন, বাল্যবিবাহ ও মাদক বিষয়ক অবহিতকরণ সভা অনুষ্ঠিত Logo ক্যান্সার আক্রান্ত সুমনকে বাঁচাতে পরিবারের আকুতি Logo ভূরুঙ্গামারীতে নবাগত ইউএনও’র সাথে সাংবাদিকদের মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত Logo সাত বিয়ে করা রবিজুল মানবপাচার মামলায় গ্রেপ্তার Logo কুষ্টিয়ার ৭ বিয়ে করা প্রতারক রবিজুল গ্রেপ্তার: লিবিয়ায় মানবপাচার ও কোটি টাকার প্রতারণা Logo চাঁপাইনবাবগঞ্জ শিবগঞ্জ সীমান্তে ভারতে গিয়ে যুবক নিখোঁজ Logo রাজশাহীতে মাদকের করাল ছায়া: তরুণ সমাজ বিপথে, উদ্বিগ্ন জনপদ
প্রতিনিধি নিয়োগ
দৈনিক সময়ের প্রত্যাশা পত্রিকার জন্য সারা দেশে জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে প্রতিনিধি নিয়োগ করা হচ্ছে। আপনি আপনার এলাকায় সাংবাদিকতা পেশায় আগ্রহী হলে যোগাযোগ করুন।

রিমান্ডে নিতে আদালতে আবেদন

সাত বিয়ে করা রবিজুল মানবপাচার মামলায় গ্রেপ্তার

ইসমাইল হােসেন বাবুঃ

ভালো বেতনে আরামের চাকরির প্রলোভন দেখিয়ে আর্থিক প্রতারণা ও মানবপাচারের অভিযোগে কুষ্টিয়ার ৭ বিয়ে করা আলোচিত রবিজুল ইসলাম (৪২) গ্রেফতার করা হয়েছে।

 

তিনি সাতটি বিয়ে করে আলোচিত হন। কুষ্টিয়া সদর উপজেলার ইবি থানার পাটিকাবাড়ি ইউনিয়নের পাটিকাবাড়ি গ্রামের রবিজুল ইসলাম (৪২)। গতকাল রবিবার তাকে আর্থিক প্রতারণা ও মানবপাচারে জড়িত থাকার অভিযোগে ইবি থানার পুলিশ তাকে গ্রেপ্তার করেছে । তার বিরুদ্ধে মানবপাচার ও আর্থিক প্রতারণার বেশ কয়েকটি মামলা রয়েছে বলে পুলিশ জানায়। গ্রেপ্তারকৃত রবিজুল ১৫ বছর লিবিয়ায় ছিলেন।

 

রবিবার (২০ জুলাই) সকালে কুষ্টিয়ার খোকসা উপজেলা থেকে তাকে গ্রেপ্তার করে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় (ইবি) থানা-পুলিশ। ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মেহেদী হাসান এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

 

গ্রেপ্তারকৃত রবিজুল কুষ্টিয়া সদর উপজেলার ইবি থানার পাটিকাবাড়ি ইউনিয়নের পাটিকাবাড়ি গ্রামের মিয়াপাড়া এলাকার আয়নাল মণ্ডলের ছেলে। অভিযোগ উঠেছে, তিনি মানবপাচারচক্রের সদস্য। সে আন্তর্জাতিক মানবপাচার চক্রের সাথে জড়িত।

 

কুষ্টিয়া, চুয়াডাঙ্গা, ঝিনাইদহসহ দেশের বিভিন্ন জেলার বেশ কয়েকজন ভুক্তভোগীর অভিযোগ ও মামলার পরিপ্রেক্ষিতে তাঁকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে বলে জানিয়েছে পুলিশ।

 

পুলিশ জানায়, রবিজুল মানবপাচার চক্রের সক্রিয় সদস্য। কুষ্টিয়া, চুয়াডাঙ্গা, ঝিনাইদহ, রাজবাড়ীসহ দেশের বিভিন্ন জায়গায় সাধারণ মানুষকে লিবিয়ায় ভালো বেতনে চাকরির প্রলোভন দেখিয়ে লিবিয়ায় পাঠিয়ে তাদের জিম্মি করে মুক্তিপণ আদায় করার অসংখ্য অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে। বিদেশে পাঠানোর নামে প্রতারণার শিকার বেশ কয়েকজন ভুক্তভোগীর অভিযোগ ও মামলার পরিপ্রেক্ষিতে তাকে গ্রেফতার করা হয়েছে।

 

রবিজুলের এমন প্রলোভনে পড়ে লিবিয়ায় যান কুষ্টিয়ার তানজির শেখ (২২)। এরপর লিবিয়ার মানবপাচার চক্রের কাছে তাকে বিক্রি করে দেন রবিজুল। লিবিয়ায় মানবপাচার চক্রের টর্চার সেলে দীর্ঘ ৯ মাস বন্দি করে রাখা হয় তাকে। ৯ মাস সেখানে অমানবিক নির্যাতন করা হয়। ঠিকমতো খেতে দেওয়া হতো না। বেঁধে রাখা হতো। তিনবেলা লোহার রড ও লাঠি দিয়ে বেধড়ক পেটানো হতো। বিবস্ত্র করে বেধড়ক মারধরের ভিডিও পরিবারকে পাঠিয়ে মুক্তিপণ দাবি করা হতো। অবশেষে মুক্তিপণ নিয়ে তানজিরকে ছেড়ে দেয় পাচারকারী চক্র। ৯ জুলাই দেশে ফেরেন তানজির শেখ।

 

তানজির কুষ্টিয়া পৌরসভার ২০ নম্বর ওয়ার্ডের জগতী স্টেশন বাজার এলাকার সিরাজ শেখের ছেলে। আড়াই বছর আগে রবিজুল দালালের মাধ্যমে ট্যুরিস্ট ভিসায় লিবিয়ায় গিয়েছিলেন তিনি। এরপর ভুক্তভোগী পরিবারের কাছ থেকে দফায় দফায় ৩৪ লাখ টাকা নিয়েছেন রবিজুল। সেসব টাকা ফেরত ও রবিজুলের শাস্তির দাবি জানিয়েছে ভুক্তভোগী পরিবার।

 

লিবিয়ায় দীর্ঘ ৯ মাস বন্দিশালায় নির্যাতনের শিকার তানজির শেখ বলেন, ‌রবিজুল লিবিয়ায় দীর্ঘ ১২ বছর ছিলেন। মাফিয়া চক্রের সঙ্গে রবিজুল দালালের সুসম্পর্ক। তিনিও ওই চক্রের সদস্য। আমার বাবা রবিজুলের মাধ্যমে আমাকে লিবিয়ায় পাঠিয়েছিলেন। সেখানে যাওয়ার পর মাফিয়া চক্রের কাছে বিক্রি করে দেন রবিজুল। মুক্তিপণের দাবিতে তারা আমাকে ৯ মাস বন্দি করে রাখে। সারাদিন বেঁধে রাখতো। খাবার দিতো না, তিনবেলা শুধু মারতো। মারতে মারতে শরীর ফাটিয়ে ফেলতো। ক্ষত জায়গায় ইনফেকশন হয়ে পচে যেত। কোনো ওষুধ দিতো না। ভাত দিতো না।

 

তিনি আরও বলেন, সারাদিনে পাঁচ টাকা দামের একটা পাউরুটি ও অল্প একটু লবণাক্ত পানি খেতে দিতো। লবণাক্ত পানি খাওয়ার কারণে শরীর আরও বেশি পচে যেত। না খাওয়ার কারণে শরীর একদম শুকিয়ে যায়। সব রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা হারিয়ে যায়। এজন্য মার খেতে খেতে অনেকে মরে যায়। মনে হতো আমিও মারা যাবো।

 

তানজির শেখ বলেন, রবিজুল দালালের খপ্পরে পড়ে আমি মরতে বসেছিলাম। রবিজুল আমাদের কাছ থেকে ৩৪ লাখ টাকা নিয়েছেন। আমি টাকা ফেরত চাই। একইসঙ্গে তার দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চাই।

 

উল্লেখ্য, ২০২৩ সালে সাত বিয়ে করা নিয়ে দেশজুড়ে আলোচনায় আসে রবিজুল ইসলামের নাম। সে সময় স্ত্রীরা মিলেমিশে থাকতেন একই বাড়িতে। মায়ের মানত পূরণ করতেই সাতটি বিয়ে করেন বলে জানান তিনি।

 

রবিজুল ইসলাম ১৫ বছর লিবিয়াতে ছিলেন। লিবিয়াতে থাকার সময় ১৯৯৯ সালে প্রথম বিয়ে করেন। এরপর একে একে করেন আরও ছয় বিয়ে।

 

ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় থানার ওসি জানান, রবিজুলকে রিমান্ডে নিতে আদালতে আবেদন করা হবে। চক্রের অন্য সদস্যদের বিষয়ে তাঁকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে। পুরো চক্রকে শনাক্ত করতে পুলিশ কাজ করছে।


প্রিন্ট
Tag :
এই অথরের আরো সংবাদ দেখুন

জনপ্রিয় সংবাদ

মহম্মদপুরে বিএনপির পথসভা ও মিছিল অনুষ্ঠিত

error: Content is protected !!

রিমান্ডে নিতে আদালতে আবেদন

সাত বিয়ে করা রবিজুল মানবপাচার মামলায় গ্রেপ্তার

আপডেট টাইম : ২২ ঘন্টা আগে
ইসমাইল হোসেন বাবু, সিনিয়র ষ্টাফ রিপোর্টার :

ইসমাইল হােসেন বাবুঃ

ভালো বেতনে আরামের চাকরির প্রলোভন দেখিয়ে আর্থিক প্রতারণা ও মানবপাচারের অভিযোগে কুষ্টিয়ার ৭ বিয়ে করা আলোচিত রবিজুল ইসলাম (৪২) গ্রেফতার করা হয়েছে।

 

তিনি সাতটি বিয়ে করে আলোচিত হন। কুষ্টিয়া সদর উপজেলার ইবি থানার পাটিকাবাড়ি ইউনিয়নের পাটিকাবাড়ি গ্রামের রবিজুল ইসলাম (৪২)। গতকাল রবিবার তাকে আর্থিক প্রতারণা ও মানবপাচারে জড়িত থাকার অভিযোগে ইবি থানার পুলিশ তাকে গ্রেপ্তার করেছে । তার বিরুদ্ধে মানবপাচার ও আর্থিক প্রতারণার বেশ কয়েকটি মামলা রয়েছে বলে পুলিশ জানায়। গ্রেপ্তারকৃত রবিজুল ১৫ বছর লিবিয়ায় ছিলেন।

 

রবিবার (২০ জুলাই) সকালে কুষ্টিয়ার খোকসা উপজেলা থেকে তাকে গ্রেপ্তার করে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় (ইবি) থানা-পুলিশ। ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মেহেদী হাসান এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

 

গ্রেপ্তারকৃত রবিজুল কুষ্টিয়া সদর উপজেলার ইবি থানার পাটিকাবাড়ি ইউনিয়নের পাটিকাবাড়ি গ্রামের মিয়াপাড়া এলাকার আয়নাল মণ্ডলের ছেলে। অভিযোগ উঠেছে, তিনি মানবপাচারচক্রের সদস্য। সে আন্তর্জাতিক মানবপাচার চক্রের সাথে জড়িত।

 

কুষ্টিয়া, চুয়াডাঙ্গা, ঝিনাইদহসহ দেশের বিভিন্ন জেলার বেশ কয়েকজন ভুক্তভোগীর অভিযোগ ও মামলার পরিপ্রেক্ষিতে তাঁকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে বলে জানিয়েছে পুলিশ।

 

পুলিশ জানায়, রবিজুল মানবপাচার চক্রের সক্রিয় সদস্য। কুষ্টিয়া, চুয়াডাঙ্গা, ঝিনাইদহ, রাজবাড়ীসহ দেশের বিভিন্ন জায়গায় সাধারণ মানুষকে লিবিয়ায় ভালো বেতনে চাকরির প্রলোভন দেখিয়ে লিবিয়ায় পাঠিয়ে তাদের জিম্মি করে মুক্তিপণ আদায় করার অসংখ্য অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে। বিদেশে পাঠানোর নামে প্রতারণার শিকার বেশ কয়েকজন ভুক্তভোগীর অভিযোগ ও মামলার পরিপ্রেক্ষিতে তাকে গ্রেফতার করা হয়েছে।

 

রবিজুলের এমন প্রলোভনে পড়ে লিবিয়ায় যান কুষ্টিয়ার তানজির শেখ (২২)। এরপর লিবিয়ার মানবপাচার চক্রের কাছে তাকে বিক্রি করে দেন রবিজুল। লিবিয়ায় মানবপাচার চক্রের টর্চার সেলে দীর্ঘ ৯ মাস বন্দি করে রাখা হয় তাকে। ৯ মাস সেখানে অমানবিক নির্যাতন করা হয়। ঠিকমতো খেতে দেওয়া হতো না। বেঁধে রাখা হতো। তিনবেলা লোহার রড ও লাঠি দিয়ে বেধড়ক পেটানো হতো। বিবস্ত্র করে বেধড়ক মারধরের ভিডিও পরিবারকে পাঠিয়ে মুক্তিপণ দাবি করা হতো। অবশেষে মুক্তিপণ নিয়ে তানজিরকে ছেড়ে দেয় পাচারকারী চক্র। ৯ জুলাই দেশে ফেরেন তানজির শেখ।

 

তানজির কুষ্টিয়া পৌরসভার ২০ নম্বর ওয়ার্ডের জগতী স্টেশন বাজার এলাকার সিরাজ শেখের ছেলে। আড়াই বছর আগে রবিজুল দালালের মাধ্যমে ট্যুরিস্ট ভিসায় লিবিয়ায় গিয়েছিলেন তিনি। এরপর ভুক্তভোগী পরিবারের কাছ থেকে দফায় দফায় ৩৪ লাখ টাকা নিয়েছেন রবিজুল। সেসব টাকা ফেরত ও রবিজুলের শাস্তির দাবি জানিয়েছে ভুক্তভোগী পরিবার।

 

লিবিয়ায় দীর্ঘ ৯ মাস বন্দিশালায় নির্যাতনের শিকার তানজির শেখ বলেন, ‌রবিজুল লিবিয়ায় দীর্ঘ ১২ বছর ছিলেন। মাফিয়া চক্রের সঙ্গে রবিজুল দালালের সুসম্পর্ক। তিনিও ওই চক্রের সদস্য। আমার বাবা রবিজুলের মাধ্যমে আমাকে লিবিয়ায় পাঠিয়েছিলেন। সেখানে যাওয়ার পর মাফিয়া চক্রের কাছে বিক্রি করে দেন রবিজুল। মুক্তিপণের দাবিতে তারা আমাকে ৯ মাস বন্দি করে রাখে। সারাদিন বেঁধে রাখতো। খাবার দিতো না, তিনবেলা শুধু মারতো। মারতে মারতে শরীর ফাটিয়ে ফেলতো। ক্ষত জায়গায় ইনফেকশন হয়ে পচে যেত। কোনো ওষুধ দিতো না। ভাত দিতো না।

 

তিনি আরও বলেন, সারাদিনে পাঁচ টাকা দামের একটা পাউরুটি ও অল্প একটু লবণাক্ত পানি খেতে দিতো। লবণাক্ত পানি খাওয়ার কারণে শরীর আরও বেশি পচে যেত। না খাওয়ার কারণে শরীর একদম শুকিয়ে যায়। সব রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা হারিয়ে যায়। এজন্য মার খেতে খেতে অনেকে মরে যায়। মনে হতো আমিও মারা যাবো।

 

তানজির শেখ বলেন, রবিজুল দালালের খপ্পরে পড়ে আমি মরতে বসেছিলাম। রবিজুল আমাদের কাছ থেকে ৩৪ লাখ টাকা নিয়েছেন। আমি টাকা ফেরত চাই। একইসঙ্গে তার দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চাই।

 

উল্লেখ্য, ২০২৩ সালে সাত বিয়ে করা নিয়ে দেশজুড়ে আলোচনায় আসে রবিজুল ইসলামের নাম। সে সময় স্ত্রীরা মিলেমিশে থাকতেন একই বাড়িতে। মায়ের মানত পূরণ করতেই সাতটি বিয়ে করেন বলে জানান তিনি।

 

রবিজুল ইসলাম ১৫ বছর লিবিয়াতে ছিলেন। লিবিয়াতে থাকার সময় ১৯৯৯ সালে প্রথম বিয়ে করেন। এরপর একে একে করেন আরও ছয় বিয়ে।

 

ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় থানার ওসি জানান, রবিজুলকে রিমান্ডে নিতে আদালতে আবেদন করা হবে। চক্রের অন্য সদস্যদের বিষয়ে তাঁকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে। পুরো চক্রকে শনাক্ত করতে পুলিশ কাজ করছে।


প্রিন্ট