ফরিদপুরের বোয়ালমারীতে ব্যক্তি মালিকানা তিন ফসলী জমিতে অবৈধভাখাল খননের অভিযোগ উঠেছে বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন করপোরেশন (বিএডিসি) উপ প্রকৌশলীর বিরুদ্ধে।
উপজেলার সাতৈর ইউনিয়নের ধরনী ধরদী গ্রামের মো. ইউনুচ শেখের রামদিয়ার ২৯ নং মৌজার রামদিয়ার মাঠে বাউন গারের বিলে ৬৮ শতাংশ জমি রয়েছে। সে মালিকানা তিন ফসলী জমিতে অবৈধভাবে জোরপূর্বক খাল খনন করছে বিএডিসির উপ প্রকৌশলী কর্মকর্তা। সরেজমিনে গিয়ে জানা যায়, ধরনী ধরদী গ্রামের মো. ইয়ার উদ্দিনের ছেলে ইউনুচ শেখ ওই জমিতে পাট লাগিয়েছে। জমির মালিকদের না জানিয়ে জোরপূর্বক পাটের জমিকে নষ্ট করে এ খাল খননের কাজ করছে।
জমির মালিক ইউনুচ শেখ বলেন, আমার নিজস্ব মালিকানা জমিতে বিএডিসি প্রকল্পের কর্মকর্তা তার ইচ্ছানুযায়ী খাল খনন করছে। তাদের এ খাল খনন করতে আমাদের লোকজন দিয়ে বাধাঁ দেয়া হয়। পরে তারা স্থানীয় প্রভাবশালী লোকজন এনে ভয় ভিতি দেখিয়ে আবারও আমার ব্যক্তিগত তিন ফসলী জমিতে ভেকু দিয়ে খননের চেষ্টা চালায়। পাট ক্ষেতে বেকু গাড়ী ঢুকিয়ে অপরিপক্ক পাটকে ইচ্ছানুযায়ী নষ্ট করা হয়েছে। খাল খনন করতে ২০ শতাংশ ফসলী জমি নষ্ট করা হচ্ছে। আমরা কৃষি কাজে নির্ভরশীল কৃষি পরিবারের লোক। এভাবে ব্যক্তি মালিকানাধিন জমি কেটে খাল খনন করা মানে আমাদের মত কৃষকের পেটে লাথি মারা। এ নিয়ে সরকারি বিভিন্ন দপ্তরে লিখিত অভিযোগ দেয়ার পরও কোন সুরহা পাওয়া যাচ্ছে না।
আরও পড়ুনঃ বোয়ালমারীতে লোকনাথ ব্রহ্মচারীর ১৩২তম তিরোধান দিবস পালিত
জমির মালিকের বড় ভাই কৃষক বাকিয়ার রহমান ও স্থানীয় কৃষক সুবহান শেখ বলেন, ক্রয় সূত্রে এই জমির মালিক মো. ইউনুচ শেখ তার নিজের নামে ৫৫ শতাংশ এবং তার স্ত্রী মুক্তি পারভীনের নামে ১৩ শতাংশ জমি । দলীল ও রেকর্ডিয় মোট ৬৮ শতাংশ এ জমিতে পাট লাগানো রয়েছে। সে পাটের ক্ষেতে বেকু দিয়ে খাল খনন করাতে বিরাট ক্ষতির মুখে পড়ছে তিন ফসলী জমি। আর মূলত এই জমির পাশে ৫০ বছর পূর্বে ছোট একটা নালা কাটা ছিল। সেটা করেছিল সকল কৃষক মিলে জমির মালিকদের নিয়ে। ছোট নালা খনন করে তা দিয়ে পানি নিষ্কাশন করা হতো। সেই নালা ভরট হয়ে গেছে। প্রয়োজন হলে আমরা আবার সেই নালা খনন করে নিব। তাই বলে কি কাউকে তোয়ক্কা না করে সংশ্লিষ্ট প্রকৌশলী অপরিকল্পিত ভাবে এ খাল খনন করবে!
সাতৈর ইউনিয়নের চোয়ারম্যান মো. রাফিউল আলম মিন্টু বলেন, রামদিয়া মুন্সি বাড়ি কুমার নদী থেকে শুরু করে সরকারি জমিতে প্রায় দেড় কিলোমিটার ২৬ ফুট টপ করে খাল খনন করছে বিএডিসি। স্থানীয় কৃষকদের চাওয়াতে ধরনীধরদী ব্রিজের পরে থেকে ব্যক্তি মালিকানা জমি দিয়ে ১৫ ফিট টপ করে ৯০০ মিটার খাল খনন করা হয়েছে। কালভাটের বাপ পাশে ইয়ারউদ্দীনের ছেলে ইউনুচ এর জমিতে গেলে বাধাঁ আসে। এ কাজের আগে সকল জমির মালিকদের সাথে কথা বলে তাদের সম্মতিতে খাল খনন কাজ চলছে।
উপজেলা বিএডিসির উপ প্রকৌশলী প্রশান্ত কুমার মুঠোফোনে বলেন, আমার জানা মতে সেখানে সরকারি জমি নেই। ইউনিয়নের চেয়ারম্যান স্থানীয় কৃষক জমির মালিকদের মতের ভিত্তিতে ব্যক্তি মালিকানা জমিতে এ খাল খনন করা হচ্ছে। তাহলে জমির মালিক খাল খনন করতে আপনাদের বাঁধা দিচ্ছে কেন? এমন প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, ভাই আপনি অফিসে ফিজিক্যালী দেখা করেন তার পর নিউজ করেন। আগে থেকে নিউজ করেন না। কারণ আমার উর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সাথে কথা বলি আর আপনি রোববার অফিসে আসেন।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. রেজাউল করিম বলেন, বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন করপোরেশন (বিএডিসি) প্রকল্পের আওতায় এ কর্মসূচিতে কৃষকদের সুবিধার্থে খাল খনন করা হয়েছে। ব্যক্তি মালিকানা জমি দিয়ে খাল খনন করার লিখিত অভিযোগ আমার বরাবর এসেছে। অভিযোগ পাওয়ার পরে বিএডিসির কর্মকর্তাকে কাজ আপাতত বন্ধ রাখতে বলা হয়েছে। খাল খনন যদি ব্যক্তি মালিকানা জমিতে হয় তাহলে জমির মালিক খনন করতে না দিলে খাল খনন বন্ধ করে দেয়া হবে।
আরও পড়ুনঃ নড়াইলে মাদক মামলায় দুই নারীর যাবজ্জীবন
প্রিন্ট