ঢাকা , রবিবার, ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
প্রতিনিধি নিয়োগ
দৈনিক সময়ের প্রত্যাশা পত্রিকার জন্য সারা দেশে জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে প্রতিনিধি নিয়োগ করা হচ্ছে। আপনি আপনার এলাকায় সাংবাদিকতা পেশায় আগ্রহী হলে যোগাযোগ করুন।

৭ বছর পর ফিরে পেলেন বাবাকে, এলাকায় আনন্দের বণ্যা

-ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আখাউড়া উপজেলা সীমান্ত চেকপোস্টে বৃদ্ধ সন্তোষ দেবকে তাঁর পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়।

চট্টগ্রামের রাঙ্গুনিয়া উপজেলার ৬ নম্বর পোমরা ইউনিয়নের তালুকদারপাড়ার নিজ বাড়ি থেকে ৭ বছর আগে হারিয়ে যান মানসিক ভারসাম্যহীন বৃদ্ধ সন্তোষ দেব (৬০)। গতকাল শনিবার বৃদ্ধ সন্তোষ দেব বাড়ি ফিরে আসেন।

স্বজনেরা সম্ভাব্য জায়গায় খোঁজাখুঁজির পরেও তাঁর সন্ধান মেলেনি। শেষে তাঁকে ফিরে পাওয়ার আশা ছেড়ে দেন আত্মীয়স্বজন ও তাঁর সন্তানেরা। হঠাৎ জন্মদাতা পিতাকে খুঁজে পেয়ে আবেগে আপ্লুত পুরো পরিবার। পরিবারের সেই আনন্দ এখন ছড়িয়ে পড়েছে পুরো গ্রামে।

স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, গত শুক্রবার ভারতের আগরতলা থেকে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আখাউড়া উপজেলা সীমান্তের চেকপোস্টে ত্রিপুরাস্থ বাংলাদেশের সহকারী হাইকমিশনের পক্ষ থেকে বৃদ্ধ সন্তোষ দেবকে ছেলে অন্ত দেবের কাছে হস্তান্তর করা হয়।

পারিবারিক সূত্রে জানা যায়, দুই মেয়ে ও এক ছেলের জনক সন্তোষ দেব স্থানীয় মণীন্দ্রলাল দেবের সন্তান ছিলেন। তিনি ২০১৪ সালে হঠাৎ বাড়ি থেকে হারিয়ে যান। তিনি মানসিক ভারসাম্যহীন ছিলেন, যে কারণে কাউকে কিছু না বলে মাঝেমধ্যে বাড়ি থেকে বের হয়ে যেতেন। পরিবারের লোকজন বিভিন্ন জায়গায় খোঁজাখুঁজি করে তাঁকে বাড়িতে নিয়ে আসতেন। তবে ২০১৪ সালে বাড়ি থেকে বেরিয়ে যাওয়ার পর বিভিন্ন জায়গায় খোঁজাখুঁজি করেও তাঁর হদিস মেলেনি।

বাবা ফিরে আসার বিষয়ে সন্তোষ দেবের বড় মেয়ে রিফা দে বলেন, ‘আমার বাবাকে আমরা ভবঘুরের মতো খুঁজেছি। কিন্তু কোথাও খুঁজে না পাওয়ায় হতাশ হয়ে পড়ি। হঠাৎ আমার ছোট ভাই একটি সংস্থার মাধ্যমে জানতে পারে বাবা ভারতে আছেন। এরপরেই আমরা আবার খোঁজ নেওয়া শুরু করি। শেষ পর্যন্ত বাবাকে ফিরে পেয়েছি। বাবাকে ফিরে পাওয়ার অনুভূতি প্রকাশ করার মতো না। দীর্ঘ সাতটি বছর বাবাকে বাবা বলে ডাকতে পারিনি। আজ সাত বছর পর আবার বাবা ডাকতে পারছি।’

আরও পড়ুনঃ বোয়ালমারীতে অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদে আড়াই একর জমি দখলমুক্ত 

সন্তোষ দেবের ছেলে অন্ত দেব বলেন, ‘আমি অনেক ছোট থাকতে আমার বাবা বাড়ি থেকে বেরিয়ে যান। বাবাকে যখন হারিয়ে ফেলি, তখন আমি দ্বিতীয় শ্রেণিতে পড়ি। বাবা মানসিকভাবে ভারসাম্যহীন হওয়ায় কখন কোথায় যান, তার কোনো ঠিক ছিল না। একদিন হঠাৎ বাবাকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছিল না। অনেক খোঁজাখুঁজি করেও বাবার সন্ধান মেলেনি। পরে একটি সংস্থার মাধ্যমে জানতে পারি বাবাকে পাওয়া গেছে। তিনি ভারতের আগরতলায় একটি হাসপাতালে রয়েছেন। আজ বাবাকে কাছে পেয়েছি, এর থেকে আনন্দের আর কিছু হতে পারে না।’

সন্তোষ দেবের স্ত্রী গীতা রাণী বলেন, ‘আখাউড়া স্থলবন্দর থেকে ফোন আসে তাঁকে আমাদের কাছে হস্তান্তর করা হবে। আমরা তাঁকে ফিরে পাওয়ার আশা ছেড়েই দিয়েছিলাম। অবশেষে ফিরে পেয়েছি। বাংলাদেশ সরকারের কাছে আমরা কৃতজ্ঞ।’

আখাউড়া স্থলবন্দর ইমিগ্রেশন পুলিশ ইনচার্জ সাব-ইন্সপেক্টর আবু বক্কর বিষয়টি নিশ্চিত করে জানান, গত শুক্রবার সন্তোষ দেবকে তাঁর পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। এ সময় সন্তোষ দেবের ছেলে অন্ত দেব ও তাঁর স্ত্রী গীতা রাণীসহ অন্য স্বজনেরা উপস্থিত ছিলেন।

এদিকে দীর্ঘ সাত বছর পর সন্তোষ দেব তাঁর নিজ এলাকায় ফিরে আসায় এলাকায় চাঞ্চল্য সৃষ্টি হয়েছে। তাঁকে একনজর দেখার জন্য ভিড় জমিয়েছে এলাকাবাসী। অনেকে বিশ্বাস করতে পারছিলেন না সন্তোষ দেব আবার ফিরে এসেছেন।


প্রিন্ট
Tag :
এই অথরের আরো সংবাদ দেখুন

জনপ্রিয় সংবাদ
error: Content is protected !!

৭ বছর পর ফিরে পেলেন বাবাকে, এলাকায় আনন্দের বণ্যা

আপডেট টাইম : ১১:২১ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ৩ এপ্রিল ২০২২
দৈনিক সময়ের প্রত্যাশা ডেস্ক রিপোর্টঃ :

চট্টগ্রামের রাঙ্গুনিয়া উপজেলার ৬ নম্বর পোমরা ইউনিয়নের তালুকদারপাড়ার নিজ বাড়ি থেকে ৭ বছর আগে হারিয়ে যান মানসিক ভারসাম্যহীন বৃদ্ধ সন্তোষ দেব (৬০)। গতকাল শনিবার বৃদ্ধ সন্তোষ দেব বাড়ি ফিরে আসেন।

স্বজনেরা সম্ভাব্য জায়গায় খোঁজাখুঁজির পরেও তাঁর সন্ধান মেলেনি। শেষে তাঁকে ফিরে পাওয়ার আশা ছেড়ে দেন আত্মীয়স্বজন ও তাঁর সন্তানেরা। হঠাৎ জন্মদাতা পিতাকে খুঁজে পেয়ে আবেগে আপ্লুত পুরো পরিবার। পরিবারের সেই আনন্দ এখন ছড়িয়ে পড়েছে পুরো গ্রামে।

স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, গত শুক্রবার ভারতের আগরতলা থেকে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আখাউড়া উপজেলা সীমান্তের চেকপোস্টে ত্রিপুরাস্থ বাংলাদেশের সহকারী হাইকমিশনের পক্ষ থেকে বৃদ্ধ সন্তোষ দেবকে ছেলে অন্ত দেবের কাছে হস্তান্তর করা হয়।

পারিবারিক সূত্রে জানা যায়, দুই মেয়ে ও এক ছেলের জনক সন্তোষ দেব স্থানীয় মণীন্দ্রলাল দেবের সন্তান ছিলেন। তিনি ২০১৪ সালে হঠাৎ বাড়ি থেকে হারিয়ে যান। তিনি মানসিক ভারসাম্যহীন ছিলেন, যে কারণে কাউকে কিছু না বলে মাঝেমধ্যে বাড়ি থেকে বের হয়ে যেতেন। পরিবারের লোকজন বিভিন্ন জায়গায় খোঁজাখুঁজি করে তাঁকে বাড়িতে নিয়ে আসতেন। তবে ২০১৪ সালে বাড়ি থেকে বেরিয়ে যাওয়ার পর বিভিন্ন জায়গায় খোঁজাখুঁজি করেও তাঁর হদিস মেলেনি।

বাবা ফিরে আসার বিষয়ে সন্তোষ দেবের বড় মেয়ে রিফা দে বলেন, ‘আমার বাবাকে আমরা ভবঘুরের মতো খুঁজেছি। কিন্তু কোথাও খুঁজে না পাওয়ায় হতাশ হয়ে পড়ি। হঠাৎ আমার ছোট ভাই একটি সংস্থার মাধ্যমে জানতে পারে বাবা ভারতে আছেন। এরপরেই আমরা আবার খোঁজ নেওয়া শুরু করি। শেষ পর্যন্ত বাবাকে ফিরে পেয়েছি। বাবাকে ফিরে পাওয়ার অনুভূতি প্রকাশ করার মতো না। দীর্ঘ সাতটি বছর বাবাকে বাবা বলে ডাকতে পারিনি। আজ সাত বছর পর আবার বাবা ডাকতে পারছি।’

আরও পড়ুনঃ বোয়ালমারীতে অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদে আড়াই একর জমি দখলমুক্ত 

সন্তোষ দেবের ছেলে অন্ত দেব বলেন, ‘আমি অনেক ছোট থাকতে আমার বাবা বাড়ি থেকে বেরিয়ে যান। বাবাকে যখন হারিয়ে ফেলি, তখন আমি দ্বিতীয় শ্রেণিতে পড়ি। বাবা মানসিকভাবে ভারসাম্যহীন হওয়ায় কখন কোথায় যান, তার কোনো ঠিক ছিল না। একদিন হঠাৎ বাবাকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছিল না। অনেক খোঁজাখুঁজি করেও বাবার সন্ধান মেলেনি। পরে একটি সংস্থার মাধ্যমে জানতে পারি বাবাকে পাওয়া গেছে। তিনি ভারতের আগরতলায় একটি হাসপাতালে রয়েছেন। আজ বাবাকে কাছে পেয়েছি, এর থেকে আনন্দের আর কিছু হতে পারে না।’

সন্তোষ দেবের স্ত্রী গীতা রাণী বলেন, ‘আখাউড়া স্থলবন্দর থেকে ফোন আসে তাঁকে আমাদের কাছে হস্তান্তর করা হবে। আমরা তাঁকে ফিরে পাওয়ার আশা ছেড়েই দিয়েছিলাম। অবশেষে ফিরে পেয়েছি। বাংলাদেশ সরকারের কাছে আমরা কৃতজ্ঞ।’

আখাউড়া স্থলবন্দর ইমিগ্রেশন পুলিশ ইনচার্জ সাব-ইন্সপেক্টর আবু বক্কর বিষয়টি নিশ্চিত করে জানান, গত শুক্রবার সন্তোষ দেবকে তাঁর পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। এ সময় সন্তোষ দেবের ছেলে অন্ত দেব ও তাঁর স্ত্রী গীতা রাণীসহ অন্য স্বজনেরা উপস্থিত ছিলেন।

এদিকে দীর্ঘ সাত বছর পর সন্তোষ দেব তাঁর নিজ এলাকায় ফিরে আসায় এলাকায় চাঞ্চল্য সৃষ্টি হয়েছে। তাঁকে একনজর দেখার জন্য ভিড় জমিয়েছে এলাকাবাসী। অনেকে বিশ্বাস করতে পারছিলেন না সন্তোষ দেব আবার ফিরে এসেছেন।


প্রিন্ট