এবারের ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের জন্য বড় মাথা ব্যথার কারণ বিদ্রোহী প্রার্থী। দলের পক্ষ থেকে কঠোর বার্তায়ও থামছে না বিদ্রোহীদের রথ। বরং প্রথম দুই ধাপের ভোটে এক-চতুর্থাংশ ইউনিয়নই নৌকার হাতছাড়া হয়েছে বিদ্রোহী প্রার্থীর জয়ের কারণে।
এ পর্যন্ত দেড়শ’ ইউনিয়নে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হওয়ায় চেয়ারম্যান পদে ভোট হয় এক হাজার ৫৫টিতে। এর মধ্যে আড়াই শতাধিক ইউনিয়নে জয় পান বিদ্রোহীরা। প্রথম ধাপে বিদ্রোহীদের জয়ের হার ২৩ শতাংশ হলেও দ্বিতীয় ধাপে ২৭ শতাংশ ছাড়ায়। তৃতীয় ধাপে নির্বাচনেও বিদ্রোহী প্রার্থীর সংখ্যা ছাড়িয়েছে আগের দুই ধাপকেও।
বিশ্লেষকরা মনে করেন, উপযুক্ত প্রার্থী বাছাই না হওয়া, অভ্যন্তরীণ কোন্দল আর প্রভাবশালীদের মদদের কারণেই নিয়ন্ত্রণ করা যাচ্ছে না বিদ্রোহীদের। এ ছাড়া অনেক স্থানেই দলীয় প্রার্থী আর বিদ্রোহীদের পক্ষে বিভক্ত হয়ে সংঘাতে জড়াচ্ছেন আওয়ামী লীগ কর্মীরা। যা যে কোনো উপায়ে জেতা আর কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠার প্রবণতার প্রতিফলন বলে মনে করেন বিশ্লেষকরা।
নির্বাচন ও রাজনীতি বিশ্লেষক আবু আলম শহীদ খান বলেন, এটা আওয়ামী লীগের ভেতরে একটা বড় সমস্যা এবং তাদের পেছনেও নিশ্চয়ই কোনো নেতা আছেন, গডফাদার আছেন, যারা এটা করতে চান, যারা বিদ্রোহী প্রার্থীদের মদদ দিচ্ছেন। আওয়ামী লীগের ভেতরের দ্বন্দ্ব, এমপির সঙ্গে উপজেলা চেয়ারম্যানের দ্বন্দ্ব, এমপির সঙ্গে জেলার সভাপতি- সাধারণ সম্পাদকের দ্বন্দ্ব, এমপির সঙ্গে উপজেলা সভাপতি-সাধারণ সম্পাদকের দ্বন্দ্ব এবং কমিটিতে যারা আছেন, তাদের প্রায় সবারই নিজেদের মধ্যে আলাদা আলাদা গ্রুপ আছে। সুতরাং আওয়ামী লীগ দল হিসেবে অনেক গ্রুপে বিভক্ত। আর কোনো গ্রুপকেই কেন্দ্রীয় পর্যায় থেকে নিয়ন্ত্রণ করা যাচ্ছে না। এটা আওয়ামী লীগের জন্য বড় সমস্যা। তাই এই সমস্যা সমাধানে তাদেরকেই ভাবতে হবে।
তবে প্রার্থী বাছাইয়ে কোনো দুর্বলতা মানতে নারাজ আওয়ামী লীগ। আর বিদ্রোহী হয়ে ভোটে লড়া নেতাকর্মীরা আগামী দিনে কখনোই নির্বাচনে নৌকা কিংবা দলে গুরুত্বপূর্ণ পদ- সবকিছু থেকেই বঞ্চিত হবেন, এমন বার্তা দিচ্ছেন দলের মনোনয়ন বোর্ডের সদস্য আব্দুর রহমান।
বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর এই সদস্য বলেন, স্থানীয় নির্বাচনে দলীয় রাজনীতির প্রভাবের বাইরেও কতগুলো স্থানীয় মেরুকরণ থাকে। এর বাইরে একটা রাজনৈতিক দল বিএনপি দলীয় প্রতীকে নির্বাচন না করেও হয়তো বিদ্রোহী প্রার্থীদেরকে উসকানি, উৎসাহ বা পেছন থেকে কলকাঠি নাড়ার মতো কাজ করেছে। সুতরাং এই জায়গাটায় বিদ্রোহী প্রার্থী বিজয়ী হওয়া মানেই এই নয় যে মনোনয়নে ভুল ছিল। যারা বিদ্রোহী প্রার্থী হবেন, তারা ভবিষ্যতে কোনো স্তরেই দলীয় প্রতীক পাবেন না। এটি একজন রাজনৈতিক কর্মীর জীবনে বড় শাস্তি। তা ছাড়া, গুরুত্বপূর্ণ বড় পদে তারা থাকতে পারবেন না।
আওয়ামী লীগের সর্বোচ্চ নীতি নির্ধারণী ফোরামের এ সদস্য জানান, নির্বাচনের পর তৃণমূল সফরে যাবেন ৮টি বিভাগীয় সাংগঠনিক টিমের নেতারা। সে সময় দ্বন্দ্ব-সংঘাতে জড়িতদের বিষয়ে আরও বিস্তারিত তথ্য নিয়ে ব্যবস্থা নেবে দল।
প্রিন্ট