ঢাকা , শনিবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৫, ৬ বৈশাখ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম
Logo ইরানের খামেনির কাছে সৌদি বাদশাহর ‘গোপন’ চিঠি Logo আ.লীগ একটি বাজে দল, প্রত্যেক লিডারশিপের হাতে রক্তঃ -প্রেস সচিব শফিকুল আলম Logo দৌলতপুর সীমান্তে মাদকসহ ৩ ভারতীয় আটক Logo লালপুরে মারধর ও প্রকাশ্যে গুলি চালিয়েছে মাদক ব্যবসায়ী, আহত ১ Logo বাঘায় পুকুরে গোসল করতে নেমে বয়স্ক নারীর মৃত্যু Logo সদরপুর থানায় নবাগত ওসি নাজমুল হাসানের যোগদান Logo রূপগঞ্জে বালুনদীর উপর চনপাড়া সেতু যেন মরনফাঁদ! Logo ইমাম কল্যাণ ফাউন্ডেশনের উদ্যোগে বিক্ষোভ মিছিল ও প্রতিবাদ সমাবেশ অনুষ্ঠিত Logo কাঁফনের কাপড় মাথায় বেঁধে ফরিদপুর পলিটেকনিক শিক্ষার্থীদের গণমিছিল Logo সরকারি খাল দখল করে তিনতলা ভবন নির্মাণ, বোয়ালমারীতে কৃষকদের মানববন্ধন
প্রতিনিধি নিয়োগ
দৈনিক সময়ের প্রত্যাশা পত্রিকার জন্য সারা দেশে জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে প্রতিনিধি নিয়োগ করা হচ্ছে। আপনি আপনার এলাকায় সাংবাদিকতা পেশায় আগ্রহী হলে যোগাযোগ করুন।

চাইভ: নতুন আবাদ হওয়া পেঁয়াজের বিকল্প সম্পর্কে যা জানা যাচ্ছে

বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইন্সটিটিউটের মসলা গবেষণা কেন্দ্র বলছে চীন থেকে আনা চাইভের একটি জাত এখন কৃষকদের মাঝে বিতরণ করা হচ্ছে এবং তাদের মতে এই চাইভই হয়ে উঠতে পারে পেঁয়াজের বিকল্প।

কেন্দ্রের ঊর্ধ্বতন বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. মোঃ নুর আলম চৌধুরী বলছেন, বাংলাদেশে পেঁয়াজের সংকট মোকাবেলায় চাইভ হতে পারে সবচেয়ে কার্যকরী একটি ফসল।

“সবজিতে পেঁয়াজের পাতা কিংবা মাছের চচ্চড়িতে যেভাবে পেঁয়াজ ব্যবহার করা হয় সেখানে অনায়াসেই চাইভ ব্যবহার করা সম্ভব। স্যুপ আর সালাদে এখনি ব্যাপক চাহিদা আছে এই চাইভের। ফলে বাংলাদেশে এর সম্ভাবনাও ভালো বলে আমরা মনে করছি, বলে গণমাধ্যমকে বলছিলেন তিনি।

যদিও সিলেট ছাড়া পাহাড়ি কিছু এলাকার অধিবাসীদের মধ্যে আগে থেকেই স্থানীয়ভাবে উৎপাদিত চাইভ ব্যবহারের প্রচলনও আছে। তবে যেসব এলাকায় পেঁয়াজ বেশি উৎপাদন হয় সেখানে এই চাইভ উৎপাদনের সম্ভাবনা বেশি বলে বলছেন মিস্টার চৌধুরী।

মিস্টার চৌধুরী বলছেন, রোগ বালাই কম হওয়া আর উৎপাদন খরচ কম হওয়ায় কৃষকদের জন্যও এটি সামনে লাভজনক ফসল হয়ে উঠবে বলে আশা করছেন তারা।

স্যুপ, সালাদ ছাড়াও চীনা খাবারে এর ব্যাপক ব্যবহার হয়
স্যুপ, সালাদ ছাড়াও চীনা খাবারে এর ব্যাপক ব্যবহার হয়

চাইভ আসলে কি?

ঢাকার রেস্তোরাঁয় স্যুপ পরিবেশনের পর দেখা যায় স্যুপের বাটিতে লম্বাটে ধরণের এক ধরণের সবজি থাকে, যেটি কৃষিক্ষেত্রে মসলা জাতীয় ফসল চাইভ হিসেবেই পরিচিত।

আবার চাইনিজ রেস্তোরাঁগুলোতে অনেক খাবারেই এটি দেখা যায়। এর স্বাদ অনেকটা পেঁয়াজ পাতার মতো।

সরকারের কৃষি তথ্য সার্ভিস বলছে, এর উৎপত্তিস্থল সাইবেরিয়া-মঙ্গোলিয়া-নর্থ চায়না অঞ্চল। দেশে অনেকে পেঁয়াজ ও রসুনের বিকল্প হিসেবে অনেকে ব্যবহার করলেও এর বহুল ব্যবহার স্যুপ আর সালাদের সাথে।

ঢাকার বেইলি রোডের একটি রেস্তোরাঁর বাবুর্চি নাজমুল ইসলাম বলছেন, এটি স্যুপের স্বাদ বাড়িয়ে দেয় বলেই সবাই পছন্দ করে।

“আমরা সাধারণত আমদানি করা চাইভ ব্যবহার করি। চীন থেকেই বেশি আসে এটি আমাদের দেশে,” বলছিলেন মিস্টার ইসলাম।

ড. মোঃ নুর আলম চৌধুরী বলছেন, পেঁয়াজ ব্যবহৃত হয়, এমন সব খাবারেই পেঁয়াজের বিকল্প হিসেবে এটি ব্যবহার করা যায়।

কীভাবে আবাদ শুরু হলো বাংলাদেশে

ড. মোঃ নুর আলম চৌধুরী বলছেন, সিলেট অঞ্চলে আর কিছু পাহাড়ি গোষ্ঠীর মধ্যে আগে থেকে এর প্রচলন থাকলেও সেটি খুব সীমাবদ্ধ আকারে। আর অন্য এলাকায় সেগুলো খুব একটা ফলপ্রসূ হয়নি।

“আমরা ২০১৪ সালে চীন থেকে এর জার্মপ্লাজম নিয়ে এসেছি। পরে তিন বছর বাংলাদেশে ট্রায়াল দিয়ে সফলতা পেয়েছি। এরপর তা কৃষকদের মধ্যে বিতরণ শুরু হয়েছে। এখনো উল্লেখযোগ্য না হলেও আস্তে আস্তে জনপ্রিয়তা পাচ্ছে,” বলছিলেন তিনি।

তিনি বলেন, বছরে একবার আবাদ করলেই এ থেকে ফল পাওয়া যায় বলে সারা বছর এটি আবাদের প্রয়োজন হয় না।

“এর পাতা হবে সারা বছর। মাটির নীচের অংশে পেঁয়াজের চারার আকৃতির হয় কিন্তু উপরের দিকে ২০ থেকে ৪০টি পর্যন্ত পাতা হয়ে থাকে একটি থেকে। ৩০-৪০ সেমি. উচ্চতার গাছে প্রতিটি পাতার দৈর্ঘ্য হয় ২৩-৩০ সেমি.। আবার বারবার এই পাতা নিয়ে ব্যবহার করা যায়। ফলে এর খরচও খুব কম”।

সরকারের কৃষি তথ্য সার্ভিস বলছে, এটি সারা বছরই চাষাবাদ করা সম্ভব এবং এর মধ্যেই চাইভের উচ্চফলনশীল একটি জাত উদ্ভাবন করে বিতরণ শুরু করেছে কৃষি গবেষণা ইন্সটিটিউট।

বিজ্ঞানীরা বলছেন বাংলাদেশে চাইভ হতে পারে পেঁয়াজের বিকল্প
বিজ্ঞানীরা বলছেন বাংলাদেশে চাইভ হতে পারে পেঁয়াজের বিকল্প

কোন মাটিতে বেশি হয় চাইভ

কৃষি তথ্য সার্ভিস বলছে, পাবনা, ফরিদপুর, রাজবাড়ী, মেহেরপুর, রাজশাহীসহ যেসব এলাকায় পেঁয়াজ বেশি হয় সেখানেই এই চাইভের সম্ভাবনা বেশি।

সাধারণত সেচ ও পানি নিষ্কাশনের সুবিধা আছে এবং জৈব পদার্থ সমৃদ্ধ বেলে দোআঁশ মাটি চাইভ চাষের জন্য বেশি উপযুক্ত।এছাড়া বৃষ্টিপাত আর ২৫ ডিগ্রির নীচের তাপমাত্রাকে এর জন্য অনুকূল বলে মনে করা হয়।

ড. মোঃ নুর আলম চৌধুরী চাইভ চারা রোপণের পর ঠিকমতো পানি দেয়াসহ দরকারি পরিচর্যা করলে ভালো ফলন পাওয়া যায়।

“এর রোগ বালাই খুব কম। আর পোকাও খুব এটা আক্রমণ করে না। তাই চাইভ চাষে খরচও অনেকটা কম”।

সাধারণত চারা লাগানোর ৬০-৭০ দিনের মধ্যে ফসল পাওয়া যায় এবং একবার রোপণ করে বছরে ৫/৬ বার ফসল সংগ্রহ করা যায় বলে বলছেন মিস্টার চৌধুরী।


প্রিন্ট
Tag :
এই অথরের আরো সংবাদ দেখুন

জনপ্রিয় সংবাদ

ইরানের খামেনির কাছে সৌদি বাদশাহর ‘গোপন’ চিঠি

error: Content is protected !!

চাইভ: নতুন আবাদ হওয়া পেঁয়াজের বিকল্প সম্পর্কে যা জানা যাচ্ছে

আপডেট টাইম : ০২:৩২ অপরাহ্ন, সোমবার, ৮ নভেম্বর ২০২১
ডেস্ক রিপোর্টঃ :

বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইন্সটিটিউটের মসলা গবেষণা কেন্দ্র বলছে চীন থেকে আনা চাইভের একটি জাত এখন কৃষকদের মাঝে বিতরণ করা হচ্ছে এবং তাদের মতে এই চাইভই হয়ে উঠতে পারে পেঁয়াজের বিকল্প।

কেন্দ্রের ঊর্ধ্বতন বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. মোঃ নুর আলম চৌধুরী বলছেন, বাংলাদেশে পেঁয়াজের সংকট মোকাবেলায় চাইভ হতে পারে সবচেয়ে কার্যকরী একটি ফসল।

“সবজিতে পেঁয়াজের পাতা কিংবা মাছের চচ্চড়িতে যেভাবে পেঁয়াজ ব্যবহার করা হয় সেখানে অনায়াসেই চাইভ ব্যবহার করা সম্ভব। স্যুপ আর সালাদে এখনি ব্যাপক চাহিদা আছে এই চাইভের। ফলে বাংলাদেশে এর সম্ভাবনাও ভালো বলে আমরা মনে করছি, বলে গণমাধ্যমকে বলছিলেন তিনি।

যদিও সিলেট ছাড়া পাহাড়ি কিছু এলাকার অধিবাসীদের মধ্যে আগে থেকেই স্থানীয়ভাবে উৎপাদিত চাইভ ব্যবহারের প্রচলনও আছে। তবে যেসব এলাকায় পেঁয়াজ বেশি উৎপাদন হয় সেখানে এই চাইভ উৎপাদনের সম্ভাবনা বেশি বলে বলছেন মিস্টার চৌধুরী।

মিস্টার চৌধুরী বলছেন, রোগ বালাই কম হওয়া আর উৎপাদন খরচ কম হওয়ায় কৃষকদের জন্যও এটি সামনে লাভজনক ফসল হয়ে উঠবে বলে আশা করছেন তারা।

স্যুপ, সালাদ ছাড়াও চীনা খাবারে এর ব্যাপক ব্যবহার হয়
স্যুপ, সালাদ ছাড়াও চীনা খাবারে এর ব্যাপক ব্যবহার হয়

চাইভ আসলে কি?

ঢাকার রেস্তোরাঁয় স্যুপ পরিবেশনের পর দেখা যায় স্যুপের বাটিতে লম্বাটে ধরণের এক ধরণের সবজি থাকে, যেটি কৃষিক্ষেত্রে মসলা জাতীয় ফসল চাইভ হিসেবেই পরিচিত।

আবার চাইনিজ রেস্তোরাঁগুলোতে অনেক খাবারেই এটি দেখা যায়। এর স্বাদ অনেকটা পেঁয়াজ পাতার মতো।

সরকারের কৃষি তথ্য সার্ভিস বলছে, এর উৎপত্তিস্থল সাইবেরিয়া-মঙ্গোলিয়া-নর্থ চায়না অঞ্চল। দেশে অনেকে পেঁয়াজ ও রসুনের বিকল্প হিসেবে অনেকে ব্যবহার করলেও এর বহুল ব্যবহার স্যুপ আর সালাদের সাথে।

ঢাকার বেইলি রোডের একটি রেস্তোরাঁর বাবুর্চি নাজমুল ইসলাম বলছেন, এটি স্যুপের স্বাদ বাড়িয়ে দেয় বলেই সবাই পছন্দ করে।

“আমরা সাধারণত আমদানি করা চাইভ ব্যবহার করি। চীন থেকেই বেশি আসে এটি আমাদের দেশে,” বলছিলেন মিস্টার ইসলাম।

ড. মোঃ নুর আলম চৌধুরী বলছেন, পেঁয়াজ ব্যবহৃত হয়, এমন সব খাবারেই পেঁয়াজের বিকল্প হিসেবে এটি ব্যবহার করা যায়।

কীভাবে আবাদ শুরু হলো বাংলাদেশে

ড. মোঃ নুর আলম চৌধুরী বলছেন, সিলেট অঞ্চলে আর কিছু পাহাড়ি গোষ্ঠীর মধ্যে আগে থেকে এর প্রচলন থাকলেও সেটি খুব সীমাবদ্ধ আকারে। আর অন্য এলাকায় সেগুলো খুব একটা ফলপ্রসূ হয়নি।

“আমরা ২০১৪ সালে চীন থেকে এর জার্মপ্লাজম নিয়ে এসেছি। পরে তিন বছর বাংলাদেশে ট্রায়াল দিয়ে সফলতা পেয়েছি। এরপর তা কৃষকদের মধ্যে বিতরণ শুরু হয়েছে। এখনো উল্লেখযোগ্য না হলেও আস্তে আস্তে জনপ্রিয়তা পাচ্ছে,” বলছিলেন তিনি।

তিনি বলেন, বছরে একবার আবাদ করলেই এ থেকে ফল পাওয়া যায় বলে সারা বছর এটি আবাদের প্রয়োজন হয় না।

“এর পাতা হবে সারা বছর। মাটির নীচের অংশে পেঁয়াজের চারার আকৃতির হয় কিন্তু উপরের দিকে ২০ থেকে ৪০টি পর্যন্ত পাতা হয়ে থাকে একটি থেকে। ৩০-৪০ সেমি. উচ্চতার গাছে প্রতিটি পাতার দৈর্ঘ্য হয় ২৩-৩০ সেমি.। আবার বারবার এই পাতা নিয়ে ব্যবহার করা যায়। ফলে এর খরচও খুব কম”।

সরকারের কৃষি তথ্য সার্ভিস বলছে, এটি সারা বছরই চাষাবাদ করা সম্ভব এবং এর মধ্যেই চাইভের উচ্চফলনশীল একটি জাত উদ্ভাবন করে বিতরণ শুরু করেছে কৃষি গবেষণা ইন্সটিটিউট।

বিজ্ঞানীরা বলছেন বাংলাদেশে চাইভ হতে পারে পেঁয়াজের বিকল্প
বিজ্ঞানীরা বলছেন বাংলাদেশে চাইভ হতে পারে পেঁয়াজের বিকল্প

কোন মাটিতে বেশি হয় চাইভ

কৃষি তথ্য সার্ভিস বলছে, পাবনা, ফরিদপুর, রাজবাড়ী, মেহেরপুর, রাজশাহীসহ যেসব এলাকায় পেঁয়াজ বেশি হয় সেখানেই এই চাইভের সম্ভাবনা বেশি।

সাধারণত সেচ ও পানি নিষ্কাশনের সুবিধা আছে এবং জৈব পদার্থ সমৃদ্ধ বেলে দোআঁশ মাটি চাইভ চাষের জন্য বেশি উপযুক্ত।এছাড়া বৃষ্টিপাত আর ২৫ ডিগ্রির নীচের তাপমাত্রাকে এর জন্য অনুকূল বলে মনে করা হয়।

ড. মোঃ নুর আলম চৌধুরী চাইভ চারা রোপণের পর ঠিকমতো পানি দেয়াসহ দরকারি পরিচর্যা করলে ভালো ফলন পাওয়া যায়।

“এর রোগ বালাই খুব কম। আর পোকাও খুব এটা আক্রমণ করে না। তাই চাইভ চাষে খরচও অনেকটা কম”।

সাধারণত চারা লাগানোর ৬০-৭০ দিনের মধ্যে ফসল পাওয়া যায় এবং একবার রোপণ করে বছরে ৫/৬ বার ফসল সংগ্রহ করা যায় বলে বলছেন মিস্টার চৌধুরী।


প্রিন্ট