আসন্ন ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনকে ঘিরে ফরিদপুরের বোয়ালমারী উপজেলায় এক ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের বর্ধিতসভায় দলীয় নেতাকর্মীদের মধ্যে কাগজপত্রের ফাইল নিয়ে হট্টগোল ও হাতাহাতির কারণে কোনো সিদ্ধান্ত ছাড়াই শেষ হয়েছে। শুক্রবার সন্ধ্যায় উপজেলার দাদপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান প্রার্থীদের তালিকা প্রস্তুত করতে গিয়ে স্থানীয় রাঙ্গামুলারকান্দি হাজী আব্দুলাহ একাডেমি (হাইস্কুল) চত্বরে ডাকা সভায় এ ঘটনা ঘটে। আগের দিনের হাতাহাতির ঘটনার জের ধরে আজ শনিবার ওই এলাকায় পুনরায় উত্তেজনা দেখা দিলে পুলিশ ইউনিয়ন আ’লীগের সাধারণ সম্পাদকসহ চার ব্যক্তিকে থানা হেফাজতে নিয়েছে।
প্রসঙ্গত, অভিযোগ রয়েছে দাদপুর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের একজন সহ-সভাপতি মারা যাওয়ায় সেখানে কমিটির কাউকে না জানিয়ে আসন্ন ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনের মনোনয়ন প্রত্যাশী হারুন অর রশিদের নাম কৌশলে অন্তভুক্ত করে নেন ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি মো. জাহাঙ্গীর হোসেন। সভাপতি জাহাঙ্গীর হোসেন হারুনের তাওই।
দলীয় সূত্রে জানা যায়, শুক্রবার বিকেল সাড়ে ৪টায় ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি মো. জাহাঙ্গীর হোসেনের (অবসরপ্রাপ্ত পুলিশের উপ পরিদর্শক) সভাপতিত্বে বর্ধিত সভার কার্যক্রম শুরু হয়। সভায় জনপ্রতি দুই হাজার টাকা তালিকাভুক্তি ফি দিয়ে মোট ১০ জন প্রার্থী চেয়ারম্যান পদে দলের মনোনয়ন চেয়ে নাম অন্তর্ভূক্ত করেন।
ইউনিয়ন আ’লীগের সাধারণ সম্পাদক শেখ সাজ্জাদুর রহমান হাই এবার চেয়ারম্যান পদে দলের মনোনয়ন প্রত্যাশী। এ কারণে উপজেলা আওয়ামী লীগের গত ২৫ অক্টোবর তারিখের বিশেষ বর্ধিত সভার সিদ্ধান্ত মোতাবেক ইউনিয়ন আ’লীগের ওই সভার আগেই তিনি সংগঠনের কার্যবিবরণী বইসহ (রেজুলেশন) অন্যান্য কাগজপত্র ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের ১ নম্বর যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মফিজুর রহমান তানভীরের কাছে বুঝিয়ে দেন।
এ সময় মফিজুরের কাছ থেকে কাগজপত্র ছিনিয়ে নেন দলের অপর মনোনয়ন প্রত্যাশী মো. হারুন অর রশিদ। সংগঠনের দাপ্তরিক কাগজপত্র ছিনিয়ে নেওয়ার ঘটনাকে কেন্দ্র করে সভাস্থলে সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের সমর্থকদের মধ্যে হট্টগোল ও হাতাহাতি শুরু হয়। এক পর্যায়ে স্ব স্ব পক্ষ নিজ নিজ সমর্থকদের নিয়ে সভাস্থল ত্যাগ করেন।
দাদপুর ইউনিয়ন আ’লীগের এক নম্বর যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মফিজুর রহমান তানভীর জানান, সভাপতির নিকটাত্মীয় হারুন অর রশিদ ফাইল ছিনিয়ে নিলে সভায় বিশৃঙ্খলা শুরু হলে কোনো সিদ্ধান্ত ছাড়াই সভা শেষ হয়েছে। আমি এবং সাধারণ সম্পাদক লিখিতভাবে হারুন অর রশিদের এ রকম ন্যাক্কারজনক কাজের বিরুদ্ধে উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের কাছে লিখিত অভিযোগ জানিয়েছি।
তিনি বলেন, আমাদের অজান্তে স্বঘোষিত ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি হয়েছেন হারুন। এর আগে তিনি ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের কোনো কমিটিতেই ছিলেন না।
তবে হারুন অর রশিদ বলেন, আমি একজন মনোনয়ন প্রত্যাশী হিসেবে ওই সভায় উপস্থিত ছিলাম। আমার বিরুদ্ধে সংগঠনের দাপ্তরিক কাগজপত্র ছিনিয়ে নেওয়ার যে অভিযোগ করা হয়েছে, তা ডাহা মিথ্যা কথা।
শুক্রবার দাদপুর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের বর্ধিত সভায় উপস্থিত থাকা বর্তমান ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ও ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের দপ্তর সম্পাদক মোশাররফ হোসেন বলেন, উপজেলা আওয়ামী বর্ধিত সভায় বলা হয়, যদি কোনো সভাপতি-সাধারণ সম্পাদক ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে প্রার্থী হয় তাহলে এক নম্বর সহসভাপতি ও এক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক দায়িত্বে থাকবেন। সেই অনুযায়ী দাদপুর ইউনিয়ন আ’লীগের সাধারণ সম্পাদক প্রার্থী হওয়ায় মফিজুর রহমান তানভীরকে সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব দেওয়া হয়। সেটা ইউনিয়ন সভাপতি মানে না বিধায় তানভীরের কাছ থেকে কাগজপত্রের ফাইল হারুন সমর্থকরা কেড়ে নিলে হট্টগোল শুরু হয়।
আওয়ামী লীগের চারজনকে থানা হেফাজতে নেওয়ার সত্যতা নিশ্চিত করে বোয়ালমারী থানার উপ পরিদর্শক মামুন অর রশিদ জানান, দাদপুর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের মধ্যে দ্বন্দ্বের জের ধরে শুক্রবার সন্ধ্যায় তাদের একটি সভায় গণ্ডগোল হয়। এর জের ধরে শনিবার চিতারবাজারে দুই পক্ষ মুখোমুখি হলে উত্তেজনা থামাতে ইউনিয়ন আ’লীগের সাধারণ সম্পাদক শেখ সাজ্জাদুর রহমান হাই, দাদপুর গ্রামের হারুন মোল্লা, ওবায়দুর রহমান ও শাহজাহান শেখকে থানা হেফাজতে আনা হয়েছে।
প্রিন্ট