রাষ্ট্রভাষা বাংলা চাই আন্দোলনের পুরোধা খলিল স্যার। জীবন-মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে এখন ভেড়ামারার ভাষা সৈনিক খলিলুর রহমান খলিল জীবনের শেষ সময় অতিবাহিত করছেন। যেকোনো সময় মৃত্যু তাকে ডেকে নিয়ে যাবে এমনটাই মনে করেন তার পরিবার।
১৯৫১ সাল। রাষ্ট ভাষা বাংলা চাই, এমন দাবি ক্রমশঃ উঠতে শুরু করেছে। ঠিক সে সময়ই তিনি ঢাকা জগন্নাথ কলেজে (বর্তমানে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়) বাণিজ্য বিভাগে ভর্তি হন খলিলুর রহমান। এরপর থেকেই রাষ্ট্রভাষা বাংলা চাই আন্দোলনের মিছিল, মিটিং-এ অংশ নিতেন।
তৎকালীন সময়ে ছাত্রনেতা হিসেবে মিছিল মিটিংয়ের নেতৃত্ব দিতেন। ৫২ সালের ২১শে ফেব্রæয়ারি ঢাকা কার্জন হলে মিছিলে পুলিশ যখন বৃষ্টির মতো গুলি চালাচ্ছিল তখন তিনি ছিলেন ওই মিছিলের অগ্রভাগে। পুলিশের গুলিতে সেই সময় অনেকই মারা গেলে ও সে ভাগ্যক্রমে বেঁচে যায়।
বয়সের ভারে ন্যুব্জ খলিলুর রহমান সে সময়ের সহগামী, সতীর্থদের নাম স্মরণে আনতে না পারলেও স্মৃতিপটে ভাসে ১৯৫২ সালের ২১শে ফেব্রæয়ারির সেই দিনটির কথা।
২০১৫ সালে এই ভাষা সৈনিক কে নিয়ে টেলিভিশন চ্যানেলসহ জাতীয় দৈনিক এবং স্থানীয় পত্রিকায় সংবাদ প্রকাশিত হতে থাকে। তার পর থেকেই দাবি জোরালো হচ্ছিল ভেড়ামারার একমাত্র ভাষা সৈনিক খলিলুর রহমানকে রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি দেওয়ার ব্যাপারে ভেড়ামারা উপজেলা প্রশাসন উদ্যোগ গ্রহণ করলেও অদৃশ্য কারণে তা আর আলোর মুখ দেখেনি।
ভাষা সৈনিক খলিল স্যারের একমাত্র পুত্র রুহুল আমিন জানিয়েছেন, বাবা একজন ভাষা সৈনিক হিসাবে নিজেকে গর্বিত মনে হয়। সাংবাদিকরাই বিষয়টি প্রকাশ্যে নিয়ে আসে। এরপর বহু প্রতিষ্ঠান বাবাকে ভাষা সৈনিক হিসাবে সম্মামনা জানিয়েছেন।
২০১৮ সালে ভেড়ামারা পাইলট উচ্চ বিদ্যালয়ে শতবর্ষ উৎসব হলে ভাষা সৈনিক খলিলুর রহমান স্যারকে সম্মামনা জানানো হয়। এরপর ভেড়ামারা বণিক সমিতি, প্রসিড একাডেমিসহ স্থানীয় অনেক প্রতিষ্ঠান স্যারকে ভাষা সৈনিক হিসাবে সম্মাননা জানান।
১৯৯১ সালে ভেড়ামারা বোর্ড সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে তিনি অবসর গ্রহণ করেন। তিনি এক পুত্র ও তিন কন্যা সন্তানের জনক। জীবন মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে থাকা খলিল স্যারের নিঃসঙ্গ জীবন কাটে এখন বিছানায়।
তিনি শুধু দেখে যেতে চান, তার এই দেশ সমাজ মূল্যায়ন করে রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি দিয়েছে। এটাই হবে তার জীবনের চরম প্রাপ্তি।
প্রিন্ট