ঝিনাইদহের কালীগঞ্জের জঙ্গলে কুড়িয়ে পাওয়া সেই শিশু অরণ্যকে ভালোবাসতে ভুলে যাননি কালীগঞ্জ থানার সাবেক ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আনোয়ার হোসেন। ৫ম জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে বৃহস্পতিবার দুপুরে অরণ্যের জন্য জন্মদিনের কেক ও উপহার সামগ্রী নিয়ে স্ব-পরিবারে হাজির হন তিনি। অকৃত্রিম ভালোবাসার উদাহরণ হিসেবে তিনি অরণ্যকে দীর্ঘদিন পরেও মনে রেখেছেন।
২০১৫ সালের ১৭ ডিসেম্বর সকালে ঝিনাইদহের কালীগঞ্জ উপজেলার গোপালপুর গ্রামের একটি কবর স্থানের জঙ্গলে সদ্য ভুমিষ্ট নবজাতক শিশুকে এলাকাবাসী পড়ে থাকতে দেখে স্থানীয় থানা পুলিশকে খবর দেয়। পরে থানার সাবেক ওসি আনোয়ার হোসেন নিজে শিশুটিকে উদ্ধার করে হাসপাতালে ভর্তি করেন।
জঙ্গলে পড়ে পাওয়ায় তার নাম রাখেন আবুজার গিফারী অরণ্য। শিশুটিকে পাওয়ার পর তাকে ডাক্তার দেখানো, ওষুধ, দুধ ও পোশাক-পরিচ্ছেদ কিনে দেয়াসহ নাম রাখার প্রথম কাজটি করেছিলেন তিনি।
পরে ওসি আনোয়ারের কাছ থেকে শিশুকে দত্তক নেন গোপালপুর গ্রামের বসির আহম্মেদ ও আমেনা খাতুন দম্পত্তি। সেই পালিত পিতা-মাতার কাছে আদর-যত্নে দিন দিন বড় হচ্ছে অরণ্য। তার বয়স ৫ বছর পূর্ণ হলো।
জঙ্গলে কুড়িয়ে পাওয়া অরণ্যের জন্য এই অফিসারের অন্যরকম ভালোবাসার জন্ম দিয়েছে। ওসি আনোয়ার হোসেন বর্তমানে ঝিনাইদহ জেলা গোয়েন্দা শাখার (ডিবি) ওসি হিসেবে কর্মরত আছেন। এখনো তিনি শিশু অরণ্যের খোঁজ-খবর রাখেন।
এ ব্যাপারে ওসি আনোয়ার হোসেন বলেন, যখন তাকে পেয়েছিলাম তখন ওসি হিসেবে দ্বায়িত্ব পালন করেছি। আর এখন মানবিকতা দিক থেকেই তার খোঁজ খবর নিই। আমি যখনই সুযোগ পায় পরিবারের সদস্যদের নিয়ে চলে আসি তাকে দেখতে। বিভিন্ন দিবসে আমি না আসতে পারলেও তার জন্য উপহার পাঠায়। দোয়া করি অরণ্য একদিন অনেক বড় হয়ে দেশ সেবাই নিজেকে নিয়োজিত রাখবে।
অরণ্য’র পিতা-মাতা বশির আহম্মেদ আমেনা খাতুন দম্পত্তি বলেন, ওসি আনোয়ার হোসেনের মহানুভবতার প্রশংসার শেষ নেই। ঈদ, পহেলা বৈশাখ, ভালোবাসা দিবস এমন কোন দিবস নেই তিনি অরণ্য’র জন্য উপহার পাঠান না। অরণ্য তার সন্তান। আমাদের কাছে বড় হচ্ছে। তারা আরও বলেন, অরণ্য আমাদের পরিবারে আসার পর থেকেই আমাদের সংসারে সুখ শান্তি ফিরে এসেছে। আল্লাহ যেন ওকে ভালো রাখে। সকলের কাছে সেই দোয়া কামনা করছি।
অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন, কালীগঞ্জ থানার ওসি মুহাঃ মাহফুজুর রহমান মিয়া, মৌচিক শ্রমিক কর্মচারী ইউনিয়নের সভাপতি গোলাম রসুল, বিশিষ্ট ব্যবসায়ী আবদুল হাই মিন্টু প্রমুখ।
প্রিন্ট