মাঝকান্দি-ভাটিয়াপাড়া ৪৪ কিলোমিটার আঞ্চলিক মহাসড়কের সাতৈর রেলগেটে নির্মাণাধীন ওভারপাস প্রকল্প এখন এলাকাবাসির গলার কাঁটা হয়ে উঠেছে। গত প্রায় চার বছরেও এ প্রকল্পের কাজ শেষ হয়নি। সড়ক চালু রাখার জন্য পাশ দিয়ে তৈরী বাইপাস সড়কেরটিরও বর্তমানে বেহাল দশা। খানাখন্দে ভরে যান চলাচলের অনুপযুক্ত হয়ে পড়েছে। খানাখন্দে প্রতিনিয়তই যানবাহন আটকে যাচ্ছে।
এ কারণে মাঝে মধ্যেই বন্ধ হয়ে যাচ্ছে ফরিদপুর, ঢাকার সাথে বোয়ালমারী, আলফাডাঙ্গার সারসরি সড়ক যোগাযোগ। চরম ভোগান্তিতে রয়েছে এলাকার যাত্রী সাধারন, স্থানীয় বাসিন্দা ও পরিবহন মালিক শ্রমিকরা। ফরিদপুরের মধুখালী উপজেলা মাঝকান্দী থেকে শুরু হয়ে বোয়ালমারী কাশিয়ানী হয়ে গোপালগঞ্জের ভাটিয়াপাড়া ঢাকা খুলনা মহসড়কের সাথে মিশেছে এ আঞ্চলিক মহাসড়কটি।
কালুখালী-ভাটিয়াপাড়া রেল লাইনও চলে গেছে বোয়ালমাীর উপর দিয়ে। রাজবাড়ি-ভাটিয়াপাড়া লোকাল ট্রেনের পাশাপাশি রাজশাহী-গোবরা (টুঙ্গীপাড়া) মেইল ট্রেন চালু রয়েছে। বোয়ালমারী উপজেলার ব্যস্ততম সাতৈর লগেটে তাই প্রয়োজন পড়ে একটি ওভারপাস নির্মাণের। প্রয়োজন মেটাতেই আঞ্চলিক মহাসড়কের নির্মাণ প্রকল্পের সাথেই পাশ হয় ওভারপাস নির্মাণ প্রকল্প কিন্তু এ প্রকল্পের ভবিষ্যৎ এখন অন্ধকার। ৩৭ কোটি ৬২ লাখ টাকা ব্যয়ে ৪৩৪.৫ মিটার (প্রায় অর্ধ কিলোমিটার) ওভারপাসের কাজ ২০১৭ সালের ৭ আগস্ট শুরু হয়েও দৃশ্যমান অগ্রগতির আগেই হঠাৎ স্থগিত হয়ে গেছে নির্মাণ কাজ। গ্রীষ্মকালে ধূলিদূষণ আর বর্ষায় পানি-কাদার ভয়ানক পরিস্থিতিতে দিশেহারা পথচারী-জনসাধারণ। মুখ থুবড়ে পড়ে থাকা এ প্রকল্প নিয়ে ভুক্তভোগীদের প্রশ্ন, কবে
শেষ হবে রেলওয়ে ওভারপাসে নির্মাণ কাজ ? কবে মানুষ মুক্তি পাবে এ যন্ত্রণা থেকে ?
শোনা যায় সাবেক ধর্ম প্রতিমন্ত্রীর মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠান এ প্রকল্পের কাজ করছিল কিন্তু তাঁর মৃত্যুর পরই কাজ বন্ধ হয়ে যায়। ফরিদপুর সড়ক ও জনপথ (সওজ) কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, ফরিদপুর জেলার সহস্রাইল- আলফাডাঙ্গা সংযোগ সড়কের উন্নয়নসহ মাঝকান্দী-ভাটিয়াপাড়া আঞ্চলিক মহাসড়কের কাজ ২০১৬ সালে একনেকে অনুমোদন পায়। এতে বরাদ্দ ছিল ২৩৯.৬৪ কোটি টাকা।
প্রকল্প শুরুর তারিখ ১ এপ্রিল ২০১৬। প্রকল্পের কাজ শেষ করার মেয়াদ ছিল ৫ সেপ্টেম্বর ২০১৯। তবে আঞ্চলিক মহাসড়কের কাজ সমাপ্ত হয় ওই বছরের (২০১৯) ৩১ ডিসেম্বরের আগে। আঞ্চলিক মহাসড়কটির মোট দৈর্ঘ্য ৪৪ কিলোমিটার। তার মধ্যে ফরিদপুর অংশে হচ্ছে ৩৫.৫৯ কিলোমিটার। আর সাতৈর রেলওয়ে ওভারপাসের স্থানটি ১৫ কিলোমিটারের স্থানে। এই প্রকল্পেই ওভারপাসটি নির্মাণ হওয়ার কথা।
কিন্তু এক তৃতীয়াংশের কাজেই থমকে আছে ওভারপাসটির নির্মাণের কাজ। এদিকে ফরিদপুর সওজে এমএম বিল্ডার্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং লিমিটেড বা মেসার্স এমএস প্রকৌশলী নির্মাণ বিশারদের সঙ্গে যোগাযোগের ফোন নম্বর পাওয়া যায়নি। নির্মাণ এলাকায়ও খোঁজ করে তাদের কোনো কর্মী বা প্রতিনিধির দেখা পাওয়া যায়নি।
চার বছর আগে শুরু হওয়া ওভারপাস নির্মাণকাজ দীর্ঘদিন ধরে বন্ধ রয়েছে।
নির্মাণকাজের সুবিধার্থে পাশ দিয়ে তৈরি করা বাইপাস সড়কটিরও বেহাল দশা। এই বাইপাস সড়ক দিয়েই প্রতিনিয়ত হাজার হাজার ছোট-বড় গাড়ি চলাচল করে। বর্ষা মৌসুমে এই বাইপাসের প্রায় আধা কিলোমিটার সড়কে বৃষ্টির পানিতে সৃষ্টি হয়েছে খানাখন্দের। আর এসব খানাখন্দে প্রায়শই ভারী যানবাহন আটকে যায়। গত কয়েক বছরে বেশ কয়েকটি ভারী যানবাহন উল্টে পড়ার ঘটনাও ঘটেছে। রেলওয়ে ওভারপাস নির্মাণকল্পে বিকল্প হিসেবে অস্থায়ীভাবে তৈরি করা রাস্তাটুকু সংস্কার না করলে যে কোনো মুহ‚র্তে বড় ধরনের দুর্ঘটনা ঘটতে পারে বলে আশঙ্কা স্থানীয়দের। সেজন্য তারা অস্থায়ী বাইপাস সড়কটি সংস্কার করে চলাচলের উপযোগী করার জোর দাবি জানিয়েছেন। গত ২-৩ দিনে বাইপাস সড়কে আজমল শেখের বাড়ির সামনে ট্রাক
ফেঁসে যায়। গোপালগঞ্জ থেকে ধান নিয়ে কুষ্টিয়া যাওয়ার পথে রানা শেখের বাড়ির সামনে ট্রাক ফেঁসে যায়। আলু বোঝাই ২টি ট্রাক সড়কের উপর উল্টে যায়। আজিজ মন্ডলের মাল বোঝাই নসিমন চাকা ভেঙ্গে উল্টে যায়। এ সকল ঘটনায় ঘন্টার পর ঘন্টা যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। বিপাকে পড়ে যাত্রীরা।
অগ্রণী ব্যাংক ফরিদপুর বাস স্টান্ড শাখায় চাকরি করা বোয়ালমাীর শেখ মো. তৈয়ব আলী বলেন, প্রায় প্রতিদিন এখানে আটকে যেতে হয়। সময় মতো অফিসে পৌঁছানো যায় না। দ্রæত এর সমাধান চান তিনি।
স্থানীয় বাসিন্দা মো. নাসির উদ্দীন বলেন, দীর্ঘদিন কাজ না করে এভাবে ফেলে রেখে মানুষ ও যানবাহনের ক্ষতি হচ্ছে। এ ব্যাপারে সাতৈর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. মজিবর রহমান বলেন, এত সুন্দর রাস্তা সামান্য এইটুকুর জন্য মানুষের দুর্ভোগের শেষ নেই। মানুষের কষ্ট কাকে বলে চোখে না দেখলে বিশ্বাস করার মতো নয়। দ্রæত বাইপাস সড়কটি মেরামতের দাবি জানান তিনি।
এ বিষয়ে ফরিদপুর সড়ক ও জনপথের (সওজ) উপ-সহকারী প্রকৌশলী সুমন কর্মকার বলেন, সাতৈর রেলওয়ে ওভারপাসের দৈর্ঘ্য ৪৩৪.৫ মিটার (প্রায় অর্ধকিলোমিটার)। যার ব্যয় ধরা হয় ৩৭ কোটি ৬২ লাখ টাকা। কাজটির ম‚ল ঠিকাদার হচ্ছে এমএম বিল্ডার্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং লিমিটেড। কিন্তু কাজটি জয়েন্ট বেঞ্চারে (জেবি) নিয়ে নেয় মেসার্স এমএস প্রকৌশলী নির্মাণ বিশারদ নামে আরেকটি প্রতিষ্ঠান। যার স্বত্বাধিকারী সাবেক ধর্ম প্রতিমন্ত্রী
মরহুম শেখ মো. আব্দুল্লাহ। সুমন কর্মকার আরও জানান, ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান গত ২০১৭ সালের ৭ আগস্ট কাজ শুরু করে। এখন পর্যন্ত ৩৫ শতাংশ কাজ হয়েছে। তবে বারবার তাদের কাজ করার কথা বললেও নানা অজুহাতে ফেলে রেখেছে। এখন পর্যন্ত যে কাজ বাকি আছে তা করতেও কমপক্ষে এক
বছর সময় লাগবে।
ফরিদপুর সড়ক ও জনপথের (সওজ) নির্বাহী প্রকৌশলী মো. ইমরান ফারহান সুমেল বলেন, ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে বারবার তাগিদ দেয়া হয়েছে। লিখিতভাবে চিঠি পাঠানো হয়েছে।
তারা কাজ করবে, করছি বলে দীর্ঘদিন কাজ না করে ফেলে রেখেছে। সর্বশেষ সিদ্ধান্ত অনুযায়ী আগের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে জরিমানা করে তাদেও সাথে চুক্তি বাতিল করা হবে। দ্রুততম সময়ের মধ্যে রিটেন্ডার করে কাজ শুরু করা হবে। আগামী এক সপ্তাহের মধ্যে বাইপাস সড়কটি মেরামত করে যান চলাচলের উপযোগী করা হবে বলে তিনি আরও জানান।
প্রিন্ট