ঢাকা , শনিবার, ১৯ জুলাই ২০২৫, ৪ শ্রাবণ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম
প্রতিনিধি নিয়োগ
দৈনিক সময়ের প্রত্যাশা পত্রিকার জন্য সারা দেশে জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে প্রতিনিধি নিয়োগ করা হচ্ছে। আপনি আপনার এলাকায় সাংবাদিকতা পেশায় আগ্রহী হলে যোগাযোগ করুন।

ক্ষেতে পঁচছে ফসল, বাজারে কমছে দাম, বিপাকে চাষী

ইনামুল খন্দকারঃ

 

পাইকারি বাজারে দাম কমলেও ভোক্তা পর্যায়ে কমেনি কাঁচা মরিচের দাম। এতে মধ্যস্বত্বভোগীরা মুনাফা হাতিয়ে নিলেও লাভ হচ্ছে না কৃষকের। উপরন্তু সাম্প্রতিক অতিবৃষ্টির কারণে কৃষকের ক্ষেতে মরিচ গাছ পঁচে যাওয়ায় তারা দ্রুত মরিচ তুলে পাইকারদের কাছে বিক্রি করে দিচ্ছে কম দামে।

 

খুচরা বাজারে এই মরিচ বিক্রি হচ্ছে ১৪০ টাকা কেজি দরে। অবশ্য ফরিদপুরের জেলা সদরের চকবাজার হাটে বুধবার বিকেলে দুইশো টাকা কেজি দরেও মরিচ বিক্রি করতে দেখা গেছে। যদিও দোকানিদের দাবি, এই মরিচে ঝাল বেশি হওয়ায় দামও বেশি পড়ছে।

 

ফরিদপুরের কাঁচা মরিচের সর্ববৃহৎ মোকাম হিসেবে পরিচিত মধুখালির কাঁচা মরিচ হাট ও চকবাজারের সাপ্তাহিক হাট পরিদর্শন করে জানা গেছে এসব তথ্য।

 

এদিকে, মধুখালীতে কাঁচা মরিচের দাম হঠাৎ কমে যাওয়ায় কৃষকেরা হতাশ। তারা জানান, গত রোববার মধুখালী মরিচ আড়তে যেখানে মরিচের দাম ৭ থেকে ৮ হাজার টাকা ছিল, সেখানে বুধবার তা নেমে ৪,৩০০ থেকে ৪,৫০০ টাকা করে প্রতি মণ কাঁচা মরিচ বিক্রি হচ্ছে। আগের দিন মঙ্গলবার এই মরিচ ৫ থেকে সাড়ে ৫ হাজার টাকায় বিক্রি হয়েছে।

 

বুধবার মধুখালী আড়তে ঘুরে দেখা যায়, স্থানীয় কৃষকদের মধ্যে হতাশা বিরাজ করছে। তারা বলছেন, ভারত থেকে এলসির মাধ্যমে কাঁচা মরিচ বাংলাদেশে আসায় দেশি মরিচের দাম কমে গেছে।

 

তারা জানান, অতিরিক্ত বৃষ্টির কারণে কৃষকের নিচু জমির মরিচ গাছ মরে যাওয়ায় মরিচের দাম বেড়েছিল। কিন্তু যেটুকু ক্ষেতের মরিচগাছ বেঁচে আছে, তাও যদি দাম কমে যায় তাহলে মরিচ চাষীরা লোকসানে পড়বেন।

 

উপজেলার বামুন্দী বালিয়াকান্দি গ্রামের মরিচ চাষী শামসুল ইসলাম জানান,

“আমি প্রতি বছর ৫ থেকে ৬ পাখি জমিতে মরিচ আবাদ করি। কিন্তু বৃষ্টির কারণে এবার সাড়ে ৪ পাখি জমির মরিচ নষ্ট হয়ে গেছে।”

 

বালিয়াকান্দি উপজেলার চরারকান্দী এলাকার কৃষক আলমগীর বলেন,

“অতিরিক্ত বৃষ্টির কারণে মরিচ গাছে পচন ধরছে। এরপর দাম কমে গেছে। মরিচের দাম ৬ হাজার টাকার উপরে থাকলে লোকসান পুষাবে।”

 

মরিচ চাষীরা আরও বলেন,

“গত পরশু ছিল প্রতি মণ ৮ হাজার টাকা, আজকে তা নেমে এসেছে ৪ হাজার ৩ শো টাকায়। এমনিতে মরিচ চাষ করে লোকসানে আছি, এরপর দাম কম হলে চলতে পারবো না।”

 

কাদিরদি গ্রামের ইকমল হোসেন বলেন,

“ভারতের মরিচ বাংলাদেশে আসায় আমরা সাধারণ কৃষক মরিচের ন্যায্য দাম পাচ্ছি না। আর উপযুক্ত দাম না পেলে আমাদের লোকসান হবেই।”

 

মধুখালী কাঁচা মরিচ আড়তের সাধারণ সম্পাদক আতিয়ার রহমান বলেন,

“একদিন আগে ৭ থেকে ৮ হাজার টাকা দাম ছিল প্রতি মণ মরিচের। হঠাৎ গতকাল থেকে মরিচের দাম কমতে শুরু করেছে। এতে কৃষকের কিছুটা লোকসান হবে। এই দাম ৬ হাজার টাকা না থাকলে মরিচ চাষীদের লোকসানে পড়তে হবে।”

 

মধুখালী উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. মাহবুব এলাহী বলেন,

“চলতি মৌসুমে উপজেলায় ২,৭২০ হেক্টর জমিতে মরিচ আবাদ হয়েছে। অতিরিক্ত বৃষ্টির কারণে ৭ হেক্টর জমির ফসল নষ্ট হয়ে গেছে। ১৫০ হেক্টর জমিতে মরিচের গাছ আক্রান্ত হয়েছে। মরিচ চাষীরা প্রথম দিকে মরিচের দাম পায়নি। কিন্তু এখন অতিরিক্ত বৃষ্টির কারণে যখন দাম বৃদ্ধি পেলো, তখন আবার শুনছি ভারত থেকে মরিচ আমদানি করা হচ্ছে। আমরা কৃষি অফিসের পক্ষ থেকে মরিচ চাষিদের পরামর্শ দিয়ে সহযোগিতা করছি।”


প্রিন্ট
Tag :
এই অথরের আরো সংবাদ দেখুন

জনপ্রিয় সংবাদ

জুলাই-আগস্টে শহীদদের স্মরণে মহম্মদপুরে বিএনপির মৌন মিছিল

error: Content is protected !!

ক্ষেতে পঁচছে ফসল, বাজারে কমছে দাম, বিপাকে চাষী

আপডেট টাইম : ০৬:৪৯ অপরাহ্ন, বুধবার, ১৬ জুলাই ২০২৫
ইনামুল খন্দকার, মধুখালী (ফরিদপুর) থেকে :

ইনামুল খন্দকারঃ

 

পাইকারি বাজারে দাম কমলেও ভোক্তা পর্যায়ে কমেনি কাঁচা মরিচের দাম। এতে মধ্যস্বত্বভোগীরা মুনাফা হাতিয়ে নিলেও লাভ হচ্ছে না কৃষকের। উপরন্তু সাম্প্রতিক অতিবৃষ্টির কারণে কৃষকের ক্ষেতে মরিচ গাছ পঁচে যাওয়ায় তারা দ্রুত মরিচ তুলে পাইকারদের কাছে বিক্রি করে দিচ্ছে কম দামে।

 

খুচরা বাজারে এই মরিচ বিক্রি হচ্ছে ১৪০ টাকা কেজি দরে। অবশ্য ফরিদপুরের জেলা সদরের চকবাজার হাটে বুধবার বিকেলে দুইশো টাকা কেজি দরেও মরিচ বিক্রি করতে দেখা গেছে। যদিও দোকানিদের দাবি, এই মরিচে ঝাল বেশি হওয়ায় দামও বেশি পড়ছে।

 

ফরিদপুরের কাঁচা মরিচের সর্ববৃহৎ মোকাম হিসেবে পরিচিত মধুখালির কাঁচা মরিচ হাট ও চকবাজারের সাপ্তাহিক হাট পরিদর্শন করে জানা গেছে এসব তথ্য।

 

এদিকে, মধুখালীতে কাঁচা মরিচের দাম হঠাৎ কমে যাওয়ায় কৃষকেরা হতাশ। তারা জানান, গত রোববার মধুখালী মরিচ আড়তে যেখানে মরিচের দাম ৭ থেকে ৮ হাজার টাকা ছিল, সেখানে বুধবার তা নেমে ৪,৩০০ থেকে ৪,৫০০ টাকা করে প্রতি মণ কাঁচা মরিচ বিক্রি হচ্ছে। আগের দিন মঙ্গলবার এই মরিচ ৫ থেকে সাড়ে ৫ হাজার টাকায় বিক্রি হয়েছে।

 

বুধবার মধুখালী আড়তে ঘুরে দেখা যায়, স্থানীয় কৃষকদের মধ্যে হতাশা বিরাজ করছে। তারা বলছেন, ভারত থেকে এলসির মাধ্যমে কাঁচা মরিচ বাংলাদেশে আসায় দেশি মরিচের দাম কমে গেছে।

 

তারা জানান, অতিরিক্ত বৃষ্টির কারণে কৃষকের নিচু জমির মরিচ গাছ মরে যাওয়ায় মরিচের দাম বেড়েছিল। কিন্তু যেটুকু ক্ষেতের মরিচগাছ বেঁচে আছে, তাও যদি দাম কমে যায় তাহলে মরিচ চাষীরা লোকসানে পড়বেন।

 

উপজেলার বামুন্দী বালিয়াকান্দি গ্রামের মরিচ চাষী শামসুল ইসলাম জানান,

“আমি প্রতি বছর ৫ থেকে ৬ পাখি জমিতে মরিচ আবাদ করি। কিন্তু বৃষ্টির কারণে এবার সাড়ে ৪ পাখি জমির মরিচ নষ্ট হয়ে গেছে।”

 

বালিয়াকান্দি উপজেলার চরারকান্দী এলাকার কৃষক আলমগীর বলেন,

“অতিরিক্ত বৃষ্টির কারণে মরিচ গাছে পচন ধরছে। এরপর দাম কমে গেছে। মরিচের দাম ৬ হাজার টাকার উপরে থাকলে লোকসান পুষাবে।”

 

মরিচ চাষীরা আরও বলেন,

“গত পরশু ছিল প্রতি মণ ৮ হাজার টাকা, আজকে তা নেমে এসেছে ৪ হাজার ৩ শো টাকায়। এমনিতে মরিচ চাষ করে লোকসানে আছি, এরপর দাম কম হলে চলতে পারবো না।”

 

কাদিরদি গ্রামের ইকমল হোসেন বলেন,

“ভারতের মরিচ বাংলাদেশে আসায় আমরা সাধারণ কৃষক মরিচের ন্যায্য দাম পাচ্ছি না। আর উপযুক্ত দাম না পেলে আমাদের লোকসান হবেই।”

 

মধুখালী কাঁচা মরিচ আড়তের সাধারণ সম্পাদক আতিয়ার রহমান বলেন,

“একদিন আগে ৭ থেকে ৮ হাজার টাকা দাম ছিল প্রতি মণ মরিচের। হঠাৎ গতকাল থেকে মরিচের দাম কমতে শুরু করেছে। এতে কৃষকের কিছুটা লোকসান হবে। এই দাম ৬ হাজার টাকা না থাকলে মরিচ চাষীদের লোকসানে পড়তে হবে।”

 

মধুখালী উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. মাহবুব এলাহী বলেন,

“চলতি মৌসুমে উপজেলায় ২,৭২০ হেক্টর জমিতে মরিচ আবাদ হয়েছে। অতিরিক্ত বৃষ্টির কারণে ৭ হেক্টর জমির ফসল নষ্ট হয়ে গেছে। ১৫০ হেক্টর জমিতে মরিচের গাছ আক্রান্ত হয়েছে। মরিচ চাষীরা প্রথম দিকে মরিচের দাম পায়নি। কিন্তু এখন অতিরিক্ত বৃষ্টির কারণে যখন দাম বৃদ্ধি পেলো, তখন আবার শুনছি ভারত থেকে মরিচ আমদানি করা হচ্ছে। আমরা কৃষি অফিসের পক্ষ থেকে মরিচ চাষিদের পরামর্শ দিয়ে সহযোগিতা করছি।”


প্রিন্ট