‘বালু খেকোরা হাতিয়ে নিচ্ছে লাখ লাখ টাকা, বিভিন্ন জায়গায় বালু সাপ্লাই, বালুবাহক ট্রলির কারনে হচ্ছে পরিবেশ দূষণ’
সমাজের প্রভাবশালী ব্যক্তিরা যখন অপকর্ম ও অবৈধ কাজে জড়িত থাকেন, তখন তাদের প্রতিহত করতে কঠিন হয়ে দাঁড়ায়। ফরিদপুরের সালথা উপজেলার রামকান্তুপুর ইউনিয়ন পরিষদের সামনে শোলডুবি গ্রাম এলাকায় ফসলি জমি থেকে খননযন্ত্র (ড্রেজার মেশিন) দিয়ে মাটি ও বালু উত্তোলন করে বিক্রি করার কাজটি সে কারনেই ঘটতে পারে বলে স্থানীয়রা অনেকেই মনে করছেন।
রাজনৈতিক ছত্রচ্ছায়ায় প্রভাবশালী একটি মহল কৃষি জমি থেকে বিগত ৬ থেকে ৭ বছর যাবৎ বালু উত্তোলন করে বিক্রি করে আসছে। এসব মাটি ও বালু বিভিন্ন ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান, ব্যক্তিগত জায়গা ভরাট, বিভিন্ন সড়কে কন্টাকের মাধ্যমে বিক্রি করে হাতিয়ে নিচ্ছে লাখ লাখ টাকা প্রভাবশালী ওই মহলটি। এতে যেমন পরিবেশ নষ্ট হচ্ছে অন্যদিকে বিভিন্ন রাস্তায় জামজটের সৃষ্টি হচ্ছে।
বালুমহাল ও মাটি ব্যবস্থাপনা আইন ২০১০ এর কোন ধারা উপধারা যেন তাদের কিছু করতে পারছে না। বালু বাহক ট্রলির কারনে সালথার বিভিন্ন সড়কে দূর্ঘটনা ও বেড়েছে। রাতে আশেপাশের লোকজন ঘুমাতে পারেনা এই দানবগাড়ী ট্রলির বিকট শব্দে।
সালথা উপজেলার মধ্যে কেউ বালু কিনতে চাইলে এই মহলের সিন্ডিকেটের কাছেই জিম্মি। তাদের কাছে যেতে হয় বাধ্য হয়ে। কারন ওই প্রভাবশালী মহল ছাড়া কেউ সহজে বালুর ব্যবসা করতে পারছে না। অবস্থা অনেকটাই মগের মুল্লুকের মতো। যার যা খুশি করছেন, কিন্তু কারো যেন কিছু বলার নেই।
স্থানীয় প্রশাসন তাহলে কি করছে ? এভাবে এত দিন ধরে কিভাবে ফসলি জমি নষ্ট করে মাটি ও বালু উত্তোলন করা হচ্ছে। তা কি প্রশাসনের চোখে পড়েনি? স্থানীয় আওয়ামী সেচ্ছাসেবক লীগ নেতা, কৃষক লীগ নেতা সাথে জোড়া দিয়েছে বিএনপির দু একজন নেতাও।
সরোজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, প্রায় ৭ বছর আগে উপজেলার রামকান্তুপুর ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের সভাপতি ও সাবেক চেয়ারম্যান মরহুম আলতাব মোল্যার ছেলে উপজেলা সেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি ইমরাত হোসেন (পিকুল) মোল্যা তাদের পৈতিক (মালিকানা) কয়েক একর ফসলি জমিতে ড্রেজার মেশিন দিয়ে বালু উত্তোলন করে বানিজ্যিক ভাবে বিভিন্ন মহলে বিক্রি করে আসছে।
স্থানীয়রা বার বার অভিযোগ করলেও তা আমলে নেয়নি সে। দাপটের সাথে তিনি দীর্ঘ ৭ বছর ধরে একটানা এই কাজটি করে যাচ্ছে। পাশের কৃষি জমি ক্রয় করেও সেই একই কাজ করছেন তিনি। মূলকথা তিনি ব্যবসায়ীক ভাবে এই বালুর ব্যবসাটি বেছে নিয়েছেন।
অপরদিকে উপজেলা কৃষকলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ইশারত হোসেন তিনিও বিগত ৫/৬ বছর যাবৎ নিজেদের ও পাশের মালিকানা ফসলি জমি ক্রয় করে ১০/১২ একর জমি থেকে নিয়মিত বালু উত্তোলন করে ব্যবসাটি চালিয়ে যাচ্ছে। বিএনপি নেতা কামরুল ইসলাম সহ আরও বেশ কয়েকজন এই একই ব্যবসাটি করছেন। পুরো ফসলি মাঠটি যেন তাদের বালু মহল বলে পরিচিত।
অন্যদিকে প্রশাসন বিভিন্ন ছোট ড্রেজার মেশিন গুলো পুড়িয়ে দিচ্ছে ধরে এনে জেলজরিমানাও করছেন। কিন্তু প্রশাসনের চোখে পড়েনি ওই বালু মহলটি! স্থানীয় অনেকেই মনে করছেন সালথা উপজেলা সদর বাজার ইদানিং যে যাজটের সৃষ্টি হয়েছে তার এক মাত্র কারন হচ্ছে ওই বালু বাহক ট্রলির কারনে।
বিভিন্ন সড়কে দূর্ঘটনা ঘটছে ওই বালু বাহক ট্রলির কারনে। শৈলডুবি গ্রাম থেকে সালথা বাজার পর্যন্ত রাসÍাটির বেহাল দশা করে ছেড়েছে এই দানব গাড়ি ট্রলি। এই রাস্তায় অন্য কোন যাবাহন চলাচলার উপায় নেই। যেমন ধুলো বালু অন্যদিকে রাস্তায় খানাখন্দে ভরে গেছে। এর থেকে পরিত্রান চেয়েছেন এলাকাবাসী।
এব্যাপারে কথা হয় উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোহাম্মদ হাসিব সরকারের সাথে তিনি বলেন, আমি একাধিক বার পদক্ষেপ নিয়েছি তাদের বালু উত্তোলন বন্ধে। যখন পদক্ষেপ নিয়েছি তখন রাজনৈতিক উপর মহল থেকে বাঁধা এসেছে। তারপর আমি পুনরায় আমার উদ্ধর্তন কতৃপক্ষের সাথে কথা বলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহন করবো।
প্রিন্ট