ডেস্ক রিপোর্টঃ
দেশের মাটিতে দাঁড়িয়ে নিজের বসতভিটা রক্ষা করতে গলায় ফাঁস দিতে হবে—এমন বেদনাদায়ক বাস্তবতা আগে কখনও কল্পনা করা যায়নি। তবে এই নির্মম অভিজ্ঞতার শিকার এখন ফরিদপুরের বোয়ালমারী উপজেলার সাতৈর ইউনিয়নের কানখরদী গ্রাম। জমি হারানো মানুষগুলো আর চুপ থাকতে পারেনি। আজ তাদের একটাই দাবি, “আমরা জমি ফেরত চাই, নির্যাতনের বিচার চাই!”
শুক্রবার (১১ জুলাই) বিকেলে কানখরদী মাদরাসার সামনে, মাঝকান্দী-ভাটিয়াপাড়া আঞ্চলিক মহাসড়কের পাশের এক মানববন্ধনে শত শত ক্ষতিগ্রস্ত নারী-পুরুষ অংশ নেন। তাদের মুখে ছিল একই অভিযোগ—মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রী আব্দুর রহমান ক্ষমতার অপব্যবহার করে ভয়ভীতি দেখিয়ে বছরের পর বছর ধরে সাধারণ মানুষের জমি দখল করে আছেন।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, মন্ত্রী আব্দুর রহমান শুধু ব্যক্তিগত জমি দখল করেননি, বরং সরকারি খালের জমিও দখল করে নিজের ‘অটো ব্রিকস’ নামে একটি ইটভাটা স্থাপন করেছেন। এই ব্যবসা চলছে তার মেয়ের জামাই, জুবায়ের নিলয়ের নামে। প্রতিবাদ করতে গেলেই—হুমকি, ভয়ভীতি, মিথ্যা মামলা, রাতের অন্ধকারে পুলিশি তাণ্ডব এবং এমনকি হত্যার মতো ভয়ানক ঘটনা ঘটানো হয়।
চঞ্চল মিয়া বলেন, “আমার বাবার ৬ একর জমি মন্ত্রী কম দামে কিনে নেয় মিল করার কথা বলে। পরে সেই জমিতে মিল না চালিয়ে ইটভাটা নির্মাণ করতে চায়। বাকি ২ একর জমি না দিতে চাইলে রাতের আঁধারে পুলিশ পাঠানো হয়। টাকা দিলে তারা ফিরে যেত। পরে মিথ্যা ডাকাতির মামলা সাজিয়ে মন্ত্রীর লোকজন আমার বাবাকে নির্মমভাবে পিটিয়ে হত্যা করে। আজও আমরা ন্যায়বিচার পাইনি, এমনকি মামলা পর্যন্ত করতে দেয়নি তারা।”
হিন্দু মহাজোটের নেতা সুবাস সাহা জানান, “২০১১ সালে আমি মন্ত্রীর কাছে ৬ একর জমি বিক্রি করি, কিন্তু পুরো টাকা পাইনি। বরং আরও জমি দলিল ছাড়াই দখল করে নেয়। আমার প্রায় ৭৫ লাখ টাকা পাওনা, অথচ তারা কোন টাকা দেয়নি, জমিও গেছে। এখন নানা তালবাহানা করছে।”
হেলেনা বেগম, কানখরদী গ্রামের এক বাসিন্দা, বলেন, “আমার স্বামী সরল-সোজা মানুষ ছিলেন। মন্ত্রীর লোক এসে ৩ হাজার টাকা ধরিয়ে জোর করে ৩২ শতাংশ জমি লিখে নেয়। পরে তারা দখল করে নেয়। এখন সে জমিতে আমাদের পা রাখার জায়গা নেই।”
স্থানীয় ব্যবসায়ী হিরু মুন্সি বলেন, “মন্ত্রী জমি লিখে দেওয়ার কথা বলে আমার কাছ থেকে ৮৭ লাখ টাকা নিয়েছেন। আজও কোনো কাগজ দেয়নি, শুধু প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। আমি স্পষ্টভাবে বলেছি, জমি দিন অথবা টাকা ফেরত দিন। কিন্তু কেউ কোন কথা শুনছে না।”
মানববন্ধনে অংশ নেওয়া স্থানীয়রা বলেন, “আওয়ামী লীগের শাসনামলে এমপি-মন্ত্রীরা এভাবেই সাধারণ মানুষের জমি দখল করে নিয়েছে। আমরা বহু বছর ধরে ভয়ে চুপ ছিলাম, কিন্তু এখন আর নয়। আমরা গণতান্ত্রিক অধিকার প্রয়োগ করে শান্তিপূর্ণ প্রতিবাদ করছি। আমাদের জমি আমাদের ফিরিয়ে দিন।”
তারা আরও বলেন, “৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতা হারিয়ে দেশত্যাগ করে। সরকারের পতনের কয়েকদিন পর মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রী আব্দুর রহমানও গোপনে দেশ থেকে পালিয়ে যায়। এখন আমরা প্রশ্ন করি—যারা এত অন্যায় করেছে, তারা কি চিরকাল পালিয়ে থাকতে পারবে?”
বোয়ালমারী থানার ওসি মাহমুদুল হাসান বলেন, “মানুষ শান্তিপূর্ণভাবে মানববন্ধন করেছে। এখনো পর্যন্ত কোনো অপ্রত্যাশিত পরিস্থিতি তৈরি হয়নি।”
প্রিন্ট