ঢাকা , সোমবার, ১৪ জুলাই ২০২৫, ৩০ আষাঢ় ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম
Logo পার্বতীপুরে মাদ্রসার ৪ একর জায়গা জবরদখলের প্রতিবাদে বিক্ষোভ ও মানববন্ধন অনুষ্ঠিত Logo শার্শায় শিয়াল মারার ফাঁদে কৃষকের মৃত্যু    Logo তানোরে একতা যুব সংঘের নিজস্ব অর্থায়নে বৃক্ষরোপণ কর্মসূচির উদ্বোধন Logo ফরিদপুর পাসপোর্ট অফিসে ৩ জন রোহিঙ্গা ও ২ জন দালাল আটক Logo দুর্নীতিবাজ-মাফিয়াদের রাজনীতি চাই না”— ঝালকাঠিতে এনসিপি আহ্বায়ক নাহিদ ইসলামের ঘোষণা Logo কুষ্টিয়ায় পাউবোর কোটি টাকার তেল চুরির অভিযোগে দুদকের অভিযান Logo চাঁপাইনবাবগঞ্জে ঘুমের ওষুধ খাইয়ে ছেলের বউকে ধর্ষণের অভিযোগে শ্বশুর গ্রেফতার Logo ঠাকুরগাঁওয়ে এক বিষয়ে পরীক্ষা দিয়ে ৩ বিষয়ে ফেল Logo কুষ্টিয়ার দৌলতপুরে অস্ত্র-মাদকসহ আটক ১ Logo কুষ্টিয়া পৌরসভার গেটে আবর্জনা ফেলে কর্মবিরতিতে পরিচ্ছন্নতা কর্মীরা
প্রতিনিধি নিয়োগ
দৈনিক সময়ের প্রত্যাশা পত্রিকার জন্য সারা দেশে জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে প্রতিনিধি নিয়োগ করা হচ্ছে। আপনি আপনার এলাকায় সাংবাদিকতা পেশায় আগ্রহী হলে যোগাযোগ করুন।

তানোরে ফসলী জমি হ্রাস খাদ্য ঘাটতির আশঙ্কা

আলিফ হোসেনঃ

রাজশাহীর তানোর উপজেলার অর্থনীতি প্রায় সম্পুর্ণ কৃষি নির্ভর। তবে নির্বিচারে ফসলি জমি নষ্টের কারণে খাদ্য উদ্বৃত্ত উপজেলায় খাদ্য ঘাটতির আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। রাজনৈতিক পরিচয়ের হোমরাচোমরা ও প্রভাবশালী ভুমিগ্রাসী চক্রের কৌশলের কাছে পরাস্থ হয়ে কৃষি জমির মালিকেরা অনেকটা বাধ্য হয়ে তাদের আবাদি জমিতে পুকুর খনন করতে দিচ্ছে।

প্রভাবশালীরা প্রথমে বিস্তীর্ণ ফসলি জমির মধ্যে যে জমিতে ফসল উৎপাদন তুলনামূলক কম হয় ওই জমিতে কৌশলে পুকুর করা শুরু করে। এর পর ওই পুকুরের কারণে আশপাশের জমিতে জলাবদ্ধতা দেখা দেয়। তখন ওই সব জরিম মালিকেরা ফসল উৎপাদনে লোকশানে পড়ে। এতে তারা তাদের আবাদি জমি প্রভাবশালী ওই পুকুর খননকারীকে লীজ দিয়ে দিতে বাধ্য হয়। উপজেলার চাঁন্দুড়িয়া ইউপির বেড়লপাড়া, জুড়ানপুর, হাড়দহ, রাতৈল, কামাগাঁ ইউপির হাতিশাইল নিজামপুর, তানোর পৌরসভার মাসিন্দা মাঠ এখন পুকুরে পরিণত হয়েছে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক পুকুর খননকারী বলেন, সকলকে ম্যানেজ করতে বিঘা প্রতি ১৫ থেকে ২০ হাজার টাকা খরচ করলেই অনায়াসে ফসলি জমিতে পুকুর খনন করা যায়।

রাজশাহী কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা বলছে, রাজশাহী জেলায় গড়ে প্রতি বছর প্রায় ৮০০ হেক্টর (প্রায় ২ হাজার ৪০০ বিঘা) এবং গত কয়েক বছরে প্রায় ১৭ হাজার ২৪৬ একর ফসলি জমি কমেছে। এ পরিমাণ জমি জেলার মোট আবাদযোগ্য ফসলি জমির এক-তৃতীয়াংশ। এসব জমির বড় অংশই গেছে অবৈধ পুকুরের পেটে।

এছাড়াও যত্রতত্র কল-কারখানা, বসতভিটা বা গ্রামীণ সড়ক তৈরির কাজে ব্যবহৃত হয়েছে। তানোরে বিগত ১০ বছরে প্রায় ১০ হাজার বিঘা কৃষি জমিতে পুকুর খনন হয়েছে এবং কলকারখানা, হিমাগার ও আবাসিক ভবনের কারণে আরো বিপুল পরিমাণ কৃষি জমি নষ্ট হয়েছে।

স্থানীয়রা জানান, তানোর-মুন্ডুমালা রাস্তার ধারে বিএমডিএ’র গভীর নলকুপের কমান্ড এরিয়ায়, আন্ডারগ্রাউন্ড সেচনালা ভেঙ্গে ও জমির শ্রেণী পরিবর্তন না করে, চার ফসলি কৃষি জমিতে কোল্ড স্টোর নির্মাণ করা হচ্ছে। এতে বিপুল পরিমাণ ফসলি নস্ট হচ্ছে।যার প্রভাব পড়বে খাদ্য উৎপাদনে।

স্থানীয়রা জানান, শিল্পায়ন হোক সেটা তারাও চাই, তবে ভাতের থালায় লাথি দিয়ে নয়। অর্থাৎ ফসলি জমি নস্ট করে নয়, পতিত বা এক ফসলি জমিতে করা হোক। সরকারের নির্দেশনা রয়েছে ফসলী জমি নষ্ট করে কোনো কিছুই করা যাবে না। কিন্ত্ত তানোরে প্রশাসনের রহস্যজনক ভুমিকায় ফসলি জমি নষ্টের হিড়িক পড়েছে বলে মনে করছেন কৃষকগণ।

স্থানীয় ভূমি অফিসের এক কর্মকর্তা জানান, উপজেলায় বিগত ১০-১৫ বছরে কমপক্ষে দশ হাজার বিঘা কৃষি জমিতে পুকুর খনন করা হয়েছে এবং হচ্ছে। কিন্তু জমির শ্রেণী পরিবর্তন না হওয়ায় কৃষি জমির খাজনা নিতে হচ্ছে। এতে সরকার বিপুল পরিমান রাজস্ব থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। কারণ কৃষি জমি প্রতি শতকে খাজনা মাত্র ২ টাকা এবং পুকুরের প্রতি শতকে খাজনা ৬০ টাকা। তিনি বলেন, প্রশাসন ও মিডিয়া ম্যানেজ করেই কৃষি জমিতে এসব অবৈধ পুকুর খনন করা হচ্ছে।

এ বিষয়ে উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা সাইফুল্লাহ আহম্মেদ বলেন, কৃষি জমিতে পুকুর খনন প্রতিরোধ করা উপজেলা প্রশাসনের কাজ। এ বিষয়ে তানোর ভূমি অফিসের কর্মকর্তা (তহসিলদার) ইমান আলী জানান, জমির শ্রেণী পরিবর্তন না হলে কিছুই করনীয় নাই। কৃষি জমিতে পুকুর হলেও শ্রেণী পরিবর্তন না হওয়ায় ২ টাকা শতক হিসেবে খাজনা নিতে হয়। এক শতকে ৫৮ টাকা গচ্ছা। তবে কর্তৃপক্ষ কে এসব বিষয়ে অবহিত করা হয়েছে, নতুন ভাবে রেকর্ড না হওয়া পর্যন্ত এনিয়মেই খাজনা আদায় হবে বলে মনে হচ্ছে।


প্রিন্ট
Tag :
এই অথরের আরো সংবাদ দেখুন

জনপ্রিয় সংবাদ

পার্বতীপুরে মাদ্রসার ৪ একর জায়গা জবরদখলের প্রতিবাদে বিক্ষোভ ও মানববন্ধন অনুষ্ঠিত

error: Content is protected !!

তানোরে ফসলী জমি হ্রাস খাদ্য ঘাটতির আশঙ্কা

আপডেট টাইম : ০৫:৩৮ অপরাহ্ন, সোমবার, ১৬ জুন ২০২৫
আলিফ হোসেন, তানোর (রাজশাহী) প্রতিনিধি :

আলিফ হোসেনঃ

রাজশাহীর তানোর উপজেলার অর্থনীতি প্রায় সম্পুর্ণ কৃষি নির্ভর। তবে নির্বিচারে ফসলি জমি নষ্টের কারণে খাদ্য উদ্বৃত্ত উপজেলায় খাদ্য ঘাটতির আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। রাজনৈতিক পরিচয়ের হোমরাচোমরা ও প্রভাবশালী ভুমিগ্রাসী চক্রের কৌশলের কাছে পরাস্থ হয়ে কৃষি জমির মালিকেরা অনেকটা বাধ্য হয়ে তাদের আবাদি জমিতে পুকুর খনন করতে দিচ্ছে।

প্রভাবশালীরা প্রথমে বিস্তীর্ণ ফসলি জমির মধ্যে যে জমিতে ফসল উৎপাদন তুলনামূলক কম হয় ওই জমিতে কৌশলে পুকুর করা শুরু করে। এর পর ওই পুকুরের কারণে আশপাশের জমিতে জলাবদ্ধতা দেখা দেয়। তখন ওই সব জরিম মালিকেরা ফসল উৎপাদনে লোকশানে পড়ে। এতে তারা তাদের আবাদি জমি প্রভাবশালী ওই পুকুর খননকারীকে লীজ দিয়ে দিতে বাধ্য হয়। উপজেলার চাঁন্দুড়িয়া ইউপির বেড়লপাড়া, জুড়ানপুর, হাড়দহ, রাতৈল, কামাগাঁ ইউপির হাতিশাইল নিজামপুর, তানোর পৌরসভার মাসিন্দা মাঠ এখন পুকুরে পরিণত হয়েছে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক পুকুর খননকারী বলেন, সকলকে ম্যানেজ করতে বিঘা প্রতি ১৫ থেকে ২০ হাজার টাকা খরচ করলেই অনায়াসে ফসলি জমিতে পুকুর খনন করা যায়।

রাজশাহী কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা বলছে, রাজশাহী জেলায় গড়ে প্রতি বছর প্রায় ৮০০ হেক্টর (প্রায় ২ হাজার ৪০০ বিঘা) এবং গত কয়েক বছরে প্রায় ১৭ হাজার ২৪৬ একর ফসলি জমি কমেছে। এ পরিমাণ জমি জেলার মোট আবাদযোগ্য ফসলি জমির এক-তৃতীয়াংশ। এসব জমির বড় অংশই গেছে অবৈধ পুকুরের পেটে।

এছাড়াও যত্রতত্র কল-কারখানা, বসতভিটা বা গ্রামীণ সড়ক তৈরির কাজে ব্যবহৃত হয়েছে। তানোরে বিগত ১০ বছরে প্রায় ১০ হাজার বিঘা কৃষি জমিতে পুকুর খনন হয়েছে এবং কলকারখানা, হিমাগার ও আবাসিক ভবনের কারণে আরো বিপুল পরিমাণ কৃষি জমি নষ্ট হয়েছে।

স্থানীয়রা জানান, তানোর-মুন্ডুমালা রাস্তার ধারে বিএমডিএ’র গভীর নলকুপের কমান্ড এরিয়ায়, আন্ডারগ্রাউন্ড সেচনালা ভেঙ্গে ও জমির শ্রেণী পরিবর্তন না করে, চার ফসলি কৃষি জমিতে কোল্ড স্টোর নির্মাণ করা হচ্ছে। এতে বিপুল পরিমাণ ফসলি নস্ট হচ্ছে।যার প্রভাব পড়বে খাদ্য উৎপাদনে।

স্থানীয়রা জানান, শিল্পায়ন হোক সেটা তারাও চাই, তবে ভাতের থালায় লাথি দিয়ে নয়। অর্থাৎ ফসলি জমি নস্ট করে নয়, পতিত বা এক ফসলি জমিতে করা হোক। সরকারের নির্দেশনা রয়েছে ফসলী জমি নষ্ট করে কোনো কিছুই করা যাবে না। কিন্ত্ত তানোরে প্রশাসনের রহস্যজনক ভুমিকায় ফসলি জমি নষ্টের হিড়িক পড়েছে বলে মনে করছেন কৃষকগণ।

স্থানীয় ভূমি অফিসের এক কর্মকর্তা জানান, উপজেলায় বিগত ১০-১৫ বছরে কমপক্ষে দশ হাজার বিঘা কৃষি জমিতে পুকুর খনন করা হয়েছে এবং হচ্ছে। কিন্তু জমির শ্রেণী পরিবর্তন না হওয়ায় কৃষি জমির খাজনা নিতে হচ্ছে। এতে সরকার বিপুল পরিমান রাজস্ব থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। কারণ কৃষি জমি প্রতি শতকে খাজনা মাত্র ২ টাকা এবং পুকুরের প্রতি শতকে খাজনা ৬০ টাকা। তিনি বলেন, প্রশাসন ও মিডিয়া ম্যানেজ করেই কৃষি জমিতে এসব অবৈধ পুকুর খনন করা হচ্ছে।

এ বিষয়ে উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা সাইফুল্লাহ আহম্মেদ বলেন, কৃষি জমিতে পুকুর খনন প্রতিরোধ করা উপজেলা প্রশাসনের কাজ। এ বিষয়ে তানোর ভূমি অফিসের কর্মকর্তা (তহসিলদার) ইমান আলী জানান, জমির শ্রেণী পরিবর্তন না হলে কিছুই করনীয় নাই। কৃষি জমিতে পুকুর হলেও শ্রেণী পরিবর্তন না হওয়ায় ২ টাকা শতক হিসেবে খাজনা নিতে হয়। এক শতকে ৫৮ টাকা গচ্ছা। তবে কর্তৃপক্ষ কে এসব বিষয়ে অবহিত করা হয়েছে, নতুন ভাবে রেকর্ড না হওয়া পর্যন্ত এনিয়মেই খাজনা আদায় হবে বলে মনে হচ্ছে।


প্রিন্ট