রাশিদুল ইসলাম রাশেদঃ
নাটোরের লালপুরে পদ্মায় জেগে উঠা চর এখন অত্র অঞ্চলের জন্য আশীর্বাদ। পদ্মার বুকে ৩৬৮৬ হেক্টর জমিতে উৎপাদিত হচ্ছে আলু, পেয়াজ, রসুন, পটল, বেগুন, করলাসহ বিভিন্ন সবজি। এছাড়া চাষ হচ্ছে আখ, ভুট্টা, গম, পাট, ধান, পেয়ারা, কুল, কলা, আম সহ বিভিন্ন অর্থকরী ও দানাদার ফসল যা সম্ভাবনা জাগিয়েছে কৃষি বিপ্লবের। বেগবান যাচ্ছে এ অঞ্চলের অর্থনীতি। কিন্তু যোগাযোগ ব্যবস্থা ও উন্নত কৃষি প্রযুক্তির অভাবে পাল্টায়নি এ অঞ্চলের কৃষকের কষ্ট। ভঙ্গুর যোগাযোগ ব্যবস্থায় ফসল পরিবহনে গুনতে হয় অতিরিক্ত অর্থ।

এছাড়া চর জাজিরা, আরাজি বাকনা, রসুলপুর, নওসারা, সুলতানপুর, ফতেপুর, বিলমাড়িয়া, চর বাহাদিপুর ৮টি গ্রামের মানুষকে বাজার-ঘাট ও চিকিৎসার জন্য পোহাতে হয় নিদারুন কষ্ট। সরেজমিন ঘুরে ও চরবাসীদের সাথে কথা বলে জানা যায়, নদীর ফেলে যাওয়া পলি মাটিতে জেগে ওঠা চরের জমি অত্যন্ত উর্বর। অল্প পরিশ্রমে প্রচুর ফসল উৎপাদিত হয়। কিন্তু চরে যাতায়াতের রাস্তা ও বৈদ্যুতিক সেচ ব্যবস্থার অনুমতি না থাকায় উৎপাদন খরচ বেশি। এ সময় কৃষকরা চরে সরকারিভাবে সেচ প্রকল্পের ব্যবস্থা করার দাবি জানান।
–
চরের বাসিন্দা ও কৃষক রবিউল ইসলাম রবি (৫৮) বলেন, যোগাযোগের রাস্তা না থাকায় আমাদের সন্তানরা স্কুলে যেতে পারেনা। গর্ভবতী ও অসুস্থ মানুষকে সময় মত হাসপাতালে নেওয়া সম্ভব হয় না। উপজেলার কয়লার ডহর থেকে দিয়ার সংকরপুর চর হয়ে নওসারা পর্যন্ত রাস্তা আছে। আর মাত্র তিন কিলোমিটার রাস্তা নির্মাণ করা হলে আমরা ৮টি গ্রাম খুব সহজেই উপজেলার মূল সড়কের সাথে যুক্ত হতে পারবো।

কৃষক আনোয়ার হোসেন সানা বলেন, চরে আমার ৭০ বিঘা জমিতে আবাদ। কিন্তু রাস্তা না থাকায় পরিবহন খরচ ১০ – ১২ গুণ বেশি হয়। বর্ষাকালে উপজেলা সদরের সাথে সম্পূর্ণরূপে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ি। তবুও খোঁজ নেয়ার সময় হয়নি জনপ্রতিনিধি কিংবা স্থানীয় সরকারি কর্মকর্তাদের। সুলতানপুর চরের বাসিন্দা আশরাফুল বলেন, চরে যাতায়াতের রাস্তাটি উচু করে বাধলে ও উন্নত কৃষি প্রযুক্তির ব্যবহার নিশ্চিত করা গেলে উৎপাদন খরচ অনেক কমে যাবে। এ সময় তিনি চরে সরকারিভাবে সেচ প্রকল্প বাস্তবায়নের দাবি জানান।
এ বিষয়ে সাংবাদিক আলাউদ্দিন জালাল বলেন, চরের মানুষ ও কৃষকের ভাগ্য বদল না হলে টেকসই উন্নয়ন সম্ভব হবে না। তাই চরে উন্নত যোগাযোগ ও আধুনিক কৃষি সুবিধা নিশ্চিতে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন তিনি।
–
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা প্রীতম কুমার হোড় বলেন, লালপুরে পদ্মার চরে মোট আবাদি জমির পরিমাণ ৩৬৮৬ হেক্টর। তন্মধ্যে স্থায়ী ফল বাগান রয়েছে ১২২ হেক্টর। এছাড়া আখ ১৫৬৩ হেক্টর, গম ৮৪১ হেক্টর, মসুর ৪৮২ হেক্টর, চিনাবাদাম ৪৭৮ হেক্টর, শাকসবজি ১২১ হেক্টর, ধনিয়া ১৮ হেক্টর, পেঁয়াজ ৩০ হেক্টর উল্লেখযোগ্য। উপজেলা প্রাণিসম্পদ অফিসার ডা. মোঃ আব্দুল্লাহ জানান, চরে প্রায় ১০০ টির মত বাথান রয়েছে। এসব বাথানে প্রায় ৩০০ খামারি ২৫ হাজার গরু ও মহিষ পালন করে বছরে ১২০০ টন দুধ ও ২০০০ মেট্রিক টন মাংস উৎপাদন করে যা উপজেলার সামগ্রিক অর্থনীতিতে ইতিবাচক প্রভাব রাখছে।

চরে রাস্তা নির্মাণের বিষয়ে বিলমাড়িয়া ইউপির চেয়ারম্যান অধ্যাপক সিদ্দিক আলী মিষ্টু বলেন, খোঁজ নিয়ে কিভাবে অবশিষ্ট রাস্তা নির্মাণ করা যায় সে বিষয়ে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
বিএডিসি বড়াইগ্রাম জোনের সহকারী প্রকৌশলী ও লালপুর উপজেলা সেচ কমিটির সদস্য সচিব মোঃ জিয়াউল হক বলেন, আগামী অর্থবছরে পানাসি প্রকল্পের নতুন ফেজে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে লালপুরে পদ্মার চরে সেচ ব্যবস্থা ও রাস্তার জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। তবে তাৎক্ষণিকভাবে তারা আবেদন করলে সেচের জন্য বৈদ্যুতিক মোটরের লাইসেন্স দেয়া হবে।
–
চরের সার্বিক সুযোগ-সুবিধা বৃদ্ধি প্রসঙ্গে ইউএনও মোঃ মেহেদী হাসান বলেন, আমরা কৃষকদের সব সময় অগ্রাধিকার দিয়ে থাকি। এলাকাবাসীর পক্ষ থেকে আবেদন করা হলে রাস্তা নির্মাণ ও সেচের জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
প্রিন্ট