ফরিদপুরের বোয়ালমারী উপজেলার ময়না ইউনিয়নে ১৮ বছর ধরে মাটির গর্তে শেকলবন্দি অবস্থায় থাকা মো. ওসমান শেখ ওরফে রবিউল নামের এক যুবকের উন্নত চিকিৎসার জন্য পাঠানো হয়েছে পাবনা জেলার হেমায়েতপুরের মানসিক হাসপাতালে।
আজ মঙ্গলবার সকাল ৬টায় তাকে একটি মাইক্রোবাসযোগে নিজ বাড়ি থেকে পাবনার হেমায়েতপুরে পাঠানো হয়। এ সময় তার সঙ্গে ছিলেন বাবা নুরুল মোল্যা ও ফুপু সাজেদা বেগম।
প্রসঙ্গত, গত ৩০ জুলাই ‘১৮ বছর মাটির গর্তে শেকলবন্দি রবিউল’ ও ৩১ জুলাই “১৮ বছর শেকলবন্দি রবিউল” শিরোনামে বিভিন্ন দৈনিক পত্রিকা, অনলাইন গণমাধ্যম সহ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সংনাদ প্রকাশ হয়।
রবিউলের বাবা নুরুল মোল্যা বলেন, আমার মতো গরিব মানুষের পাশে এভাবে কেউ দাঁড়াবে ভাবিনি। তিনি গণমাধ্যমকে ধন্যবাদ জানিয়ে বলেন, আমার রবিউলকে নিয়ে সংবাদ প্রকাশ না হলে হয়তো সারাজীবন ওই মাটির গর্তেই জীবন কাটাতে হতো। এ সময় নুরুল মোল্যা স্থানীয় প্রশাসন ও পুলিশকে ধন্যবাদ জানান।
বোয়ালমারী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ঝোটন চন্দের উদ্যোগে উপজেলা সমাজ সেবার অর্থায়নে রবিউলকে উন্নত চিকিৎসার ব্যবস্থা করা হয়। এ ছাড়াও বোয়ালমারী থানার ওসি মোহাম্মদ নুরুল আলম ব্যক্তি উদ্যোগে নগদ অর্থ ও একটি মাইক্রোবাস দিয়ে রবিউলকে পাবনা পাঠানোর ব্যবস্থা করেন।
এর আগে গত ৩১ জুলাই ইউএনও ওই বাড়িতে পরিদর্শনে গিয়ে নগদ ৫ হাজার টাকাসহ সরকারি খাদ্য সহায়তা করেন। তাছাড়া গতকাল সোমবার বিকেলে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কার্যালয়ে উপজেলা সমাজসেবা দপ্তরের মাধ্যমে মানসিকভাবে অসুস্থ রবিউল ইসলামের বাবার হাতে আরো ৫ হাজার টাকা, চারটি টি-শার্ট ও চারটি ট্রাউজার্সও তুলে দেন ইউএনও।
রবিউলের চিকিৎসার ব্যবস্থাকারী বোয়ালমারী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ঝোটন চন্দ বলেন, বিনামূল্যে রবিউলের সুচিকিৎসার জন্য পাবনা মানসিক হাসপাতালে ভর্তির যাবতীয় প্রক্রিয়া সম্পন্ন করেই তাকে পাঠানো হয়েছে। পাবনা মানসিক হাসপাতালের পরিচালকের সঙ্গে কথা বলে তার সকল ধরণের স্বাস্থ্য সেবা নিশ্চিত করেছি। আশা করছি রবিউল ভালো হয়ে আবার স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসবে।
এ ব্যাপারে বোয়ালমারী থানার ওসি মোহাম্মদ নুরুল আলম জানান, রবিউলের খবরটি জানার পরপরেই পুলিশ সুপার মো. আলীমুজ্জামানের (বিপিএম সেবা) নির্দেশে তার বাড়ি ছুটে যাই এবং আমরা তাকে আর্থিক সহায়তা করি। প্রয়োজনে আরো সহায়তা করা হবে।
মঙ্গলবার বিকেল সাড়ে ৪টায় মানসিক ভারসাম্যহীন রোগী মো. ওসমান ওরফে রবিউলের ভর্তির বিষয়টি নিশ্চিত করে পাবনা মানসিক হাসপাতালের পরিচালক ডা. আবুল বাশার মো. আসাদুজ্জামান বলেন, বোয়ালমারী ইউএনও’র একটি দাপ্তরিক চিঠি পেয়ে রোগীকে ভর্তি করা হয়েছে। স্বাভাবিক ভাবে ওই রোগীর চিকিৎসা শুরু হয়েছে। কিছুদিন পরে তার চিকিৎসার অগ্রগতি জানাতে পারবো।
প্রিন্ট