ঢাকা , শনিবার, ০৭ জুন ২০২৫, ২৩ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
প্রতিনিধি নিয়োগ
দৈনিক সময়ের প্রত্যাশা পত্রিকার জন্য সারা দেশে জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে প্রতিনিধি নিয়োগ করা হচ্ছে। আপনি আপনার এলাকায় সাংবাদিকতা পেশায় আগ্রহী হলে যোগাযোগ করুন।

বাঘায় শেষ মূহূর্তে কোরবানির পশু কেনার তোড়জোড়ঃ সরকারি রেটে খাস আদায়ে বেড়েছে রাজস্ব

আব্দুল হামিদ মিঞাঃ

আর একদিন পর পবিত্র ঈদুল আজহা। বিক্রেতারা ছিলেন বেশি দামে বিক্রির আশায় আর কম দামে কেনার আশায় ছিলেন ক্রেতারা। শেষ মূহুর্তে এসে কেনা বেচার তোড়জোড় শুরু করেছেন ক্রেতা-বিক্রেতা। বৃহসপতিবার(৫জুন’২৫) বাঘার ছাগল হাটে দেখা গেছে ক্রেতাদের ভিড়। ছাগল আমদানিও ছিল বেশি। তবে বাজেটের মধ্যে পশু কিনতে চান ক্রেতারা।

তাদেরই একজন বাজুবাঘা গ্রামের মিলন আহমেদ। তিনি জানান,ভাগে গরু কেনার জন্য তার বাজেট ছিল বিশ হাজার টাকা। কিন্তু ভাগে কেনা হয়নি। তাই ওই বাজেটের মধ্যে ছাগল কিনতে চান। বৃহসপতিবার বাঘার ছাগল হাটায় কথা হলে এমনটাই বলছিলেন তিনি। মিলনের মতো সীমিত আয়ের কয়েকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, তাঁদের কেউ-ই কোরবানির জন্য এবার গতবারের চেয়ে বেশি খরচ করতে চান না। এর মধ্যে দু’জন বলেছেন, কোরবানিতে এবার গতবারের চেয়ে বাজেট কম তাঁদের।

দুজনের একজন বলেছেন, গত বছর ছোট আকারের একটি গরু ৮০ হাজার টাকায় কিনেছিলেন তিনি। তখনই সেটা তাঁর কাছে চাপ হয়ে গিয়েছিল। এবার কম দামের গরু কিনেছেন। বাজেটের সীমাবদ্ধতা রেখেই সপ্তাহ আগে ৬৫ হাজার টাকায় ১টি গরু কিনেছেন সরকারি কলেজের প্রভাষক আব্দুল হানিফ মিয়া। তিনি জানান,গতবার ভাগে কোরবানি দিয়েছিলেন। এবার মা-বাবার ইচ্চা কারও সঙ্গে ভাগে কোরবানি না দেওয়ার।

গত কাল বুধবার(০৪-০৬-২০২৫) উপজেলার আড়ানি পৌরসভাধীন রুস্তমপুর পশু হাট থেকে সাতজন মিলে ১টি গরু কিনেছেন ১লাখ ৬০ হাজার টাকায়। সহকারি অধ্যাপক (অবসরপ্রাপ্ত ) মাজদার রহমান জানান,বাজেটের মধ্যে সীমাবদ্ধতা রেখেই তারা গরুটি কিনেছেন।
ওই হাটে দেখা গেছে, এবার বড় গরুর চেয়ে ছোট ও মাঝারি আকারের গরু বেশি বিক্রি হয়েছে। যে গুলোর দাম ছিল লাখ টাকার নীচে অথবা কিছু উপরে। ব্যবসায়ীরা জানান,এবার ছোট আকৃতির গরু বেশি বিক্রি হয়েছে। হাটে তুলার আগেই বেশির ভাগ ক্রেতা গরু মালিকের বাড়ি থেকে কিনেছেন। তাই হাটে ছোট গরুর আমদানি হয়েছে কম।

ওই হাটে কথা হয় গরু ক্রেতা, চারঘাটের কয়ডাঙ্গা গ্রামের আনোয়ার হোসেনের সঙ্গে। তিনি একটি গরু কিনেছেন ৬৭ হাজার টাকায়। বাগাতিপাড়ার জামনগর গ্রামের বিক্রেতা ইমরান আলী জানান,গত বছর একই আকৃতির গরু বিক্রি করেছিলেন ৭০ হাজার টাকায়। ১ লাখ ১৮ হাজার টাকায় ১টি গরু কিনেছেন পুঠিয়ার কন্দুগোহারা গ্রামের আলী হুসেন। বড়ই গ্রামের কাওছার আলী জানান,গতবারের চেয়ে এবার কম দামে গরু বিক্রি করতে হলো। বিক্রেতারা বলেন, এবার গরু পালন করে বেশি লাভে বিক্রি করতে পারেননি।

হাটে আসা ক্রেতা-বিক্রেতারা জানান, গতবারের চেয়ে এবার খাজনা কম দিতে হয়েছে। তারা জানান,গত বার কোরবানির ঈদ সামনে রেখে ক্রেতাদের গরু প্রতি ৮০০ টাকার উপরে খাজনা দিতে হয়েছে। বিক্রেতাদের কাছ থেকে নেওয়া হয়েছে ২০০ টাকা। এবার ক্রেতারা গরু প্রতি খাজনা দিয়েছেন ৫০০ টাকা। বিক্রেতাদের লাগেনি।

খোঁজ নিয়ে জানা গেল, হাটটি থেকে যে পরিমান রাজস্ব আয় হওয়ার কথা,সিন্ডিকেট করে ইজারা নেওয়ার কারণে সেই পরিমান রাজস্ব আসেনি। যার কারণে পৌরসভা কর্তৃক খাস আদায় করা হচ্ছে। তাতে সরকারি রেটে গরু প্রতি ক্রেতাদের খাজনা দিতে হচ্ছে ৫০০শ টাকা। বিক্রেতাদের খাজনা লাগছেনা। ক্রেতা-বিক্রেতারা জানান, আকার ও বয়স ভেদে এবার জীবিত গরু প্রতি কেজি (লাইভ ওয়েট) ৬০০ টাকা থেকে ৭০০ টাকার মধ্যে বেচা কেনা হয়েছে।

উপজেলা প্রাণী সম্পদ অফিসার ডাঃ আমিরুল ইসলাম জানান,তার উপজেলায় কোরবানির জন্য পশুর চাহিদা- ২৮ হাজার ৩৮২টি। আর কোরবানির জন্য পশু আছে ৩১ হাজার ৪৬৩টি। এবার কোরবানিযোগ্য পশু বেশি আছে ৩হাজার ৮১টি। কযেক বছর ধরে দেশীয় উৎস থেকে অধিক সংখ্যক কোরবানিযোগ্য পশুর জোগান দেওয়া হচ্ছে।

এদিকে খাস আদায়ে (টোল)রাজস্ব আয় বেড়েছে উপজেলার বাঘা পৌরসভাধীন চন্ডিপুর ও আড়ানি পৌরসভাধীন রুস্তপুর পশু হাটে। হাট দুটিতে পশু বেচা কেনা হয় সপ্তাহের একদিন বুধবার ও শুক্রবার। উন্মুক্ত ডাকে যে টাকা রাজস্ব এসেছিল তার চেয়ে বেশি পরিমান রাজস্ব আয় হয়েছে খাস আদায়ে। উন্মুক্ত ডাকে রাজস্ব কম আসায় খাস আদায় করা হচ্ছে বলে জানা গেছে। গতকাল বুধবার (৪জুন’২৫) রুস্তমপুর হাটে আদায় হয়েছে ৯লাখ ৪৯ হাজার টাকা। আগের হাটে আদায় হয়েছিল ৭ লাখ ৭৮ হাজার টাকা। জৈষ্ঠ্য মাসের প্রথম সপ্তাহের চন্ডিপুর হাটে আদায় হয়েছে ১লাখ ৩৫ হাজার আর দ্বিতীয় হাটে আদায় হয়েছে ১লাখ ১০ হাজার টাকা। টোল (হাসিল) আদায়ের চার্ট টানিয়ে দিয়ে গরু/মহিষ প্রতি ৫০০শ টাকা আর ছাগল /ভেড়া প্রতি ২০০টাকা করে আদায় করা হয়েছে।

আড়ানী পৌরসভার প্রশাসক ও উপজেলা সহকারি কমিশনার (ভুমি) সাবিহা সুলতানা ডলি জানান,খাস আদায়ে তার পৌরসভায় বেশি রাজস্ব এসেছে। যা উন্মুক্ত ডাকের তুলনায় অনেক বেশি।

উপজেলা নির্বাহি অফিসার ও বাঘা পৌর প্রশাসক শাম্মী আক্তার বলেন, হাটে রোগাক্রান্ত বা অসুস্থ পশু বিক্রি করতে না পারে সেই লক্ষ্যে দুটি পশু হাটে ভেটেরিনারি মেডিকেল টিম কাজ করছে। জনজীবনে কোনো প্রকার অসুবিধার সৃষ্টি না করে, সেজন্য হাটে আনসার নিযোগ দেওয়া হয়েছিল। পাশাপশি পুলিশও ছিল।


প্রিন্ট
Tag :
এই অথরের আরো সংবাদ দেখুন

জনপ্রিয় সংবাদ
error: Content is protected !!

বাঘায় শেষ মূহূর্তে কোরবানির পশু কেনার তোড়জোড়ঃ সরকারি রেটে খাস আদায়ে বেড়েছে রাজস্ব

আপডেট টাইম : ০৬:০৩ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ৫ জুন ২০২৫
আব্দুল হামিদ মিঞা, বাঘা (রাজশাহী) প্রতিনিধি :

আব্দুল হামিদ মিঞাঃ

আর একদিন পর পবিত্র ঈদুল আজহা। বিক্রেতারা ছিলেন বেশি দামে বিক্রির আশায় আর কম দামে কেনার আশায় ছিলেন ক্রেতারা। শেষ মূহুর্তে এসে কেনা বেচার তোড়জোড় শুরু করেছেন ক্রেতা-বিক্রেতা। বৃহসপতিবার(৫জুন’২৫) বাঘার ছাগল হাটে দেখা গেছে ক্রেতাদের ভিড়। ছাগল আমদানিও ছিল বেশি। তবে বাজেটের মধ্যে পশু কিনতে চান ক্রেতারা।

তাদেরই একজন বাজুবাঘা গ্রামের মিলন আহমেদ। তিনি জানান,ভাগে গরু কেনার জন্য তার বাজেট ছিল বিশ হাজার টাকা। কিন্তু ভাগে কেনা হয়নি। তাই ওই বাজেটের মধ্যে ছাগল কিনতে চান। বৃহসপতিবার বাঘার ছাগল হাটায় কথা হলে এমনটাই বলছিলেন তিনি। মিলনের মতো সীমিত আয়ের কয়েকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, তাঁদের কেউ-ই কোরবানির জন্য এবার গতবারের চেয়ে বেশি খরচ করতে চান না। এর মধ্যে দু’জন বলেছেন, কোরবানিতে এবার গতবারের চেয়ে বাজেট কম তাঁদের।

দুজনের একজন বলেছেন, গত বছর ছোট আকারের একটি গরু ৮০ হাজার টাকায় কিনেছিলেন তিনি। তখনই সেটা তাঁর কাছে চাপ হয়ে গিয়েছিল। এবার কম দামের গরু কিনেছেন। বাজেটের সীমাবদ্ধতা রেখেই সপ্তাহ আগে ৬৫ হাজার টাকায় ১টি গরু কিনেছেন সরকারি কলেজের প্রভাষক আব্দুল হানিফ মিয়া। তিনি জানান,গতবার ভাগে কোরবানি দিয়েছিলেন। এবার মা-বাবার ইচ্চা কারও সঙ্গে ভাগে কোরবানি না দেওয়ার।

গত কাল বুধবার(০৪-০৬-২০২৫) উপজেলার আড়ানি পৌরসভাধীন রুস্তমপুর পশু হাট থেকে সাতজন মিলে ১টি গরু কিনেছেন ১লাখ ৬০ হাজার টাকায়। সহকারি অধ্যাপক (অবসরপ্রাপ্ত ) মাজদার রহমান জানান,বাজেটের মধ্যে সীমাবদ্ধতা রেখেই তারা গরুটি কিনেছেন।
ওই হাটে দেখা গেছে, এবার বড় গরুর চেয়ে ছোট ও মাঝারি আকারের গরু বেশি বিক্রি হয়েছে। যে গুলোর দাম ছিল লাখ টাকার নীচে অথবা কিছু উপরে। ব্যবসায়ীরা জানান,এবার ছোট আকৃতির গরু বেশি বিক্রি হয়েছে। হাটে তুলার আগেই বেশির ভাগ ক্রেতা গরু মালিকের বাড়ি থেকে কিনেছেন। তাই হাটে ছোট গরুর আমদানি হয়েছে কম।

ওই হাটে কথা হয় গরু ক্রেতা, চারঘাটের কয়ডাঙ্গা গ্রামের আনোয়ার হোসেনের সঙ্গে। তিনি একটি গরু কিনেছেন ৬৭ হাজার টাকায়। বাগাতিপাড়ার জামনগর গ্রামের বিক্রেতা ইমরান আলী জানান,গত বছর একই আকৃতির গরু বিক্রি করেছিলেন ৭০ হাজার টাকায়। ১ লাখ ১৮ হাজার টাকায় ১টি গরু কিনেছেন পুঠিয়ার কন্দুগোহারা গ্রামের আলী হুসেন। বড়ই গ্রামের কাওছার আলী জানান,গতবারের চেয়ে এবার কম দামে গরু বিক্রি করতে হলো। বিক্রেতারা বলেন, এবার গরু পালন করে বেশি লাভে বিক্রি করতে পারেননি।

হাটে আসা ক্রেতা-বিক্রেতারা জানান, গতবারের চেয়ে এবার খাজনা কম দিতে হয়েছে। তারা জানান,গত বার কোরবানির ঈদ সামনে রেখে ক্রেতাদের গরু প্রতি ৮০০ টাকার উপরে খাজনা দিতে হয়েছে। বিক্রেতাদের কাছ থেকে নেওয়া হয়েছে ২০০ টাকা। এবার ক্রেতারা গরু প্রতি খাজনা দিয়েছেন ৫০০ টাকা। বিক্রেতাদের লাগেনি।

খোঁজ নিয়ে জানা গেল, হাটটি থেকে যে পরিমান রাজস্ব আয় হওয়ার কথা,সিন্ডিকেট করে ইজারা নেওয়ার কারণে সেই পরিমান রাজস্ব আসেনি। যার কারণে পৌরসভা কর্তৃক খাস আদায় করা হচ্ছে। তাতে সরকারি রেটে গরু প্রতি ক্রেতাদের খাজনা দিতে হচ্ছে ৫০০শ টাকা। বিক্রেতাদের খাজনা লাগছেনা। ক্রেতা-বিক্রেতারা জানান, আকার ও বয়স ভেদে এবার জীবিত গরু প্রতি কেজি (লাইভ ওয়েট) ৬০০ টাকা থেকে ৭০০ টাকার মধ্যে বেচা কেনা হয়েছে।

উপজেলা প্রাণী সম্পদ অফিসার ডাঃ আমিরুল ইসলাম জানান,তার উপজেলায় কোরবানির জন্য পশুর চাহিদা- ২৮ হাজার ৩৮২টি। আর কোরবানির জন্য পশু আছে ৩১ হাজার ৪৬৩টি। এবার কোরবানিযোগ্য পশু বেশি আছে ৩হাজার ৮১টি। কযেক বছর ধরে দেশীয় উৎস থেকে অধিক সংখ্যক কোরবানিযোগ্য পশুর জোগান দেওয়া হচ্ছে।

এদিকে খাস আদায়ে (টোল)রাজস্ব আয় বেড়েছে উপজেলার বাঘা পৌরসভাধীন চন্ডিপুর ও আড়ানি পৌরসভাধীন রুস্তপুর পশু হাটে। হাট দুটিতে পশু বেচা কেনা হয় সপ্তাহের একদিন বুধবার ও শুক্রবার। উন্মুক্ত ডাকে যে টাকা রাজস্ব এসেছিল তার চেয়ে বেশি পরিমান রাজস্ব আয় হয়েছে খাস আদায়ে। উন্মুক্ত ডাকে রাজস্ব কম আসায় খাস আদায় করা হচ্ছে বলে জানা গেছে। গতকাল বুধবার (৪জুন’২৫) রুস্তমপুর হাটে আদায় হয়েছে ৯লাখ ৪৯ হাজার টাকা। আগের হাটে আদায় হয়েছিল ৭ লাখ ৭৮ হাজার টাকা। জৈষ্ঠ্য মাসের প্রথম সপ্তাহের চন্ডিপুর হাটে আদায় হয়েছে ১লাখ ৩৫ হাজার আর দ্বিতীয় হাটে আদায় হয়েছে ১লাখ ১০ হাজার টাকা। টোল (হাসিল) আদায়ের চার্ট টানিয়ে দিয়ে গরু/মহিষ প্রতি ৫০০শ টাকা আর ছাগল /ভেড়া প্রতি ২০০টাকা করে আদায় করা হয়েছে।

আড়ানী পৌরসভার প্রশাসক ও উপজেলা সহকারি কমিশনার (ভুমি) সাবিহা সুলতানা ডলি জানান,খাস আদায়ে তার পৌরসভায় বেশি রাজস্ব এসেছে। যা উন্মুক্ত ডাকের তুলনায় অনেক বেশি।

উপজেলা নির্বাহি অফিসার ও বাঘা পৌর প্রশাসক শাম্মী আক্তার বলেন, হাটে রোগাক্রান্ত বা অসুস্থ পশু বিক্রি করতে না পারে সেই লক্ষ্যে দুটি পশু হাটে ভেটেরিনারি মেডিকেল টিম কাজ করছে। জনজীবনে কোনো প্রকার অসুবিধার সৃষ্টি না করে, সেজন্য হাটে আনসার নিযোগ দেওয়া হয়েছিল। পাশাপশি পুলিশও ছিল।


প্রিন্ট