ফরিদপুরের বোয়ালমারী পৌর শহরের ডাকবাংলা সংলগ্ন জেলা পরিষদের একটি বাণিজ্যিক ভবনে রবিবার রাতে পুলিশ অভিযান
চালিয়েছে। এসময় সেখান থেকে বেশ কয়েকটি রামদা, মালিকবিহীন একটি মোটরসাইকেল ও অন্যান্য কাগজপত্র জব্দ করা হয়।
বোয়ালমারী বাজারের ডাকবাংলা সড়কে জেলা পরিষদের মালিকানাধীন দুই তলা ওই বাণিজ্যিক ভবনটির অবস্থান। ওই ভবনের দ্বিতীয় তলার ১৩ নম্বর কক্ষে মাদক সেবন ও জুয়া খেলার অভিযোগ পেয়ে রবিবার রাত ১০টার দিকে বোয়ালমারী থানা পুলিশ এ অভিযান চালায়।
ভবনের একাধিক ব্যবসায়ীর সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ভবনের বরাদ্দবিহীন ওই কক্ষটি প্রায় তিন বছর ধরে উপজেলা ছাত্রলীগের নব নির্বাচিত সাধারণ সম্পাদক প্রান্ত সিদ্দিক তার ব্যক্তিগত ও ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের কার্যালয় হিসেবে ব্যবহার করতেন।
কক্ষটি নিজের কার্যালয় হিসেবে ব্যবহারের কথা স্বীকার করে সিদ্দিক বলেন, ‘বর্তমানে জেলা পরিষদের মালিকানায় থাকা পাশের একটি একতলা বাণিজ্যিক ভবনের ভাড়া নেওয়া কক্ষে মেসার্স সিদ্দিক এন্টারপ্রাইজ নামে আমার স্থায়ী কার্যালয় রয়েছে। প্রায় পাঁচ-ছয় মাস আগে থেকে আমি নতুন কার্যালয়ে বসি। আগে আমি দোতলার ওই কক্ষটি ব্যবহার করতাম। সেখানে আমার একটি টেবিল ছাড়া অন্য কোনো আসবাব নেই।’
অভিযান পরিচালনাকারী পুলিশের উপ-পরিদর্শক মো. হাফিজুর রহমান মল্লিক সাংবাদিকদের জানান, ‘দোতলার ওই কক্ষ থেকে ছয়টি বড় ধরনের রামদা, একটি চায়নিজ কুড়াল, বড় একটি ছোরা, বিয়ারের চারটি খালি ক্যান, জুয়া খেলায় ব্যবহৃত পাঁচ জোড়া তাস ও অন্যান্য কাগজপত্র উদ্ধার করা হয়েছে। এ সময় ওই ভবনের নিচের সড়কে পাওয়া মালিকবিহীন একটি মোটরসাইকেলও পুলিশ আটক করে থানায় নিয়ে যায়।’
পুলিশের জব্দ তালিকায় স্বাক্ষরকারী ওই ভবনের নিচতলার মেসার্স সুলতান প্রিন্টার্সের মালিক সুলতান আহমেদ বলেন, ‘অভিযান পরিচালনার সময় পুলিশ আমাকে নিচে থেকে ওপরে ডেকে নিয়ে যায়। এ সময় আমি ওই কক্ষে বড় বড় ধারালো অস্ত্র দেখে ভয় পেয়ে যাই।’
আরেক প্রশ্নের উত্তরে সুলতান বলেন, ‘সেখানে প্রান্ত সিদ্দিকির চাচা জেলা পরিষদ সদস্য আবুল কালাম আজাদের নামে থাকা একটি ব্যাংক অ্যাকাউন্টের চেক বই ও তার (আজাদ) ব্যক্তিগত কাগজপত্রের একটি ফাইল পুলিশ আমাকে দেখায়। এরপর পুলিশের তৈরি জব্দ তালিকায় আমার স্বাক্ষর নেয়।’
বোয়ালমারী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ নুরুল আলম ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, ‘ঘটনাটি তদন্ত করে দেখা হচ্ছে। জড়িতদের শনাক্ত করা গেলে এ ব্যাপারে নিয়মিত মামলা রুজু করা হবে।’
এ ব্যাপারে ফরিদপুর জেলা পরিষদের প্রধান নির্বাহী মো. মুজিবুর রহমান বলেন, ‘বিজ্ঞপ্তি দেয়ার পরে নির্ধারিত সেলামী না পাওয়ায় ওই মার্কেটের কিছু কক্ষ এখনও কাউকে বরাদ্দ দেয়া যায়নি। তবে কেউ যদি রাতের আঁধারে বা অবৈধভাবে ঘরের দখল নিলে জেলা পরিষদের বিধি অনুযায়ী তার বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।’
প্রধান নির্বাহী বলেন, ‘ওই কক্ষটির অবৈধ দখলে নেয়ার ঘটনার সঙ্গে জেলা পরিষদের কোনো সদস্য জড়িত থাকলে তার বিরুদ্ধেও আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে। তিনি শিগগির সরেজমিনে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করবেন বলে জানান।’
প্রিন্ট