সেলিম সানোয়ার পলাশঃ
মধু মাসের শ্রেষ্ঠ ফল আম। আর আমের রাজধানী বলে খ্যাত রাজশাহীর পুঠিয়া উপজেলার বানেশ্বর বাজার।
রাজশাহী-ঢাকা মহাসড়কের উপর আমের হাট বসার কারণে যানজট এড়াতে স্থান পরিবর্তন করেছে উপজেলা প্রশাসন। এখন থেকে আমের হাট বসছে বানেশ্বর-চারঘাট সড়কে।
পুঠিয়ার বানেশ্বর বাজারে প্রতি বছরের মতো চলতি বছরেও আমের বাজার জমে উঠেছে।
জানা গেছে, রাজশাহী জেলার প্রত্যন্ত এলাকার আমচাষীরা যেমন এখানে আম বিক্রির জন্য আসেন, তেমনি দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে ব্যবসায়ী ও সাধারণ ক্রেতা-বিক্রেতারাও ভিড় জমান। চলতি বছর প্রশাসনের তদারকির কারণে ব্যবসায়ীরা ফরমালিনমুক্ত আম বিক্রি করছেন বলে জানিয়েছেন এলাকাবাসী।
গোপালভোগের পরে রাজশাহীর বাজারে পাওয়া গেছে রানী পছন্দ ও লক্ষণভোগ। সুমিষ্ট আম কেনাবেচায় জমে উঠেছে রাজশাহীর হাট-বাজারগুলো।
সোমবার (২ জুন) রাজশাহীর পুঠিয়া উপজেলার বানেশ্বর হাটে দিনভর আম কেনাবেচায় মুখর ছিল বাজার।
আম বিক্রেতারা জানান, “জমে উঠেছে রাজশাহীর আমের হাট।”
গত ৩০ মে থেকে বাজারে পাওয়া যাচ্ছে হিমসাগর ও খিরসাপাত জাতের আম।
বানেশ্বর হাট সংশ্লিষ্টরা বলেন, “প্রতিদিন ভালো কেনাবেচা হচ্ছে। তবে হাটটি রাজশাহী-ঢাকা মহাসড়কে হওয়ায় যানজট এড়াতে স্থান পরিবর্তন করে এখন বানেশ্বর-চারঘাট সড়কে স্থানান্তর করা হয়েছে।”
বাজারের ক্রেতা-বিক্রেতা ও আড়তদারদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, বিগত বছরের তুলনায় এ বছর আমের দাম কিছুটা বেশি।
আম চাষি ও ব্যবসায়ীরা জানান:
আঁটি আম: ৭০০–৮০০ টাকা
নেংড়া আম: ১৪০০–১৬০০ টাকা
লোকনা: ৬০০–৯০০ টাকা
রানী প্রসাদ: ১০০০–১২০০ টাকা
খিরসা আম: ১৮০০–২১০০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে।
পুঠিয়ার ধলাট এলাকার আম বিক্রেতা আনোয়ার হোসেন জানান, “লোকনা আম গত বছর ৪০০–৭০০ টাকায় বিক্রি হয়েছে। কিন্তু এবার ৭০০–৯০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এতে কিছুটা লাভ হচ্ছে, তবে কয়েক দফা ঝড়ে অনেক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে।”
আম ও আড়ত ব্যবসায়ী মোঃ আসাদ বলেন, “এবার রোজার পরে ফুল দমে আম হওয়ায় দাম কিছুটা বেশি। তবে আরও কয়েকদিন পর দাম কিছুটা বাড়বে।”
তিনি আরও জানান, এই অঞ্চলে প্রচলিত নিয়ম অনুযায়ী ৪৫/৪৬ কেজিতে এক মণ হিসেবে আম কেনাবেচা হয়।
হাট সংশ্লিষ্টদের ভাষ্য অনুযায়ী, বানেশ্বর হাটে সারাদেশের আম ক্রেতারা ভিড় জমান। এখানকার ব্যবসায়ীরা সরাসরি বাগান থেকে আম কিনে নিজেদের এলাকার হাটে বিক্রি করে থাকেন। রাজশাহীর আমের সুনাম থাকায় সারাদেশে এর চাহিদাও বেশি। বর্তমানে দাম কিছুটা কমলেও ঈদের পর দাম বাড়তে পারে।
ঢাকার আম ব্যবসায়ী ফারুক হোসেন বলেন, “গত বছরের তুলনায় এবার আমের দাম কিছুটা কম। ঈদের ছুটিকে কেন্দ্র করে অনেকে দেশের বাড়িতে যাচ্ছেন, তাই আম কম কিনছেন। তবে ঈদের ছুটি শেষে কর্মজীবনে ফেরার পর দাম বাড়তে পারে। এবার আমের আকার ও রঙ ভালো।”
বানেশ্বর হাটের ইজারাদার জাকির হোসেন সরকার রাসেল বলেন, “আমের বাজার জমে উঠেছে। প্রতিদিন দূরদূরান্ত থেকে ক্রেতা-বিক্রেতায় মুখর থাকে হাট। আমদানি বেশি হওয়ায় দামও কিছুটা কম।”
অপরদিকে, ২৯ মে উপজেলার মাসিক ও আইনশৃঙ্খলা সভায় বানেশ্বর আমের হাট স্থানান্তর সংক্রান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
এরপর ৩০ মে থেকে হাটটি বানেশ্বর ট্রাফিক মোড় থেকে দক্ষিণে চারঘাট রোডে স্থানান্তর করা হয়।
জানা গেছে, পূর্বে হাটটি রাজশাহী-ঢাকা মহাসড়কের পাশেই বসত। সড়কে সারি সারি আমবাহী গাড়ি দাঁড় করিয়ে পসরা সাজানো হতো, যা যানজটের সৃষ্টি করত। এতে যাত্রীদের ঘণ্টার পর ঘণ্টা দুর্ভোগে পড়তে হতো। এই পরিস্থিতি বিবেচনা করে হাট স্থানান্তরের সিদ্ধান্ত নেয় উপজেলা প্রশাসন।
এই বিষয়ে পুঠিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) একেএম নূর হোসেন নির্ঝর বলেন, “বানেশ্বরে আমের হাটের কারণে সড়কে যানজট হচ্ছিল। মানুষের দুর্ভোগের কথা চিন্তা করে হাটটি সরিয়ে চারঘাট সড়কে নেওয়া হয়েছে। এতে হাইওয়ে সড়কে যানজট কমেছে।”
প্রিন্ট