ঢাকা , শুক্রবার, ০৪ জুলাই ২০২৫, ২০ আষাঢ় ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম
Logo দিনাজপুরের ফুলবাড়ীতে বিএনপি’র ৩১ দফা দাবিতে লিফলেট বিতরণ Logo কুষ্টিয়ায় র‌্যাবের অভিযানে ওয়ান শুটারগান উদ্ধার Logo লালপুরে ধর্ষণ মামলার আসামিকে গ্রেফতারের দাবিতে মানববন্ধন Logo মধুখালীতে যৌথ বাহিনীর অভিযানে তিন মাদক কারবারী আটক,মাদক ধ্বংস Logo নাটোরে ১২ বছরের শ্রমিকের ঝুলন্ত লাশ উদ্ধার Logo ফরিদপুরে মধুমতী চলন্ত ট্রেনে পাথর নিক্ষেপে এক যাত্রী আহত Logo বেনাপোলের পুটখালী ইউনিয়ন বিএনপির কর্মী সভা Logo বর্ষা মৌসুমে নদী ভাঙনের তীব্রতা, নিঃশ্ব মধুমতি পাড়ের শতশত পরিবার Logo জালিয়াতির মাধ্যমে টাকা আত্মসাৎ : সাবেক ব্যাংক কর্মকর্তার বিরুদ্ধে কৃষকের মামলা Logo গ্রাম আদালতের মাসিক জেলা সমন্বয় সভা অনুষ্ঠিত
প্রতিনিধি নিয়োগ
দৈনিক সময়ের প্রত্যাশা পত্রিকার জন্য সারা দেশে জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে প্রতিনিধি নিয়োগ করা হচ্ছে। আপনি আপনার এলাকায় সাংবাদিকতা পেশায় আগ্রহী হলে যোগাযোগ করুন।

কাশিমপুরে অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে তৈরি হচ্ছে ‘হানিফ সরিষার তেল’

আরমান হোসেনঃ

 

গাজীপুরের কাশিমপুর এলাকার একটি গোপন কারখানায় অস্বাস্থ্যকর ও নোংরা পরিবেশে তৈরি হচ্ছে ‘হানিফ সরিষার তেল’। ভোক্তাদের প্রতারণা করে বাজারজাত করা হচ্ছে এই তেল, যা জনস্বাস্থ্যের জন্য মারাত্মক হুমকি হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান দীর্ঘদিন ধরে অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে তেল উৎপাদন করে আসছে। সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, প্রতিষ্ঠানটির ভেতরে ন্যূনতম স্বাস্থ্যবিধি বা পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার বালাই নেই। নেই পরিবেশ অধিদপ্তরের অনুমোদন ।

.

স্থানীয়দের অভিযোগ, ওই কারখানায় তেলের কাঁচামাল সংগ্রহ থেকে শুরু করে বোতলজাত করার পুরো প্রক্রিয়ায় নেই কোনো স্বাস্থ্যবিধি বা মান নিয়ন্ত্রণ। ময়লা-আবর্জনায় ভরা পরিবেশে, খোলা হাতে, অপরিষ্কার যন্ত্রপাতি ব্যবহার করে তৈরি করা হচ্ছে তেল। এমনকি তেল সংরক্ষণের জন্য ব্যবহার করা হচ্ছে পুরনো, পুনর্ব্যবহৃত প্লাস্টিকের বোতল, যা জীবাণুমুক্ত করার ন্যূনতম ব্যবস্থা পর্যন্ত নেই।
কারখানাটিতে সরিষা সংরক্ষণ, পিষে তেল নিষ্কাশন ও বোতলজাতকরণ সবই চলছে একই ছাউনির নিচে। শ্রমিকদের অনেকেই স্বাস্থ্য সুরক্ষা সামগ্রী ছাড়া কাজ করছেন।

.

গোপন সূত্রে জানা যায়, কারখানাটির কোনো বৈধ অনুমোদন বা সনদ নেই। স্থানীয় প্রশাসনের চোখ এড়িয়ে দীর্ঘদিন ধরে চলেছে এই অবৈধ কার্যক্রম। তবে সাম্প্রতিক সময়ে ভোক্তাদের সচেতনতার কারণে বিষয়টি সামনে আসতে শুরু করেছে। তেলের বর্জ্য ফেলা হচ্ছে আশেপাশে,খোলা জায়গায় যা পরিবেশ দূষণের অন্যতম কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। অথচ এ বিষয়ে কোনো নজরদারি বা তদারকি নেই স্থানীয় প্রশাসন বা পরিবেশ অধিদপ্তরের।

.

একজন স্থানীয় বাসিন্দা বলেন, “এই তেল খাওয়ার পর অনেকেই পেটের অসুখে ভুগছেন। অথচ প্যাকেট দেখে বোঝার উপায় নেই, এতটা নোংরা পরিবেশে এটা তৈরি হচ্ছে।”

.

উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানটির কর্ণধার হাবিবুর রহমান জানান, তারা বর্তমানে তিনটি পণ্য উৎপাদন করছে, এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য সরিষার তেল, মরিচের গুড়া, হলুদের গুড়া, আমার সবগুলো কাগজপত্র রয়েছে। এবং পরিবেশ অধিদপ্তরের লোকজনের সাথে আমার মৌখিক যোগাযোগ রয়েছে।

.

কিন্তু সিটি কর্পোরেশনের ট্রেড লাইসেন্স ব্যতীত অন্য কোন কাগজপত্রের বালাই নেই। গোডাউনের ভেতরে ঢুকে দেখা যায়, হানিফ মশার কয়েল, লেভেল বিহীন গুড়ের টিন,পামওয়েল তেলের ড্রাম , প্রায় ৩২ টি প্রোডাক্ট বাজারজাত করে হাবিবুর রহমান।

.

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক কর্মকর্তা জানান, “প্রতিষ্ঠানটির কোনো পরিবেশ ছাড়পত্র নেই। তারা সম্পূর্ণ অবৈধভাবে তেল উৎপাদন করছে।”অভিযোগের সত্যতা পেলে দ্রুত আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে এবং কারখানাটি সিলগালা করা হবে। পরিবেশ অধিদপ্তরের একজন দায়িত্বশীল কর্মকর্তা জানান, বিষয়টি তদন্ত করে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

.

ভোক্তাদের প্রতারণা এবং জনস্বাস্থ্যের প্রতি এমন উদাসীনতা প্রশ্ন তুলছে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের নজরদারির কার্যকারিতা নিয়েও। জনস্বাস্থ্য ও খাদ্য নিরাপত্তার বিষয়ে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এমন পরিবেশে তৈরি তেল মানবদেহে মারাত্মক ক্ষতি করতে পারে। এর ফলে গ্যাস্ট্রিক, লিভারের সমস্যা এমনকি ক্যান্সারের ঝুঁকিও বাড়ে। এই ধরনের তেল বাজারে ছড়িয়ে পড়া থামানো কঠিন হবে বলেই মনে করছেন সচেতন মহল।

.

স্থানীয় সচেতন মহল ও পরিবেশবাদীগণের দাবি, দ্রুত এই ধরনের অনিরাপদ তেল উৎপাদন বন্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে সংশ্লিষ্ট প্রশাসনকে।


প্রিন্ট
Tag :
এই অথরের আরো সংবাদ দেখুন

জনপ্রিয় সংবাদ

দিনাজপুরের ফুলবাড়ীতে বিএনপি’র ৩১ দফা দাবিতে লিফলেট বিতরণ

error: Content is protected !!

কাশিমপুরে অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে তৈরি হচ্ছে ‘হানিফ সরিষার তেল’

আপডেট টাইম : ০৯:০৭ অপরাহ্ন, শনিবার, ১৭ মে ২০২৫
আরমান হোসেন, গাজীপুর জেলা প্রতিনিধি :

আরমান হোসেনঃ

 

গাজীপুরের কাশিমপুর এলাকার একটি গোপন কারখানায় অস্বাস্থ্যকর ও নোংরা পরিবেশে তৈরি হচ্ছে ‘হানিফ সরিষার তেল’। ভোক্তাদের প্রতারণা করে বাজারজাত করা হচ্ছে এই তেল, যা জনস্বাস্থ্যের জন্য মারাত্মক হুমকি হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান দীর্ঘদিন ধরে অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে তেল উৎপাদন করে আসছে। সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, প্রতিষ্ঠানটির ভেতরে ন্যূনতম স্বাস্থ্যবিধি বা পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার বালাই নেই। নেই পরিবেশ অধিদপ্তরের অনুমোদন ।

.

স্থানীয়দের অভিযোগ, ওই কারখানায় তেলের কাঁচামাল সংগ্রহ থেকে শুরু করে বোতলজাত করার পুরো প্রক্রিয়ায় নেই কোনো স্বাস্থ্যবিধি বা মান নিয়ন্ত্রণ। ময়লা-আবর্জনায় ভরা পরিবেশে, খোলা হাতে, অপরিষ্কার যন্ত্রপাতি ব্যবহার করে তৈরি করা হচ্ছে তেল। এমনকি তেল সংরক্ষণের জন্য ব্যবহার করা হচ্ছে পুরনো, পুনর্ব্যবহৃত প্লাস্টিকের বোতল, যা জীবাণুমুক্ত করার ন্যূনতম ব্যবস্থা পর্যন্ত নেই।
কারখানাটিতে সরিষা সংরক্ষণ, পিষে তেল নিষ্কাশন ও বোতলজাতকরণ সবই চলছে একই ছাউনির নিচে। শ্রমিকদের অনেকেই স্বাস্থ্য সুরক্ষা সামগ্রী ছাড়া কাজ করছেন।

.

গোপন সূত্রে জানা যায়, কারখানাটির কোনো বৈধ অনুমোদন বা সনদ নেই। স্থানীয় প্রশাসনের চোখ এড়িয়ে দীর্ঘদিন ধরে চলেছে এই অবৈধ কার্যক্রম। তবে সাম্প্রতিক সময়ে ভোক্তাদের সচেতনতার কারণে বিষয়টি সামনে আসতে শুরু করেছে। তেলের বর্জ্য ফেলা হচ্ছে আশেপাশে,খোলা জায়গায় যা পরিবেশ দূষণের অন্যতম কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। অথচ এ বিষয়ে কোনো নজরদারি বা তদারকি নেই স্থানীয় প্রশাসন বা পরিবেশ অধিদপ্তরের।

.

একজন স্থানীয় বাসিন্দা বলেন, “এই তেল খাওয়ার পর অনেকেই পেটের অসুখে ভুগছেন। অথচ প্যাকেট দেখে বোঝার উপায় নেই, এতটা নোংরা পরিবেশে এটা তৈরি হচ্ছে।”

.

উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানটির কর্ণধার হাবিবুর রহমান জানান, তারা বর্তমানে তিনটি পণ্য উৎপাদন করছে, এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য সরিষার তেল, মরিচের গুড়া, হলুদের গুড়া, আমার সবগুলো কাগজপত্র রয়েছে। এবং পরিবেশ অধিদপ্তরের লোকজনের সাথে আমার মৌখিক যোগাযোগ রয়েছে।

.

কিন্তু সিটি কর্পোরেশনের ট্রেড লাইসেন্স ব্যতীত অন্য কোন কাগজপত্রের বালাই নেই। গোডাউনের ভেতরে ঢুকে দেখা যায়, হানিফ মশার কয়েল, লেভেল বিহীন গুড়ের টিন,পামওয়েল তেলের ড্রাম , প্রায় ৩২ টি প্রোডাক্ট বাজারজাত করে হাবিবুর রহমান।

.

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক কর্মকর্তা জানান, “প্রতিষ্ঠানটির কোনো পরিবেশ ছাড়পত্র নেই। তারা সম্পূর্ণ অবৈধভাবে তেল উৎপাদন করছে।”অভিযোগের সত্যতা পেলে দ্রুত আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে এবং কারখানাটি সিলগালা করা হবে। পরিবেশ অধিদপ্তরের একজন দায়িত্বশীল কর্মকর্তা জানান, বিষয়টি তদন্ত করে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

.

ভোক্তাদের প্রতারণা এবং জনস্বাস্থ্যের প্রতি এমন উদাসীনতা প্রশ্ন তুলছে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের নজরদারির কার্যকারিতা নিয়েও। জনস্বাস্থ্য ও খাদ্য নিরাপত্তার বিষয়ে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এমন পরিবেশে তৈরি তেল মানবদেহে মারাত্মক ক্ষতি করতে পারে। এর ফলে গ্যাস্ট্রিক, লিভারের সমস্যা এমনকি ক্যান্সারের ঝুঁকিও বাড়ে। এই ধরনের তেল বাজারে ছড়িয়ে পড়া থামানো কঠিন হবে বলেই মনে করছেন সচেতন মহল।

.

স্থানীয় সচেতন মহল ও পরিবেশবাদীগণের দাবি, দ্রুত এই ধরনের অনিরাপদ তেল উৎপাদন বন্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে সংশ্লিষ্ট প্রশাসনকে।


প্রিন্ট