অপি মুন্সীঃ
মাদারীপুর সদর উপজেলা বাহাদুরপুর ইউনিয়নের কাঠের পোল এলাকার মুদি দোকানদার শান্তি বেগম। চিপস্ আর কয়েকটি বিস্কুটের প্যাকেট ছাড়া দোকানে নেই কোনো মালামাল। দোকানের পিছনেই টিনের ঘরে বসবাস করেন শান্তি বেগম। দোকান করার ছলে এখানেই চলে ইতালি নেয়ার প্রাথমিক আলোচনা। আর পেছনে টিনের ঘরে বসে হয় চুক্তির লাখ লাখ টাকার লেনদেন।
.
লিবিয়ার সাগর যখন উত্তাল থাকে শান্তি বেগমের দোকানও তখন বন্ধ থাকে। আর সাগর যখন নিরব যাত্রীদের ঝুঁকি কম, ফের দোকান খুলে বসেন শান্তি বেগম। এ যেনো লিবিয়া, ইতালি পারাপারের দোকান। এমনটাই জানান শান্তি বেগমের থেকে প্রতারনার শিকার এক ভুক্তভোগী।
.
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ভুক্তভোগী বলেন,লিবিয়ার প্রভাবশালী বাংলাদেশী দালালদের একজন ফরহাদের বাড়ি এই এলাকায়। কয়েক বছরে দালাল ফরহাদ হাজার লোক পাঁচার করেছেন ইতালিতে। বেশীরভাগ যাত্রী পৌঁছালেও মারা যাওয়ার সংখ্যাও নেহাত কম নয়। ফরহাদের নামে একাধিক মানবপাচার মামলা থাকলেও দেশের বাইরে অবস্থান করায় প্রশাসন তাকে খুঁজে পায়না। যেকারণে দীর্ঘ বছর যাবৎ ধারাবাহিক ভাবে অবৈধ পথ লিবিয়ায় লোক নিচ্ছেন এই ফরহাদ।
.
আর এই ফরহাদের হয়েই এই অঞ্চলে কাজ করছে শান্তি বেগম। মানবপাচারে সরাসরি জড়িত শান্তি বেগমের এই দোকানটি হচ্ছে একটি সাইনবোর্ড।
.
এসময় তিনি বলেন, মূলত শান্তি বেগমের এই দোকানটি হচ্ছে পাসপোর্ট, টিকিট ও ভিসা বিক্রির দোকান। তাকে আটক করলে অনেক যাত্রীর পাসপোর্ট, টিকিট, ভিসা পাওয়া যাবে এই দোকানে।
.
শান্তি বেগমের এক ভুক্তভোগী বর্ণনা দেন যেখানে থাকা শান্তি বেগমের কথাগুলো ছিলো- “মোট টাহা দেবেন ২২ লাখ, বই (পাসপোর্ট ) দেওয়ার সময় দেবেন ২ লাখ, আর ৫০০ ডলারের বদলে দেবেন ৫৫০০০, মোট ২৫৫০০০ টাহা দেবেন বই দেওয়ার সময়। বাকি ১৯৪৫০০০ টাহা দেবেন লিবিয়া যাওয়ার পর, গেম দেওয়ার আগে। (ধরা আমার, মরা আল্লার)।
.
৬০ জনরে পাঠাইছি, হ্যারা এহন লাখ লাখ টাহা কামাইতাছে ইতালি বইয়া”। প্রতারনার শিকার ভুক্তভোগী এসময় মহিলা মানবপাচারকারী দালাল শান্তি বেগমের গ্রেপ্তারের দাবী জানান।
.
এ বিষয়ে মাদারীপুর জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার জাহাঙ্গীর আলম জানান, মাদারীপুরে লিবিয়া দিয়ে ইতালি যাওয়ার প্রবণতা বেশি। এই অবৈধ পথে গিয়ে অনেকেই হারাচ্ছেন প্রাণ। আমরা এসব মানব পাচারকারী চক্রের সদস্যদের নিয়মিত আইনের আওতায় এনে বিচার চালিয়ে যাচ্ছি।
প্রিন্ট