ইসমাইল হোসেন বাবুঃ
কুষ্টিয়ার দৌলতপুর উপজেলার মথুরাপুর ইউনিয়নের হোসেনাবাদ ছমিলপাড়া এলাকায় প্রখ্যাত বাউল শিল্পী ফকির শফি মণ্ডলের ৩য় খেলাফত দিবস উপলক্ষে অনুষ্ঠিত হয়েছে একদিনব্যাপী সাধুসঙ্গ ও গ্রামীণ মেলা।
সন্ধায় ‘ ভক্তি সংগীত ও প্রার্থনার মধ্য দিয়ে ২৪ ঘণ্টাব্যাপী এই সাধুসঙ্গের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন হয়। সারারাত চলবে বাউল সাধক লালন সাঁইয়ের গান, বাণী ও দর্শনের আসর।
আজ বুধবার সকালে বাল্যসেবা এবং দুপুরে পূর্ণসেবার মধ্য দিয়ে একদিনব্যাপী সাধুসঙ্গ ও গ্রামীণ মেলার এ আয়োজন।
খেলাফত দিবসকে ঘিরে হোসেনাবাদ হিসনা নদীর তীরে অবস্থিত ফকির শফি মণ্ডলের ‘সুধাসিন্ধু ভাব আশ্রম’ প্রাঙ্গণে বসেছে গ্রামীণ মেলা। মেলায় স্থানীয় কৃষিপণ্য, হস্তশিল্প, গ্রামীণ খেলনা ও নানা লোকজ পণ্যের পাশা পাশি নানা ধরনের খাবারের দোকানের পসরা সাজিয়ে বসেছে দোকানিরা।
সাধুসঙ্গে যোগ দিতে দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে আগত অসংখ্য বাউল, ফকির ও ভক্তজন আশ্রমে সমবেত হন। অনুষ্ঠানস্থলজুড়ে সৃষ্টি হয় এক আধ্যাত্মিক ও উৎসবমুখর পরিবেশ।
মেলা প্রাঙ্গণে কথা হয় ঢাকা থেকে আগত ভক্ত সাব্বির হোসেনের সঙ্গে। তিনি বলেন, গুরুর প্রতিটি খেলাফত দিবসে আমি আসি। মূলত এখানে গুরু শির্ষের ভাব বিনিময়ের একটি আসর বসে। সবার সাথে দেখা হয়, ভালো লাগে।
এদিকে, বাইরে মেলার দোকানিদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, তারা দুই দিন আগেই দোকান বসিয়েছেন। প্রতি বছর এই আয়োজনকে কেন্দ্র করে প্রায় ২০ হাজার মানুষের সমাগম হয়। ব্যবসায়ীরাও জানান, বেচাকেনা ভালো হচ্ছে এবং উৎসবের আমেজে তারা আনন্দিত।
এ বিষয়ে সাধুসঙ্গের আয়োজক কমিটির সদস্য ও ফকির শফি মণ্ডলের জামাতা মুকুল হোসেন বলেন, ২৪ ঘণ্টাব্যাপী এই সাধুসঙ্গে দূর-দূরান্ত থেকে ভক্তবৃন্দ এসেছেন। অনেকে রাতেই পৌঁছাবেন। সন্ধ্যার ভক্তির মধ্য দিয়ে অনুষ্ঠান শুরু হয়েছে।
এদিকে, সাধুসঙ্গ ও ‘সুধাসিন্ধু ভাব আশ্রম’ প্রাঙ্গণে অনুষ্ঠিত গ্রামীণ মেলার নিরাপত্তা ও আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে কাজ করছে দৌলতপুর থানা পুলিশ।
দৌলতপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সোলাইমান শেখ বলেন, মেলা এলাকা ও আশেপাশে আমাদের পুলিশ সদস্যরা দায়িত্ব পালন করছেন। এখানে দূর-দূরান্ত থেকে বহু মানুষ আসছেন, তাই যেন কোনো ধরনের অপ্রীতিকর পরিস্থিতি সৃষ্টি না হয়, সে বিষয়ে পুলিশ সর্বোচ্চ সতর্ক অবস্থানে রয়েছে।
শফি মণ্ডল বাংলাদেশের খ্যাতনামা বাউল ও সুফি সংগীতশিল্পী। তিনি ১৯৫২ সালের ১৩ ডিসেম্বর কুষ্টিয়ার দৌলতপুর উপজেলার ফিলিপনগর গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। পিতা আহাদ আলী মণ্ডল ছিলেন মসজিদের ইমাম। ছোটবেলা থেকেই সংগীতে আগ্রহী শফি মণ্ডল ১৯৭৯ সালে ভারতের সাধন মুখার্জির কাছে উচ্চাঙ্গ সংগীতে তালিম নেন এবং পরে ফকির সুলতান শাহের দীক্ষায় লালন সাঁইয়ের পথ অনুসরণ করেন।
১৯৯৫ সালে তার প্রথম অ্যালবাম প্রকাশিত হয় এবং ১৯৯৮ সালে “লালনের দেশে” তাকে ব্যাপক পরিচিতি এনে দেয়। বর্তমানে তিনি তরুণদের বাউল সংগীত শিক্ষা দিচ্ছেন এবং লালন দর্শন প্রচারে নিবেদিত। ২০২২ সালের ১১ নভেম্বর তিনি খিলাফত গ্রহণ করেন।
প্রিন্ট

বালিয়াকান্দিতে মোবাইলকোট পরিচালনায় দুই ট্রলি চালককে জরিমানা 
ইসমাইল হােসেন বাবু, সিনিয়র ষ্টাফ রিপাের্টার 




















