ঢাকা , শনিবার, ১৫ নভেম্বর ২০২৫, ১ অগ্রহায়ণ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
প্রতিনিধি নিয়োগ
দৈনিক সময়ের প্রত্যাশা পত্রিকার জন্য সারা দেশে জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে প্রতিনিধি নিয়োগ করা হচ্ছে। আপনি আপনার এলাকায় সাংবাদিকতা পেশায় আগ্রহী হলে যোগাযোগ করুন। Hotline- +880 9617 179084

শিকারপুর–কৃষ্ণপুর উচ্চ বিদ্যালয়ে অবুঝ শিশুকে মারধরকে কেন্দ্র করে উত্তেজনা: প্রধান শিক্ষকের অনিয়ম ঢাকতে ভিন্ন খাতে প্রবাহের অভিযোগ

এস. এম সালমান হৃদয়ঃ

 

‎বগুড়া সদর উপজেলার শিকারপুর–কৃষ্ণপুর উচ্চ বিদ্যালয়ে অবুঝ শিশুকে মারধরের ঘটনাকে কেন্দ্র করে এলাকাজুড়ে উত্তেজনা সৃষ্টি হয়েছে। এর সঙ্গে উঠে এসেছে বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক, সহকারী প্রধান শিক্ষক ও এক শিক্ষককে ঘিরে অসত্য তথ্য প্রচারের অভিযোগ।

 

‎৯ নভেম্বর ২০২৫ বিকাল ৪টা ৫ মিনিটে বিদ্যালয় মাঠে ফুটবল খেলতে আসে ৪নং এরুলিয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ও বিদ্যালয় ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি আতিকুর রহমান আতিকের আট বছরের শিশু সন্তান। খেলার এক পর্যায়ে শিশুটির শট বিদ্যালয়ের অষ্টম শ্রেণির এক ছাত্রের গায়ে লাগলে ওই ছাত্র ক্ষিপ্ত হয়ে তাকে বেধড়ক মারধর করে। এতে শিশুটির হাতের কনডা ভেঙে যায়। ঘটনায় উপস্থিত থাকা সহকারী প্রধান শিক্ষক মো. রফিকুল ইসলাম ও সহকারী শিক্ষক বুলবুল হোসেন শিশুটিকে বাঁচানোর পরিবর্তে উল্টো মারধরের পক্ষে মন্তব্য করেন বলে অভিযোগ ওঠে।

 

‎এরপর ঘটনাস্থলে আসেন ইউপি চেয়ারম্যানের সহধর্মিণী, যিনি বিদ্যালয় ম্যানেজিং কমিটির মহিলা সদস্য। পরে চেয়ারম্যান নিজেও এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনেন ও আহত সন্তানের চিকিৎসার ব্যবস্থা করেন।

 

‎কিন্তু ঘটনার পরদিন ১০ নভেম্বর সকালে সভাপতি ছাড়া শিক্ষকরা আলাদা মিটিং করেন এবং সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে চেয়ারম্যানকে জড়িয়ে মিথ্যা তথ্য ছড়িয়ে দেন। উল্লেখ্য, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে চেয়ারম্যানকে জড়িয়ে মিথ্যা সংবাদ প্রচার এবং শিক্ষক দ্বারা মিথ্যা বক্তব্য দেওয়ার জন্য প্রধান শিক্ষক তাদের প্রমোচনা (উৎসাহ) প্রদান করেছেন বলে অভিযোগ ওঠে।

 

‎সহকারী প্রধান শিক্ষক রফিকুল ইসলাম জানান- ‎“আমাকে চেয়ারম্যান আমাকে মারধর করেছেন বলে যে অভিযোগ ছড়ানো হয়েছে, তা সম্পূর্ণ মিথ্যা। আমাকে এসব বলতে বাধ্য করা হয়েছে।”

 

‎অভিযোগ রয়েছে, প্রধান শিক্ষকের পরিকল্পনা ছিল- ‎১০ নভেম্বর মিথ্যা তথ্য ছড়িয়ে ১১ নভেম্বর ২০২৫ তারিখে শিক্ষার্থীদের নিয়ে মানববন্ধন করে বিদ্যালয় ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি পদ থেকে চেয়ারম্যানকে সরানোর চেষ্টা করা। কিন্তু ঘটনার সত্য প্রকাশ পেতে শুরু করলে এবং এলাকাবাসীর জানা-জানির পর পরিস্থিতি ব্যাহত হতে দেখে প্রধান শিক্ষক কৌশলে সহকারী শিক্ষক বুলবুল হোসেনকে বিদ্যালয় থেকে পালিয়ে যাওয়ার সুযোগ করে দেন।

 

‎এদিকে এলাকাবাসী বিদ্যালয়ে এসে প্রধান শিক্ষককে ঘেরাও করেন। পরে সাংবাদিকরা এসে তথ্য-প্রমাণ সংগ্রহ করেন এবং বিষয়টি জেলা শিক্ষা অফিসার ও উপজেলা শিক্ষা অফিসারকে অবহিত করা হয়।

 

‎এরপর বিদ্যালয় ম্যানেজিং কমিটি, জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা রমজান আলী, উপজেলা শিক্ষা অফিসারসহ সংশ্লিষ্টরা বৈঠকে বসেন। সেখানে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে অসত্য তথ্য প্রচার, শিক্ষার্থীদের বিভ্রান্ত করা এবং বিদ্যালয়ের পরিবেশ অস্থিতিশীল করার প্রমাণ পাওয়ায় শিক্ষক বুলবুল হোসেনকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়। পাশাপাশি প্রধান শিক্ষক আশরাফুল ইসলাম পিন্টুর বিরুদ্ধে তদন্ত কমিটি গঠন করে তিন কার্যদিবসের মধ্যে ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস দেয়া হয়।

 

‎স্থানীয়রা অভিযোগ করেন, প্রধান শিক্ষক আগে থেকেই নানা অনিয়মে জড়িত। শিক্ষার্থীদের আপত্তিকর ঘটনার ক্ষেত্রে পক্ষপাতিত্ব, অতীতে নারী শিক্ষার্থীর সঙ্গে আপত্তিকর পরিস্থিতিতে ধরা পড়া ও আচরণগত অসদাচরণসহ বেশকিছু অভিযোগ তার বিরুদ্ধে রয়েছে।

 

‎এলাকাবাসী জানায় ‎তাদের সন্তানদের নিরাপত্তা ও শিক্ষার পরিবেশ ফিরিয়ে আনতে প্রধান শিক্ষক আশরাফুল ইসলাম পিন্টু, শিক্ষক বুলবুল হোসেনের স্থায়ী বহিষ্কারই একমাত্র সমাধান।

‎এ নিয়ে এলাকায় এখনো টানটান উত্তেজনা বিরাজ করছে।


প্রিন্ট
Tag :
এই অথরের আরো সংবাদ দেখুন

জনপ্রিয় সংবাদ

নরসিংদীতে ট্রাকসহ ১৪৮ বস্তা জিরা উদ্ধার, দুই ডাকাত গ্রেফতার

error: Content is protected !!

শিকারপুর–কৃষ্ণপুর উচ্চ বিদ্যালয়ে অবুঝ শিশুকে মারধরকে কেন্দ্র করে উত্তেজনা: প্রধান শিক্ষকের অনিয়ম ঢাকতে ভিন্ন খাতে প্রবাহের অভিযোগ

আপডেট টাইম : ০২:২৫ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ১১ নভেম্বর ২০২৫
এস. এম সালমান হৃদয়, বগুড়া জেলা প্রতিনিধি :

এস. এম সালমান হৃদয়ঃ

 

‎বগুড়া সদর উপজেলার শিকারপুর–কৃষ্ণপুর উচ্চ বিদ্যালয়ে অবুঝ শিশুকে মারধরের ঘটনাকে কেন্দ্র করে এলাকাজুড়ে উত্তেজনা সৃষ্টি হয়েছে। এর সঙ্গে উঠে এসেছে বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক, সহকারী প্রধান শিক্ষক ও এক শিক্ষককে ঘিরে অসত্য তথ্য প্রচারের অভিযোগ।

 

‎৯ নভেম্বর ২০২৫ বিকাল ৪টা ৫ মিনিটে বিদ্যালয় মাঠে ফুটবল খেলতে আসে ৪নং এরুলিয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ও বিদ্যালয় ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি আতিকুর রহমান আতিকের আট বছরের শিশু সন্তান। খেলার এক পর্যায়ে শিশুটির শট বিদ্যালয়ের অষ্টম শ্রেণির এক ছাত্রের গায়ে লাগলে ওই ছাত্র ক্ষিপ্ত হয়ে তাকে বেধড়ক মারধর করে। এতে শিশুটির হাতের কনডা ভেঙে যায়। ঘটনায় উপস্থিত থাকা সহকারী প্রধান শিক্ষক মো. রফিকুল ইসলাম ও সহকারী শিক্ষক বুলবুল হোসেন শিশুটিকে বাঁচানোর পরিবর্তে উল্টো মারধরের পক্ষে মন্তব্য করেন বলে অভিযোগ ওঠে।

 

‎এরপর ঘটনাস্থলে আসেন ইউপি চেয়ারম্যানের সহধর্মিণী, যিনি বিদ্যালয় ম্যানেজিং কমিটির মহিলা সদস্য। পরে চেয়ারম্যান নিজেও এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনেন ও আহত সন্তানের চিকিৎসার ব্যবস্থা করেন।

 

‎কিন্তু ঘটনার পরদিন ১০ নভেম্বর সকালে সভাপতি ছাড়া শিক্ষকরা আলাদা মিটিং করেন এবং সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে চেয়ারম্যানকে জড়িয়ে মিথ্যা তথ্য ছড়িয়ে দেন। উল্লেখ্য, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে চেয়ারম্যানকে জড়িয়ে মিথ্যা সংবাদ প্রচার এবং শিক্ষক দ্বারা মিথ্যা বক্তব্য দেওয়ার জন্য প্রধান শিক্ষক তাদের প্রমোচনা (উৎসাহ) প্রদান করেছেন বলে অভিযোগ ওঠে।

 

‎সহকারী প্রধান শিক্ষক রফিকুল ইসলাম জানান- ‎“আমাকে চেয়ারম্যান আমাকে মারধর করেছেন বলে যে অভিযোগ ছড়ানো হয়েছে, তা সম্পূর্ণ মিথ্যা। আমাকে এসব বলতে বাধ্য করা হয়েছে।”

 

‎অভিযোগ রয়েছে, প্রধান শিক্ষকের পরিকল্পনা ছিল- ‎১০ নভেম্বর মিথ্যা তথ্য ছড়িয়ে ১১ নভেম্বর ২০২৫ তারিখে শিক্ষার্থীদের নিয়ে মানববন্ধন করে বিদ্যালয় ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি পদ থেকে চেয়ারম্যানকে সরানোর চেষ্টা করা। কিন্তু ঘটনার সত্য প্রকাশ পেতে শুরু করলে এবং এলাকাবাসীর জানা-জানির পর পরিস্থিতি ব্যাহত হতে দেখে প্রধান শিক্ষক কৌশলে সহকারী শিক্ষক বুলবুল হোসেনকে বিদ্যালয় থেকে পালিয়ে যাওয়ার সুযোগ করে দেন।

 

‎এদিকে এলাকাবাসী বিদ্যালয়ে এসে প্রধান শিক্ষককে ঘেরাও করেন। পরে সাংবাদিকরা এসে তথ্য-প্রমাণ সংগ্রহ করেন এবং বিষয়টি জেলা শিক্ষা অফিসার ও উপজেলা শিক্ষা অফিসারকে অবহিত করা হয়।

 

‎এরপর বিদ্যালয় ম্যানেজিং কমিটি, জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা রমজান আলী, উপজেলা শিক্ষা অফিসারসহ সংশ্লিষ্টরা বৈঠকে বসেন। সেখানে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে অসত্য তথ্য প্রচার, শিক্ষার্থীদের বিভ্রান্ত করা এবং বিদ্যালয়ের পরিবেশ অস্থিতিশীল করার প্রমাণ পাওয়ায় শিক্ষক বুলবুল হোসেনকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়। পাশাপাশি প্রধান শিক্ষক আশরাফুল ইসলাম পিন্টুর বিরুদ্ধে তদন্ত কমিটি গঠন করে তিন কার্যদিবসের মধ্যে ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস দেয়া হয়।

 

‎স্থানীয়রা অভিযোগ করেন, প্রধান শিক্ষক আগে থেকেই নানা অনিয়মে জড়িত। শিক্ষার্থীদের আপত্তিকর ঘটনার ক্ষেত্রে পক্ষপাতিত্ব, অতীতে নারী শিক্ষার্থীর সঙ্গে আপত্তিকর পরিস্থিতিতে ধরা পড়া ও আচরণগত অসদাচরণসহ বেশকিছু অভিযোগ তার বিরুদ্ধে রয়েছে।

 

‎এলাকাবাসী জানায় ‎তাদের সন্তানদের নিরাপত্তা ও শিক্ষার পরিবেশ ফিরিয়ে আনতে প্রধান শিক্ষক আশরাফুল ইসলাম পিন্টু, শিক্ষক বুলবুল হোসেনের স্থায়ী বহিষ্কারই একমাত্র সমাধান।

‎এ নিয়ে এলাকায় এখনো টানটান উত্তেজনা বিরাজ করছে।


প্রিন্ট