ঢাকা , শনিবার, ১৫ নভেম্বর ২০২৫, ১ অগ্রহায়ণ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
প্রতিনিধি নিয়োগ
দৈনিক সময়ের প্রত্যাশা পত্রিকার জন্য সারা দেশে জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে প্রতিনিধি নিয়োগ করা হচ্ছে। আপনি আপনার এলাকায় সাংবাদিকতা পেশায় আগ্রহী হলে যোগাযোগ করুন। Hotline- +880 9617 179084

দৌলতপুরে বয়স্ক ভাতার টাকা মেম্বারের শ্বশুরের মোবাইলে, অভিযোগ ভাতা ভোগীদের

জিয়াউর রহমানঃ

কুষ্টিয়ার দৌলতপুরে বয়স্ক, প্রতিবন্ধী ও বিধবা ভাতার টাকা আত্মসাৎ এবং মাতৃত্বকালীন ও সরকারি ঘর দেওয়ার নামে অর্থ লেনদেনের অভিযোগ উঠেছে। এ ঘটনায় ভুক্তভোগীরা মাইকিং করে প্রতিবাদ করেছেন।
সোমবার (১০ নভেম্বর) সকালে প্রায় ৩০ থেকে ৫০ জন ভাতা ও সরকারি ঘর না পাওয়া নারী-পুরুষ গ্রামে মাইকিং করে এ প্রতিবাদে অংশ নেন।

 

অভিযোগকারীরা জানান, ইউনিয়নের আমজাদ হোসেন মেম্বার দীর্ঘ দুই বছর ধরে তাদের কোনো ভাতার টাকা দিচ্ছেন না। খোঁজ নিয়ে তারা দেখেছেন, ওই ভাতার টাকা মেম্বারের শ্বশুরের মোবাইল নম্বরে যাচ্ছে।

 

এ ছাড়া মাতৃত্বকালীন ভাতার কার্ড তৈরি ও সরকারি বাড়ি দেওয়ার নামেও মেম্বার অর্থ লেনদেন করেছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। তারা বলেন, আমজাদ মেম্বার মাতৃত্বকালীন কার্ড দেওয়ার নামে ৫ থেকে ১০ হাজার টাকা পর্যন্ত নিয়েছেন। সরকারি বাড়ি দেওয়ার নামেও একইভাবে টাকা নিয়েছেন, কিন্তু কোনো কাজ করেননি।

 

ভুক্তভোগীদের অভিযোগ, বয়স্ক ও প্রতিবন্ধী ভাতার টাকাও বিগত দুই বছর ধরে আমজাদ মেম্বারের শ্বশুরের মোবাইল নম্বরেই যাচ্ছে। প্রতিবাদে উপস্থিত একাধিক ব্যক্তি জানান, দুই বছরের মধ্যে মাত্র একবার ভাতা বাবদ টাকা পেয়েছি। এরপর আর কোনো টাকা পাইনি। সমাজসেবা অফিসে বারবার গিয়েও কোনো ফল হয়নি, বরং আমাদের অপমান করে তাড়িয়ে দিয়েছে।

 

৬৪ বছর বয়সী সুলতান নামের এক বৃদ্ধা অভিযোগ করে বলেন, আমি দেড় বছরের মধ্যে মাত্র একবার ভাতা বাবদ টাকা পেয়েছি। এরপর আর কোনো টাকা পাইনি। বারবার সমাজসেবা অফিসে গিয়েও কোনো ফল হয়নি, বরং আমাকে অপমান করে তাড়িয়ে দিয়েছে।

 

পরে আমি ইউএনও স্যারের কাছে গেলে তিনি যাচাই করে দেখেন, আমার নামে থাকা ভাতার টাকা অন্য একটি নম্বরে যাচ্ছে। এরপর আমি সেই নম্বরে ফোন দিলে জানতে পারি, ফোনটি আমজাদ মেম্বারের শ্বশুরের নামে নিবন্ধিত এবং তিনিই কথা বলছেন।

 

অন্যদিকে, লিটন নামের এক ব্যক্তি বলেন, আমার স্ত্রী ঝুমকা খাতুনের গর্ভকালীন ভাতার কার্ড করে দেওয়ার নাম করে আমজাদ মেম্বার ছয় হাজার টাকা নিয়েছিলেন। কিন্তু দুই বছর পেরিয়ে গেলেও এখন পর্যন্ত তিনি না কার্ডটি করে দেননি।

একই এলাকার সুরাতন নেছাসহ আরও অনেকে অভিযোগ করে বলেন, সরকারি ঘর দেওয়ার নাম করে মেম্বার তার কাছ থেকে ৫ ও ১০ হাজার টাকা করে নিয়েছেন, কিন্তু এখন পর্যন্ত আমজাদ তাকে ঘর দেননি।

 

এ বিষয়ে মেম্বার আমজাদ হোসেন সত্যতা স্বীকার করে বলেন, আমি প্রায় ১০ জন ভাতাভোগীর টাকা নয়-ছয় করেছি। এটা আমার ভুল হয়েছে।

 

আদাবাড়িয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আব্দুল বাকি বলেন, গরিবের ভাতার টাকা আত্মসাৎ করার কোনো সুযোগ নেই। তথ্য-প্রমাণের ভিত্তিতে আমজাদ মেম্বার দোষী প্রমাণিত হলে তাকে শাস্তি ভোগ করতে হবে।

 

এ ঘটনায় দৌলতপুর উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা জহিরুল ইসলাম বলেন, ভাতা ভোগীদের মোবাইল নম্বরসংক্রান্ত বিষয়ে অনেক সময় নানা সমস্যা দেখা দেয়। অনেকে নিজেদের মোবাইল নম্বর না দিয়ে মেয়ের বা ছেলের নম্বর ব্যবহার করেন। ফলে টাকা অ্যাকাউন্টে গেলেও তা অনেক সময় গোপন রাখা হয়।

 

এ ছাড়া, প্রতিটি ইউনিয়নে একটি করে কমিটি রয়েছে। সুবিধাভোগীরা তাদের মোবাইল নম্বর, জাতীয় পরিচয়পত্রসহ অন্যান্য তথ্য সেই কমিটির মাধ্যমে যাচাই-বাছাই করে আমাদের দপ্তরে জমা দেয়। এরপর আমরা প্রয়োজনীয় কাজ সম্পন্ন করে তা ঊর্ধ্বতন দপ্তরে প্রেরণ করি। ওই অঞ্চলে যে ঘটনাটি ঘটেছে, আমরা তা তদন্ত করে দেখব এবং সর্বোচ্চ চেষ্টা করব যাতে প্রকৃত ভাতাভোগী তার প্রাপ্ত টাকা পান। একইসঙ্গে দোষী ব্যক্তিকে আইনের আওতায় আনার ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

 

দৌলতপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার আব্দুল হাই সিদ্দিকী বলেন, এ ধরনের কোনো অভিযোগ এখনো তিনি পাননি। তবে অভিযোগ পেলে বিষয়টি তদন্ত করে দোষীদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। পাশাপাশি ভাতা ভোগীরা যাতে তাদের প্রাপ্য টাকা পান, সে বিষয়ে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া হবে।


প্রিন্ট
Tag :
এই অথরের আরো সংবাদ দেখুন

জনপ্রিয় সংবাদ

নরসিংদীতে ট্রাকসহ ১৪৮ বস্তা জিরা উদ্ধার, দুই ডাকাত গ্রেফতার

error: Content is protected !!

দৌলতপুরে বয়স্ক ভাতার টাকা মেম্বারের শ্বশুরের মোবাইলে, অভিযোগ ভাতা ভোগীদের

আপডেট টাইম : ০৭:২১ অপরাহ্ন, সোমবার, ১০ নভেম্বর ২০২৫
মোঃ জিয়াউর রহমান, দৌলতপুর (কুষ্টিয়া) প্রতিনিধি :

জিয়াউর রহমানঃ

কুষ্টিয়ার দৌলতপুরে বয়স্ক, প্রতিবন্ধী ও বিধবা ভাতার টাকা আত্মসাৎ এবং মাতৃত্বকালীন ও সরকারি ঘর দেওয়ার নামে অর্থ লেনদেনের অভিযোগ উঠেছে। এ ঘটনায় ভুক্তভোগীরা মাইকিং করে প্রতিবাদ করেছেন।
সোমবার (১০ নভেম্বর) সকালে প্রায় ৩০ থেকে ৫০ জন ভাতা ও সরকারি ঘর না পাওয়া নারী-পুরুষ গ্রামে মাইকিং করে এ প্রতিবাদে অংশ নেন।

 

অভিযোগকারীরা জানান, ইউনিয়নের আমজাদ হোসেন মেম্বার দীর্ঘ দুই বছর ধরে তাদের কোনো ভাতার টাকা দিচ্ছেন না। খোঁজ নিয়ে তারা দেখেছেন, ওই ভাতার টাকা মেম্বারের শ্বশুরের মোবাইল নম্বরে যাচ্ছে।

 

এ ছাড়া মাতৃত্বকালীন ভাতার কার্ড তৈরি ও সরকারি বাড়ি দেওয়ার নামেও মেম্বার অর্থ লেনদেন করেছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। তারা বলেন, আমজাদ মেম্বার মাতৃত্বকালীন কার্ড দেওয়ার নামে ৫ থেকে ১০ হাজার টাকা পর্যন্ত নিয়েছেন। সরকারি বাড়ি দেওয়ার নামেও একইভাবে টাকা নিয়েছেন, কিন্তু কোনো কাজ করেননি।

 

ভুক্তভোগীদের অভিযোগ, বয়স্ক ও প্রতিবন্ধী ভাতার টাকাও বিগত দুই বছর ধরে আমজাদ মেম্বারের শ্বশুরের মোবাইল নম্বরেই যাচ্ছে। প্রতিবাদে উপস্থিত একাধিক ব্যক্তি জানান, দুই বছরের মধ্যে মাত্র একবার ভাতা বাবদ টাকা পেয়েছি। এরপর আর কোনো টাকা পাইনি। সমাজসেবা অফিসে বারবার গিয়েও কোনো ফল হয়নি, বরং আমাদের অপমান করে তাড়িয়ে দিয়েছে।

 

৬৪ বছর বয়সী সুলতান নামের এক বৃদ্ধা অভিযোগ করে বলেন, আমি দেড় বছরের মধ্যে মাত্র একবার ভাতা বাবদ টাকা পেয়েছি। এরপর আর কোনো টাকা পাইনি। বারবার সমাজসেবা অফিসে গিয়েও কোনো ফল হয়নি, বরং আমাকে অপমান করে তাড়িয়ে দিয়েছে।

 

পরে আমি ইউএনও স্যারের কাছে গেলে তিনি যাচাই করে দেখেন, আমার নামে থাকা ভাতার টাকা অন্য একটি নম্বরে যাচ্ছে। এরপর আমি সেই নম্বরে ফোন দিলে জানতে পারি, ফোনটি আমজাদ মেম্বারের শ্বশুরের নামে নিবন্ধিত এবং তিনিই কথা বলছেন।

 

অন্যদিকে, লিটন নামের এক ব্যক্তি বলেন, আমার স্ত্রী ঝুমকা খাতুনের গর্ভকালীন ভাতার কার্ড করে দেওয়ার নাম করে আমজাদ মেম্বার ছয় হাজার টাকা নিয়েছিলেন। কিন্তু দুই বছর পেরিয়ে গেলেও এখন পর্যন্ত তিনি না কার্ডটি করে দেননি।

একই এলাকার সুরাতন নেছাসহ আরও অনেকে অভিযোগ করে বলেন, সরকারি ঘর দেওয়ার নাম করে মেম্বার তার কাছ থেকে ৫ ও ১০ হাজার টাকা করে নিয়েছেন, কিন্তু এখন পর্যন্ত আমজাদ তাকে ঘর দেননি।

 

এ বিষয়ে মেম্বার আমজাদ হোসেন সত্যতা স্বীকার করে বলেন, আমি প্রায় ১০ জন ভাতাভোগীর টাকা নয়-ছয় করেছি। এটা আমার ভুল হয়েছে।

 

আদাবাড়িয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আব্দুল বাকি বলেন, গরিবের ভাতার টাকা আত্মসাৎ করার কোনো সুযোগ নেই। তথ্য-প্রমাণের ভিত্তিতে আমজাদ মেম্বার দোষী প্রমাণিত হলে তাকে শাস্তি ভোগ করতে হবে।

 

এ ঘটনায় দৌলতপুর উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা জহিরুল ইসলাম বলেন, ভাতা ভোগীদের মোবাইল নম্বরসংক্রান্ত বিষয়ে অনেক সময় নানা সমস্যা দেখা দেয়। অনেকে নিজেদের মোবাইল নম্বর না দিয়ে মেয়ের বা ছেলের নম্বর ব্যবহার করেন। ফলে টাকা অ্যাকাউন্টে গেলেও তা অনেক সময় গোপন রাখা হয়।

 

এ ছাড়া, প্রতিটি ইউনিয়নে একটি করে কমিটি রয়েছে। সুবিধাভোগীরা তাদের মোবাইল নম্বর, জাতীয় পরিচয়পত্রসহ অন্যান্য তথ্য সেই কমিটির মাধ্যমে যাচাই-বাছাই করে আমাদের দপ্তরে জমা দেয়। এরপর আমরা প্রয়োজনীয় কাজ সম্পন্ন করে তা ঊর্ধ্বতন দপ্তরে প্রেরণ করি। ওই অঞ্চলে যে ঘটনাটি ঘটেছে, আমরা তা তদন্ত করে দেখব এবং সর্বোচ্চ চেষ্টা করব যাতে প্রকৃত ভাতাভোগী তার প্রাপ্ত টাকা পান। একইসঙ্গে দোষী ব্যক্তিকে আইনের আওতায় আনার ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

 

দৌলতপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার আব্দুল হাই সিদ্দিকী বলেন, এ ধরনের কোনো অভিযোগ এখনো তিনি পাননি। তবে অভিযোগ পেলে বিষয়টি তদন্ত করে দোষীদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। পাশাপাশি ভাতা ভোগীরা যাতে তাদের প্রাপ্য টাকা পান, সে বিষয়ে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া হবে।


প্রিন্ট