ঢাকা , শনিবার, ১৫ নভেম্বর ২০২৫, ১ অগ্রহায়ণ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
প্রতিনিধি নিয়োগ
দৈনিক সময়ের প্রত্যাশা পত্রিকার জন্য সারা দেশে জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে প্রতিনিধি নিয়োগ করা হচ্ছে। আপনি আপনার এলাকায় সাংবাদিকতা পেশায় আগ্রহী হলে যোগাযোগ করুন। Hotline- +880 9617 179084

বোয়ালমারীতে বিএনপি কেন্দ্রীয় নেতা নিতাই রায় চৌধুরীর গাড়ি আটকে বিক্ষোভ

মিজান উর রহমানঃ

 

বোয়ালমারীতে বিএনপি প্রার্থী কেন্দ্রীয় নেতা নিতাই রায় চৌধুরীর গাড়ি আটকে বিক্ষোভ করে উপজেলা ও পৌর বিএনপির নেতা-কর্মীরা। ফরিদপুরের তিন উপজেলায় (আলফাডাঙ্গা-বোয়ালমারী-মধুখালী) বিএনপির কমিটি গঠন ও মনোনয়নকে কেন্দ্র করে বিরোধের সৃষ্টি হয়েছে। উপজেলা ও পৌর বিএনপিতে চলছে গৃহদাহ।

 

এ অবস্থায় বুধবার (৫ নভেম্বর) সন্ধায় দলটির নেতাকর্মীরা মানববন্ধন ও বিক্ষোভ কর্মসূচি পালন করেন। এসময় ওই সড়ক দিয়ে যাচ্ছিলেন মাগুরার-২ আসনের বিএনপি প্রার্থী অ্যাডভোকেট নিতাই রায় চৌধুরী। নিতাই রায়ের গাড়ী বহর বোয়ালমারী চৌরাস্তায় পৌঁছানোর সাথে সাথে নেতাকর্মীরা তার গাড়ি আটকে দেয় এবং বিক্ষোভ প্রদর্শন করে।

 

এদিন বিকেল সাড়ে ৪টা থেকে সন্ধা পর্যন্ত বোয়ালমারী উপজেলার চৌরাস্তায় বোয়ালমারী ও আলফাডাঙ্গা উপজেলা বিএনপি ও এর অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মীরা মানববন্ধন ও বিক্ষোভ কর্মসূচি পালন করে। দলীয় ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, সম্প্রতি বোয়ালমারী, আলফাডাঙ্গা, মধুখালীর বিএনপি কমিটি গঠনকে কেন্দ্র করে এই বিরোধের সূত্রপাত হয়। বিক্ষোভকারীদের অভিযোগ, কৃষকদলের কেন্দ্রীয় সহ-সভাপতি খোন্দকার নাসিরুল ইসলাম আওয়ামী লীগ থেকে আসা কয়েকজনকে বিএনপিতে অন্তর্ভুক্ত করে নিজের পছন্দমতো কমিটি দিয়েছেন। এতে দীর্ঘদিন দলের জন্য নিবেদিত ত্যাগী নেতাকর্মীরা উপেক্ষিত হয়েছেন।

 

মানববন্ধন চলাকালে একপর্যায়ে বিক্ষোভকারীরা মাঝকান্দি-ভাটিয়াপাড়া আঞ্চলিক মহাসড়ক আংশিকভাবে অবরোধ করেন। এতে কিছু সময়ের জন্য যান চলাচল ব্যাহত হয়ে দীর্ঘ যানজটের সৃষ্টি হয়। এ সময় ঘটনাস্থল দিয়ে নিজ নির্বাচনী এলাকা মাগুরার মহম্মদপুরে যাচ্ছিলেন বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতা ও সাবেক মন্ত্রী অ্যাডভোকেট নিতাই রায় চৌধুরী। বিক্ষোভকারীরা তাঁর গাড়ি ঘিরে স্লোগান দিতে থাকেন এবং ক্ষোভ প্রকাশ করেন। পরিস্থিতি উত্তপ্ত হয়ে উঠলে নিতাই রায় চৌধুরী নেতাকর্মীদের শান্ত থাকার আহ্বান জানিয়ে ঘটনাস্থল ত্যাগ করেন।

 

পরে বিক্ষোভকারীরা একটি মিছিল বের করে শহরের প্রধান সড়ক প্রদক্ষিণ শেষে স্থানীয় বিএনপি কার্যালয়ের সামনে গিয়ে সমাবেশের মাধ্যমে কর্মসূচি শেষ করা হয়।

 

মানববন্ধনে বক্তারা বলেন, সদ্য ঘোষিত বিএনপির কমিটিতে প্রকৃত কর্মীদের বঞ্চিত করে আওয়ামী লীগপন্থি ও আর্থিকভাবে সুবিধাপ্রাপ্তদের পদ দেওয়া হয়েছে। খোন্দকার নাসিরুল ইসলাম টাকার বিনিময়ে আওয়ামী লীগারদের দিয়ে বিএনপির কমিটি গঠন করেছেন। যারা বছরের পর বছর দলের জন্য জেল-জুলুম, হামলা-মামলা সহ্য করেছেন, তাদের বাদ দেওয়া হয়েছে। অনতিবিলম্বে খেন্দকার নাসিরুলকে দল থেকে বহিষ্কার করে দলের শৃঙ্খলা ফেরাতে হবে।

 

তারা আরও হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেন, এই আওয়ামী লীগপন্থি কমিটি বাতিল না হলে ফরিদপুর-১ আসনে রাজপথে গণআন্দোলন গড়ে তোলা হবে। খেন্দকার নাসিরুল ইসলাম অতীতে দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গের কারণে একাধিকবার বহিষ্কৃত হয়েছেন, অথচ তিনি আর্থিক লেনদেনের মাধ্যমে বিতর্কিত ব্যক্তিদের কমিটিতে অন্তর্ভুক্ত করেছেন। এতে শুধু দলের আদর্শই নয়, খালেদা জিয়া ও ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের প্রতি অবমাননা করা হয়েছে বলেও তারা মন্তব্য করেন।

 

বিক্ষোভ ও উপস্থিত ছিলেন- উপজেলা বিএনপির সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক মজিবুর রহমান বাবু, উপজেলা বিএনপির সম্মেলন প্রস্তুতি কমিটির সদস্য সচিব নাজিম উদ্দিন মিলু মিয়া, উপজেলা বিএনপির সহসভাপতি ডা. আব্দুস সবুর, পৌর বিএনপির সাবেক সহসভাপতি জাহাঙ্গীর আলম কালা মিয়া, বোয়ালমারী সরকারি কলেজের সাবেক জিএস ও বোয়ালমারী উপজেলা ছাত্রদলের সাবেক সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর আলম মুকুল।

 

এছাড়াও বিক্ষোভ আরও উপস্থিত ছিলেন- বিএনপি নেতা ও বার বার নির্বাচিত সাবেক মেম্বার এনায়েত হোসেন, মফিজুর কাদের খান মিল্টন, সাবেক কাউন্সিলার শেখ আজিজুল হক, সাবেক কাউন্সিলার শেখ আতিকুল আলী, উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের সদস্য সচিব জাকির হোসেন চৌধুরী, উপজেলা ছাত্রদলের সাবেক সভাপতি ও শেখর ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান রইসুল ইসলাম পলাশ, উপজেলা জাসাসের আহ্বায়ক মো. শাহিন আনোয়ার, রুপাপাত ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি মো. আবুল কালাম, চতুল ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি একলিম শরীফ, উপজেলা ছাত্রদলের সাবেক সভাপতি হোসেন সালেহ্ রুবেল, পৌর জিয়া সৈনিক দল সভাপতি মো. মোজাহিদ শেখ, ছাত্রদল নেতা মোজাহিদ শেখ, জাকারিয়া মোল্যা সুমন, জুয়েল, সাদমান পাপ্পু প্রমুখ।

 

গত ২৩ অক্টোবর জেলা বিএনপির আহ্বায়ক সৈয়দ মোদাররেস আলী ইছা ও সদস্য সচিব একেএম কিবরিয়া স্বপনের স্বাক্ষরে বোয়ালমারী উপজেলা ও পৌর বিএনপির ১০১ সদস্য বিশিষ্ট পৃথক দুটি কমিটি ঘোষণা করা হয়। এরপর থেকেই অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্ব প্রকাশ্যে চলে আসে।


প্রিন্ট
Tag :
এই অথরের আরো সংবাদ দেখুন

জনপ্রিয় সংবাদ

নরসিংদীতে ট্রাকসহ ১৪৮ বস্তা জিরা উদ্ধার, দুই ডাকাত গ্রেফতার

error: Content is protected !!

বোয়ালমারীতে বিএনপি কেন্দ্রীয় নেতা নিতাই রায় চৌধুরীর গাড়ি আটকে বিক্ষোভ

আপডেট টাইম : ১১:৫০ অপরাহ্ন, বুধবার, ৫ নভেম্বর ২০২৫
মিজান উর রহমান, সিনিয়র স্টাফ রিপোর্টার :

মিজান উর রহমানঃ

 

বোয়ালমারীতে বিএনপি প্রার্থী কেন্দ্রীয় নেতা নিতাই রায় চৌধুরীর গাড়ি আটকে বিক্ষোভ করে উপজেলা ও পৌর বিএনপির নেতা-কর্মীরা। ফরিদপুরের তিন উপজেলায় (আলফাডাঙ্গা-বোয়ালমারী-মধুখালী) বিএনপির কমিটি গঠন ও মনোনয়নকে কেন্দ্র করে বিরোধের সৃষ্টি হয়েছে। উপজেলা ও পৌর বিএনপিতে চলছে গৃহদাহ।

 

এ অবস্থায় বুধবার (৫ নভেম্বর) সন্ধায় দলটির নেতাকর্মীরা মানববন্ধন ও বিক্ষোভ কর্মসূচি পালন করেন। এসময় ওই সড়ক দিয়ে যাচ্ছিলেন মাগুরার-২ আসনের বিএনপি প্রার্থী অ্যাডভোকেট নিতাই রায় চৌধুরী। নিতাই রায়ের গাড়ী বহর বোয়ালমারী চৌরাস্তায় পৌঁছানোর সাথে সাথে নেতাকর্মীরা তার গাড়ি আটকে দেয় এবং বিক্ষোভ প্রদর্শন করে।

 

এদিন বিকেল সাড়ে ৪টা থেকে সন্ধা পর্যন্ত বোয়ালমারী উপজেলার চৌরাস্তায় বোয়ালমারী ও আলফাডাঙ্গা উপজেলা বিএনপি ও এর অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মীরা মানববন্ধন ও বিক্ষোভ কর্মসূচি পালন করে। দলীয় ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, সম্প্রতি বোয়ালমারী, আলফাডাঙ্গা, মধুখালীর বিএনপি কমিটি গঠনকে কেন্দ্র করে এই বিরোধের সূত্রপাত হয়। বিক্ষোভকারীদের অভিযোগ, কৃষকদলের কেন্দ্রীয় সহ-সভাপতি খোন্দকার নাসিরুল ইসলাম আওয়ামী লীগ থেকে আসা কয়েকজনকে বিএনপিতে অন্তর্ভুক্ত করে নিজের পছন্দমতো কমিটি দিয়েছেন। এতে দীর্ঘদিন দলের জন্য নিবেদিত ত্যাগী নেতাকর্মীরা উপেক্ষিত হয়েছেন।

 

মানববন্ধন চলাকালে একপর্যায়ে বিক্ষোভকারীরা মাঝকান্দি-ভাটিয়াপাড়া আঞ্চলিক মহাসড়ক আংশিকভাবে অবরোধ করেন। এতে কিছু সময়ের জন্য যান চলাচল ব্যাহত হয়ে দীর্ঘ যানজটের সৃষ্টি হয়। এ সময় ঘটনাস্থল দিয়ে নিজ নির্বাচনী এলাকা মাগুরার মহম্মদপুরে যাচ্ছিলেন বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতা ও সাবেক মন্ত্রী অ্যাডভোকেট নিতাই রায় চৌধুরী। বিক্ষোভকারীরা তাঁর গাড়ি ঘিরে স্লোগান দিতে থাকেন এবং ক্ষোভ প্রকাশ করেন। পরিস্থিতি উত্তপ্ত হয়ে উঠলে নিতাই রায় চৌধুরী নেতাকর্মীদের শান্ত থাকার আহ্বান জানিয়ে ঘটনাস্থল ত্যাগ করেন।

 

পরে বিক্ষোভকারীরা একটি মিছিল বের করে শহরের প্রধান সড়ক প্রদক্ষিণ শেষে স্থানীয় বিএনপি কার্যালয়ের সামনে গিয়ে সমাবেশের মাধ্যমে কর্মসূচি শেষ করা হয়।

 

মানববন্ধনে বক্তারা বলেন, সদ্য ঘোষিত বিএনপির কমিটিতে প্রকৃত কর্মীদের বঞ্চিত করে আওয়ামী লীগপন্থি ও আর্থিকভাবে সুবিধাপ্রাপ্তদের পদ দেওয়া হয়েছে। খোন্দকার নাসিরুল ইসলাম টাকার বিনিময়ে আওয়ামী লীগারদের দিয়ে বিএনপির কমিটি গঠন করেছেন। যারা বছরের পর বছর দলের জন্য জেল-জুলুম, হামলা-মামলা সহ্য করেছেন, তাদের বাদ দেওয়া হয়েছে। অনতিবিলম্বে খেন্দকার নাসিরুলকে দল থেকে বহিষ্কার করে দলের শৃঙ্খলা ফেরাতে হবে।

 

তারা আরও হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেন, এই আওয়ামী লীগপন্থি কমিটি বাতিল না হলে ফরিদপুর-১ আসনে রাজপথে গণআন্দোলন গড়ে তোলা হবে। খেন্দকার নাসিরুল ইসলাম অতীতে দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গের কারণে একাধিকবার বহিষ্কৃত হয়েছেন, অথচ তিনি আর্থিক লেনদেনের মাধ্যমে বিতর্কিত ব্যক্তিদের কমিটিতে অন্তর্ভুক্ত করেছেন। এতে শুধু দলের আদর্শই নয়, খালেদা জিয়া ও ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের প্রতি অবমাননা করা হয়েছে বলেও তারা মন্তব্য করেন।

 

বিক্ষোভ ও উপস্থিত ছিলেন- উপজেলা বিএনপির সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক মজিবুর রহমান বাবু, উপজেলা বিএনপির সম্মেলন প্রস্তুতি কমিটির সদস্য সচিব নাজিম উদ্দিন মিলু মিয়া, উপজেলা বিএনপির সহসভাপতি ডা. আব্দুস সবুর, পৌর বিএনপির সাবেক সহসভাপতি জাহাঙ্গীর আলম কালা মিয়া, বোয়ালমারী সরকারি কলেজের সাবেক জিএস ও বোয়ালমারী উপজেলা ছাত্রদলের সাবেক সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর আলম মুকুল।

 

এছাড়াও বিক্ষোভ আরও উপস্থিত ছিলেন- বিএনপি নেতা ও বার বার নির্বাচিত সাবেক মেম্বার এনায়েত হোসেন, মফিজুর কাদের খান মিল্টন, সাবেক কাউন্সিলার শেখ আজিজুল হক, সাবেক কাউন্সিলার শেখ আতিকুল আলী, উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের সদস্য সচিব জাকির হোসেন চৌধুরী, উপজেলা ছাত্রদলের সাবেক সভাপতি ও শেখর ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান রইসুল ইসলাম পলাশ, উপজেলা জাসাসের আহ্বায়ক মো. শাহিন আনোয়ার, রুপাপাত ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি মো. আবুল কালাম, চতুল ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি একলিম শরীফ, উপজেলা ছাত্রদলের সাবেক সভাপতি হোসেন সালেহ্ রুবেল, পৌর জিয়া সৈনিক দল সভাপতি মো. মোজাহিদ শেখ, ছাত্রদল নেতা মোজাহিদ শেখ, জাকারিয়া মোল্যা সুমন, জুয়েল, সাদমান পাপ্পু প্রমুখ।

 

গত ২৩ অক্টোবর জেলা বিএনপির আহ্বায়ক সৈয়দ মোদাররেস আলী ইছা ও সদস্য সচিব একেএম কিবরিয়া স্বপনের স্বাক্ষরে বোয়ালমারী উপজেলা ও পৌর বিএনপির ১০১ সদস্য বিশিষ্ট পৃথক দুটি কমিটি ঘোষণা করা হয়। এরপর থেকেই অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্ব প্রকাশ্যে চলে আসে।


প্রিন্ট