ঢাকা , শনিবার, ১৫ নভেম্বর ২০২৫, ১ অগ্রহায়ণ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
প্রতিনিধি নিয়োগ
দৈনিক সময়ের প্রত্যাশা পত্রিকার জন্য সারা দেশে জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে প্রতিনিধি নিয়োগ করা হচ্ছে। আপনি আপনার এলাকায় সাংবাদিকতা পেশায় আগ্রহী হলে যোগাযোগ করুন। Hotline- +880 9617 179084

ছোটগল্পঃ স্মৃতির পাতায়

শামীম আহমেদঃ

 

প্রায় দশ বছর পর আবার কলেজ স্ট্রিটে পা দিল অনিক। বদলেছে অনেক কিছু—কিন্তু বইয়ের গন্ধটা ঠিক আগের মতোই আছে। পুরনো কাগজের সেই মলিন ঘ্রাণ যেন স্মৃতির খোঁজে টেনে এনেছে তাকে।

একটা দোকানে দাঁড়িয়ে পুরনো বই উল্টে পাল্টে দেখছিল সে। হঠাৎ চোখ আটকে গেল একটি পাতলা পান্ডুলিপির উপর—মলাট নেই, ভেতরের পাতাগুলো হলদেটে। উপরের কোণে হঠাৎ কী যেন চোখে পড়ল—মিহি অক্ষরে লেখা, “তোমার অনিক”।

হৃদয়টা ধক করে উঠল।

এই তো সেই হাতের লেখা। নিশির। কলেজে পড়াকালীন, তারা প্রতিদিন একে অপরকে চিঠি লিখত। এখনকার ছেলেমেয়েরা বুঝবে না—চিঠি মানে ছিল অপেক্ষা, অধীরতা, আর প্রেমের নিঃশব্দ ভাষা।

নিশি ছিল অন্যরকম—চুপচাপ, কিন্তু শব্দের ভিতরে গভীর সমুদ্র লুকোনো। তাদের প্রেমটা শুরু হয়েছিল একটা কবিতা দিয়ে। শেষও হয়েছিল কবিতার মতোই—নিঃশব্দ, অসমাপ্ত।

দুজনেই ভালোবাসত সাহিত্য। কিন্তু বাস্তবের পৃষ্ঠায় কবিতারা টেকে না। পরিবার, সমাজ, ক্যারিয়ারের বাস্তবতা তাদের টেনে নিয়ে গিয়েছিল আলাদা আলাদা দিকে।

আজ এই পান্ডুলিপি যেন পুরনো সেই বন্ধ জানালার ফাঁক খুলে দিল। ভিতরের পাতায় আরও কয়েকটি চিঠি—নিশির হাতে লেখা কবিতা, কিছু অপূর্ণ বাক্য, আর একটা ছোট নোট—

“যদি কোনোদিন আবার এই শহরে আসো, এই দোকানটা খুঁজে নিও। আমি রেখে গেলাম আমাদের গল্পটা এখানে, কোনো এক বিকেলের জন্য…”

অনিকের চোখ ঝাপসা হয়ে এল। বুকের ভেতর কোথাও একটা হাহাকার জমে উঠল—যা একদিন ফেলে এসেছিল, তা আজ আবার ছুঁয়ে গেল।

করুণ কণ্ঠে বিক্রেতা বলল, “স্যার, বইটা নেবেন?”

অনিক ধীরে মাথা নেড়ে বলল, “হ্যাঁ, এইটুকু আমি ফিরিয়ে নিতে চাই।”

হাত বাড়িয়ে যখন টাকাটা দিল, তখন মনে হলো, হারানো কিছু আসলে পুরোপুরি হারায় না।

কিছু স্মৃতি শুধু অপেক্ষা করে, কোনো এক মেঘলা বিকেলে ফিরে আসবে বলে…।

 

– শামীম আহমেদ

কবি, লেখক ও সাহিত্যিক

 


প্রিন্ট
Tag :
এই অথরের আরো সংবাদ দেখুন

জনপ্রিয় সংবাদ

বগুড়া শহরকে যানজটমুক্ত রাখতে রেললাইন শহরের বাইরে নেওয়ার দাবি

error: Content is protected !!

ছোটগল্পঃ স্মৃতির পাতায়

আপডেট টাইম : ০৬:০৫ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৬ জুন ২০২৫
শামীম আহমেদ, কবি, লেখক ও সাহিত্যিক :

শামীম আহমেদঃ

 

প্রায় দশ বছর পর আবার কলেজ স্ট্রিটে পা দিল অনিক। বদলেছে অনেক কিছু—কিন্তু বইয়ের গন্ধটা ঠিক আগের মতোই আছে। পুরনো কাগজের সেই মলিন ঘ্রাণ যেন স্মৃতির খোঁজে টেনে এনেছে তাকে।

একটা দোকানে দাঁড়িয়ে পুরনো বই উল্টে পাল্টে দেখছিল সে। হঠাৎ চোখ আটকে গেল একটি পাতলা পান্ডুলিপির উপর—মলাট নেই, ভেতরের পাতাগুলো হলদেটে। উপরের কোণে হঠাৎ কী যেন চোখে পড়ল—মিহি অক্ষরে লেখা, “তোমার অনিক”।

হৃদয়টা ধক করে উঠল।

এই তো সেই হাতের লেখা। নিশির। কলেজে পড়াকালীন, তারা প্রতিদিন একে অপরকে চিঠি লিখত। এখনকার ছেলেমেয়েরা বুঝবে না—চিঠি মানে ছিল অপেক্ষা, অধীরতা, আর প্রেমের নিঃশব্দ ভাষা।

নিশি ছিল অন্যরকম—চুপচাপ, কিন্তু শব্দের ভিতরে গভীর সমুদ্র লুকোনো। তাদের প্রেমটা শুরু হয়েছিল একটা কবিতা দিয়ে। শেষও হয়েছিল কবিতার মতোই—নিঃশব্দ, অসমাপ্ত।

দুজনেই ভালোবাসত সাহিত্য। কিন্তু বাস্তবের পৃষ্ঠায় কবিতারা টেকে না। পরিবার, সমাজ, ক্যারিয়ারের বাস্তবতা তাদের টেনে নিয়ে গিয়েছিল আলাদা আলাদা দিকে।

আজ এই পান্ডুলিপি যেন পুরনো সেই বন্ধ জানালার ফাঁক খুলে দিল। ভিতরের পাতায় আরও কয়েকটি চিঠি—নিশির হাতে লেখা কবিতা, কিছু অপূর্ণ বাক্য, আর একটা ছোট নোট—

“যদি কোনোদিন আবার এই শহরে আসো, এই দোকানটা খুঁজে নিও। আমি রেখে গেলাম আমাদের গল্পটা এখানে, কোনো এক বিকেলের জন্য…”

অনিকের চোখ ঝাপসা হয়ে এল। বুকের ভেতর কোথাও একটা হাহাকার জমে উঠল—যা একদিন ফেলে এসেছিল, তা আজ আবার ছুঁয়ে গেল।

করুণ কণ্ঠে বিক্রেতা বলল, “স্যার, বইটা নেবেন?”

অনিক ধীরে মাথা নেড়ে বলল, “হ্যাঁ, এইটুকু আমি ফিরিয়ে নিতে চাই।”

হাত বাড়িয়ে যখন টাকাটা দিল, তখন মনে হলো, হারানো কিছু আসলে পুরোপুরি হারায় না।

কিছু স্মৃতি শুধু অপেক্ষা করে, কোনো এক মেঘলা বিকেলে ফিরে আসবে বলে…।

 

– শামীম আহমেদ

কবি, লেখক ও সাহিত্যিক

 


প্রিন্ট