ঢাকা , সোমবার, ১০ মার্চ ২০২৫, ২৫ ফাল্গুন ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
প্রতিনিধি নিয়োগ
দৈনিক সময়ের প্রত্যাশা পত্রিকার জন্য সারা দেশে জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে প্রতিনিধি নিয়োগ করা হচ্ছে। আপনি আপনার এলাকায় সাংবাদিকতা পেশায় আগ্রহী হলে যোগাযোগ করুন।

আ. লীগের ঘুরে দাঁড়ানো যেসব কারণে সহজ নয়

  • ডেস্ক রিপোর্ট
  • আপডেট টাইম : ০২:৩১ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ৭ মার্চ ২০২৫
  • ১৪ বার পঠিত

ডেস্ক রিপোর্টঃ

 

ছাত্র-জনতার রক্তক্ষয়ী গণঅভ্যুত্থানের পরিপ্রেক্ষিতে গত বছরের ৫ আগষ্ট দেশ ছেড়ে ভারতে পালিয়ে যেতে বাধ্য হয় ১৫ বছর ধরে ক্ষমতায় থাকা ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনা। এই অভ্যুত্থানের পর ফ্যাসিবাদী দল আওয়ামী লীগ দেশের রাজনীতিতে একেবারে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে।

 

বর্তমানে দলটির শীর্ষ নেতৃত্বসহ কেন্দ্রীয়, জেলা, উপজেলা এমনকি তৃণমূলের নেতারাও পালিয়ে, আত্মগোপনে বা কারাগারে রয়েছেন। যার কারণে হাসিনা সরকারের পতনের সাত মাসেও দলটির দেশের ভেতরে কোনো অবস্থান তৈরি করতে বা দেখাতে পারেনি।

 

এমনই এক প্রতিকূল পরিস্থিতিতে বিপর্যস্ত ৭৫ বছর বয়সি দলটি। যার ফলে আওয়ামী লীগের ভবিষ্যত নিয়ে রাজনৈতিক অঙ্গনে যেমন নানা আলোচনা রয়েছে, তেমনি আওয়ামী লীগের ভেতরেও আছে অনিশ্চয়তা।

 

টানা সাড়ে ১৫ বছরের দুঃশাসনের কারণে আওয়ামী লীগ রাজনীতি ও জনগণ থেকে পুরোপুরি বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছিল। ক্ষমতার স্বাদ নিতে সুবিধাবাদীদের ভিড় জমেছিল দলটিতে। তারা একতরফা ও বিতর্কিত তিনটি নির্বাচন করে ক্ষমতায় টিকে ছিল প্রশাসন ও গোয়েন্দা সংস্থার ওপর ভর করে।

 

আওয়ামী লীগ তাদের কর্মকাণ্ডের ব্যাপারে মানুষের ক্ষোভ বা মনোভাবকে পাত্তাই দেয়নি। নানা সংকট চাপা দিয়ে রাখার চেষ্টা ছিল।

 

কতৃত্ববাদী মনোভাবে থাকা আওয়ামী লীগ সমস্যাগুলো রাজনৈতিকভাবে সমাধান করেনি। সেকারণে গণঅভ্যুত্থানে খুবই খারাপ পরিস্থিতিতে তাদের পতন হয়েছে। দলের শীর্ষ নেতা শেখ হাসিনাসহ নেতাদের বড় অংশকে বিদেশে পালাতে হয়েছে; যে নজির বাংলাদেশের ইতিহাসে দ্বিতীয়টি নেই।

 

ফলে ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পর দলটির ভঙ্গুর চেহারা প্রকাশ পেয়েছে। নেতারা পালিয়েছেন। সুবিধাবাদীরা সরে পড়েছেন। দেশে পালিয়ে থাকা নেতা-কর্মীরা মানসিকভাবে দুর্বল অবস্থানে রয়েছেন। এর সঙ্গে যোগ হয়েছে নৈতিকতার প্রশ্ন।

 

কারণ তাদের শাসনের সময় অর্থপাচার, দুর্নীতি-অনিয়মের এত অভিযোগ উঠছে, যার প্রভাবে আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা মানসিকভাবে শক্ত অবস্থান নিতে পারছেন না। এছাড়া তাদের সরকারের পতনের আন্দোলনে গণহত্যার অভিযোগে বিচারের মুখোমুখিও হতে হচ্ছে।

 

অন্যদিকে আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করা না করা প্রশ্নে এখন সক্রিয় দলগুলোর মধ্যে মতপার্থক্য আছে। কিন্তু এই দলগুলোর মধ্যে আওয়ামী লীগকে শিগগিরই রাজনীতিতে সুযোগ না দেওয়ার ব্যাপারে একটা ঐকমত্য আছে।

 

এ ধরনের পরিস্থিতিতে দেশের ভেতরে আওয়ামী লীগের কোনো বিকল্প নেতৃত্ব প্রকাশ্যে এসে দলকে সংগঠিত করবে, সেই সাহস কেউ দেখাতে পারছে না বলে বিশ্লেষকেরা মনে করেন।

 

বিদেশে যেসব নেতা অবস্থান করছেন, তারা সংগঠিত হয়েছেন বলে তাদের অনেকে দাবি করছেন। কিন্তু বাস্তবতার কারণে তাদের কর্মকাণ্ড সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম নির্ভর হয়ে পড়েছে। দেশের ভেতরে নেতা-কর্মীদের মনোবলে কতটা প্রভাব ফেলতে পারছে, সেই প্রশ্ন রয়েছে।

 

রাজনৈতিক বিশ্লেষক সাঈদ ইফতেখার আহমেদ বলেন, ১৯৭৫ সালে শেখ মুজিবুর রহমানসহ দলটির শীর্ষ নেতাদের হত্যা করা হয়েছিল। তখনো দেশে অল্প সময়ের মধ্যে দলটির পরের স্তরের নেতারা রাজনীতির মাঠে নেমেছিলেন। তাদের মধ্যে বিভক্তি এলেও তারা দেশের ভেতরে রাজনীতিতে ছিলেন।

 

তিনি মনে করেন, এবার মনোবল হারানো ভঙ্গুর দলটি এখনও কোনো অবস্থান নিয়ে নামতে পারছে না।

 

আওয়ামী লীগের নেতাদের অনেকে আবার বলছেন, বিভিন্ন ক্ষেত্রে অন্তর্বর্তী সরকারের ব্যর্থতার কারণে তারা সুবিধা পেতে পারেন।

 

কিন্তু বিশ্লেষকেরা মনে করেন, সেই সুবিধা কিছুটা সহায়ক হতে পারে। কিন্তু দলগত অবস্থান দৃশ্যমান না হলে ঘুরে দাঁড়ানো কঠিন।

 

সম্প্রতি বেসরকারি টেলিভিশন যমুনায় এক অনুষ্ঠানে আওয়ামী লীগের ভবিষ্যৎ নিয়ে তরুণ রাজনীতিবিদ ও জাতীয় পার্টির (বিজেপি) চেয়ারম্যান ব্যারিস্টার আন্দালিব রহমান পার্থ বলেছেন, আওয়ামী লীগের ভবিষ্যৎ কী হবে সেটা নির্ভর করে দলটির নেতৃত্বে কে আসবে। এক সময় বলা হতো, এই দলে শেখ হাসিনার কোনো বিকল্প নেই। কিন্তু এখন আওয়ামী লীগের একটা গ্রুপ ‘আপা’কে বাদ দেওয়ারও একটা চিন্তা করতে পারে। আবার এই দলটির যত বক্তৃতা তার সবগুলোই সভানেত্রীর কাছ থেকে শুনেছে। যার ফলে নেতৃত্ব পরিবর্তনের কোনো সুযোগ বা কোনো মানসিকতা দেখি না।

 

পার্থ আরও বলেছেন, আমার যেটা ধারণা, আওয়ামী লীগ চাচ্ছে যে, তারা নিষিদ্ধ হয়ে যাক। তাহলে আওয়ামী লীগের আর নির্বাচনে আসতে হবে না, তারা সারা পৃথিবীতে কাঁদতে পারবে। এবং আওয়ামী লীগের নেতৃত্ব পরিবর্তনের কোনো সুযোগ থাকবে না। আর যদি নিষিদ্ধ না হয়, নিষিদ্ধ তো হচ্ছে না আমার যতটুকু পলিটিক্যাল ধারণা। আওয়ামী লীগ যদি নির্বাচনে অংশগ্রহণ করতে আসে সেই ক্ষেত্রে কিন্তু এই দলটির দায়িত্ব নিয়ে প্রশ্ন আসবে। আমার মনে হয় না, সভানেত্রী ওই নৈতিক জায়গায় আছেন যে, উনি জেল খেটে, জেলে বসে কাজ করবেন।

 

পার্থ বলেন, এসব করার জন্য একটা নৈতিক সাপোর্ট লাগে। যেটা ওয়ান-ইলেভেনের সময় ছিল। সে সময় তিনি দেশে ফিরে এসে নেতৃত্ব দিয়েছিলেন। কেননা, সে সময় বিপুল জনসমর্থন ছিল। এখন আর ওই জিনিস টা নাই। এখন আওয়ামী সমর্থন আছে কিন্তু জনসমর্থন নাই।

 

হাসিনার ঘুরে দাঁড়ানোর রাজনীতি কতটা সফল হবে- এই প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘ঘুরে দাঁড়ানোর যে রাজনীতি সেখানে একটা নৈতিক জায়গা থাকে। আওয়ামী লীগ কিন্তু ৭৫-এর পরও ঘুরে দাঁড়িয়েছে, এই দলটি কিন্তু ওয়ান-ইলেভেনের পরও ঘুরে দাঁড়িয়েছিল। কিন্তু এখন আওয়ামী লীগ চোর, দুর্নীতিবাজ, হত্যাকারী। এখনকার আওয়ামী লীগ এস আলমের পকেটে, দরবেশের পকেটে আরও অনেকেরই পকেট। এক একটা এমপি, মন্ত্রীর ২৫০-৩০০ বাড়ি। শুধু তাই নয়, একজন পিওনের কাছে ৪শ কোটি টাকা। এই দায়গুলো আপনার নিতে হবে’।

 

কীভাবে ঘুরে দাঁড়াতে চায় আ. লীগ

ভারত, যুক্তরাষ্ট্রসহ বিভিন্ন দেশে যারা অবস্থান করছেন, তাদের অনেকে বলছেন, দেশের ভেতরে কর্মসূচি দিয়ে তা পালনের ক্ষেত্রে অভিজ্ঞতা ভালো নয়। নেতা-কর্মীদের গ্রেফতার হতে হয়েছে। সেকারণে দেশের ভেতরে তারা এখনই কোনো কর্মসূচি দিচ্ছেন না।

 

দলটির কেন্দ্রীয় নেতা মোহাম্মদ আলী আরাফাত, বিদেশে অবস্থান করা একাধিক নেতা ও দেশের ভেতরে কয়েকটি জেলার নেতার সঙ্গে কথা হয়। তারা দাবি করেন, দেশে এ মুহূর্তে কোনো কর্মসূচিতে না গিয়ে শেখ হাসিনার নেতৃত্বেই তারা দলকে সংগঠিত করছেন।

 

আরাফাত বলেন, অধ্যাপক ইউনূসের সরকারের অধীনে কোনো নির্বাচন নয়। আর নির্বাচন হলে অন্তর্ভুক্তিমূলক হতে হবে, এই অবস্থান নিয়ে তারা আন্তর্জাতিক পর্যায় থেকে চাপ তৈরির লক্ষ্যে কাজ করছেন।

 

তবে আওয়ামী লীগ নেতাদের মূল কথা হচ্ছে, দেশের ভেতরে অবস্থান নিয়ে দাঁড়াতে তারা সময় ও সুযোগের অপেক্ষায় রয়েছেন।  তবে শিগগিরই সেই সুযোগ মিলবে, এমনটা মনে করেন না রাজনৈতিক বিশ্লেষকেরা।

তথ্যসূত্র: বিবিসি বাংলা


প্রিন্ট
Tag :
এই অথরের আরো সংবাদ দেখুন

জনপ্রিয় সংবাদ
error: Content is protected !!

আ. লীগের ঘুরে দাঁড়ানো যেসব কারণে সহজ নয়

আপডেট টাইম : ০২:৩১ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ৭ মার্চ ২০২৫
ডেস্ক রিপোর্ট :

ডেস্ক রিপোর্টঃ

 

ছাত্র-জনতার রক্তক্ষয়ী গণঅভ্যুত্থানের পরিপ্রেক্ষিতে গত বছরের ৫ আগষ্ট দেশ ছেড়ে ভারতে পালিয়ে যেতে বাধ্য হয় ১৫ বছর ধরে ক্ষমতায় থাকা ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনা। এই অভ্যুত্থানের পর ফ্যাসিবাদী দল আওয়ামী লীগ দেশের রাজনীতিতে একেবারে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে।

 

বর্তমানে দলটির শীর্ষ নেতৃত্বসহ কেন্দ্রীয়, জেলা, উপজেলা এমনকি তৃণমূলের নেতারাও পালিয়ে, আত্মগোপনে বা কারাগারে রয়েছেন। যার কারণে হাসিনা সরকারের পতনের সাত মাসেও দলটির দেশের ভেতরে কোনো অবস্থান তৈরি করতে বা দেখাতে পারেনি।

 

এমনই এক প্রতিকূল পরিস্থিতিতে বিপর্যস্ত ৭৫ বছর বয়সি দলটি। যার ফলে আওয়ামী লীগের ভবিষ্যত নিয়ে রাজনৈতিক অঙ্গনে যেমন নানা আলোচনা রয়েছে, তেমনি আওয়ামী লীগের ভেতরেও আছে অনিশ্চয়তা।

 

টানা সাড়ে ১৫ বছরের দুঃশাসনের কারণে আওয়ামী লীগ রাজনীতি ও জনগণ থেকে পুরোপুরি বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছিল। ক্ষমতার স্বাদ নিতে সুবিধাবাদীদের ভিড় জমেছিল দলটিতে। তারা একতরফা ও বিতর্কিত তিনটি নির্বাচন করে ক্ষমতায় টিকে ছিল প্রশাসন ও গোয়েন্দা সংস্থার ওপর ভর করে।

 

আওয়ামী লীগ তাদের কর্মকাণ্ডের ব্যাপারে মানুষের ক্ষোভ বা মনোভাবকে পাত্তাই দেয়নি। নানা সংকট চাপা দিয়ে রাখার চেষ্টা ছিল।

 

কতৃত্ববাদী মনোভাবে থাকা আওয়ামী লীগ সমস্যাগুলো রাজনৈতিকভাবে সমাধান করেনি। সেকারণে গণঅভ্যুত্থানে খুবই খারাপ পরিস্থিতিতে তাদের পতন হয়েছে। দলের শীর্ষ নেতা শেখ হাসিনাসহ নেতাদের বড় অংশকে বিদেশে পালাতে হয়েছে; যে নজির বাংলাদেশের ইতিহাসে দ্বিতীয়টি নেই।

 

ফলে ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পর দলটির ভঙ্গুর চেহারা প্রকাশ পেয়েছে। নেতারা পালিয়েছেন। সুবিধাবাদীরা সরে পড়েছেন। দেশে পালিয়ে থাকা নেতা-কর্মীরা মানসিকভাবে দুর্বল অবস্থানে রয়েছেন। এর সঙ্গে যোগ হয়েছে নৈতিকতার প্রশ্ন।

 

কারণ তাদের শাসনের সময় অর্থপাচার, দুর্নীতি-অনিয়মের এত অভিযোগ উঠছে, যার প্রভাবে আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা মানসিকভাবে শক্ত অবস্থান নিতে পারছেন না। এছাড়া তাদের সরকারের পতনের আন্দোলনে গণহত্যার অভিযোগে বিচারের মুখোমুখিও হতে হচ্ছে।

 

অন্যদিকে আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করা না করা প্রশ্নে এখন সক্রিয় দলগুলোর মধ্যে মতপার্থক্য আছে। কিন্তু এই দলগুলোর মধ্যে আওয়ামী লীগকে শিগগিরই রাজনীতিতে সুযোগ না দেওয়ার ব্যাপারে একটা ঐকমত্য আছে।

 

এ ধরনের পরিস্থিতিতে দেশের ভেতরে আওয়ামী লীগের কোনো বিকল্প নেতৃত্ব প্রকাশ্যে এসে দলকে সংগঠিত করবে, সেই সাহস কেউ দেখাতে পারছে না বলে বিশ্লেষকেরা মনে করেন।

 

বিদেশে যেসব নেতা অবস্থান করছেন, তারা সংগঠিত হয়েছেন বলে তাদের অনেকে দাবি করছেন। কিন্তু বাস্তবতার কারণে তাদের কর্মকাণ্ড সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম নির্ভর হয়ে পড়েছে। দেশের ভেতরে নেতা-কর্মীদের মনোবলে কতটা প্রভাব ফেলতে পারছে, সেই প্রশ্ন রয়েছে।

 

রাজনৈতিক বিশ্লেষক সাঈদ ইফতেখার আহমেদ বলেন, ১৯৭৫ সালে শেখ মুজিবুর রহমানসহ দলটির শীর্ষ নেতাদের হত্যা করা হয়েছিল। তখনো দেশে অল্প সময়ের মধ্যে দলটির পরের স্তরের নেতারা রাজনীতির মাঠে নেমেছিলেন। তাদের মধ্যে বিভক্তি এলেও তারা দেশের ভেতরে রাজনীতিতে ছিলেন।

 

তিনি মনে করেন, এবার মনোবল হারানো ভঙ্গুর দলটি এখনও কোনো অবস্থান নিয়ে নামতে পারছে না।

 

আওয়ামী লীগের নেতাদের অনেকে আবার বলছেন, বিভিন্ন ক্ষেত্রে অন্তর্বর্তী সরকারের ব্যর্থতার কারণে তারা সুবিধা পেতে পারেন।

 

কিন্তু বিশ্লেষকেরা মনে করেন, সেই সুবিধা কিছুটা সহায়ক হতে পারে। কিন্তু দলগত অবস্থান দৃশ্যমান না হলে ঘুরে দাঁড়ানো কঠিন।

 

সম্প্রতি বেসরকারি টেলিভিশন যমুনায় এক অনুষ্ঠানে আওয়ামী লীগের ভবিষ্যৎ নিয়ে তরুণ রাজনীতিবিদ ও জাতীয় পার্টির (বিজেপি) চেয়ারম্যান ব্যারিস্টার আন্দালিব রহমান পার্থ বলেছেন, আওয়ামী লীগের ভবিষ্যৎ কী হবে সেটা নির্ভর করে দলটির নেতৃত্বে কে আসবে। এক সময় বলা হতো, এই দলে শেখ হাসিনার কোনো বিকল্প নেই। কিন্তু এখন আওয়ামী লীগের একটা গ্রুপ ‘আপা’কে বাদ দেওয়ারও একটা চিন্তা করতে পারে। আবার এই দলটির যত বক্তৃতা তার সবগুলোই সভানেত্রীর কাছ থেকে শুনেছে। যার ফলে নেতৃত্ব পরিবর্তনের কোনো সুযোগ বা কোনো মানসিকতা দেখি না।

 

পার্থ আরও বলেছেন, আমার যেটা ধারণা, আওয়ামী লীগ চাচ্ছে যে, তারা নিষিদ্ধ হয়ে যাক। তাহলে আওয়ামী লীগের আর নির্বাচনে আসতে হবে না, তারা সারা পৃথিবীতে কাঁদতে পারবে। এবং আওয়ামী লীগের নেতৃত্ব পরিবর্তনের কোনো সুযোগ থাকবে না। আর যদি নিষিদ্ধ না হয়, নিষিদ্ধ তো হচ্ছে না আমার যতটুকু পলিটিক্যাল ধারণা। আওয়ামী লীগ যদি নির্বাচনে অংশগ্রহণ করতে আসে সেই ক্ষেত্রে কিন্তু এই দলটির দায়িত্ব নিয়ে প্রশ্ন আসবে। আমার মনে হয় না, সভানেত্রী ওই নৈতিক জায়গায় আছেন যে, উনি জেল খেটে, জেলে বসে কাজ করবেন।

 

পার্থ বলেন, এসব করার জন্য একটা নৈতিক সাপোর্ট লাগে। যেটা ওয়ান-ইলেভেনের সময় ছিল। সে সময় তিনি দেশে ফিরে এসে নেতৃত্ব দিয়েছিলেন। কেননা, সে সময় বিপুল জনসমর্থন ছিল। এখন আর ওই জিনিস টা নাই। এখন আওয়ামী সমর্থন আছে কিন্তু জনসমর্থন নাই।

 

হাসিনার ঘুরে দাঁড়ানোর রাজনীতি কতটা সফল হবে- এই প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘ঘুরে দাঁড়ানোর যে রাজনীতি সেখানে একটা নৈতিক জায়গা থাকে। আওয়ামী লীগ কিন্তু ৭৫-এর পরও ঘুরে দাঁড়িয়েছে, এই দলটি কিন্তু ওয়ান-ইলেভেনের পরও ঘুরে দাঁড়িয়েছিল। কিন্তু এখন আওয়ামী লীগ চোর, দুর্নীতিবাজ, হত্যাকারী। এখনকার আওয়ামী লীগ এস আলমের পকেটে, দরবেশের পকেটে আরও অনেকেরই পকেট। এক একটা এমপি, মন্ত্রীর ২৫০-৩০০ বাড়ি। শুধু তাই নয়, একজন পিওনের কাছে ৪শ কোটি টাকা। এই দায়গুলো আপনার নিতে হবে’।

 

কীভাবে ঘুরে দাঁড়াতে চায় আ. লীগ

ভারত, যুক্তরাষ্ট্রসহ বিভিন্ন দেশে যারা অবস্থান করছেন, তাদের অনেকে বলছেন, দেশের ভেতরে কর্মসূচি দিয়ে তা পালনের ক্ষেত্রে অভিজ্ঞতা ভালো নয়। নেতা-কর্মীদের গ্রেফতার হতে হয়েছে। সেকারণে দেশের ভেতরে তারা এখনই কোনো কর্মসূচি দিচ্ছেন না।

 

দলটির কেন্দ্রীয় নেতা মোহাম্মদ আলী আরাফাত, বিদেশে অবস্থান করা একাধিক নেতা ও দেশের ভেতরে কয়েকটি জেলার নেতার সঙ্গে কথা হয়। তারা দাবি করেন, দেশে এ মুহূর্তে কোনো কর্মসূচিতে না গিয়ে শেখ হাসিনার নেতৃত্বেই তারা দলকে সংগঠিত করছেন।

 

আরাফাত বলেন, অধ্যাপক ইউনূসের সরকারের অধীনে কোনো নির্বাচন নয়। আর নির্বাচন হলে অন্তর্ভুক্তিমূলক হতে হবে, এই অবস্থান নিয়ে তারা আন্তর্জাতিক পর্যায় থেকে চাপ তৈরির লক্ষ্যে কাজ করছেন।

 

তবে আওয়ামী লীগ নেতাদের মূল কথা হচ্ছে, দেশের ভেতরে অবস্থান নিয়ে দাঁড়াতে তারা সময় ও সুযোগের অপেক্ষায় রয়েছেন।  তবে শিগগিরই সেই সুযোগ মিলবে, এমনটা মনে করেন না রাজনৈতিক বিশ্লেষকেরা।

তথ্যসূত্র: বিবিসি বাংলা


প্রিন্ট