ইস্রাফিল হোসেন ইমন, ভেড়ামারা (কুষ্টিয়া) প্রতিনিধি
কুষ্টিয়ার ভেড়ামারা উপজেলার পদ্মানদীর বালু মহল দখল করতে সশস্ত্র সন্ত্রাসীরা ২টি বালু ঘাটে ব্যাপক তান্ডব চালিয়েছে। এ সময় ৭০-৮০টি মোটরসাইকেল নিয়ে শতাধিক সশস্ত্র সন্ত্রাসী বালু ঘাট দখল করতে গিয়ে গুলি বর্ষণ ও ককটেল নিক্ষেপ করে। তারা ১৮টি মোটরসাইকেল ভাংচুর এবং ৬টি মোটরসাইকেলে অগ্নিসংযোগ করে। এ ঘটনায় বালু ব্যবসায়ীদের মধ্যে চরম আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে।
আজ ১৭ ডিসেম্বর, মঙ্গলবার দুপুর ১২টার দিকে ফেরী ঘাট বালু মহল এবং মসলেমপুর ১২ মাইল বালুর ঘাটে এই হামলা ঘটে। সশস্ত্র সন্ত্রাসীরা প্রায় তিন ঘণ্টা ধরে মহড়া চালায় এবং উত্তেজনা সৃষ্টি করে। এ ঘটনায় ৫ জন আহত হয়েছেন।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, দুপুর ১২টার দিকে সশস্ত্র সন্ত্রাসীদের একটি দল মোটরসাইকেল নিয়ে ভেড়ামারার পুরাতন ফেরী ঘাট বালু মহলে হামলা চালায়। ৭০-৮০টি মোটরসাইকেল থেকে নেমে শতাধিক সন্ত্রাসী আগ্নেয়াস্ত্র তাক করে গুলি বর্ষণ করতে থাকে। বালু ব্যবসায়ীরা আতঙ্কিত হয়ে আড়ালে পালিয়ে গেলে সন্ত্রাসীরা ব্যাপক তান্ডব চালায়, মোটরসাইকেল ভাংচুর ও অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটে।
বাহিরচর ইউনিয়নের ৫ নং ওয়ার্ডের মেম্বার ও বালু ব্যবসায়ী সোহেল রানা ভুঁইয়া বাবু জানান, গত ১৬ ডিসেম্বর সকাল থেকে একদল সন্ত্রাসী বালু ঘাটে এসে অতিরিক্ত খাজনা আদায় করতে থাকে। ব্যবসায়ীরা সংঘবদ্ধ হয়ে সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে অবস্থান নেন এবং ঘোষণা করেন, তারা অতিরিক্ত চাঁদা দেবেন না।
আজ মঙ্গলবার ব্যবসায়ীদের বৈঠকের আগেই বিএনপি নেতা তৌহিদুল ইসলামের ক্যাডার হিসেবে পরিচিত রোকন’র নেতৃত্বে ৭০-৮০টি মোটরসাইকেলে প্রায় শতাধিক সশস্ত্র সন্ত্রাসী বালু ঘাটে প্রবেশ করে এবং এলোপাতাড়ি গুলি বর্ষণ শুরু করে। তারা ককটেল ফাটায় এবং ৮টি মোটরসাইকেল ভাংচুর করে, ৫টি মোটরসাইকেলে অগ্নিসংযোগ করে পুড়িয়ে দেয়।
বিএনপি নেতা এবং সাবেক সংসদ সদস্য অধ্যাপক শহীদুল ইসলামের ভাতিজা জহুরুল ইসলাম বিজলী জানান, আওয়ামী লীগ নেতা রফিকুল ইসলাম চুনু’র নামে ঘাট ছিল এবং টাকা উঠাতেন জাকিরুল নামের এক আওয়ামী লীগ নেতা। এই বালু ঘাট দখল নিতে আধিপত্য বিস্তার করতেই রোকন’র নেতৃত্বে একদল সশস্ত্র সন্ত্রাসী এই হামলা চালিয়েছে। বিএনপি নেতা বিপ্লব মালিথা বলেন, “সবার হাতে ছিল আগ্নেয়াস্ত্র, নাইন এম এম পিস্তল, শটগান এবং দো-নালা বন্দুক। তারা প্রকাশ্যে সশস্ত্র মহড়া দিয়েছে।”
ফেরী ঘাট বালু মহল দখল নেওয়ার পর সন্ত্রাসীরা পাশ^বর্তী ১২ মাইল বালুর ঘাটে চলে যায় এবং সেখানে একইভাবে তান্ডব চালায়। সেখানেও বিএনপি নেতা শফিকুল ইসলাম বিশু এবং তার পুত্র শামসুজ্জামান সবুজকে হত্যার উদ্দেশ্যে তাদের খুঁজতে থাকে এবং অন্তত ১০-১৫ রাউন্ড গুলি বর্ষণ করে। এ সময় ৫টি মোটরসাইকেল ভাংচুর এবং ১টি মোটরসাইকেলে অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটে।
শামসুজ্জামান সবুজ অভিযোগ করেন, “বিএনপি নেতা তৌহিদুল ইসলাম আলমের নির্দেশে তার ক্যাডার রোকন ও উজ্জলের নেতৃত্বে সশস্ত্র সন্ত্রাসীরা ঘাটে প্রবেশ করে এবং ব্যবসায়ীদের লক্ষ্য করে এলোপাতাড়ি গুলি বর্ষণ করতে থাকে। দুইজন ব্যবসায়ী আহত হয়েছেন এবং আমার মোটরসাইকেলে অগ্নিসংযোগ করে পুড়িয়ে দেয়।”
শফিকুল ইসলাম বিশু জানান, “বালুর ঘাট দখল নিতে ক্যাডাররা সশস্ত্র হামলা চালিয়েছে।”
এ ঘটনার পর ভেড়ামারা থানা পুলিশ পৃথক পৃথক দল নিয়ে ২টি বালু ঘাট পরিদর্শন করেছে এবং এ বিষয়ে পৃথক পৃথক মামলা দায়েরের প্রস্তুতি চলছে।
আরও পড়ুনঃ ১০ ডিসেম্বর বাসা থেকে বের হয়ে আর ফিরেনি মাহিম
ভেড়ামারা থানার ওসি শহিদুল ইসলাম জানান, খবর পেয়ে দ্রুত ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে নেওয়া হয়েছে।
প্রিন্ট