রাশিদুল ইসলাম রাশেদ, লালপুর (নাটোর) প্রতিনিধি
নাটোরের লালপুর উপজেলার রহিমপুর-উধনপাড়া গ্রামের কিছু অসাধু ব্যক্তির বিরুদ্ধে পরিকল্পিতভাবে সামাজিক বনায়নের গাছ হত্যার অভিযোগ উঠেছে। এনিয়ে সামাজিক বনায়নের উপকারভোগী সদস্যরা ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন। গতকাল সরজমিনে গিয়ে দেখা যায়, উধনপাড়া আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয় থেকে আকবরপুর অভিমুখে রাস্তাটির দুপাশে সামাজিক বনায়নের যে গাছ লাগানো হয়েছিল তা বিভিন্নভাবে ক্ষতিসাধনের চেষ্টা করা হয়েছে। কোনটির বাকল (ছাল) তুলে ফেলা হয়েছে, কোনটির আবার ডালপালাসহ মাথাটাই কেটে ফেলা হয়েছে। এরমধ্যে কড়ই গাছের গোড়ায় দেখা যায়, গাছগুলোর গোড়ায় ৫ ইঞ্চি চওড়া করে চারপাশের বাকল (ছাল) কেটে তুলে ফেলা হয়েছে। এতে গাছগুলি পুরোপুরি মরে গেছে। এসময় বনায়নের অদূরে খেজুর গাছে রস সংগ্রহে ব্যস্ত থাকা গাছি রুস্তুম আলীকে (৪৫) উক্ত গাছের বাকল কেটে দেয়ার বিষয়ে জিজ্ঞাসা করলে তিনি বলেন, ‘গাছগুলি যে জমির পাশে লাগানো আছে, সে জমিটি রহিমপুর গ্রামের কালু (৫২) নামে এক ব্যক্তি অন্যের জমি লিজ নিয়ে চাষাবাদ করেন। লোকমুখে শুনেছি জমিতে আবাদের সুবিধার্থে তিনি গাছের বাকল কেটে দিয়েছেন যাতে গাছগুলো মরে যায়।’
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক আরও দুজন ব্যক্তিও একই ধরনের তথ্য দিয়েছেন।
এবিষয়ে সকালে কালুর সাথে যোগাযোগ করার জন্য তার ছেলে জয়নালের মোবাইলে ফোন করলে বিষয়টি শুনে প্রথমে তিনি ফোন কেটে দেন। পরে আবার ফোন করলে তিনি পরে কথা বলতে চান। পরে সন্ধ্যায় আবার ফোন করলে তিনি তার বাবার বিরুদ্ধে আনিত অভিযোগ অস্বীকার করেন।
অন্যদিকে রহিমপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে হালুডাঙ্গা ও বাগাতবাড়ি অভিমুখে রাস্তার দুপাশের গাছগুলো পর্যবেক্ষণ করে দেখা যায়, কিছু গাছ কেটে নেওয়া হয়েছে, কোনটার মাথা কেটে নাড়া করে ফেলা হয়েছে, কোনটার আবার বাকল (ছাল) তুলে ফেলা হয়েছে। কয়েকটি গাছ ঝড়ে ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে ভেঙে পড়ে থাকতে দেখা গেছে। এছাড়া বাগাতবাড়ি থেকে পাগলা বিল অভিমুখে লাগানো বনায়নের গাছ নেই বললেই চলে।
এবিষয়ে রহিমপুর-উধনপাড়া যুব উন্নয়ন সংস্থার সভাপতি আলাউদ্দিন বলেন, ‘২০০৮ সালে উপজেলা সামাজিক বনায়ন কার্যক্রমের অধীনে রহিমপুর-উধনপাড়া যুব উন্নয়ন সংস্থার সহযোগিতায় প্রায় ৪.৫ কিলোমিটার রাস্তার দুপাশে বিভিন্ন ধরনের প্রায় ৪৫০০ টি বনজ গাছের চারা রোপণ করা হয়। কিন্তু বর্তমানে মাত্র ১,৩০০ থেকে ১,৪০০টি গাছ টিকে আছে। সে সময় তৎকালীন ফরেস্ট অফিসার সত্যেন্দ্রনাথ ও প্রয়াত উপজেলা চেয়ারম্যান আ: রাজ্জাক মাস্টার নিজে এসে এই বনায়ন কার্যক্রমের উদ্বোধন করেছিলেন। প্রথম থেকেই বনের উপকারভোগী সদস্যরা গাছগুলো দেখভাল করে আসছিল। কিন্তু গাছগুলো বড় হতে শুরু করলে কিছু জমির মালিক তাদের জমির পাশের গাছগুলো বিভিন্নভাবে ক্ষতিসাধন করে আসছিল। এ বিষয়ে উপজেলা বন কর্মকর্তাকে একাধিকবার ফোনে এবং সশরীরে উপস্থিত হয়ে অবহিত করলেও তিনি কোন ব্যবস্থা নেননি। এমনকি ২০১৮ সালে গাছগুলোর মেয়াদ পূর্ণ হওয়া এবং বর্তমানে গাছের ক্ষতিসাধনের হার বৃদ্ধি নিয়ে তাকে অবহিত করলেও এখন পর্যন্ত তিনি একবারের জন্যও গাছগুলো পরিদর্শনে আসেন নি। যেহেতু গাছগুলোর মেয়াদ প্রায় ৬ বছর পার হয়ে গেছে এবং পরিকল্পিতভাবে গাছ হত্যা করা হচ্ছে, সেহেতু দ্রুত গাছ কাটা প্রয়োজন। এতে উপকারভোগী সদস্যরা উপকৃত হবেন। সেই সাথে গাছের ক্ষতিসাধনকারীদের আইনের আওতায় আনা উচিত। ‘
এবিষয়ে লালপুর উপজেলা বন কর্মকর্তা আবদুল্লাহ’র সাথে যোগাযোগ করলে তিনি বলেন, অন্তর্বর্তীকালীন সরকার আসার পরে গাছ টেন্ডার দেওয়ার অনুমতি পাইনি। তাই গাছ কাটা বন্ধ আছে।
গাছের ক্ষতিসাধন ও পর্যবেক্ষণে না যাওয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি জানান, ‘উপকারভোগী সদস্যরাই এগুলো দেখভাল করবেন। সময়ের অভাবে পরিদর্শনে যেতে পারিনি। আমি এ সপ্তাহে আলাউদ্দিন ভাইয়ের সাথে দেখা করে কি করা যায়, আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নিব।’
প্রিন্ট