ফরিদপুরের সালথা উপজেলায় একটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ‘সনদ জালিয়াতি ও নিয়োগ সংক্রান্ত ভুয়া কাগজপত্রাদি’ জমা দিয়ে চাকরিতে যোগদানের অভিযোগ উঠেছে একাধিক শিক্ষকের বিরুদ্ধে। তারা হলেন- সালথা উপজেলার পশ্চিম বিভাগদী আব্বাসিয়া দাখিল মাদ্রাসার সহকারী শিক্ষক (শরীর চর্চা) হালিমা খাতুন, সহকারী মৌলভী শিক্ষক মো. কামরুল ইসলাম ও সহকারী মৌলভী শিক্ষক আবু জাফর। এছাড়া, আওয়ামী লীগের প্রভাব খাটিয়ে নীতিমালা বর্হিভূতভাবে প্রতিষ্ঠানটি এমপিওভূক্ত করার অভিযোগও উঠেছে।
১৯৮৩ সালে ফরিদপুর জেলার সালথা উপজেলায় পশ্চিম বিভাগদী আব্বাসিয়া দাখিল মাদ্রাসা প্রতিষ্ঠিত হয়। এরপর ২০১০ সালে প্রতিষ্ঠানটি নীতিমালা বর্হিভূতভাবে এমপিওভূক্ত হয়। অভিযোগ রয়েছে, তৎকালীন আওয়ামী লীগ সরকারের সংসদ উপনেতা সৈয়দা সাজেদা চৌধুরীর প্রভাব খাটিয়ে শিক্ষার্থী ও প্রয়োজনীয় জমি না থাকা সত্ত্বেও প্রতিষ্ঠানটি এমপিওভূক্ত লাভ করে।
এ বিষয়ে বৃহস্পতিবার (২১ নভেম্বর) সালথা উপজেলা নির্বাহী অফিসারের কাছে লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন মো. সাইফুল ইসলাম নামে স্থানীয় এক বাসিন্দা।
মাদ্রাসার সরেজমিনে তদন্তে দেখা যায়, ইবতেদায়ী শাখায় প্রথম শ্রেণী থেকে পঞ্চম শ্রেণী পর্যন্ত মাত্র ৩ জন শিক্ষার্থী ক্লাস করছে। এছাড়া প্রথম শ্রেণী থেকে দশম শ্রেণী পর্যন্ত মাত্র ২৪ জন শিক্ষার্থী উপস্থিত ছিল। বর্তমানে প্রতিষ্ঠানটিতে ১৮ জন শিক্ষক-কর্মচারী রয়েছেন। এদের মধ্যে একাধিক শিক্ষকের নিয়োগ সংক্রান্ত কাগজপত্র ও শিক্ষাগত সনদ জালিয়াতির অভিযোগ রয়েছে, যার কারণে তারা মাদ্রাসার অফিস কক্ষে এসব কাগজপত্র জমা দেননি। এছাড়া, নিয়োগ সংক্রান্ত কোনো বিজ্ঞপ্তি ও রেজুলেশনও মাদ্রাসায় নেই।
সহকারী শিক্ষক (শরীর চর্চা) হালিমা খাতুন ২০০০ সালের ২০ জানুয়ারি যোগদান করেন। তবে তার দাখিলকৃত বিপিএড সনদে উল্লেখ রয়েছে যে, তিনি ২০০৪ সালে গোপালগঞ্জের সাবেরা রউফ শারিরিক শিক্ষা কলেজ থেকে দ্বিতীয় বিভাগে উত্তীর্ণ হয়েছেন, কিন্তু বাংলাদেশ জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃক যাচাইয়ে ওই সনদটির কোনো হদিস পাওয়া যায়নি।
এই বিষয়ে হালিমা খাতুন জানান, ২০০০ সালে চাকুরিতে যোগদান করলেও তিনি ২০১৩ সালে বিপিএড পাশ করেছেন এবং ২০০৪ সালের সনদ সম্পর্কে জানেন না।
সহকারী মৌলভী শিক্ষক আবু জাফর ২৪ অক্টোবর ১৯৯৫ সালের নীতিমালা বর্হিভূতভাবে চাকরিতে যোগদান করেন। তার সনদে দুটি পরিক্ষায় ৩য় বিভাগ এবং একটি সনদে ২য় বিভাগ রয়েছে, যা তিনি জালিয়াতি করে ৩য় বিভাগকে ২য় বিভাগ বানিয়ে মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ডে জমা দেন। আবু জাফর দাবি করেন, তার সনদ সঠিক এবং তিনি কোনও জাল সনদ ব্যবহার করেননি।
সহকারী মৌলভী শিক্ষক মো. কামরুল ইসলাম ২০০৪ সালে মাদ্রাসায় যোগদান করেন। তবে তার জন্ম তারিখ ১৯৮৫ সালের ৫ মার্চ উল্লেখ করা হলেও, তখন তার বয়স ছিল মাত্র ১৯ বছর, যা নিয়োগ নীতিমালার বিরুদ্ধে। মাদ্রাসায় তার নিয়োগ সংক্রান্ত কোনো কাগজপত্র জমা পড়েনি।
আরও পড়ুনঃ পরিবেশের জন্যে ঝুঁকি পাটকাঠি ছাই মিল বন্ধের দাবীতে মধুখালীতে মানববন্ধন
মাদ্রাসার ভারপ্রাপ্ত সুপার মো. আবু নাছের আহমাদ জানান, তিনি নতুন যোগদান করেছেন এবং এসব বিষয়ে কিছু জানেন না। সালথা উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. আনিছুর রহমান বালি বলেছেন, অভিযোগের ভিত্তিতে তদন্ত কমিটি গঠন করা হবে এবং তদন্ত প্রতিবেদন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
প্রিন্ট