কুষ্টিয়ার দৌলতপুরের পদ্মা নদীতে পানি কমতে শুরু করেছে। এতে দেখা দিয়েছে ভাঙ্গন। ভাঙ্গন থেকে মাত্র ২৫-৩০ মিটার দূরে আছে একটি বিজিবি ক্যাম্প। এরই মধ্যে কিছু ঘরবাড়ি নদীর পেটে চলে গেছে। তবে এখনো নদীতে পানি থাকায় ভাঙ্গন তীব্র হয়নি। পানি আরও কমলে পদ্মা পারের মানুষ ভাঙ্গন বাড়ার আশঙ্কা করছেন। আতঙ্কে অনেকেই ঘরবাড়ি সরিয়ে নিচ্ছেন।
উজান থেকে নেমে আসা ঢলে কিছুদিন আগে পদ্মা নদীতে পানি বৃদ্ধি পায়। এতে কুষ্টিয়ার দৌলতপুর উপজেলার চার ইউনিয়নের অন্তত ৩৪টি গ্রাম প্লাবিত হয়। তলিয়ে যায় ফসলের ক্ষেত, ভেঙ্গে পড়ে যোগাযোগ ব্যবস্থা। সম্প্রতি ওই পানি কমতে শুরু করেছে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ভাঙ্গন রোধে কাজ করছেন তারা। এছাড়াও একটি স্থায়ী বাঁধ নির্মাণের জন্য ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে বলেও সংশ্লিষ্টদের দাবি।
আজ ( ৪ অক্টোবর) সরজমিনে দেখা যায় যে দৌলতপুর উপজেলার চিলমারী ইউনিয়নের সীমান্ত ঘেঁষা গ্রাম উদয়নগর বেশ কয়েক বছর ধরে ভাঙ্গনের কবলে পড়েছে। হারাতে বসেছে আন্তর্জাতিক সীমানা পিলার, শত শত একর আবাদি জমি ও ঘরবাড়ি। ভেঙ্গেছে সরকারি-বেসরকারি স্থাপনা। এখন ভাঙ্গন থেকে মাত্র ২৫-৩০ মিটার দূরে আছে একটি বিজিবি ক্যাম্প। এরই মধ্যে ভাঙ্গনের কবলে পড়েছে উদয়নগর বিজিবি ক্যাম্পের পাশে থাকা আতারপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়। এছাড়া রয়েছে দোকানপাট, হাটবাজার, মসজিদসহ নানা স্থাপনা।
এলাকাবাসী জানায়, আর ৫০ মিটারের মতো নদী ভাঙ্গলে বাংলাদেশ অংশে থাকা আরও দুটি আন্তর্জাতিক সীমানা পিলার নদীগর্ভে হারিয়ে যাবে। এছাড়া ইউনিয়নটির মানিকের চরের পশ্চিম পাশে ভাঙ্গন দেখা দিয়েছে।
স্থানীয় বাসিন্দা হারুনুর রশীদ বলেন, এখন পর্যন্ত আমি পাঁচবার নদী ভাঙ্গনের কবলে পড়েছি। এলাকার নিরাপত্তা নিশ্চিতে থাকা বিজিবি ক্যাম্পটিও হুমকির মুখে পড়েছে। এখানে একটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় রয়েছে। ভাঙ্গনের কারণে আজ সেটিও হারাতে বসেছি।
খারিজাথাক মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের ছাত্রী বৈশাখী খাতুন বলেন, কাছাকাছি থাকা মাধ্যমিক বিদ্যালয়গুলো ভেঙ্গে যাওয়ায় আমাদেরকে দূরের স্কুলে যেতে হয়। যাতায়াত ব্যবস্থা বলতে কেবলই নৌকা। খরচ বেশি হওয়ায় নিয়মিত স্কুলেও যেতে পারি না।
তসলিমা খাতুন নামে এক গৃহবধূ বলেন, তিন মেয়ে নিয়ে থাকি। পানিবন্দি হয়ে পড়ায় সাপ ও কীটপতঙ্গের ভয়ে সন্তানদের বাড়িতে রাখি না। গবাদিপশু দেখাশোনা করার জন্য বাড়িতে একাই থাকি।
চিলমারী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আবদুল মান্নান বলেন, নদীর পানি কিছুটা কমেছে। উদয়নগর ও মানিকের চরে ভাঙ্গন দেখা দিয়েছে। পানি কমার সঙ্গে এর তীব্রতা আরও বাড়তে পারে।
কুষ্টিয়া ৪৭ বিজিবি ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল মো. মাহবুব মুর্শেদ রহমান বলেন, উদয়নগর বিওপির ২৫ থেকে ৩০ মিটার দূরে নদীর অবস্থান। এরই মধ্যে স্থানীয় প্রশাসন ও পানি উন্নয়ন বোর্ডের সহায়তায় ২৫ হাজার জিও ব্যাগ ফেলেছি। সরকারি এই স্থাপনাসহ এখানে বসবাস করা দুই থেকে তিন হাজার মানুষের নিরাপত্তা নিশ্চিতে কাজ করার চেষ্টা করছি।
- আরও পড়ুনঃ ১৫ বছর পর নিজ গ্রামে বাবার জানায়ায় রবিউল
কুষ্টিয়া পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী আব্দুল হামিদ বলেন, ভাঙ্গন রোধে আমরা কাজ করছি। দ্রুত সময়ের মধ্যে উদয়নগর ও মানিকের চর এলাকায় স্থায়ী বাঁধ নির্মাণের জন্য মন্ত্রণালয়ে কাগজপত্র পাঠাবো।
প্রিন্ট