কেউ হাঁটতে-চলতে পারেন না, কেউ ঠিকমত কথা বলতে পারেন না, আবার কারো শরীরেবর কোন অঙ্গ নেই। এক সময় ওরা সবাই দৌলতদিয়া ঘাটে ভিক্ষা করত। কিন্তু সেই গহৃত কাজ ছেড়ে ওরা এখন গর্বিত কর্মী। নিজেদেও প্রচেষ্টায় তৈরী করছেন অতি প্রয়োজনীয় ফুলঝাড়ু। আর প্রতিবন্ধীদের তৈরি এসব ফুলঝাড়ু বিক্রি হচ্ছে রাজবাড়ীসহ আশপাশের জেলায়। এতে করে ওরা এখন অনেকটাই সাবলম্বী।
জানা যায়, গোয়ালন্দ উপজেলার দৌলতদিয়া ঘাটে একসময় ভিক্ষা করে জীবিকা নির্বাহ করত শতাধিক প্রতিবন্ধী। তারা সহ গোয়ালন্দ উপজেলার ৪৭৪ জন প্রতিবন্ধীকে নিয়ে গঠন কর হয় গোয়ালন্দ উপজেলা প্রতিবন্ধী উন্নয়ন সংস্থা। এ সকল প্রতিবন্ধীরা ভিক্ষাবৃত্তি ছেড়ে গর্বিত কর্মী হওয়ার প্রচেষ্টায় বর্তমানে তাদের ভাগ্যের পরিবর্তন ঘটিয়েছেন। প্রতিবন্ধীরা নিজস্ব উদ্যোগে তৈরি করছেন ফুলঝাড়ু। প্রতিদিনই সকাল থেকে রাত পর্যন্ত ঝাড়ু তৈরিতে ব্যস্ত সময় পার করছেন এখানকার প্রতিবন্ধী জনগোষ্ঠী। এখন অল্প কয়েকজন এ কাজে সম্পৃক্ত থাকলেও আগামীতে সকল প্রতিবন্ধী সদস্যকে ভিক্ষার মত অভিশপ্ত জীবন থেকে মুক্তি দেয়ার লক্ষ্যে কাজ করছেন তারা। ভিক্ষাবৃত্তি ছেড়ে নিজের পায়ে দাঁড়ানোর লক্ষ্যে কাজ করে যাচ্ছেন সমাজের এই অসহায় মানুষগুলো। দৌলতদিয়া ফেরিঘাট সড়কে গোয়ালন্দ উপজেলা প্রতিবন্ধী উন্নয়ন সংস্থার কার্যালয়কেই তারা ফুলঝাড়ুর কারখানা হিসেবে কাজ করছেন।
আলাপকালে এ সকল শারীরিক ভাবে অক্ষম মানুষগুলো জানায়, ভিক্ষা করেই জীবন চলত তাদের। কিন্তু পদ্মা সেতু উদ্বোধনের পর থেকেই ঘাটের যানবাহন ও যাত্রীর সংখা অনেক কমে যায়। আর তখনই চরম বিপাকে পড়েছিলেন এখানকার প্রতিবন্ধীরা। সংসারে নেমে এসেছিল চরম হতাশার ছায়া। পরিবার পরিজন নিয়ে তাদের দিন পার করাই কষ্টকর হয়ে উঠেছিল। কারণ দৌলতদিয়া ঘাটে যাত্রী কম থাকায় তারা ভিক্ষার পরিমান একেবারেই কমে এসেছিল। যে কারণে তারা বিকল্প কর্মের চিন্তা শুরু করে। এ অবস্থায় প্রতিবন্ধীদের সংগঠন তাদের কিছু সদস্যদের নিয়ে ফুলঝাড়ু তৈরীর উদ্যোগ গ্রহন করে। আর এ ফুলঝাড়ু তৈরি করে নতুন করে বাঁচার স্বপ্ন দেখছেন তারা। এখন ভিক্ষা ছেড়ে নিজের পায়ে দাঁড়ানোর চেষ্টা করছেন এসব প্রতিবন্ধীরা।
প্রতিবন্ধী হালিম শেখ জানান, একসময় তারা ভিক্ষা করতেন। এখন তারা ভিক্ষা ছেড়ে ফুলঝাড়ু তৈরি করছেন। এখন অনেক ভালো আছেন। ফুলঝাড়ু তৈরি করতে তারা যে যেমন কাজ পারেন, তেমনি ভাবে করার চেষ্টা করেন। তাদের এ উদ্যোগকে সফল করতে সমাজের সকলের সহযোগিতা কামনা করেন তারা।
স্থানীয়রা জানান, এখানকার প্রতিবন্ধীরা এক সময় অন্যের হাতের টাকার দিকে তাকিয়ে থাকত। ঘাটের বিভিন্ন জায়গায় তারা ভিক্ষা করে চলত। কিন্তু এখন তারা কাজ করে খাচ্ছে। এটা অনেক খুশির বিষয়।
গোয়ালন্দ উপজেলা প্রতিবন্ধী উন্নয়ন সংস্থার সাধারণ সম্পাদক মো. মোন্নাপ শেখ জানান, ফুলঝাড়ু তৈরির কাচামাল বান্দারবান অথবা খাগড়াছড়ি থেকে আনতে হয়। আমরা যারা প্রতিবন্ধী আছি তারাই সেখানে গিয়ে প্রয়োজনীয় কাচামালগুলো এনে থাকি। প্রতিবন্ধী ছাড়া এখানে কোনো স্বাভাবিক মানুষ কাজ করে না।
গোয়ালন্দ উপজেলা প্রতিবন্ধী উন্নয়ন সংস্থার সভাপতি মো. রতন শেখ জানান, আমাদের প্রতিবন্ধী সংস্থার সদস্যরা অটোরিকশা নিয়ে বিভিন্ন বাজারে ফুলঝাড়ু গুলো বিক্রি করে থাকে। এই প্রতিবন্ধীদের কথা বিবেচনা করে সকলকে তাদের তৈরী ফুলঝাড়– ক্রয় করার অনুরোধ করেন তিনি। এছাড়া তাদের বিক্রিত ফুলঝাড়–র জন্য বাজারের খাজনা মওকুফের দাবি জানান তিনি।
গোয়ালন্দ উপজেলা নির্বাহী অফিসার জ্যোতি বিকাশ চন্দ্র জানান, প্রতিবন্ধীদের এই প্রচেষ্টাকে আমরা সাধুবাদ জানাই। উপজেলা প্রশাসন থেকেও তাদের সহযোগিতা করা হয়েছে। ইতিমধ্যে তাদেরকে ১ লক্ষ টাকা অনুদান ও ২ লক্ষ টাকা সুদমুক্ত ঋণ প্রদান করা হয়েছে। আমরা তাদের পাশে আছি।আশা করছি তারা নিজেরা ঘুরে দ্বাড়াতে পারবে ।