পাতার ফাঁকে ফাঁকে মাথা জাগাচ্ছে আমের স্বর্ণালি মুকুল। ভেড়ামারা উপজেলা ৬টি ইউনিয়নর চারদিকেই এখন মৌ-মৌ আমের মুকুলের গন্ধ। ভালো ফলনের আশায় স্বপ্ন নিয়ে চাষিরাও কোমর বেঁধে নেমে পড়েছেন বাগান পরিচর্যায়। প্রাকৃতিক দুর্যোগ না হলে এবার আমের বাম্পার ফলনের আশা চাষিরা আনান্দে মুখোরিত।
পল্লীকবি জসীম উদ্দিনের ‘মামার বাড়ি’ কবিতা মনে করে দিলো আয় ছেলেরা, আয় মেয়েরা, ফুল তুলিতে যাই, ফুলের মালা গলায় দিয়ে, মামার বাড়ি যাই। ঝড়ের দিনে মামার দেশে, আম কুড়াতে সুখ, পাকা জামের মধুর রসে, রঙিন করি মুখ।
কবির ভাষায় বাস্তব রূপ পেতে বাকি রয়েছে আর মাত্র কয়েক মাস। তবে সুখের ঘ্রাণ বইতে শুরু করেছে। গাছে গাছে ফুটছে আমের মুকুল। চারদিকে ছড়িয়ে পড়ছে এই মুকুলের পাগল করা ঘ্রাণ।
মধু সংগ্রহ করতে মৌমাছিরা ভিড় করছে আম গাছের ডালে ডালে। পাশাপাশি মধুমাসের আগমনী বার্তা শোনাচ্ছে আমের এই মুকুল গুলো।
এবার কিছুটা আগে ভাগেই শোভা ছড়াচ্ছে আমের মুকুল। আর কিছুদিন পরেই দেখা মিলবে গুটি আমের।
প্রকৃতির নতুন আবহাওয়ায় ও ঋতুর পালাক্রম পরিবর্তন এক অন্যরকম মিলন। যেন প্রকৃতি সেজেছে তার নিজস্ব মহিমায়। তাল মিলিয়ে বাদ যায়নি আমের গাছগুলোও। নিজেকে উজাড় করে বিলিয়ে দিচ্ছে তার সৌন্দর্য। মুকুলের ঘ্রাণে ঘ্রাণে বাগানের মালিকেরা আমগাছে ওষুধ ছিটানোসহ বিভিন্ন ধরণের যত্ন-আত্মি বেড়ে গেছে।
ভেড়ামারা মোকারিমপুর ফকিরাবাদ গ্রামের আমচাষী জাহিদুল ইসলাম জানান, এবার আমগাছে আগাম মুকুল আসতে শুরু করেছে। আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে এবার গাছগুলোতে মুকুলের সমারোহ ঘটার সম্ভাবনা রয়েছে বেশী।
এখানকার মাটির গুণেই আম খুবই সুস্বাদু। বিশেষ করে নিয়মিত জাত ল্যাংড়া, গোপালভোগ, ক্ষীরসাপাতি, আশ্বিনা জাতের বাগান বেশি থাকলেও গবেষণাকৃত বারি-৩, বারি-৪ জাতের বাগান তৈরির ক্ষেত্রেও আগ্রহী হয়ে উঠছে অনেকে। সেই সঙ্গে নতুন-নতুন বাগান তৈরী হচ্ছে বনেদি ও হাইব্রিট জাতের। নিয়মিত যত্ন নিলে আমের অফ ইয়ার বলে কিছু থাকে না।
আমগাছে পুরো মুকুল ফুটতে আরও কয়েক দিন সময় লাগবে। ভেড়ামারায় আম মুকুলের সেই সুমিষ্ট সুবাস আন্দোলিত করে তুলছে আম চাষিদের মন।
মোকারিমপুর ইউনিয়নের ক্ষেমিরদিয়াড় গ্রামের আব্দুল মান্নান জানান, এবার গাছে মুকুল অনেক বেশি। প্রাকৃতিক দুর্যোগ না হলে আমের ফলন বেশি হবে।
ধরমপুর ইউনিয়নের সাতবাড়িয়া গ্রামের আমবাগানের মালিক মো. আমজাদ হোসেন জানান, বাগানের আমগাছে মুকুল আসা শুরু করেছে। কৃষি অফিস থেকে পরামর্শ নিয়ে বালাইনাশক স্প্রে করছি।
ভেড়ামারা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মাহমুদা সুলতানা বলেন, এবার কিছুটা আগেই সোনালী আমের মুকুলে ভরে ওঠছে গাছগুলো। তাই স্থানীয় কৃষকদের স্বার্থের কথা মাথায় রেখেই যে কোনো পরিস্থিতিতে কৃষকের আমবাগান কিংবা আম গাছের সঠিক পরিচর্যা ও প্রয়োজনীয় পরামর্শ দিতে সার্বক্ষণিক কৃষি বিভাগের মাঠকর্মীরা নিয়োজিত রয়েছেন।
তিনি আরো বলেন,মুকুলের যথাযথ পরিচর্যা না করলে আমের ফলন ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। আমগাছে ফুল আসার ১৫ দিন আগপর্যাপ্ত সেচ দিতে হবে। ফুল ফোটার সময় মেঘলা ও কুয়াশাচ্ছন্ন আবহাওয়া থাকলে বিভিন্ন রোগের আক্রমণ হতে পারে।
এ ব্যাপারে কৃষকদের সতর্ক করার পাশাপাশি বিভিন্ন পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে। আশা করি, এ বছর আমের ফলন ভালো হবে।
প্রিন্ট