ঢাকা , সোমবার, ২৯ এপ্রিল ২০২৪, ১৬ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম
Logo নলছিটিতে একাধিক মাদক মামলার আসামি খলিল আটক Logo উপকূলের প্রাণ-প্রকৃতি ও সংস্কৃতি সুরক্ষায় সংহতি জোরালো করার দাবী Logo বিএনপির চেয়ারপার্সনের সুস্বাস্থ্য কামনায় দিনমজুর ও পথচারীদের মাঝে খাবার পানি ও স্যালাইন বিতরণ Logo তানোরে পথচারীদের মাঝে ছাতা ও খাবার বিতরণ Logo সালথায় স্কুলের টিউবওয়েলের পানি খেয়েই ১৩ শিক্ষক-শিক্ষার্থী অসুস্থ Logo গোমস্তাপুরে কৃষক মাঠ দিবস অনুষ্ঠিত Logo কুষ্টিয়ায় দুই মোটরসাইকেলের মুখোমুখি সংঘর্ষ, নিহত ২ Logo ফরিদপুরে জাতীয় আইনগত সহায়তা দিবস উপলক্ষে র‍্যালি ও আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত Logo ভেড়ামারা সাংবাদিক কন্যা আসমাউল জান্নাত চিত্রাংকন প্রতিযোগিতায় বেস্ট অ্যাওয়ার্ড পেয়েছেন Logo তানোরে রাব্বানী-মামুন একট্টা জনমনে মিশ্রপ্রতিক্রিয়া
প্রতিনিধি নিয়োগ
দৈনিক সময়ের প্রত্যাশা পত্রিকার জন্য সারা দেশে জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে প্রতিনিধি নিয়োগ করা হচ্ছে। আপনি আপনার এলাকায় সাংবাদিকতা পেশায় আগ্রহী হলে যোগাযোগ করুন।

প্রকৃতি থেকে হারিয়ে যেতে বসেছে বাবুই পাখি ও তার দৃষ্টিনন্দন বাসা

প্রকৃতি থেকে হারিয়ে যেতে বসেছে তালের পাতায় মোড়ানো নিপুণ কারুকার্য খচিত বাবুই পাখি ও তার অপরূপ সৌন্দর্যের বাসা! বর্তমান যুগে বাবুই পাখির বাসা সচরাচর দেখা যায় না। এখন আর তেমন চোঁখে পড়ে না নিপুণ কারিগর বাবুই পাখি ও তার নিজের তৈরী দৃষ্টিনন্দন বাসা। কালের আর্বতণে হারিয়ে যাচ্ছে প্রাকৃতিক অপরুপ শিল্পী বাবুই পাখির বাসা।

 

কবি রজনীকান্ত সেনের কালজয়ী ছড়াটিতে লিখেছেন-
‘বাবুই পাখিরে ডাকি, বলিছে চড়াই,
কুঁড়ে ঘরে থাকি কর শিল্পের বড়াই,
আমি থাকি মহাসুখে অট্টালিকা পরে,
তুমি কত কষ্ট পাও রোদ, বৃষ্টি, ঝড়ে।
গ্রাম বাংলার ঐতিহ্যবাহী নিপুণ বাসা তৈরির কারিগর সেই বাবুই পাখি আজ বিলুপ্তির পথে।

 

কবি রজনীকান্ত সেনের ‘অমর’ কবিতাটি এখন তৃতীয় শ্রেণির বাংলা বইয়ের পাঠ্য হিসেবে অন্তর্ভুক্ত। শুধু পাঠ্যপুস্তকের কবিতা পড়েই শিক্ষার্থীরা বাবুই পাখির নিপুণ শিল্পের কথা জানতে পারলেও বাস্তবে তার দেখা মেলা ভার। আগের মতো গ্রামগঞ্জে এখন আর চোখে পড়ে না বাবুই পাখির দৃষ্টিনন্দন সেই বাসা। বন উজার আর এক শ্রেণির শিকারির কারণে বিলুপ্তির পথে প্রকৃতির এই বুনন শিল্পীরা।

 

এক সময় গ্রাম-অঞ্চলে সারি সারি উঁচু তালগাছে বাবুই পাখির দৃষ্টি নন্দন বাসা দেখা যেত। এখন তা আর সচরাচর চোখে পড়ে না। খড়, তালপাতা, ঝাউ ও কাশবনের লতাপাতা দিয়ে বাবুই পাখি বাসা বাঁধে। বাসা দেখতে যেমন আকর্ষণীয় তেমনি মজবুত। প্রবল ঝড়েও তাদের বাসা পড়ে না। পরিবেশ বিপর্যয়ের কারণে প্রাকৃতিক সৌন্দর্যকে আরও ফুটিয়ে তোলে বাবুই পাখি আজ আমরা হারাতে বসেছি।

 

পুরুষ বাবুই এক মৌসুমে ৬টি বাসা তৈরি করতে পারে। আমন ধান পাকার সময় হলো বাবুই পাখির প্রজনন মৌসুম। এমসয় সাধারণত তারা তাল ও খেজুর গাছের ডালে বাসা তৈরি করতে ব্যস্ত থাকে। ডিম ফুটে বাচ্চা বের হওয়ার পরপরই বাচ্চাদের খাওয়ানোর জন্য স্ত্রী বাবুই ক্ষেতে থেকে দুধ ধান সংগ্রহ করে। প্রকৃতির বিরুদ্ধে মানুষের আগ্রাসী কার্যকলাপের বিরুপ প্রভাবই আজ বাবুই পাখি ও তার বাসা হারিয়ে যেতে বসেছে। তবে দেশের গ্রামগঞ্জের কিছু কিছু অঞ্চলের তাল ও খেজুর গাছে এখনও চোখে পড়ে বাবুই পাখির বাসা। তবে তালগাছেই তাদের একমাত্র নিরাপদ জায়গা। সেখানে তারা বাসা বাঁধতে সাচ্ছন্দ্য বোধ করে।

 

ভেড়ামারা উপজেলার স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের সভাপতি পিয়ার আলী পিরু বলেন, প্রকৃতিক পরিবেশের ভারসম্য রক্ষাসহ সারা উপজেলাকে সবুজ বলয় তৈরি করার লক্ষ্যে আমরা পাকা সড়কসহ রাস্তার ধারে বিভিন্ন প্রজাতির বৃক্ষ রোপণসহ দুই হাজার তাল গাছের চারা রোপণ করেছি। এগুলো এক সময় বজ্রপাতের হাত থেকে আমাদের পরিবেশকে রক্ষা করবে এবং বাবুই পাখিকে টিকিয়ে রাখতে আমরা যদি গ্রাম-গঞ্জসহ সারা দেশেই রাস্তার ধারে বা পতিত জমিতে সমন্বিতভাবে তালগাছ রোপণের উদ্যোগ গ্রহণ করি, তাহলে আমরা ফিরে পাবো কবি রজনীকান্ত সেনের ওই কবিতার বাস্তবতা আর গ্রামগঞ্জের হারিয়ে যাওয়া পূর্বের ঐতিহ্য।

 

ফারাকপুর গ্রামের আলীমদ্দীন (৭০) নামে এক স্থানীয় বাসিন্দা বলেন, আমার বাড়ির পাশে একটি তাল গাছ ছিল সেখানে শত শত বাবুই পাখি তাদের বাসা বাঁধত। দিনশেষে সন্ধ্যাবেলায় ঝাঁকে ঝাঁকে বাবুই পাখি তাদের নীড়ে ফিরত আর কিচিরমিচির ডাকে পুরো এলাকা মাতিয়ে তুলত। ভোরবেলায় তাদের কিচিরমিচির ডাকে ঘুম ভাঙত। তালগাছ না থাকায় এখন এসব প্রায় বিলুপ্তির পথে কোথায় গেল এসব দিন।

 

বাবুই পাখিরা সাধারণত তালগাছেই বাসা তৈরি করতে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করে। চড়ুই পাখি মানুষের বাসায় থাকতে পছন্দ করে কিন্তু বাবুই পাখি পরিশ্রমী হয় এবং নিজের বাসায় থাকতে বেশি পছন্দ করে। এদের বাসাগুলোও দেখতে চমৎকার এবং মজবুত হয়। বাবুই পাখিরাই এরকম সুন্দরভাবে বাসা তৈরি করতে পারদর্শী। আর তাই বাবুই পাখিদের প্রকৃতির নিপুণ কারিগর বলা হয়। এরা সুপারি এবং খেজুর গাছেও বাসা তৈরি করতে পারে।

 

ভেড়ামারার সিনিয়র সাংবাদিক ইসমাইল হোসেন বাবু বলেন, কিছু মানুষ বুঝে না বুঝে তাদের শিকার করে। তালগাছ ও নারিকেল গাছের সংখ্যা কমে যাচ্ছে। যে কারণে বাবুই পাখি এখন বিলুপ্তির পথে। বৃক্ষ নিধন ও নির্বিচারে পাখি শিকারের কারণে বাবুই পাখির বাসা এখন খুব একটা দেখা যায় না। পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্য রক্ষার স্বার্থে পাখি নিধন বন্ধ করার পাশাপাশি পাখিদের অভয়ারণ্য সৃষ্টি করতে হবে।

 

কিন্তু প্রকৃতির নিপুণ কারিগর বাবুই পাখিদের বাসা এখন প্রায় বিলুপ্তপ্রায়। কেননা তালগাছ বা সুপারি গাছ সংখ্যায় খুব কমে যাচ্ছে। আমাদের পরিবেশে এই পাখির জন্য বাসস্থানের খুব অভাব। আমরা ছোটবেলায় বইয়ে বাবুই পাখির বাসা সম্পর্কে ধারণা পেয়েছি, কিন্তু বাস্তবে বাবুই পাখির বাসা খুব একটা দেখিনি। নতুন প্রজন্মের ছেলেমেয়েরাও বাবুই পাখির বাসা কখনো দেখেছে কিনা কিংবা দেখলেও চিনবে কিনা তা নিয়ে সন্দেহ আছে। পাখিজগতের অস্তিত্ব রক্ষার্থেও আমাদের বেশি বেশি বৃক্ষ রোপণ করা উচিত।

 

গ্রামের রাস্তা-ঘাট, পুকুর-পাড় ও মাঠের মধ্যে তালগাছ ছিল এবং আষাঢ় মাসের আগে থেকে বাবুই পাখি বাসা বুনতে শুরু করে এবং কিচিরমিচির শব্দে মুখরিত থাকত পুরো গ্রাম। এখন হাতে গোনা কয়েক টা তালগাছ আছে। ইটের ভাটায় জ্বালানি হিসাবে চলে যাচ্ছে সব তালগাছ।

 

স্ত্রী বাবুই পাখির প্রেরণা পেয়ে পুরুষ বাবুই খুবই শিল্পসম্মত নিপুণভাবে বাসা তৈরি করে। স্ত্রী বাবুই ডিম দেয়ার সঙ্গে সঙ্গেই পুরুষ বাবুই খুঁজতে থাকে আরেক সঙ্গীকে। পুরুষ বাবুই এক মৌসুমে ৬টি পর্যন্ত বাসা তৈরি করতে পারে। অর্থাৎ এরা ঘর সংসার করতে পারে ৬ সঙ্গীর সঙ্গে। তাতে স্ত্রী বাবুইয়ের না নেই। প্রজনন প্রক্রিয়ায় স্ত্রী বাবুই ডিমে তা দেয়ার ২ সপ্তাহের মধ্যেই বাচ্চা ফোটে। ৩ সপ্তাহ পর বাবুই বাচ্চা বাসা ছেড়ে উড়ে যায়। বাবুই পাখির প্রজনন সময় হলো ধান ঘরে উঠার মৌসুম। স্ত্রী বাবুই দুধধান সংগ্রহ করে এনে বাচ্চাদের খাওয়ায়। বাবুই পাখি তাল গাছে বাসা বাধে বেশি।

 

পাখি প্রেমী সাহাব উদ্দিন বলেন, সারাবিশ্বে বাবুই পাখির প্রজাতির সংখ্যা ১১৭টি। তবে বাংলাদেশে তিন প্রজাতির বাবুই পাখির বাস। তিনি আরও বলেন, বাবুই পাখির অন্যতম বৈশিষ্ট্য হলো রাতের বেলায় ঘর আলোকিত করার জন্য এরা জোনাকি পোকা ধরে নিয়ে বাসায় রাখে এবং সকাল হলে আবার তাদের ছেড়ে দেয়। ধান, চাল, গম ও পোকা-মাকড় প্রভৃতি তাদের প্রধান খাবার।

সর্বদা একসময় বাবুই পাখির কলতানে মুখরিত থাকতো বিভিন্ন গ্রাম। তালগাছ নিধনের ফলে বাসা হারিয়ে বিলীনের পথে বাবুই পাখি।

Tag :
এই অথরের আরো সংবাদ দেখুন

জনপ্রিয় সংবাদ

নলছিটিতে একাধিক মাদক মামলার আসামি খলিল আটক

error: Content is protected !!

প্রকৃতি থেকে হারিয়ে যেতে বসেছে বাবুই পাখি ও তার দৃষ্টিনন্দন বাসা

আপডেট টাইম : ০৪:৫১ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ৩০ জানুয়ারী ২০২৪

প্রকৃতি থেকে হারিয়ে যেতে বসেছে তালের পাতায় মোড়ানো নিপুণ কারুকার্য খচিত বাবুই পাখি ও তার অপরূপ সৌন্দর্যের বাসা! বর্তমান যুগে বাবুই পাখির বাসা সচরাচর দেখা যায় না। এখন আর তেমন চোঁখে পড়ে না নিপুণ কারিগর বাবুই পাখি ও তার নিজের তৈরী দৃষ্টিনন্দন বাসা। কালের আর্বতণে হারিয়ে যাচ্ছে প্রাকৃতিক অপরুপ শিল্পী বাবুই পাখির বাসা।

 

কবি রজনীকান্ত সেনের কালজয়ী ছড়াটিতে লিখেছেন-
‘বাবুই পাখিরে ডাকি, বলিছে চড়াই,
কুঁড়ে ঘরে থাকি কর শিল্পের বড়াই,
আমি থাকি মহাসুখে অট্টালিকা পরে,
তুমি কত কষ্ট পাও রোদ, বৃষ্টি, ঝড়ে।
গ্রাম বাংলার ঐতিহ্যবাহী নিপুণ বাসা তৈরির কারিগর সেই বাবুই পাখি আজ বিলুপ্তির পথে।

 

কবি রজনীকান্ত সেনের ‘অমর’ কবিতাটি এখন তৃতীয় শ্রেণির বাংলা বইয়ের পাঠ্য হিসেবে অন্তর্ভুক্ত। শুধু পাঠ্যপুস্তকের কবিতা পড়েই শিক্ষার্থীরা বাবুই পাখির নিপুণ শিল্পের কথা জানতে পারলেও বাস্তবে তার দেখা মেলা ভার। আগের মতো গ্রামগঞ্জে এখন আর চোখে পড়ে না বাবুই পাখির দৃষ্টিনন্দন সেই বাসা। বন উজার আর এক শ্রেণির শিকারির কারণে বিলুপ্তির পথে প্রকৃতির এই বুনন শিল্পীরা।

 

এক সময় গ্রাম-অঞ্চলে সারি সারি উঁচু তালগাছে বাবুই পাখির দৃষ্টি নন্দন বাসা দেখা যেত। এখন তা আর সচরাচর চোখে পড়ে না। খড়, তালপাতা, ঝাউ ও কাশবনের লতাপাতা দিয়ে বাবুই পাখি বাসা বাঁধে। বাসা দেখতে যেমন আকর্ষণীয় তেমনি মজবুত। প্রবল ঝড়েও তাদের বাসা পড়ে না। পরিবেশ বিপর্যয়ের কারণে প্রাকৃতিক সৌন্দর্যকে আরও ফুটিয়ে তোলে বাবুই পাখি আজ আমরা হারাতে বসেছি।

 

পুরুষ বাবুই এক মৌসুমে ৬টি বাসা তৈরি করতে পারে। আমন ধান পাকার সময় হলো বাবুই পাখির প্রজনন মৌসুম। এমসয় সাধারণত তারা তাল ও খেজুর গাছের ডালে বাসা তৈরি করতে ব্যস্ত থাকে। ডিম ফুটে বাচ্চা বের হওয়ার পরপরই বাচ্চাদের খাওয়ানোর জন্য স্ত্রী বাবুই ক্ষেতে থেকে দুধ ধান সংগ্রহ করে। প্রকৃতির বিরুদ্ধে মানুষের আগ্রাসী কার্যকলাপের বিরুপ প্রভাবই আজ বাবুই পাখি ও তার বাসা হারিয়ে যেতে বসেছে। তবে দেশের গ্রামগঞ্জের কিছু কিছু অঞ্চলের তাল ও খেজুর গাছে এখনও চোখে পড়ে বাবুই পাখির বাসা। তবে তালগাছেই তাদের একমাত্র নিরাপদ জায়গা। সেখানে তারা বাসা বাঁধতে সাচ্ছন্দ্য বোধ করে।

 

ভেড়ামারা উপজেলার স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের সভাপতি পিয়ার আলী পিরু বলেন, প্রকৃতিক পরিবেশের ভারসম্য রক্ষাসহ সারা উপজেলাকে সবুজ বলয় তৈরি করার লক্ষ্যে আমরা পাকা সড়কসহ রাস্তার ধারে বিভিন্ন প্রজাতির বৃক্ষ রোপণসহ দুই হাজার তাল গাছের চারা রোপণ করেছি। এগুলো এক সময় বজ্রপাতের হাত থেকে আমাদের পরিবেশকে রক্ষা করবে এবং বাবুই পাখিকে টিকিয়ে রাখতে আমরা যদি গ্রাম-গঞ্জসহ সারা দেশেই রাস্তার ধারে বা পতিত জমিতে সমন্বিতভাবে তালগাছ রোপণের উদ্যোগ গ্রহণ করি, তাহলে আমরা ফিরে পাবো কবি রজনীকান্ত সেনের ওই কবিতার বাস্তবতা আর গ্রামগঞ্জের হারিয়ে যাওয়া পূর্বের ঐতিহ্য।

 

ফারাকপুর গ্রামের আলীমদ্দীন (৭০) নামে এক স্থানীয় বাসিন্দা বলেন, আমার বাড়ির পাশে একটি তাল গাছ ছিল সেখানে শত শত বাবুই পাখি তাদের বাসা বাঁধত। দিনশেষে সন্ধ্যাবেলায় ঝাঁকে ঝাঁকে বাবুই পাখি তাদের নীড়ে ফিরত আর কিচিরমিচির ডাকে পুরো এলাকা মাতিয়ে তুলত। ভোরবেলায় তাদের কিচিরমিচির ডাকে ঘুম ভাঙত। তালগাছ না থাকায় এখন এসব প্রায় বিলুপ্তির পথে কোথায় গেল এসব দিন।

 

বাবুই পাখিরা সাধারণত তালগাছেই বাসা তৈরি করতে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করে। চড়ুই পাখি মানুষের বাসায় থাকতে পছন্দ করে কিন্তু বাবুই পাখি পরিশ্রমী হয় এবং নিজের বাসায় থাকতে বেশি পছন্দ করে। এদের বাসাগুলোও দেখতে চমৎকার এবং মজবুত হয়। বাবুই পাখিরাই এরকম সুন্দরভাবে বাসা তৈরি করতে পারদর্শী। আর তাই বাবুই পাখিদের প্রকৃতির নিপুণ কারিগর বলা হয়। এরা সুপারি এবং খেজুর গাছেও বাসা তৈরি করতে পারে।

 

ভেড়ামারার সিনিয়র সাংবাদিক ইসমাইল হোসেন বাবু বলেন, কিছু মানুষ বুঝে না বুঝে তাদের শিকার করে। তালগাছ ও নারিকেল গাছের সংখ্যা কমে যাচ্ছে। যে কারণে বাবুই পাখি এখন বিলুপ্তির পথে। বৃক্ষ নিধন ও নির্বিচারে পাখি শিকারের কারণে বাবুই পাখির বাসা এখন খুব একটা দেখা যায় না। পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্য রক্ষার স্বার্থে পাখি নিধন বন্ধ করার পাশাপাশি পাখিদের অভয়ারণ্য সৃষ্টি করতে হবে।

 

কিন্তু প্রকৃতির নিপুণ কারিগর বাবুই পাখিদের বাসা এখন প্রায় বিলুপ্তপ্রায়। কেননা তালগাছ বা সুপারি গাছ সংখ্যায় খুব কমে যাচ্ছে। আমাদের পরিবেশে এই পাখির জন্য বাসস্থানের খুব অভাব। আমরা ছোটবেলায় বইয়ে বাবুই পাখির বাসা সম্পর্কে ধারণা পেয়েছি, কিন্তু বাস্তবে বাবুই পাখির বাসা খুব একটা দেখিনি। নতুন প্রজন্মের ছেলেমেয়েরাও বাবুই পাখির বাসা কখনো দেখেছে কিনা কিংবা দেখলেও চিনবে কিনা তা নিয়ে সন্দেহ আছে। পাখিজগতের অস্তিত্ব রক্ষার্থেও আমাদের বেশি বেশি বৃক্ষ রোপণ করা উচিত।

 

গ্রামের রাস্তা-ঘাট, পুকুর-পাড় ও মাঠের মধ্যে তালগাছ ছিল এবং আষাঢ় মাসের আগে থেকে বাবুই পাখি বাসা বুনতে শুরু করে এবং কিচিরমিচির শব্দে মুখরিত থাকত পুরো গ্রাম। এখন হাতে গোনা কয়েক টা তালগাছ আছে। ইটের ভাটায় জ্বালানি হিসাবে চলে যাচ্ছে সব তালগাছ।

 

স্ত্রী বাবুই পাখির প্রেরণা পেয়ে পুরুষ বাবুই খুবই শিল্পসম্মত নিপুণভাবে বাসা তৈরি করে। স্ত্রী বাবুই ডিম দেয়ার সঙ্গে সঙ্গেই পুরুষ বাবুই খুঁজতে থাকে আরেক সঙ্গীকে। পুরুষ বাবুই এক মৌসুমে ৬টি পর্যন্ত বাসা তৈরি করতে পারে। অর্থাৎ এরা ঘর সংসার করতে পারে ৬ সঙ্গীর সঙ্গে। তাতে স্ত্রী বাবুইয়ের না নেই। প্রজনন প্রক্রিয়ায় স্ত্রী বাবুই ডিমে তা দেয়ার ২ সপ্তাহের মধ্যেই বাচ্চা ফোটে। ৩ সপ্তাহ পর বাবুই বাচ্চা বাসা ছেড়ে উড়ে যায়। বাবুই পাখির প্রজনন সময় হলো ধান ঘরে উঠার মৌসুম। স্ত্রী বাবুই দুধধান সংগ্রহ করে এনে বাচ্চাদের খাওয়ায়। বাবুই পাখি তাল গাছে বাসা বাধে বেশি।

 

পাখি প্রেমী সাহাব উদ্দিন বলেন, সারাবিশ্বে বাবুই পাখির প্রজাতির সংখ্যা ১১৭টি। তবে বাংলাদেশে তিন প্রজাতির বাবুই পাখির বাস। তিনি আরও বলেন, বাবুই পাখির অন্যতম বৈশিষ্ট্য হলো রাতের বেলায় ঘর আলোকিত করার জন্য এরা জোনাকি পোকা ধরে নিয়ে বাসায় রাখে এবং সকাল হলে আবার তাদের ছেড়ে দেয়। ধান, চাল, গম ও পোকা-মাকড় প্রভৃতি তাদের প্রধান খাবার।

সর্বদা একসময় বাবুই পাখির কলতানে মুখরিত থাকতো বিভিন্ন গ্রাম। তালগাছ নিধনের ফলে বাসা হারিয়ে বিলীনের পথে বাবুই পাখি।