কুষ্টিয়ায় নিজের আপন বোন আফরোজা খাতুন ওরফে পায়রা খাতুনকে হত্যা করে পুকুরের মধ্যে ফেলে দেন। আবার নিজেই বোনের হত্যা ঘটনায় বাদী হয়ে মামলা করেন। পিবিআইয়ের তদন্তে বেরিয়ে এসেছে এমন চাঞ্চল্যকর তথ্য। এঘটনায় আপন ভাই মোহন বিশ্বাস (৩৬) কে গ্রেফতার করেছে পিবিআই। দীর্ঘ দিন মামলাটি কুষ্টিয়ার পুলিশ ব্যুরো অফ ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই) তদন্তে হত্যার সাথে জড়িত প্রমানিত হওয়ায় বুধবার (২৪ জানুয়ারী) তাকে গ্রেফতার করেছে পিবিআই।
গ্রেফতারকৃত মোহন বিশ্বাস কুষ্টিয়া কুমারখালী উপজেলার পান্টি ইউনিয়নের ডাঁসা গ্রামের মৃত আতিয়ার রহমানের ছেলে। সম্পর্কে মৃত আফরোজা খাতুন ওরফে পায়রা মামলার বাদী মোহন বিশ্বাসের আপন বোন।গ্রেফতার মোহন জানায়, তার বোন পায়রা অনৈতিক সম্পর্কে জড়িয়ে পড়লে বিষয়টি নিয়ে পারিবারিক অশান্তি সৃষ্টি হয়।
ঘটনার দিন বিকালে মোহনের স্ত্রী সুখি বেগম ও পায়রা প্রচন্ড ঝগড়া বিবাদে লিপ্ত হয়। ঐ ঘটনাকে কেন্দ্র করে সুখি বেগম ও মোহন বিশ্বাস পায়রাকে হত্যার পরিকল্পনা করে। পরিকল্পনা মোতাবেক মোহন রাত ১২ টার পর পায়রাকে বাড়ির বাইরে ডেকে নিয়ে যায়। সুখি বেগম পায়রার মাথায় ইট দিয়ে সজোরে আঘাত করলে পায়রা মাটিতে লুটিয়ে পড়লে মোহন ও তার স্ত্রী সুখি বেগম ২টা ওড়না পায়রার গলায় পেঁচিয়ে ফাঁস দিয়ে মৃত্যু নিশ্চিত করে এবং লাশটি পার্শ্ববর্তী পুকুরে ফেলে দেয়।
পিবিআই সুত্রে জানা যায়, নিহত পায়রা ২০২২ সালের ৫ মার্চ রাত আনুমানিক সাড়ে ৭ টার সময় রাতের খাওয়া শেষ করে ঘুমিয়ে পড়েন। পরদিন ৬মার্চ ভোর আনুমানিক সাড়ে ৬ টার সময় বাড়ি হতে অনুমান দুই কিঃমিঃ দূরে কুমারখালী থানাধীন ডাসা গ্রামের নিহতের চাচার বাড়ি সংলগ্ন একটি পুকুরের মধ্যে পায়রার লাশ পাওয়া যায়। পরে কুমারখালী থানা পুলিশ লাশ উদ্ধার করে ময়না তদন্তের জন্য হাসপাতালে প্রেরণ করেন।
বিষয়টি নিয়ে কুমারখালী থানায় একটি অপমৃত্যু মামলা রুজু করে। পরে ময়না তদন্ত রিপোর্টে শ্বাসরোধে হত্যা করা হয়। আসামির নাম না থাকায় অজ্ঞাতনামা আসামী করে নিহত পায়রার ভাই মোহন বাদী হয়ে একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। কুমারখালী থানার মামলা নং ২৭। তাং- ২৩/১১/২২, ধারা- ৩০২/৩৪ পেনাল কোড। কুমারখালী থানা পুলিশ ২৩/১১/২০২২ ইং তারিখ হতে ২৩/০৮/২০২৩ ইং তারিখ পর্যন্ত তদন্ত করে।
পরবর্তীতে পুলিশ হেডকোয়ার্টার্স এর নির্দেশক্রমে পিবিআই কুষ্টিয়া ২৯/০৮/২০২৩ ইং তারিখে মামলাটির তদন্তভার গ্রহন করে।পিবিআই কুষ্টিয়ার পুলিশ সুপার মোঃ শহীদ আবু সরোয়ারের সার্বিক তত্ত্বাবধানে পিবিআই কুষ্টিয়ার উপ-পুলিশ পরিদর্শক মোঃ শরিফুল ইসলাম মামলার ঘটনার সাথে সূত্রোক্ত মামলার বাদীর সম্পৃক্ত থাকার তথ্য প্রাপ্ত হন।
পিবিআই কুষ্টিয়ার একটি অভিযানিক দল অভিযান চালিয়ে মামলার বাদী মোঃ মোহন বিশ্বাস (৩৬) কে তার নিজ বাড়ি হতে গ্রেফতার করে।পিবিআই কুষ্টিয়ার উপ-পুলিশ পরিদর্শক মোঃ শরিফুল ইসলাম জানান, গ্রেফতারের পর প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে আসামী মামলার ঘটনার সাথে সম্পৃক্ততার বিষয়টি স্বীকার করে।
কুষ্টিয়া পিবিআইয়ের পুলিশ সুপার মোঃ শহীদ আবু সরোয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করে জানান, পুলিশ হেডকোয়ার্টারের নির্দেশক্রমে এবং বিশ্বস্ত সোর্সের মাধ্যমে জানতে পেরে মামলার বাদিকে আটক করি। পরে মামলার বাদিকে হত্যার বিষয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করলে সে আমাদের নিকট হত্যার বিষয়ে সমস্ত কিছু স্বীকার করে। আমরা পরবর্তী আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য আসামিকে বিজ্ঞ আদালতে প্রেরনের কার্যক্রম পরিচালনা করছি।
প্রিন্ট