রাজধানীর যানজট নিরসনে অনেকগুলো বড় প্রকল্প হাতে নিয়েছে সরকার। এরই মধ্যে মেট্রোরেলের মতো প্রকল্পের সুবিধা পেতে শুরু করেছেন নগরবাসী। আরেকটি মেগাপ্রকল্পের স্বাদ মিলবে আগামীকাল শনিবার থেকে। এ দিন যান চলাচলের জন্য খুলে দেওয়া হবে ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের একাংশ (বিমানবন্দর থেকে ফার্মগেট পর্যন্ত)। আপাতত এ সড়কের বিমানবন্দরের দিক থেকে ওঠা গাড়ি নামবে ফার্মগেটের ইন্দিরা রোড দিয়ে। আর ফার্মগেট প্রান্ত থেকে গাড়ি এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়েতে উঠবে বিজয় সরণি ফ্লাইওভার দিয়ে।
সরকারি-বেসরকারি অংশীদারত্বে (পিপিপি) ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে নির্মিত হচ্ছে বিমানবন্দর থেকে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের কুতুবখালী পর্যন্ত।
আগামীকাল বিকাল ৪টায় এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের উদ্বোধনী ফলক উন্মোচন করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। উদ্বোধনের পর বিমানবন্দর প্রান্তে টোল দিয়ে তিনি এ সড়কে উঠবেন। এরপর তেজগাঁও কলেজের সামনের র্যাম্প দিয়ে নেমে তিনি যোগ দেবেন পুরাতন বাণিজ্য মেলার সুধী সমাবেশে।
সেতু সচিব মনজুর হোসেন বলেন, ‘এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়েতে গাড়ি চলবে ৬০ কিলোমিটার গতিতে। বিমানবন্দর থেকে ফার্মগেট পর্যন্ত যেতে সময় লাগবে ১২ মিনিট। এই এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের রোড কানেকটিভিটি মোট সাড়ে ২২ কিলোমিটার। এর মধ্যে সাড়ে ১১ কিলোমিটার মেইন ক্যারেজ, অর্থাৎ উড়াল সড়ক। এর সঙ্গে গাড়ি ওঠা-নামার র্যাম্প থাকছে ১১ কিলোমিটার। সময় সাশ্রয় ও বাধাবিহীন যাতায়াতে সড়কটি বড় ভূমিকা রাখবে।’
সেতু সচিব জানান, প্রকল্প বাস্তবায়নকাল ২০২৪ এর জুন পর্যন্ত ধরা আছে। তখন চালু হবে পুরো সড়কটি। এ ক্ষেত্রে আশুলিয়া উড়াল সড়কটি চালু হলে আরও সুবিধা হবে। ঢাকার আশুলিয়া ইপিজেড থেকে কুতুবখালী পর্যন্ত গাড়ি পার হবে অনায়াসে।
প্রকল্প পরিচালক এ এইচ এম এস আকতার বলেন, আপাতত বনানী ও মহাখালী র্যাম্প দুটি চালু হচ্ছে না; কিছু কাজ বাকি আছে। এ সড়কে চার ক্যাটাগরিতে টোল আদায় হবে। ক্যাটাগরি-১ এ থাকছে কার, ট্যাক্সি, জিপ, স্পোর্টস ইউটিলিটি ভেহিক্যাল, মাইক্রোবাস (১৬ আসনের কম) ও হালকা ট্রাক (তিন টনের কম); টোল ৮০ টাকা। ক্যাটাগরি-২ এ থাকছে মাঝারি ট্রাক (ছয় চাকা পর্যন্ত), টোল ৩২০ টাকা। ক্যাটাগরি-৩ এ থাকা ট্রাকের (ছয় চাকার বেশি) জন্য দিতে হবে ৪০০ টাকা। ক্যাটাগরি-৪ এ সব ধরনের বাসের (১৬ আসন বা তার বেশি) টোল ১৬০ টাকা।
ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের দক্ষিণে কাওলা থেকে কুড়িল-বনানী-মহাখালী-তেজগাঁও-মগবাজার-কমলাপুর-সায়েদাবাদ-যাত্রাবাড়ী হয়ে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের কুতুবখালী এলাকা পর্যন্ত যাবে। প্রকল্পের মোট দৈর্ঘ্য ১৯ দশমিক ৭৩ কিলোমিটার। এতে ওঠানামার জন্য ২৭ কিলোমিটারের ৩১টি র্যাম্প রয়েছে। এসব র্যাম্পসহ এক্সপ্রেসওয়টি প্রায় ৪৭ কিলোমিটার দীর্ঘ। বর্তমানে প্রকল্পের বিমানবন্দরের দক্ষিণে কাওলা থেকে ফার্মগেট পর্যন্ত অংশ প্রস্তুত। এ অংশে ওঠা-নামার জন্য ১৫টি র্যাম্প রয়েছে। এর মধ্যে এয়ারপোর্টে দুটি, কুড়িলে তিনটি, বনানীতে চারটি, মহাখালীতে তিনটি, বিজয়সরণিতে দুটি ও ফার্মগেটে একটি। এক্সপ্রেসওয়ের ওপর দিয়ে থ্রি-হুইলার, মোটরবাইক, বাইসাইকেল ও পথচারী চলাচল করতে পারবে না। প্রকল্পটি ঢাকা শহরের উত্তর-দক্ষিণ করিডোরের সড়কপথের ধারণক্ষমতা বাড়াবে।
ঢাকা শহরের উত্তর থেকে দক্ষিণে নির্বিঘ্নে ও দ্রুত সড়ক যোগাযোগ চালু করতে ২০০৯ সালে নেওয়া হয় ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে প্রকল্প। নির্মাণ চুক্তি হয় ২০১১ সালে। কথা ছিল ২০১৩ সালের মধ্যে এক্সপ্রেসওয়েটি উদ্বোধন হবে। কিন্তু নির্ধারিত সময়ের প্রায় ১০ বছর পর চালু হচ্ছে আংশিকভাবে। কয়েক দফা এর নকশা পরিবর্তন করা হয়েছে। ভূমি অধিগ্রহণ ও পিপিপি অংশীদারের অর্থের সংস্থান না হওয়াসহ নানা জটিলতায় এর নির্মাণকাজ শেষ করার সময়সীমা পেছানো হয় পাঁচবার।
প্রকল্পের শুরুতে ব্যয় ধরা হয় ৮ হাজার ৭০৩ কোটি টাকা। ২০১৩ সালে তা বেড়ে দাঁড়ায় ৮ হাজার ৯৪০ কোটি টাকায়। এ ব্যয় আরও বাড়ছে। বাংলাদেশ সরকার ভিজিএফ হিসেবে ২৭ শতাংশ দেবে বিনিয়োগকারীকে।
প্রকল্পটি থাইল্যান্ডভিত্তিক প্রতিষ্ঠান ইতালিয়ান থাই ডেভেলপমেন্ট কোম্পানি লিমিটেড (৫১ শতাংশ), চীনভিত্তিক প্রতিষ্ঠান শেনডং ইন্টারন্যাশনাল ইকনোমিক অ্যান্ড টেকনিক্যাল কো-অপারেশন গ্রুপ (৩৪ শতাংশ) ও সিনোহাইড্রো করপোরেশন লিমিটেডের (১৫ শতাংশ) যৌথ উদ্যোগে নির্মিত হচ্ছে। ২০১৪ সালের ৩০ অক্টোবর ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের নির্মাণকাজ কাজ উদ্বোধন করেন সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের।
পুরো এক্সপ্রেসওয়েতে ১১টি টোল প্লাজা থাকবে। পুরোটা চালু হলে প্রাথমিকভাবে দৈনিক ৮০ হাজার যানবাহন চলার কথা রয়েছে। মাত্র ২০ মিনিটে এক্সপ্রেসওয়েটি পাড়ি দেওয়া যাবে। ২১ বছর টোল আদায় করবে বিনিয়োগকারী। প্রকল্পটি পিপিপি আওতায় বিনিয়োগকারীর সঙ্গে সরকারের চুক্তি হয়েছে ২৫ বছরের। সাড়ে তিনি বছর নির্মাণ কাজ শেষে। বাকি সাড়ে ২১ বছর টোল আদায় করবে বিনিয়োগকারী অংশীদার প্রতিষ্ঠান। তারপর এর মালিকানা বুঝে পাবে সরকার।
প্রিন্ট