ঢাকা , বৃহস্পতিবার, ১৬ জানুয়ারী ২০২৫, ২ মাঘ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম
প্রতিনিধি নিয়োগ
দৈনিক সময়ের প্রত্যাশা পত্রিকার জন্য সারা দেশে জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে প্রতিনিধি নিয়োগ করা হচ্ছে। আপনি আপনার এলাকায় সাংবাদিকতা পেশায় আগ্রহী হলে যোগাযোগ করুন।

শুকিয়ে যাচ্ছে পদ্মা, নদীর বুক চিরে চলছে গরু-মহিষের গাড়ি

প্রমত্তা পদ্মা যৌবন হারিয়েছে। শুকনো মওসুম শুরুর আগেই শুকিয়ে যাচ্ছে পদ্মা। দিন দিন পানি কমছে। বাড়ছে চরের বিস্তৃতি। নদীর বুক চিরে চলছে গরু-মহিষের গাড়ি। ভূগর্ভস্থ পানির স্তর দ্রæত নেমে যাচ্ছে। বহু এলাকায় গভীর নলকূপেও পানি মিলছে না। নদীর বুকে জেগে ঊঠেছে বিশাল বিশাল বালুর চর। সেই সাথে পদ্মা সংযুক্ত প্রধান প্রধান শাখা প্রশাখাসহ অন্তত ৮৫টি নদী প্রায় পানি শুন্য হয়ে পড়েছে। এতে দেশের দক্ষিণ-পশ্চিম ও উত্তর অঞ্চলের শিল্প, ব্যবসা-বানিজ্য, জীববৈচিত্র্য ও কৃষি খাত হুমকীর মুখে পড়েছে।

নদী অঞ্চলের জেলেসহ বিভিন্ন শ্রেণীপেশার মানুষ পেশা বদল করেও বেকার হয়ে পড়েছেন। পদ্মায় পানি না থাকায় সুন্দরবন বাঁচাতে ও পানিতে লবণাক্ততা কমাতে শত কোটি টাকা ব্যয়ে গড়াই নদী খনন করা হলেও তেমন কোনো সুফল আসেনি। বর্ষা গেলেই চরের বালি আবার নদীতে নেমে গিয়ে ভরাট হচ্ছে নদী। সরেজমিন গিয়ে দেখা গেছে, রুগ্ন পদ্মা নদীর হার্ডিঞ্জ ব্রিজের পূর্ব ও পশ্চিম পাড়সহ গড়াই নদীতে জেগে উঠেছে অসংখ্য ডুবোচর।

পানির অভাবেই দিন দিন আরও শুকিয়ে যাচ্ছে পদ্মা হার্ডিঞ্জ ব্রিজের ১৫টি গার্ডারের মধ্যে অর্ধেকই এখন দাঁড়িয়ে আছে ধু-ধু বালুচরে। পানিউন্নয়ন বোর্ড সূত্রে জানা গেছে, চুক্তি অনুযায়ী ১ জানুয়ারি থেকে ৩০ মে পর্যন্ত সময়কে শুষ্ক মওসুম হিসেবে অভিহিত করে প্রতিটি মাসকে তিন চক্রে ভাগ করা হয়েছে।

কোন চক্রে বাংলাদেশ কি পরিমাণ পানি পাবে তাও চুক্তিতে উল্লেখ রয়েছে। ঠিকমতো পানি বণ্টন হচ্ছে কিনা তা দেখার জন্য যৌথ নদীকমিশনের (জেআরসি) সদস্যরা বাংলাদেশ-ভারত সফর করেন। চুক্তি অনুযায়ী বাংলাদেশ সব সময়ই ন্যায্য হিস্যা থেকে বঞ্চিত হয়েছে। পানি না পেয়ে পদ্মা আজ মরা খালে পরিণত হয়েছে। ফলে চলতি শুষ্ক মওসুমে পদ্মার বুকে দেখা দিয়েছে ধু-ধু বালুচর।


অন্যদিকে, শুষ্ক মওসুমে পানির অভাবে বন্ধ হয়ে যায় দেশের বৃহত্তম গঙ্গা-কপোতাক্ষ সেচ প্রকল্প। প্রকল্পের আওতায় প্রায় ১ লাখ একর সেচ সরবরাহ করার কথা থাকলেও পানির অভাবে এ অঞ্চলের লাখ লাখ মানুষের জীবন-জীবিকাসহ উত্তর-দক্ষিণ পশ্চিমাঞ্চলের লাখ লাখ মানুষের ভবিষ্যৎ হুমকির মুখে পড়েছে। আর বিস্তীর্ণ এ এলাকায় মরুকরণ প্রক্রিয়ায় তীব্রতর হচ্ছে।

জানা যায়, ১৯৬১ সালের ৩০ জানুয়ারি ভারত ফারাক্কা বাঁধ নির্মাণ শুরু করে ১৯৭০ সালে কাজ শেষ করে। ১৯৭৫ সালে আনুষ্ঠানিকভাবে ফারাক্কা বাঁধের সবকটি গেট খুলে দিলে সেবারই মূলত চাহিদা অনুযায়ী পানি পেয়েছিল বাংলাদেশ। ১৯৭৬ সাল থেকে আজ পর্যন্ত চাহিদানুযায়ী পানির ন্যায্য হিস্যা থেকে বঞ্চিতই রয়ে গেছে দেশটি।

অথচ ফারাক্কা বাঁধ নির্মাণের আগে শুষ্ক মওসুমেও পদ্মা থেকে ৪০ হাজার কিউসেক পর্যন্ত পানি পাওয়া যেত। পানি উন্নয়ন বোর্ড প্রকৌশলী ওবায়দুর রহমান জানান, ফারাক্কা বাঁধের বিরূপ প্রভাবে পদ্মায় পানি হ্রাস এবং গড়াইসহ চারটি শাখা নদী শুকিয়ে গেছে।

পরিবেশবিদ ও গবেষক ড. আনোয়ারুল করিম বলেন, দীর্ঘদিন ধরেই বাংলাদেশ চুক্তি অনুযায়ী পানি পাচ্ছেনা। যে কারণে শুষ্ক মওসুমে কুষ্টিয়াসহ দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের প্রায় ২৫টি নদী পানি শূন্য হয়ে পড়ছে। পানিতে লবণাক্ততা দেখা দিচ্ছে।

নদী শুকিয়ে যাওয়ায় এসব অঞ্চলে মরুকরণ হওয়ার উপক্রম হতে বসেছে। পরিবেশের উপর মারাত্মক বিপর্যয় নেমে এসেছে। এ অবস্থা থেকে দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের নদ-নদীগুলো এবং পরিবেশের ভারসাম্য ধরে রাখতে হলে সরকারকে অবিলম্বে কার্যকরী পদক্ষেপ গ্রহণ করা জরুরি বলে মনে করেন এই পরিবেশবিদ। তিনি অবিলম্বে পানি চুক্তির ন্যায্য হিস্যা বাস্তবায়নের জন্য সরকারের প্রতি তাগিদ দেন।

নদীর কিনারে পানি উন্নয়ন বোর্ডের একটি ছোট পরিমাপক বসানো রয়েছে। সেখানে প্রতিদিন পানির মাপ নেয়া হয়। পানি কমার দিকে রয়েছে।

পাড়ে বসে ছিলেন সত্তর ছুই ছুই তরিকুল ইসলাম। ব্রীজের আশেপাশেই যাত্রী আনা নেয়া করেন ভ্যান চালক আক্কাস বললেন, চৈত্র বৈশাখ পর্যন্ত পানি কমতেই থাকবে। এমনটি হয় প্রতিবছর। পানি নিয়ে কথা বলতেই বলে ওঠেন বাদ দেন ওসব কথা। চুক্তি আছে পানি নেই। তবু ওদের মিথ্যা কথার জুড়ি নেই। নদীর বেহাল দশা দেখতে পাবেন আর কয়দিন পর।

গোদাগাড়ি থেকে হার্ডিঞ্জ ব্রীজ পর্যন্ত পদ্মা নদীর বুকে ছোট ছোট ডিঙ্গি নৌকা নিয়ে মাছ ধরা জেলেদের হা হুতাশ ছাড়া আর কিছু নেই। এক সময় এ অঞ্চলে অন্তত পয়ত্রিশ হাজার মৎস্যজীবী ছিল। এখন দু’তিন হাজারের বেশী হবেনা বলে মৎস্য বিভাগ সূত্রে জানা যায়। কারন নদীতে পানিও নেই মাছও নেই। ফলে বাধ্য হয়ে পেশা বদল করতে হয়েছে।

উত্তর ও দক্ষিণাঞ্চলের মানুষ দেখছেন, নদী শুকিয়ে চৌচির হয়ে যাচ্ছে। পদ্মা নদীতে পর্যাপ্ত পানি না থাকায় এর প্রধান শাখা নদী বড়াল, আত্রাই ও গড়াই নদী প্রায় পানি শুন্য হয়ে পড়েছে। কুষ্টিয়ার কয়ায় গড়াই নদীর উপর নির্মিত গড়াই রেল ও রুমী ব্রিজের নিচে ধু ধু বালু চর। জিকে প্রজেক্ট কার্যত অকার্যকর হয়ে পড়েছে।

পদ্মা, মধুমতি, নবগঙ্গা, কাজলা, মাথাবাঙ্গা, গড়াই, আত্রাই, চিকনাই, হিনসা, কুমার, সাগরখালি, কপোতাক্ষ, চন্দনাসহ পদ্মার ৮৫টি শাখা-প্রশাখা নদীর বুকে জেগে উঠেছে ছোট-বড় অসংখ্য চর। কোন কোন স্থানে বালু স্থায়ী মৃত্তিকায় রুপ নেয়ায় ফসল আবাদ করেছেন অনেকেই। বর্তমানে পদ্মা নদী হার্ডিঞ্জ ব্রিজ ও লালন শাহ ব্রীজের নিচে খাস জমিতে কৃষক চিনা বাদাম, বাঙ্গী, তরমুজ, টমেটো, আখসহ নানা রকম রবি শস্য আবাদ করেছেন।

পদ্মার প্রধান শাখা নদী হলো মাথাভাঙ্গা, কুমার, ইছামতি, গড়াই, আড়িয়ালখা প্রভৃতি। প্রশাখা হলো মধুমতি, পশুর, কপোতাক্ষ। উপনদী একটি মহানন্দা। মহানন্দা রাজশাহী জেলার গোদাগাড়ী থানায় পদ্মায় মিলিত হয়েছে। পদ্মার পানি দিয়ে শুকনো মওসুমে রাজশাহী, পাবনা, কুষ্টিয়া, যশোর, ফরিদপুর প্রভৃতি জেলায় সেচকাজ চালানো হয়।

এ নদীর পানি দিয়ে প্রায় ২০ ভাগ জমির সেচকাজ চলে। বাংলাদেশের কৃষি, শিল্প, ব্যবসা-বানিজ্য, নৌযোগাযোগসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে পদ্মা নদীর ভুমিকা গুরুত্বপূর্ণ।

গঙ্গার পানি নিয়ে ত্রিশ বছর মেয়াদী গ্যারান্টিক্লজহীন চুক্তি করলেও বাংলাদেশ কখনোই তার পানির নায্য হিস্যা পায়নি। চুক্তির নামে হয়েছে শুভংকরের ফাঁকি। পদ্মা অববাহিকার কোটি কোটি মানুষ তাদের ইচ্ছের পুতুলে পরিণত হয়েছে। শুকনো মৌসুমে পানি না দিয়ে শুকিয়ে মারা। আর বর্ষার সময় ওপারের বন্যার চাপ সামলাতে ফারাক্কার সব গেট খুলে দিয়ে এপারে ডুবিয়ে মারার খেলা চালিয়ে যাচ্ছে।


প্রিন্ট
Tag :
এই অথরের আরো সংবাদ দেখুন

পত্রিকার সম্পাদক মাহমুদুর রহমানকে হত্যাচেষ্টা মামলায় কুষ্টিয়ার সাবেক ছাত্রলীগ নেতা গ্রেপ্তার

error: Content is protected !!

শুকিয়ে যাচ্ছে পদ্মা, নদীর বুক চিরে চলছে গরু-মহিষের গাড়ি

আপডেট টাইম : ০৬:১৩ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১ এপ্রিল ২০২১
ইসমাইল হোসেন বাবু, কুষ্টিয়া জেলা প্রতিনিধিঃ :

প্রমত্তা পদ্মা যৌবন হারিয়েছে। শুকনো মওসুম শুরুর আগেই শুকিয়ে যাচ্ছে পদ্মা। দিন দিন পানি কমছে। বাড়ছে চরের বিস্তৃতি। নদীর বুক চিরে চলছে গরু-মহিষের গাড়ি। ভূগর্ভস্থ পানির স্তর দ্রæত নেমে যাচ্ছে। বহু এলাকায় গভীর নলকূপেও পানি মিলছে না। নদীর বুকে জেগে ঊঠেছে বিশাল বিশাল বালুর চর। সেই সাথে পদ্মা সংযুক্ত প্রধান প্রধান শাখা প্রশাখাসহ অন্তত ৮৫টি নদী প্রায় পানি শুন্য হয়ে পড়েছে। এতে দেশের দক্ষিণ-পশ্চিম ও উত্তর অঞ্চলের শিল্প, ব্যবসা-বানিজ্য, জীববৈচিত্র্য ও কৃষি খাত হুমকীর মুখে পড়েছে।

নদী অঞ্চলের জেলেসহ বিভিন্ন শ্রেণীপেশার মানুষ পেশা বদল করেও বেকার হয়ে পড়েছেন। পদ্মায় পানি না থাকায় সুন্দরবন বাঁচাতে ও পানিতে লবণাক্ততা কমাতে শত কোটি টাকা ব্যয়ে গড়াই নদী খনন করা হলেও তেমন কোনো সুফল আসেনি। বর্ষা গেলেই চরের বালি আবার নদীতে নেমে গিয়ে ভরাট হচ্ছে নদী। সরেজমিন গিয়ে দেখা গেছে, রুগ্ন পদ্মা নদীর হার্ডিঞ্জ ব্রিজের পূর্ব ও পশ্চিম পাড়সহ গড়াই নদীতে জেগে উঠেছে অসংখ্য ডুবোচর।

পানির অভাবেই দিন দিন আরও শুকিয়ে যাচ্ছে পদ্মা হার্ডিঞ্জ ব্রিজের ১৫টি গার্ডারের মধ্যে অর্ধেকই এখন দাঁড়িয়ে আছে ধু-ধু বালুচরে। পানিউন্নয়ন বোর্ড সূত্রে জানা গেছে, চুক্তি অনুযায়ী ১ জানুয়ারি থেকে ৩০ মে পর্যন্ত সময়কে শুষ্ক মওসুম হিসেবে অভিহিত করে প্রতিটি মাসকে তিন চক্রে ভাগ করা হয়েছে।

কোন চক্রে বাংলাদেশ কি পরিমাণ পানি পাবে তাও চুক্তিতে উল্লেখ রয়েছে। ঠিকমতো পানি বণ্টন হচ্ছে কিনা তা দেখার জন্য যৌথ নদীকমিশনের (জেআরসি) সদস্যরা বাংলাদেশ-ভারত সফর করেন। চুক্তি অনুযায়ী বাংলাদেশ সব সময়ই ন্যায্য হিস্যা থেকে বঞ্চিত হয়েছে। পানি না পেয়ে পদ্মা আজ মরা খালে পরিণত হয়েছে। ফলে চলতি শুষ্ক মওসুমে পদ্মার বুকে দেখা দিয়েছে ধু-ধু বালুচর।


অন্যদিকে, শুষ্ক মওসুমে পানির অভাবে বন্ধ হয়ে যায় দেশের বৃহত্তম গঙ্গা-কপোতাক্ষ সেচ প্রকল্প। প্রকল্পের আওতায় প্রায় ১ লাখ একর সেচ সরবরাহ করার কথা থাকলেও পানির অভাবে এ অঞ্চলের লাখ লাখ মানুষের জীবন-জীবিকাসহ উত্তর-দক্ষিণ পশ্চিমাঞ্চলের লাখ লাখ মানুষের ভবিষ্যৎ হুমকির মুখে পড়েছে। আর বিস্তীর্ণ এ এলাকায় মরুকরণ প্রক্রিয়ায় তীব্রতর হচ্ছে।

জানা যায়, ১৯৬১ সালের ৩০ জানুয়ারি ভারত ফারাক্কা বাঁধ নির্মাণ শুরু করে ১৯৭০ সালে কাজ শেষ করে। ১৯৭৫ সালে আনুষ্ঠানিকভাবে ফারাক্কা বাঁধের সবকটি গেট খুলে দিলে সেবারই মূলত চাহিদা অনুযায়ী পানি পেয়েছিল বাংলাদেশ। ১৯৭৬ সাল থেকে আজ পর্যন্ত চাহিদানুযায়ী পানির ন্যায্য হিস্যা থেকে বঞ্চিতই রয়ে গেছে দেশটি।

অথচ ফারাক্কা বাঁধ নির্মাণের আগে শুষ্ক মওসুমেও পদ্মা থেকে ৪০ হাজার কিউসেক পর্যন্ত পানি পাওয়া যেত। পানি উন্নয়ন বোর্ড প্রকৌশলী ওবায়দুর রহমান জানান, ফারাক্কা বাঁধের বিরূপ প্রভাবে পদ্মায় পানি হ্রাস এবং গড়াইসহ চারটি শাখা নদী শুকিয়ে গেছে।

পরিবেশবিদ ও গবেষক ড. আনোয়ারুল করিম বলেন, দীর্ঘদিন ধরেই বাংলাদেশ চুক্তি অনুযায়ী পানি পাচ্ছেনা। যে কারণে শুষ্ক মওসুমে কুষ্টিয়াসহ দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের প্রায় ২৫টি নদী পানি শূন্য হয়ে পড়ছে। পানিতে লবণাক্ততা দেখা দিচ্ছে।

নদী শুকিয়ে যাওয়ায় এসব অঞ্চলে মরুকরণ হওয়ার উপক্রম হতে বসেছে। পরিবেশের উপর মারাত্মক বিপর্যয় নেমে এসেছে। এ অবস্থা থেকে দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের নদ-নদীগুলো এবং পরিবেশের ভারসাম্য ধরে রাখতে হলে সরকারকে অবিলম্বে কার্যকরী পদক্ষেপ গ্রহণ করা জরুরি বলে মনে করেন এই পরিবেশবিদ। তিনি অবিলম্বে পানি চুক্তির ন্যায্য হিস্যা বাস্তবায়নের জন্য সরকারের প্রতি তাগিদ দেন।

নদীর কিনারে পানি উন্নয়ন বোর্ডের একটি ছোট পরিমাপক বসানো রয়েছে। সেখানে প্রতিদিন পানির মাপ নেয়া হয়। পানি কমার দিকে রয়েছে।

পাড়ে বসে ছিলেন সত্তর ছুই ছুই তরিকুল ইসলাম। ব্রীজের আশেপাশেই যাত্রী আনা নেয়া করেন ভ্যান চালক আক্কাস বললেন, চৈত্র বৈশাখ পর্যন্ত পানি কমতেই থাকবে। এমনটি হয় প্রতিবছর। পানি নিয়ে কথা বলতেই বলে ওঠেন বাদ দেন ওসব কথা। চুক্তি আছে পানি নেই। তবু ওদের মিথ্যা কথার জুড়ি নেই। নদীর বেহাল দশা দেখতে পাবেন আর কয়দিন পর।

গোদাগাড়ি থেকে হার্ডিঞ্জ ব্রীজ পর্যন্ত পদ্মা নদীর বুকে ছোট ছোট ডিঙ্গি নৌকা নিয়ে মাছ ধরা জেলেদের হা হুতাশ ছাড়া আর কিছু নেই। এক সময় এ অঞ্চলে অন্তত পয়ত্রিশ হাজার মৎস্যজীবী ছিল। এখন দু’তিন হাজারের বেশী হবেনা বলে মৎস্য বিভাগ সূত্রে জানা যায়। কারন নদীতে পানিও নেই মাছও নেই। ফলে বাধ্য হয়ে পেশা বদল করতে হয়েছে।

উত্তর ও দক্ষিণাঞ্চলের মানুষ দেখছেন, নদী শুকিয়ে চৌচির হয়ে যাচ্ছে। পদ্মা নদীতে পর্যাপ্ত পানি না থাকায় এর প্রধান শাখা নদী বড়াল, আত্রাই ও গড়াই নদী প্রায় পানি শুন্য হয়ে পড়েছে। কুষ্টিয়ার কয়ায় গড়াই নদীর উপর নির্মিত গড়াই রেল ও রুমী ব্রিজের নিচে ধু ধু বালু চর। জিকে প্রজেক্ট কার্যত অকার্যকর হয়ে পড়েছে।

পদ্মা, মধুমতি, নবগঙ্গা, কাজলা, মাথাবাঙ্গা, গড়াই, আত্রাই, চিকনাই, হিনসা, কুমার, সাগরখালি, কপোতাক্ষ, চন্দনাসহ পদ্মার ৮৫টি শাখা-প্রশাখা নদীর বুকে জেগে উঠেছে ছোট-বড় অসংখ্য চর। কোন কোন স্থানে বালু স্থায়ী মৃত্তিকায় রুপ নেয়ায় ফসল আবাদ করেছেন অনেকেই। বর্তমানে পদ্মা নদী হার্ডিঞ্জ ব্রিজ ও লালন শাহ ব্রীজের নিচে খাস জমিতে কৃষক চিনা বাদাম, বাঙ্গী, তরমুজ, টমেটো, আখসহ নানা রকম রবি শস্য আবাদ করেছেন।

পদ্মার প্রধান শাখা নদী হলো মাথাভাঙ্গা, কুমার, ইছামতি, গড়াই, আড়িয়ালখা প্রভৃতি। প্রশাখা হলো মধুমতি, পশুর, কপোতাক্ষ। উপনদী একটি মহানন্দা। মহানন্দা রাজশাহী জেলার গোদাগাড়ী থানায় পদ্মায় মিলিত হয়েছে। পদ্মার পানি দিয়ে শুকনো মওসুমে রাজশাহী, পাবনা, কুষ্টিয়া, যশোর, ফরিদপুর প্রভৃতি জেলায় সেচকাজ চালানো হয়।

এ নদীর পানি দিয়ে প্রায় ২০ ভাগ জমির সেচকাজ চলে। বাংলাদেশের কৃষি, শিল্প, ব্যবসা-বানিজ্য, নৌযোগাযোগসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে পদ্মা নদীর ভুমিকা গুরুত্বপূর্ণ।

গঙ্গার পানি নিয়ে ত্রিশ বছর মেয়াদী গ্যারান্টিক্লজহীন চুক্তি করলেও বাংলাদেশ কখনোই তার পানির নায্য হিস্যা পায়নি। চুক্তির নামে হয়েছে শুভংকরের ফাঁকি। পদ্মা অববাহিকার কোটি কোটি মানুষ তাদের ইচ্ছের পুতুলে পরিণত হয়েছে। শুকনো মৌসুমে পানি না দিয়ে শুকিয়ে মারা। আর বর্ষার সময় ওপারের বন্যার চাপ সামলাতে ফারাক্কার সব গেট খুলে দিয়ে এপারে ডুবিয়ে মারার খেলা চালিয়ে যাচ্ছে।


প্রিন্ট