ঢাকা , বৃহস্পতিবার, ২১ নভেম্বর ২০২৪, ৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
প্রতিনিধি নিয়োগ
দৈনিক সময়ের প্রত্যাশা পত্রিকার জন্য সারা দেশে জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে প্রতিনিধি নিয়োগ করা হচ্ছে। আপনি আপনার এলাকায় সাংবাদিকতা পেশায় আগ্রহী হলে যোগাযোগ করুন।

নগরকান্দা পৌরসভা

মেয়রকে ১০ কাউন্সিলরের অনাস্থা

-নগরকান্দা পৌরসভার মেয়র নিমাই চন্দ্র সরকার।

ফরিদপুরের নগরকান্দা পৌরসভার মেয়র নিমাই চন্দ্র সরকারকে অনাস্থা দিয়েছেন পৌরসভার নির্বাচিত ১০ জন কাউন্সিলর। গত ৩০ এপ্রিল তারিখের স্থাণীয় সরকার মন্ত্রনালয়ের  মন্ত্রী ও সচিব বরাবর ১০জন কাউন্সিল স্বাক্ষরিত একটি অনাস্থা পত্র জমা দেন।
লিখিত অনাস্থা পত্রে উল্লেখ করেছেন নগরকান্দা পৌরসভার মেয়র নিমাই চন্দ্র সরকার মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে ফেলেছে। সে সাধারণ মানুষকে অযথা গালিগালাজ ও মারধর করে।  এমনকি প্রত্যেক কাউন্সিলরদের সাথে একাধিকবার গালি-গালাজসহ শারীরিক হেনেস্থার ঘটেছে। মেয়র একাধিক কাউন্সিলরকে মেরে রক্তাক্ত করেছে। মেয়র টিসিবি’র কার্ড উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার স্বাক্ষর ব্যতিত নিজে স্বাক্ষর করেছেন। মেয়র নিমাই চন্দ্র সরকার পৌরবাসির ট্যাক্স ও ব্যবসায়ীদের  ট্রেড লাইসেন্সের ৭ লাখ টাকা আদায়কারীর নিকট হতে নিজে স্বাক্ষর করে আত্মসাৎ করেছে। এছাড়া তিনি সরকারের রাজস্ব খাত থেকে ভুয়া বিল ভাউচার করে প্রচুর টাকা আত্মসাৎ করেছেন। গত বছরের  হাট-বাজারের ইজারার ১২ লাখ টাকার কোন হিসেব কাউন্সিলরা পাচ্ছেন।
তাই মেয়র নিমাই চন্দ্র সরকারের দুর্নীতি, স্বজনপ্রীতি, ক্ষমতার অপব্যবহার ও মানসিক ভারসাম্যহীনতার কারণে জনস্বার্থে তার বিরুদ্ধে পৌরসভা আইন ২০০৯ এর ৩৮ ধারা মোতাবেক তার বিরুদ্ধে আমরা অনাস্থা প্রস্তাব করিলাম। ১২ জন কাউন্সিলের মধ্যে ১০ জন কাউন্সিল অনাস্থা পত্রে স্বাক্ষর করেছেন।
অভিযোগকারী কাউন্সিলরা হলেন, ১ নং ওয়ার্ডের কাওসার আহমেদ মিয়া, ২ নং ওয়ার্ডের নাছির মাহমুদ, ৩ নং ওয়ার্ডের বাবলু মাতুব্বর, ৪ নং ওয়ার্ডের জালাল উদ্দিন সরদার, ৬ নং ওয়ার্ডের ইমদাদুল হক মাতুব্বর, ৭ নং ওয়ার্ডের জাকির হোসেন, ৯ নং ওয়ার্ডের মাসুদ মাতুব্বর নিকো, সংরক্ষিত নারী কাউন্সিলর ১ নং ওয়ার্ডের খাদিজা আক্তার, ২ নং ওয়ার্ডের শিরিয়া বেগম ও ৩ নং ওয়ার্ডের পারুলী বেগম।
১ নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর কাওসার আহমেদ মিয়া বলেন, নিমাই সরকার মেয়র নির্বাচিত হওয়ার পর থেকে স্বেচ্ছাচারিতা, খামখেয়ালীপনা পৌরবাসিদের সাথে খারাপ আচরণ ও কাউন্সিলরদের সাথে দূরব্যবহার এমনকি একাধিক কাউন্সিলরকে গায়ে হাত তুলেছে। পৌরসভার বরাদ্দকৃত টাকা নিজে লুটপাট করছে। আমরা কিছু বললে সে আমাদের উপর ক্ষেপে যায়। আমাদের এবং অফিসের স্ট্যাফদের ও গালাগালি করে।
আরেক কাউন্সিলর নাছির মাহমুদ বলেন, ঈদের আগে টিসিবির পন্য বিক্রির সময় ১,২ ও ৩ নং ওয়ার্ডের ১৩২ টি তালিকাভূক্ত কার্ড সুবিধাভোগীদের পন্য না দিয়ে সেই কার্ড উনার কাছে রেখে দিয়েছে। কার্ড আপনার কাছে রেখেছেন কেন এ কথা বলতেই মেয়র আমাকে বলে এ কৈফত তোকে দিবো কেন। এ কথা বলেই আমাকে কিল ঘুষি মারতে শুরু করে। এক পর্যায়ে টপবিলে রাখা কলম ধরে আমার মুখে কোপ মারে। এতে আমার চোখে লেগে আমি রক্তাক্ত জখম হই। এ সবের প্রতিকারের দাবীতে আমরা মেয়রের বিরুদ্ধে অনাস্থা প্রস্তাব এনেছি।
অভিযুক্ত নগরকান্দা পৌরসভার মেয়র নিমাই চন্দ্র সরকার বলেন, এর আগেও তারা আমার বিরুদ্ধে অভিযোগ দিয়েছে। সরকারের উন্নয়নকে বাধাগ্রস্ত করতে এসব অভিযোগ দিচ্ছে। আমার বিরুদ্ধে যেসব অভিযোগ আনা হয়েছে, তা সম্পূর্ণ মিথ্যা ও ভিত্তিহীন।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. মঈনুল হক বলেন, কাউন্সিলরদের অনাস্থা প্রস্তাবের বিষয়টি আমি অবগত নই। তবে এর আগে একজন কাউন্সিল মেয়র নিমাই চন্দ্র সরকারের বিরুদ্ধে একটি লিখিত অভিযোগ দিয়েছিলেন। অভিযোগটি আমি উর্দ্ধতন কর্মকর্তাদের কাছে পাঠিয়েছি। আর ঈদের সময় টিসিবির কার্ড আমার স্বাক্ষর ছাড়া বিতরণ করা হয়। পরে আমি মেয়রকে ডেকে জিজ্ঞাসাবাদ করি। তিনি আমাকে বলেছে, ঈদের চাপের কারণে তিনি কয়েকটি কার্ড বিতরণ করেছেন, আগামীতে আর এমন হবে না বলে আমার নিকট ওয়াদা করেছেন।

প্রিন্ট
Tag :
এই অথরের আরো সংবাদ দেখুন

জনপ্রিয় সংবাদ
error: Content is protected !!

নগরকান্দা পৌরসভা

মেয়রকে ১০ কাউন্সিলরের অনাস্থা

আপডেট টাইম : ০৩:৫৯ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ৪ মে ২০২৩
বোরহানুজ্জামান আনিস, স্টাফ রিপোর্টার, নগরকান্দা :
ফরিদপুরের নগরকান্দা পৌরসভার মেয়র নিমাই চন্দ্র সরকারকে অনাস্থা দিয়েছেন পৌরসভার নির্বাচিত ১০ জন কাউন্সিলর। গত ৩০ এপ্রিল তারিখের স্থাণীয় সরকার মন্ত্রনালয়ের  মন্ত্রী ও সচিব বরাবর ১০জন কাউন্সিল স্বাক্ষরিত একটি অনাস্থা পত্র জমা দেন।
লিখিত অনাস্থা পত্রে উল্লেখ করেছেন নগরকান্দা পৌরসভার মেয়র নিমাই চন্দ্র সরকার মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে ফেলেছে। সে সাধারণ মানুষকে অযথা গালিগালাজ ও মারধর করে।  এমনকি প্রত্যেক কাউন্সিলরদের সাথে একাধিকবার গালি-গালাজসহ শারীরিক হেনেস্থার ঘটেছে। মেয়র একাধিক কাউন্সিলরকে মেরে রক্তাক্ত করেছে। মেয়র টিসিবি’র কার্ড উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার স্বাক্ষর ব্যতিত নিজে স্বাক্ষর করেছেন। মেয়র নিমাই চন্দ্র সরকার পৌরবাসির ট্যাক্স ও ব্যবসায়ীদের  ট্রেড লাইসেন্সের ৭ লাখ টাকা আদায়কারীর নিকট হতে নিজে স্বাক্ষর করে আত্মসাৎ করেছে। এছাড়া তিনি সরকারের রাজস্ব খাত থেকে ভুয়া বিল ভাউচার করে প্রচুর টাকা আত্মসাৎ করেছেন। গত বছরের  হাট-বাজারের ইজারার ১২ লাখ টাকার কোন হিসেব কাউন্সিলরা পাচ্ছেন।
তাই মেয়র নিমাই চন্দ্র সরকারের দুর্নীতি, স্বজনপ্রীতি, ক্ষমতার অপব্যবহার ও মানসিক ভারসাম্যহীনতার কারণে জনস্বার্থে তার বিরুদ্ধে পৌরসভা আইন ২০০৯ এর ৩৮ ধারা মোতাবেক তার বিরুদ্ধে আমরা অনাস্থা প্রস্তাব করিলাম। ১২ জন কাউন্সিলের মধ্যে ১০ জন কাউন্সিল অনাস্থা পত্রে স্বাক্ষর করেছেন।
অভিযোগকারী কাউন্সিলরা হলেন, ১ নং ওয়ার্ডের কাওসার আহমেদ মিয়া, ২ নং ওয়ার্ডের নাছির মাহমুদ, ৩ নং ওয়ার্ডের বাবলু মাতুব্বর, ৪ নং ওয়ার্ডের জালাল উদ্দিন সরদার, ৬ নং ওয়ার্ডের ইমদাদুল হক মাতুব্বর, ৭ নং ওয়ার্ডের জাকির হোসেন, ৯ নং ওয়ার্ডের মাসুদ মাতুব্বর নিকো, সংরক্ষিত নারী কাউন্সিলর ১ নং ওয়ার্ডের খাদিজা আক্তার, ২ নং ওয়ার্ডের শিরিয়া বেগম ও ৩ নং ওয়ার্ডের পারুলী বেগম।
১ নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর কাওসার আহমেদ মিয়া বলেন, নিমাই সরকার মেয়র নির্বাচিত হওয়ার পর থেকে স্বেচ্ছাচারিতা, খামখেয়ালীপনা পৌরবাসিদের সাথে খারাপ আচরণ ও কাউন্সিলরদের সাথে দূরব্যবহার এমনকি একাধিক কাউন্সিলরকে গায়ে হাত তুলেছে। পৌরসভার বরাদ্দকৃত টাকা নিজে লুটপাট করছে। আমরা কিছু বললে সে আমাদের উপর ক্ষেপে যায়। আমাদের এবং অফিসের স্ট্যাফদের ও গালাগালি করে।
আরেক কাউন্সিলর নাছির মাহমুদ বলেন, ঈদের আগে টিসিবির পন্য বিক্রির সময় ১,২ ও ৩ নং ওয়ার্ডের ১৩২ টি তালিকাভূক্ত কার্ড সুবিধাভোগীদের পন্য না দিয়ে সেই কার্ড উনার কাছে রেখে দিয়েছে। কার্ড আপনার কাছে রেখেছেন কেন এ কথা বলতেই মেয়র আমাকে বলে এ কৈফত তোকে দিবো কেন। এ কথা বলেই আমাকে কিল ঘুষি মারতে শুরু করে। এক পর্যায়ে টপবিলে রাখা কলম ধরে আমার মুখে কোপ মারে। এতে আমার চোখে লেগে আমি রক্তাক্ত জখম হই। এ সবের প্রতিকারের দাবীতে আমরা মেয়রের বিরুদ্ধে অনাস্থা প্রস্তাব এনেছি।
অভিযুক্ত নগরকান্দা পৌরসভার মেয়র নিমাই চন্দ্র সরকার বলেন, এর আগেও তারা আমার বিরুদ্ধে অভিযোগ দিয়েছে। সরকারের উন্নয়নকে বাধাগ্রস্ত করতে এসব অভিযোগ দিচ্ছে। আমার বিরুদ্ধে যেসব অভিযোগ আনা হয়েছে, তা সম্পূর্ণ মিথ্যা ও ভিত্তিহীন।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. মঈনুল হক বলেন, কাউন্সিলরদের অনাস্থা প্রস্তাবের বিষয়টি আমি অবগত নই। তবে এর আগে একজন কাউন্সিল মেয়র নিমাই চন্দ্র সরকারের বিরুদ্ধে একটি লিখিত অভিযোগ দিয়েছিলেন। অভিযোগটি আমি উর্দ্ধতন কর্মকর্তাদের কাছে পাঠিয়েছি। আর ঈদের সময় টিসিবির কার্ড আমার স্বাক্ষর ছাড়া বিতরণ করা হয়। পরে আমি মেয়রকে ডেকে জিজ্ঞাসাবাদ করি। তিনি আমাকে বলেছে, ঈদের চাপের কারণে তিনি কয়েকটি কার্ড বিতরণ করেছেন, আগামীতে আর এমন হবে না বলে আমার নিকট ওয়াদা করেছেন।

প্রিন্ট