‘মানুষ ভজলে সোনার মানুষ হবি’ এই স্লোগানে কুষ্টিয়ার কুমারখালী উপজেলার ছেঁউড়িয়ায় ফকির লালন শাহের আখড়াবাড়িতে শনিবার থেকে শুরু হচ্ছে তিন দিনব্যাপী স্মরণোৎসব। এ উপলক্ষে সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয় ও জেলা প্রশাসনের সহযোগিতায় লালন একাডেমির উদ্যোগে প্রতি বছরের ন্যায় এবারও লালনের কর্মময় জীবন ও দর্শন নিয়ে আলোচনা সভা, দেশি-বিদেশি শিল্পীদের পরিবেশনায় লালন সঙ্গীতানুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে। এছাড়া, মূল মাজারের সামনে মরা কালী নদী প্রাঙ্গণে বসেছে গ্রামীণ মেলা।
শনিবার (৪ মার্চ) সন্ধ্যায় আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব উল আলম হানিফ প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থেকে তিন দিনব্যাপী এ স্মরণোৎসবের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করবেন। আগামী সোমবার তিন দিনব্যাপী এ অনুষ্ঠান শেষ হবে।
লালন ভক্ত ও অনুসারীরা জানান, লালন ফকির তার জীবদ্দশায় প্রতি বছর তার শিষ্য ও অনুসারীদের নিয়ে দোল পূর্ণিমা তিথিতে দোল উৎসব ও সাধু সংঘের আয়োজন করতেন। সেই থেকে প্রতি বছর লালন সাঁইজির আখড়াবাড়িতে দোলৎসব উপলক্ষে আয়োজন করা হয় সাধুসঙ্গ। তবে, পবিত্র শবে বরাতের কারণে এবার শত বছরের নিয়ম ভেঙে পূর্ণিমার পরিবর্তে দ্বাদশি তিথি থেকে সরকারিভাবে এ উৎসব শুরু হয়ে অনুষ্ঠান শেষ হবে পূর্ণিমার আগের দিন।
তবে লালনের মূল ধারার যেসব সাধক এবং অনুসারীরা আসবেন, তারা পরম্পরা মেনে ৬ মার্চ দোল পূর্ণিমা তিথিতে সন্ধ্যায় অধিবাসের মাধ্যমে সাধুসঙ্গ শুরু করবেন এবং পরের দিন দুপুরে পূর্ণ সেবার মাধ্যমে শেষ করবেন সাধুসঙ্গ।
ভাববাদী লৌকিক ভাবাদর্শের স্রষ্টা ফকির লালন সাঁই। তার জীবদ্দশায় এমন ফাল্গুনের জোৎস্নালোকের রাত্রিতে বসতো দোল পূর্ণিমা উপলক্ষে সাধুসঙ্গ। এই উৎসবের একটা ভিত্তি হচ্ছে ঠিক এমনি এক দোলের দিনে লালন সাঁইজির আবির্ভাব ঘটেছিল ছেঁউড়িয়ার কালী নদীর ঘাটে।
এদিকে, তিন দিনব্যাপী এ অনুষ্ঠানকে ঘিরে মাজার প্রাঙ্গণে ধীরে ধীরে আসতে শুরু করেছেন ভক্ত সাধু, লালন অনুসারী, আর দর্শনার্থীরা। উৎসবকে ঘিরে লালন আঁখড়াবাড়িতে সকল প্রস্তুতি শেষ হয়েছে বলে জানিয়েছেন লালন একাডেমির সভাপতি ও কুষ্টিয়ার জেলা প্রশাসক মো: সাইদুল ইসলাম।
মাজারকে সাজানো হয়েছে বর্ণিল সাজে। শেষ হয়েছে মাজার প্রাঙ্গণ ধোয়া-মোছার কাজও। কালি নদীর পাড়ে বসেছে বিশাল মেলা। একইসঙ্গে লালন মঞ্চ প্রস্তুত করা হয়েছে আলোচনা সভার এবং রাতভর লালন গানের জন্য।
কুষ্টিয়ার পুলিশ সুপার মো. খাইরুল আলম বলেন, ‘অনুষ্ঠানকে ঘিরে তিন স্তরের নিরাপত্তা বলয় তৈরি করা হয়েছে। র্যাব-পুলিশসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কয়েকশ সদস্য এই তিনদিন নিরবিচ্ছিন্নভাবে দায়িত্ব পালন করবেন। অনুষ্ঠানস্থল এবং এর আশপাশে কেউ যাতে কোনও প্রকার বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করতে না পারে, সেজন্য প্রশাসনের পক্ষ থেকে সব রকম প্রস্তুতি গ্রহণ করা হয়েছে।’
লালন মাজারের প্রধান খাদেম মহম্মদ আলী বলেন, ‘লালনের মানবতাবাদ ও অসাম্প্রদায়িকতা সামগ্রিকভাবে প্রেরণা জুগিয়েছে ভক্তদের মাঝে। পাশাপাশি আধ্যাত্ম-সাধনার নিগুঢ় পদ্ধতি গুরু-শিষ্যদের মাঝে ছড়িয়ে পড়েছে তার গানের মাধ্যমে।’”
প্রিন্ট