কুষ্টিয়ার দৌলতপুরে জমিতে কৃষিকাজ করতে গিয়ে সোহেল রানা (২৬) নামে এক যুবক হাসুয়া দিয়ে নিজের গলা কেটে আত্মহত্যা করেছেন। নিহত সোহেল মাস দুয়েক ধরে মানসিক সমস্যায় ভুগছিলেন। পুলিশ নিহতের মরদেহ উদ্ধার করে মর্গে পাঠিয়েছে।
রোববার (১২ ফেব্রুয়ারি) দৌলতপুর সদর ইউনিয়নের দৌলতখালী বাজারপাড়া গ্রামে এ ঘটনা ঘটে। পরিবার বলছে, সোহেল গত দুই মাস ধরে অস্বাভাবিক আচরণ করে আসছিলেন। এ কারণে তাকে সব সময় চোখে চোখে রাখা হতো। নিহত সোহেল রানা বাজারপাড়া গ্রামের এজের বিশ্বাসের ছেলে।
প্রত্যক্ষদর্শী দীন মোহাম্মদ ও সাইদুল ইসলাম নামে দুই ব্যক্তি জানান, সকালে তারা নিজেদের জমিতে কাজ করছিলেন। কিছুক্ষণ পরে সোহেল তাদের জমিতে কাজ করতে আসেন। সঙ্গে তার মাও ছিল। ঘণ্টাখানিক পরে সোহেলের মা বাড়ি চলে যান। এর কিছুক্ষণ পর সোহেল হঠাৎ করে নিজের গলায় হাসুয়া দিয়ে কোপ দেন। কিছু বুঝে ওঠার আগেই সোহেল রক্তাক্ত অবস্থায় নিজের গলা ধরে দৌড়াতে থাকেন। কিছুদূর গিয়ে তিনি একটি ভুট্টাক্ষেতের পাশে পড়ে যান। পরে তারাসহ আশপাশের জমিতে কাজ করা লোকজন ছুটে গিয়ে সোহেলের বাড়িতে খবর দেন।
সোহেল রানাকে আশঙ্কাজনক অবস্থায় তাৎক্ষণিক দৌলতপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নেয়া হয়। অবস্থার অবনতি হওয়ায় কর্তব্যরত চিকিৎসকরা উন্নত চিকিৎসা জন্য রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠান। পরে রাজশাহী নিয়ে যাওয়ার পথে বেলা ১১টার দিকে সোহেল মারা যান।
নিহত সোহেলের মা যমুনা খাতুন বলেন, প্রতিদিনের মতো আমার ছেলে সকালে খাওয়াদাওয়া শেষে মাঠে যায়। আমিও ছেলের সাথে বাজারপাড়ার পশ্চিমের ওই মাঠে যাই। সকাল সাড়ে ৯টার দিকে আমি ছেলেকে মাঠে রেখে চলে আসি। পরে শুনতে পাই ছেলে নিজের গলায় হাসুয়া দিয়ে কোপ দিয়ে আত্মহত্যা করেছে।
যমুনা খাতুন আরো বলেন, পারিবারিকভাবে আমাদের কোনো সমস্যা ছিল না। কিন্তু প্রায় দুই মাস যাবৎ সোহেল অস্বাভাবিক আচরণ করে আসছিল। তার মাথায় সমস্যা হয়েছিল মনে হয়। এ জন্য আমরা তাকে নিয়মিত চোখে চোখে রাখতাম। এ সময় তিনি সন্তানের এমন মৃত্যুতে বিলাপ করছিলেন। বারবার মূর্ছা যাচ্ছিলেন।
সোহেল রানার স্ত্রী চাঁদনী আক্তার একই কথা জানিয়ে বলেন, আমাদের সংসারে কোনো ঝামেলা ছিল না। কারো সঙ্গে কোনো বিরোধও ছিল না। দুই মাস আগে তার (সোহেল) মাথায় সমস্যা দেখা দেয়। তবে এমনিই সুস্থ হয়ে যাবে ভেবে তাকে কোনো চিকিৎসা দেয়া হয়নি। সকালে সে মায়ের সঙ্গে মাঠে চলে যায়। পরে হঠাৎ শুনি, আমার স্বামী নিজের গলা কেটে আত্মহত্যা করেছে।
ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে দৌলতপুর থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মজিবুর রহমান সাংবাদিকদের জানান, অন্য দিনের মতো সোহেল নিজেদের জমিতে কাজ করতে গিয়ে হাতে থাকা ধারাল হাসুয়া দিয়ে নিজের গলায় কোপ দেন। পরে মুমূর্ষু অবস্থায় তাকে রাজশাহী মেডিকেলে নেয়ার পথে তিনি মারা যান। নিহত সোহেলের মরদেহ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতাল মর্গে পাঠানো হয়েছে।
প্রিন্ট