তুচ্ছ ঘটনায় মাগুরার মহম্মদপুরের বিনোদপুর বাজারের ২৫টি ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে ভাংচুর ও লুটপাটের ঘটনা ঘটেছে।
মঙ্গলবার মধ্যরাত থেকে শুরু করে ভোররাত প্রর্যন্তু বিনোদপুর বাজারে ৩ যুগের প্রতিপক্ষ ঘুল্লিয়া গ্রামের ব্যবসায়ীদের দোকান বেছে বেছে লুটপাট ও ভাংচুর করা হয়। বিনোদপুর এলকার সংঘবদ্ধ লোকেররা ওই লুটতরাজ ভাংচুর করে। এ ঘটনার পর নানা আশঙ্কায় বুধবার সকাল থেকে বিনোদপুর বাজারের সব দোকান-পাট বন্ধ রেখেছেন ব্যবসায়ীরা।
মফস্বল শহরের বাণিজ্যিক এলাকা নামে খ্যাঁত এই বাজারে অঘোষিত হরতাল চলছে। দুরাগত পণ্য ও যাত্রী পরিবহন ছাড়া মহম্মদপুর থেকে মাগুরাগামী প্রধান সড়কের উপর অবস্থিত এই বাজারে স্থানীয় কারো উপস্থিতি মেলেনি। বন্ধ রয়েছে চায়ের দোকানও। অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে এলাকার বিভিন্ন স্থানে শুধুমাত্র পুলিশ র্যাব সদস্যরাও টহল দিচ্ছেন। সব মিলে ব্যবসায়ীদের ২০ লক্ষাধিক টাকার ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে বলে প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে। ভোর রাতে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন সহকারি পুলিশ সুপার কলিমুল্লাহ্ (ক্রাইম এ্যান্ড অপারেশন) এবং এডিশনাল এসপি নাজিম উদ্দীন।
আরও পড়ুনঃ বোয়ালমারীতে লুডু খেলাকে কেন্দ্র করে যুবককে মারধর থানায় অভিযোগ
ওই এলকার রাজ্জাক বিশ^াস জানান, গত মঙ্গলবার (৬ সেপ্টেম্বর) দুপুরে উপজেলার বিনোদপুর হাইস্কুল মাঠে গ্রীস্মকালীন স্কুল ও মাদ্রাসা ফুটবল টুর্নামেন্টে অংশ গ্রহণ করে রাড়িখালী মাধ্যমিক বিদ্যালয় এবং ঘুল্লিয়া দাখিল মাদ্রাসা। টাইব্রেকারে ঘুল্লিয়া দাখিল মাদ্রাসা পরাজিত হয়। এরপর ঘুল্লিয়া দাখিল মাদ্রাসা একাদশের খেলোয়াড়রা প্রতিপক্ষ রাড়িখালী মাধ্যমিক বিদ্যালয় একাদশের খেলোয়াড়দের উপর চড়াও হয়ে মারধোর করে। পরে এ বিষয়টি ঘুল্লিয়া ও বিনোদপুর গ্রামবাসীদের মধ্যে সংঘাতের রুপ নেয়। শুরু হয় ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া। খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনেন।
তার পরও উভয় গ্রামের লোকজনের মধ্যে উত্তেজনা বিরাজ করতে থাকে। উভয় গ্রামের লোকজন মিটিং ডেকে সংঘর্ষের প্রস্ততি নিতে শুরু করেন। প্রশাসন বিষয়টি আচ করতে পেরে সমাধানের জন্য মঙ্গলবার রাতে থানায় ডাকেন উভয় পক্ষকে। আর কোনো বিশৃঙ্খলা বা অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটবেনা মর্মে দুই পক্ষই অঙ্গিকার করে যার যার মত থানা থেকে বের হয়ে যান। রাতে বাড়ি যাবার পথে যশপুর পৌছলে ঘুল্লিয়া গ্রামের লোকজন বিনোদপুর গ্রামের রাজিব (২৮) নামের এক যুবককে পিটিয়ে মারাত্বক আহত করে। তাকে প্রথমে মাগুরা পরে ঢাকার কমফোর্ট হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। তার অবস্থা আশঙ্কাজনক। রাজিব বিনোদপুর গ্রামের ওয়াজেদ আলী বিশ^াসের ছেলে।
গত মঙ্গলবার (৬ সেপ্টেম্বর) রাতে রাজিবের উপর হামলার পর ফুসে ওঠেন বিনোদপুর গ্রামের মানুষ। এদিন মধ্যরাত থকে ভোররাত প্রর্যন্তু বিনোদপুর বাজারেঘুল্লিয়া গ্রামের ব্যবসায়ী এমন ২৫টি দোকান ব্যাপক ভাংচুর ও লুটপাট তান্ডব চালানো হয়। এরমধ্যে অনিমেষের কাপড়ের দোকান, মিন্টুর কসমেটিকের দোকান, সাজ্জাদের স্যান্ডেলের দোকান, বক্কার শিকদারের ভূষির দোকান, ইলিয়াসের পার্টসের দোকান, হাসানের মুদি দোকান, মাববুব আলমের সার-কীটনাশকের দোকান, শাহজাহান শিকদারের হার্ডওয়ারের দোকান, বকুল মোল্যার স্যান্ডেলের দোকান, সেলিম জাবেদের ডেকোরেটরের দোকান এবং ইলিয়াসের মুদি দোকানের মালপত্র-পণ্য ও নগদ অর্থ লুট করে নিয়ে যায়।
বুধবার (৭ সেপ্টেম্বর) বিকেলে উপজেলার বিনোদপুর বাজারে গিয়ে দেখাযায়, বিনোদপুর বাজার ও বিনোদপুর চৌরাস্তা বাজারের ৯৯ শতাংশ দোকানই বন্ধ। মহম্মদপুর ও মাগুরার থানা পুলিশের পাশাপাঁশি র্যাব সদস্যদের টহল দিতে দেখা গেছে গোটা বাজারে। দেখে মনে হবে হরতাল পালন করা হচ্ছে বৃহৎ এই বানিজ্যিক এলকায়।
আরও পড়ুনঃ ফরিদপুরে পুলিশের শ্রেষ্ঠ সার্কেল অফিসার সুমন রঞ্জন সরকার
এ বিষয়ে মহম্মদপুর থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) অসিত কুমার রায় বলেন, ‘ফুটবল খেলাকে কেন্দ্র করে বিশৃঙ্খলার বিষয়টি শুধুমাত্র ইস্যু, মূলত: দুই গ্রামবাসীর মধ্যকার পূর্ববিরোধের জেরে এসব অপ্রতাশিত ঘটনা সংগঠিত হয়েছে। পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে এলাকায় অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়ন রাখা হয়েছে।’
প্রিন্ট