রাজবাড়ী জেলার পাংশায় হামলার ঘটনায় মামলা করায় হুমকি প্রদর্শনের অভিযোগ উঠেছে। এতে করে জানমালের নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন পাংশা পৌরসভার ৩নং ওয়ার্ডের নারায়নপুর গ্রামের বাসিন্দা ব্যবসায়ী মনোতোষ কুন্ডু (৬৮)।
শনিবার ১৬ জুলাই বিকেলে এক সাক্ষাৎকারে মনোতোষ কুন্ডু বলেন, আমার জামাতা গোবিন্দ চন্দ্র দে (৩৭)’র উপর সন্ত্রাসী হামলার কারণে সে পাংশা মডেল থানায় পার্থ কুন্ডু, পলাশ পোদ্দার, মমিন, মানিক ও হিরা ৫ জনের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করে। মামলা নং ৪, তারিখ ৫/৭/২০২২। ধারা-১৪৩/৩৪১/৩২৩/৩২৫/৩০৭/৩৭৯/৫০৬(২)/১১৪ পেনাল কোড-১৮৬০। উল্লেখিত মামলার কারণে ক্ষুব্ধ হয়ে প্রতিপক্ষের লোকজন মামলা তুলে নিতে হুমকিসহ নানাভাবে গালিগালাজ ও ভয়ভীতি প্রদর্শন করছে। জানমালের নিরাপত্তার কারণে বাধ্য হয়ে জামাই গোবিন্দ দে প্রতিপক্ষের প্রানতোষ কুন্ডু ও তার পুত্র পার্থ কুন্ডুসহ ৬জনের বিরুদ্ধে রাজবাড়ীর বিজ্ঞ নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে পৃথক মামলা দায়ের করেছে।
তিনি বলেন- জামাতা গোবিন্দ চন্দ্র দে ফরিদপুরের নগরকান্দা থানার কুঞ্জনগর গ্রামের মৃত মিলন চন্দ্রের পুত্র। আমার মেয়ে অগ্রণী ব্যাংক পাংশা শাখার অফিসার হিসেবে কর্মরত এবং নাতিছেলে পাংশা শহরস্থ উইলিয়াম সেক্সপিয়র কেজি স্কুলের প্লে গ্রুপের ছাত্র। মেয়ের চাকুরী ও নাতিছেলের লেখাপড়ার কারণে জামাই গোবিন্দ দে বিভিন্ন সময় পাংশা শহরস্থ আমার নিজ বাড়িতে অবস্থান করে। আমাদের ভালো চায় না আমার ছোট ভাই প্রানতোষ কুন্ডু ও তার পরিবারের লোকজন। তিনি বলেন, গত ৫ জুলাই রাত আনুমানিক ৮টার দিকে এক বন্ধুর সাথে মোটরসাইকেলে পাংশা সরদার বাস স্ট্যান্ডে যাওয়ার পথে মাগুড়াডাঙ্গী গ্রামের জনৈক সুরুজ মিয়ার ফার্নিচারের দোকানের সামনে পাকা রাস্তার উপর মোটরসাইকেলের গতিরোধ করে জামাই গোবিন্দ দে’র উপর সন্ত্রাসী হামলা চালানো হয়। ওই ঘটনায় গোবিন্দ দে বাদী হয়ে পাংশা মডেল থানায় মামলা দায়ের করে।
মামলার কারণে ক্ষুব্ধ হয়ে প্রতিপক্ষের লোকজন মামলা তুলে নিতে হুমকিসহ নানাভাবে গালিগালাজ ও ভয়ভীতি প্রদর্শন করছে। মনোতোষ কুন্ডু বলেন, একই বাড়িতে একই বিল্ডিংয়ে আমাদের বসবাস। ভবনের দ্বিতীয় তলায় আমরা পরিবার নিয়ে বসবাস করি। ভবনের নিচতলায় ছোটভাই প্রানতোষ কুন্ডু তার পরিবার নিয়ে বসবাস করে। জমিজমা ও ব্যবসায়ীক সম্পর্কিত ঘটনা নিয়ে দুই পরিবারের মাঝে দীর্ঘদিন ধরে বিরোধ চলছে। স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তিরা বিরোধ মীমাংসার কথা বলছেন। মনোতোষ কুন্ডু আরো বলেন, পারিবারিক একটি জমির মামলার খরচ বাবদ এবং অন্য একটি জমি বিক্রি বাবদ প্রানতোষ কুন্ডুর কাছে মোটা অংকের টাকা পাওনা রয়েছে।
তিনি বলেন- প্রানতোষ কুন্ডু প্রভাবশালী। মামলা তুলে নিতে এবং প্রাণে মেরে ফেলার হুমকি দিচ্ছে এবং পরিবারের লোকজনের নানা ভাবে ক্ষতিসাধণের গভীর ষড়যন্ত্রে লিপ্ত রয়েছে। মনোতোষ কুন্ডু ক্ষোভ ও দুঃখ প্রকাশ করে বলেন, ছোট ভাই প্রানতোষ কুন্ডুর হাতে আমি একাধিকবার শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত হয়েছি। পাংশা শহরের অনূপ দত্ত মার্কেটে দ্বিতীয়তলায় অবস্থিত আমার বধূয়া শাড়ি প্যালেস নামের দোকান নিয়েও তারা ষড়যন্ত্র করছে। প্রায় ৩০-৩৫ বছর ধরে সুনামের সাথে সেখানে ব্যবসা পরিচালনা করছি। আমার দোকানের সামনে বছর দুয়েক হলো প্রানতোষ কুন্ডু ও তার ছেলে পার্থ কুন্ডু নিউ বধূয়া শাড়ি প্যালেস নামের একটি দোকান দিয়েছে। আমার দোকানে খরিদ্দার আসলে তারা খরিদ্দার ফিরিয়ে নিতে নানাভাবে অঙ্গভঙ্গি, ইশারা-ইঙ্গিত ও কথাবার্তায় বিরক্ত করে। আমার বড় জামাতা সুব্রত কুন্ডু আমার উক্ত কাপড়ের দোকান দেখভাল করে। তাকেও নানাভাবে হুমকি প্রদর্শন করে প্রানতোষ কুন্ডু ও তার পুত্র পার্থ কুন্ডু।
আরও পড়ুনঃ স্বর্ণের বার ছিনতাই; এএসআই সহ আটক-২
এদিকে, দুই পরিবারের বিরোধের ব্যাপারে পাংশা উপজেলা পূজা উদযাপন পরিষদের আহবায়ক কমিটির সদস্য সচিব, অবসরপ্রাপ্ত পুলিশ কর্মকর্তা এ্যাডভোকেট ভজ গোবিন্দ দে বলেন- পাংশার পাট-গুড়ের বিশিষ্ট ব্যবসায়ী ছিলেন নরেন্দ্র কুন্ডু। সম্ভ্রান্ত পরিবার হিসেবে পরিচিত ছিল তাদের পরিবার। বর্তমানে নরেন্দ্র কুন্ডুর দুই ছেলে প্রানতোষ কুন্ডু ও মনোতোষ কুন্ডুর পরিবারের মাঝে গোলযোগ ও অশান্তির কথা শুনেছি। বিরোধ মীমাংসার জন্য আমরা চেষ্টা করছি। পাংশা উপজেলা পূজা উদযাপন পরিষদের সাবেক সভাপতি নির্মল কুমার কুন্ডু বলেন, প্রানতোষ কুন্ডু ও মনোতোষ কুন্ডু দুই পরিবারের মাঝে বিদ্যমান বিরোধ মীমাংসা করে শান্তি স্থাপনে আমরা চেষ্টা চালাচ্ছি। এ লক্ষ্যে আগামী শুক্রবার সন্ধ্যায় বৈঠকে বসার সিদ্ধান্ত হয়েছে বলে জানান তিনি।
প্রিন্ট