ফরিদপুরের আলফাডাঙ্গায় মধুমতি নদীর ভাঙ্গনে ঝুঁকির সম্মুখিন হয়ে পড়েছে গোপালপুর ইউনিয়নের বাজড়া চরপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ভবন। গত মঙ্গলবার দুপুরে সেখানে আকস্মিকভাবে নদী তীরের প্রায় ২০ কিলোমিটার অংশের পাকা সড়ক জুড়ে ধ্বসে গিয়ে স্কুল ভবনটি কেঁপে উঠে। এতে নদীর ভাঙ্গন একেবারে স্কুল ভবনটির কিনার পর্যন্ত চলে এসছে। পানি উন্নয়ন বোর্ড এর চারদিন আগে থেকে সেখানে জরুরিভাবে জিওব্যাগ ডাম্পিং করে সেখানে ভাঙ্গনরোধে প্রতিরক্ষামূলক কাজ করছিলো। এ কাজ চলমান অবস্থাতেই সেখানে জিও ব্যাগসহ নদী তীর নদীগর্ভে ধ্বসে যায়। স্থানীয়রা অভিযোগ করেন, দেরিতে কাজ শুরু পরে ধীরগতি এবং অল্প সংখ্যক লোক দিয়ে কাজ চলতে থাকায় এখন স্কুলটি ঝুঁকির মধ্যে পড়ে গেছে। এক সপ্তাহ আগেও যদি কাজটি করা হতো তাহলে এ পরিস্থিতি হতোনা।
সরেজমিনে আজ বুধবার দুপুরে ওই এলাকায় যেয়ে জানা গেছে, গত তিনবছর যাবত মধুমতি নদীতে তীব্র ভাঙ্গন চলছে। নদীগর্ভে তলিয়ে গেছে আলফাডাঙ্গার চারটি ইউনিয়নের অসংখ্য গ্রামের বাড়িঘর, ফসলি জমি ও বিভিন্ন স্থাপনা। দীর্ঘদিনযাবত এসব রক্ষার দাবি জানিয়ে আসছিলেন গ্রামবাসী। সম্প্রতি ভাঙ্গনের মাত্রা তীব্র হওয়ায় পাউবো সেখানে ১০ জুন হতে জরুরিভিত্তিতে কিছু প্রতিরক্ষা কাজ শুরু করে।
বাজড়া চরপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ফরিদা ইয়াসমিন বলেন, ১৯৯৫ সালে প্রতিষ্ঠিত স্কুলটির নতুন ভবন তৈরি করা হয় ২০১২ সালে। ৬৫ জন ছাত্রছাত্রী প্রাক প্রাথমিক থেকে পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত। তিনি বলেন, মঙ্গলবার দুপুরে নদীর তীর ভাঙ্গনে স্কুল ভবন কেঁপে উঠে। কোমলমতি ছাত্রছাত্রীরা এসময় তার নিকট জানতে চায় স্কুলটি নদীতে ভেঙ্গে গেলে তারা কোথায় পড়াশুনা করবে? তাদের এ প্রশ্নের কোন জবাব তিনি দিকে পারেননি। ওদের শিশু মুখের এই প্রশ্ন তাকে অনেক ব্যথিত করেছে জানিয়ে তিনি বলেন, এসব শিশুর তাকিয়ে হলেও স্কুলটি রক্ষায় পদক্ষেপ নেয়া দরকার।
ওই স্কুলের জমিদাতা গোলাম রসুল মিয়া বলেন, অনেক আশা নিয়ে স্কুলটি প্রতিষ্ঠায় জমি দিয়েছিলাম। সরকার সেখানে ভবন করেছে। স্কুলটি নিয়ে আমি খুব ক্লান্ত। এই বয়সে স্কুলটি আমার একটি কীর্তি। এখন স্কুলটি চলে গেলে আমি খুব কষ্ট পাবো বলে তিনি কেঁদে দেন। তিনি বলেন, অনেক বছর ধরেই নদীর ভাঙ্গনে আমরা জর্জরিত। আমাদের জমাজমি সব নদীতে তলিয়ে গেছে। নদীর ওপাড়ে চরে জেগে উঠছে সেখানে ঘাস ছাড়া কিছু হয়না।
স্থানীয় বাসিন্দা মো. ওয়াহিদুর রহমান বলেন, আরো এক সপ্তাহ আগে যদি তারা কাজ করতো তাহলে স্কুলটি ভাঙ্গনের মুখে পড়তো না। ছেলেমেয়েদের লেখাপড়ার বিঘœ হতো না। এখানে অনেক গাফিলতি রয়েছে। যেখানে একশো শ্রমিক লাগবে সেখানে পাঁচজন দিয়ে কাজ করানো হচ্ছে। তিনি বলেন, স্কুলটি চলে গেলে চার কিলোমিটার দুরে যেয়ে পড়াশুনা করতে হবে এসব শিশুদের। দিনের পর দিন ভাঙ্গন প্রতিরোধের দাবি জানিয়ে আসলেও শুধু আমাদের আশ্বাসই দেয়া হয়। কাজের কাজ কিছুই হয়না। এলাকাবাসীর দাবি ভাঙ্গন প্রতিরোধে সেখানে কার্যকর পদক্ষেপ নেয়া হোক।
এব্যাপারে জরুরি প্রতিরক্ষা কাজে নিযুক্ত পাউবোর সংশ্লিষ্ট ঠিকাদার মেসার্স এআরবি ব্রিকসের মালিকর মো: আজগর হোসেন বলেন, ভাঙ্গন প্রতিরোধে গত চারদিন ধরে উজান হতে কাজ চলছে। মঙ্গলবার দুপুরে জিও ব্যাগও ধ্বসে যাওয়ার পর সেখানে নতুন করে জিও ব্যাগ ডাম্পিং করা হয়েছে।
আরও পড়ুনঃ কৃষ্ণনগরে অগ্নিকাণ্ডে বসতঘর পুড়ে ছাইঃ সাত লক্ষ টাকার ক্ষতি
কাজের তদারকিতে নিযুক্ত পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপ-সহকারী প্রকৌশলী সন্তোষ কুমার কর্মকার জানান, স্কুল সংলগ্ন ওই জায়গায় পানির গভীরতা বেশি হওয়ায় ধ্বসে গেছে। এখন সেখানে বালি ভর্তি করে ৬ মিটার লম্বা জিও টিউব ও ১৭৫ কেজি ওজনের জিও ব্যাগ ডাম্পিং করা হচ্ছে। এতে স্কুলটি রক্ষা পাবে। বুধবার পর্যন্ত সেখানে ৩৩০ মিটার নদী তীরে জিও ব্যাগ এবং জিও টিউব ডাম্পিং করা হয়েছে বলে তিনি জানান।
ফরিদপুর পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী পার্থ প্রতিম সাহা বলেন, পানি সম্পদ প্রতিমন্ত্রীর নির্দেশনার আলোকে মধুমতি নদীর ভাঙ্গনরোধে জরুরি কিছু কাজ সম্পন্ন হচ্ছে। কাজের ধীরগতির অভিযোগটি সঠিক নয় দাবি করে তিনি বলেন, এখনো সেখানে ভাঙ্গন তীব্র হয়নি। মধুখালি ও আলফাডাঙ্গা উপজেলায় মধুমতি নদীতে ভাঙ্গনের মাত্রা একটু বেশি উল্লেখ করে তিনি জানান, মধুমতির এই ভাঙ্গনরোধে সাড়ে সাত কিলোমিটার নদীতীর জুড়ে প্রায় ৪৮০ কোটি টাকা ব্যয়ে একটি প্রকল্প প্রি-একনেকে পাশ হয়েছে। এখন সেটি বিভিন্ন দপ্তর ঘুরে অর্থ মন্ত্রণালয়ের ছাড়ের অপেক্ষায়। এ প্রকল্পটি একেনেকে পাশ হলে সেখানে সিসি ব্লক ও জিও ব্যাগ ডাম্পিং করে স্থায়ীভাবে ভাঙ্গনরোধ করা সম্ভব হবে।
প্রিন্ট