ঢাকা , রবিবার, ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
প্রতিনিধি নিয়োগ
দৈনিক সময়ের প্রত্যাশা পত্রিকার জন্য সারা দেশে জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে প্রতিনিধি নিয়োগ করা হচ্ছে। আপনি আপনার এলাকায় সাংবাদিকতা পেশায় আগ্রহী হলে যোগাযোগ করুন।

ঝিনাইদহ পানি উন্নয়ন বোর্ডের টেন্ডারে দুর্নীতি নথি তলব করেছে দুদক

ঝিনাইদহ পানি উন্নয়ন বোর্ডের সাবেক উপ-সহকারী প্রকৌশলী বর্তমান মেহেরপুরে কর্মরত সুলতান মাহমুদের বিরুদ্ধে তদন্ত শুরু করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। যশোর সমন্বিত অফিসের একটি তদন্ত দল সুলতান মাহমুদের সময়কার দুটি অর্থ বছরের যাবতীয় কাগজপত্র তলব করেছেন।

রোববার (৫ সেপ্টম্বর) ঝিনাইদহ পানি উন্নয়ন বোর্ড থেকে সে সব কাগজ প্রেরণ করা হয়েছে। ঝিনাইদহ পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী আশিকুর রহমান খবরের সত্যতা নিশ্চিত করে জানান, গত বুধবার দুদক কর্মকর্তারা ঝিনাইদহ পানি উন্নয়ন বোর্ড অফিস পরিদর্শন করে কিছু কাগজপত্র তলব করেন। তারা ২০১৮-২০১৯ ও ২০১৯-২০২০ অর্থ বছরের সম্পন্ন করা ১৮টি প্যাকেজের আর.এফ.কিউ, বিল, ভাউচার, এমবি ও ওয়ার্ক অর্ডারের কাগজ চেয়েছিলেন।

ওই সময় উপসহকারী প্রকৌশলী সুলতান মাহমুদ ঝিনাইদহে কর্মরত ছিলেন। আমরা দুদক কর্মকর্তাদের কাছ থেকে দুই দিন সময় নিয়ে তাদের চাহিদা মোতাবেক এ সব কাগজ রেডি করে পাঠিয়ে দিয়েছি। দুদকের যশোর অফিসের সহকারী পরিচালক মাহফুজ ইকবাল জানান, উপ-সহকারী প্রকৌশলী সুলতান মাহমুদের বিরুদ্ধে উত্থাপিত দুর্নীতির বিষয়ে আমরা প্রথমিক ভাবে তদন্ত শুরু করেছি। গত বুধবার ঝিনাইদহে যাওয়া টিমের সঙ্গে আমি ছিলাম। ঝিনাইদহ পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তাদের কাছে দুই বছরের টেন্ডার ও কেনাকাটার কাগজপত্র চাওয়া হয়েছে। তদন্তের পর কাগজপত্র যাচাই বাছাই করে বোঝা যাবে কি পরিমান দুর্ণীতি হয়েছে।

তথ্য নিয়ে জানা গেছে, ২০২০ সালের ডিসেম্বর মাসে কতিপয় ঠিকাদার দুর্নীতি দমন কমিশনে অভিযোগ করেন ঝিনাইদহ পানি উন্নয়ন বোর্ডের টেন্ডার ও কেনাকাটা ব্যাপক দুর্নীতি করা হয়েছে। সে সময় দেশের একটি বেসরকারী টেলিভেশন ও বিভিন্ন পত্রিকায় অনুসন্ধানী প্রতিবেদন প্রকাশিত হলে ২০২১ সালের ১৬ জানুয়ারী পানি উন্নয়ন বোর্ডের একটি উচ্চ পর্যায়ের তদন্ত কমিটি ঝিনাইদহে আসেন। দুই সদস্য বিশিষ্ট তদন্ত দলে পানি উন্নয়ন বোর্ডের সস্পত্তি ও যানবাহন বিভাগের পরিচালক আনোয়ারুল কামাল ও ঢাকা অফিসের নির্বাহী প্রকৌশলী সানাউল কাদের খান শৈলকুপা ও ঝিনাইদহ পরিদর্শন করেন। তদন্ত কমিটির সাথে অভিযুক্ত এসডি সরোয়ার জাহান সুজনের উপস্থিতি নিয়ে সে সময় জনমনে প্রশ্ন উঠেছে। ওই তদন্ত প্রতিবেদন আলোর মুখ দেখেছে কিনা তা জানা যায়নি।

সে সময় গনমাধ্যমে প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলা হয়, ঝিনাইদহ পানি উন্নয়ন বোর্ডের পরিদর্শন বাংলোতে একটি চামচ কেনার ব্যায় দেখানো হয়েছে ৯৭ হাজার টাকা। লাখ টাকার এই চামচ কেনা নিয়ে সে সময় মিডিয়া ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে হৈচৈ পড়ে যায়। ঠিকাদারদের অভিযোগে বলা হয়, ২০১৯-২০ অর্থ বছরে আর.এফ.কিউ এর মাধ্যমে ৫০টি পর্দা কেনার ব্যায় দেখানো হয় ১ লাখ ৯৯ হাজার টাকা। প্রকৃতপক্ষে ৫০টি পর্দা ২৪০ টাকা দরে দাম পড়ে মাত্র ১২ হাজার টাকা। অফিসে দুই দফায় মবিল কেনা দেখানো হয়েছে ৪ লাখ টাকা। কিন্তু অফিসে মিলেছে ৪০ টাকা দামের গ্রিজের প্যাকেট। ১০টি মেহগনি গাছ রোপন বাবদ ব্যায় দেখানো হয়েছে ২ লাখ টাকা।

একটি ব্র্যান্ডিং বিল বোর্ড তৈরী করতে খরচ দেখানো হয়েছে ৩ লাখ ১০ হাজার টাকা। শৈলকুপায় ১১ কিলোমিটার খাল সংস্কার না করেই তুলে নেওয়া হয়েছে ৫ লাখ টাকা। এভাবে পানি উন্নয়ন বোর্ডের বিভিন্ন অফিস চত্বরে আবর্জনা পরিস্কার, অফিস ও ঘরবাড়ি মেরামত, বিলবোর্ড তৈরী, সেচ খাল পরিস্কার, ক্রোকারিজ সামগ্রী, বৈদ্যুতিক সরঞ্জাম, বিল বোর্ড, গেট মেরামত, গাছ রোপন ও পরিদর্শন ব্যায় দেখিয়ে সরকারের কয়েক কোটি টাকা হাতিয়ে নেওয়া হয়। ঝিনাইদহ পানি উন্নয়ন বোর্ডের কতিপয় ঠিকাদার, সাবেক নির্বাহী প্রকৌশলী সারোয়ার জাহান সুজন ও উপ-সহকারী প্রকৌশলী সুলতান আহম্মেদ এই অর্থ লোপাটের সঙ্গে জড়িত বলেও সে সময় দাবী করা হয়।


প্রিন্ট
Tag :
এই অথরের আরো সংবাদ দেখুন

জনপ্রিয় সংবাদ
error: Content is protected !!

ঝিনাইদহ পানি উন্নয়ন বোর্ডের টেন্ডারে দুর্নীতি নথি তলব করেছে দুদক

আপডেট টাইম : ১১:২১ অপরাহ্ন, রবিবার, ৫ সেপ্টেম্বর ২০২১
জাহিদুর রহমান তারিক, ঝিনাইদহ প্রতিনিধিঃ :

ঝিনাইদহ পানি উন্নয়ন বোর্ডের সাবেক উপ-সহকারী প্রকৌশলী বর্তমান মেহেরপুরে কর্মরত সুলতান মাহমুদের বিরুদ্ধে তদন্ত শুরু করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। যশোর সমন্বিত অফিসের একটি তদন্ত দল সুলতান মাহমুদের সময়কার দুটি অর্থ বছরের যাবতীয় কাগজপত্র তলব করেছেন।

রোববার (৫ সেপ্টম্বর) ঝিনাইদহ পানি উন্নয়ন বোর্ড থেকে সে সব কাগজ প্রেরণ করা হয়েছে। ঝিনাইদহ পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী আশিকুর রহমান খবরের সত্যতা নিশ্চিত করে জানান, গত বুধবার দুদক কর্মকর্তারা ঝিনাইদহ পানি উন্নয়ন বোর্ড অফিস পরিদর্শন করে কিছু কাগজপত্র তলব করেন। তারা ২০১৮-২০১৯ ও ২০১৯-২০২০ অর্থ বছরের সম্পন্ন করা ১৮টি প্যাকেজের আর.এফ.কিউ, বিল, ভাউচার, এমবি ও ওয়ার্ক অর্ডারের কাগজ চেয়েছিলেন।

ওই সময় উপসহকারী প্রকৌশলী সুলতান মাহমুদ ঝিনাইদহে কর্মরত ছিলেন। আমরা দুদক কর্মকর্তাদের কাছ থেকে দুই দিন সময় নিয়ে তাদের চাহিদা মোতাবেক এ সব কাগজ রেডি করে পাঠিয়ে দিয়েছি। দুদকের যশোর অফিসের সহকারী পরিচালক মাহফুজ ইকবাল জানান, উপ-সহকারী প্রকৌশলী সুলতান মাহমুদের বিরুদ্ধে উত্থাপিত দুর্নীতির বিষয়ে আমরা প্রথমিক ভাবে তদন্ত শুরু করেছি। গত বুধবার ঝিনাইদহে যাওয়া টিমের সঙ্গে আমি ছিলাম। ঝিনাইদহ পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তাদের কাছে দুই বছরের টেন্ডার ও কেনাকাটার কাগজপত্র চাওয়া হয়েছে। তদন্তের পর কাগজপত্র যাচাই বাছাই করে বোঝা যাবে কি পরিমান দুর্ণীতি হয়েছে।

তথ্য নিয়ে জানা গেছে, ২০২০ সালের ডিসেম্বর মাসে কতিপয় ঠিকাদার দুর্নীতি দমন কমিশনে অভিযোগ করেন ঝিনাইদহ পানি উন্নয়ন বোর্ডের টেন্ডার ও কেনাকাটা ব্যাপক দুর্নীতি করা হয়েছে। সে সময় দেশের একটি বেসরকারী টেলিভেশন ও বিভিন্ন পত্রিকায় অনুসন্ধানী প্রতিবেদন প্রকাশিত হলে ২০২১ সালের ১৬ জানুয়ারী পানি উন্নয়ন বোর্ডের একটি উচ্চ পর্যায়ের তদন্ত কমিটি ঝিনাইদহে আসেন। দুই সদস্য বিশিষ্ট তদন্ত দলে পানি উন্নয়ন বোর্ডের সস্পত্তি ও যানবাহন বিভাগের পরিচালক আনোয়ারুল কামাল ও ঢাকা অফিসের নির্বাহী প্রকৌশলী সানাউল কাদের খান শৈলকুপা ও ঝিনাইদহ পরিদর্শন করেন। তদন্ত কমিটির সাথে অভিযুক্ত এসডি সরোয়ার জাহান সুজনের উপস্থিতি নিয়ে সে সময় জনমনে প্রশ্ন উঠেছে। ওই তদন্ত প্রতিবেদন আলোর মুখ দেখেছে কিনা তা জানা যায়নি।

সে সময় গনমাধ্যমে প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলা হয়, ঝিনাইদহ পানি উন্নয়ন বোর্ডের পরিদর্শন বাংলোতে একটি চামচ কেনার ব্যায় দেখানো হয়েছে ৯৭ হাজার টাকা। লাখ টাকার এই চামচ কেনা নিয়ে সে সময় মিডিয়া ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে হৈচৈ পড়ে যায়। ঠিকাদারদের অভিযোগে বলা হয়, ২০১৯-২০ অর্থ বছরে আর.এফ.কিউ এর মাধ্যমে ৫০টি পর্দা কেনার ব্যায় দেখানো হয় ১ লাখ ৯৯ হাজার টাকা। প্রকৃতপক্ষে ৫০টি পর্দা ২৪০ টাকা দরে দাম পড়ে মাত্র ১২ হাজার টাকা। অফিসে দুই দফায় মবিল কেনা দেখানো হয়েছে ৪ লাখ টাকা। কিন্তু অফিসে মিলেছে ৪০ টাকা দামের গ্রিজের প্যাকেট। ১০টি মেহগনি গাছ রোপন বাবদ ব্যায় দেখানো হয়েছে ২ লাখ টাকা।

একটি ব্র্যান্ডিং বিল বোর্ড তৈরী করতে খরচ দেখানো হয়েছে ৩ লাখ ১০ হাজার টাকা। শৈলকুপায় ১১ কিলোমিটার খাল সংস্কার না করেই তুলে নেওয়া হয়েছে ৫ লাখ টাকা। এভাবে পানি উন্নয়ন বোর্ডের বিভিন্ন অফিস চত্বরে আবর্জনা পরিস্কার, অফিস ও ঘরবাড়ি মেরামত, বিলবোর্ড তৈরী, সেচ খাল পরিস্কার, ক্রোকারিজ সামগ্রী, বৈদ্যুতিক সরঞ্জাম, বিল বোর্ড, গেট মেরামত, গাছ রোপন ও পরিদর্শন ব্যায় দেখিয়ে সরকারের কয়েক কোটি টাকা হাতিয়ে নেওয়া হয়। ঝিনাইদহ পানি উন্নয়ন বোর্ডের কতিপয় ঠিকাদার, সাবেক নির্বাহী প্রকৌশলী সারোয়ার জাহান সুজন ও উপ-সহকারী প্রকৌশলী সুলতান আহম্মেদ এই অর্থ লোপাটের সঙ্গে জড়িত বলেও সে সময় দাবী করা হয়।


প্রিন্ট