মোঃ আলম মৃধাঃ
নরসিংদীতে একের পর এক অটোরিকশা চালককে হত্যা করে লুণ্ঠনকারী খুনী চক্রের তিন সদস্যকে গ্রেপ্তার করেছে নরসিংদী জেলা পুলিশ। মঙ্গলবার ভোর রাতে জেলার বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালিয়ে তাদেরকে আটক করা হয়। এ সময় তাদের হেফাজত হতে ছিনতাইকৃত একটি ডিভাটেক অটোরিকশাও উদ্ধার করে পুলিশ।
–
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, সকালে পার্শ্ববর্তী ধনাইচর এলাকায় সড়কের পাশে দেলোয়ারের জবাই করা মৃতদেহ পাওয়া যায়। একইভাবে উপজেলার গজারিয়া ইউনিয়নের নোয়াকান্দা বক্তারপুর এলাকার একটি কলাবাগান থেকে উদ্ধার হয় অপর অটোরিকশা চালক অপু মিয়ার জবাইকৃত মৃতদেহ। এছাড়াও আশপাশের এলাকায় চালককে হত্যা করে অটোরিকশা সিএনজি ছিনতাইয়ের বেশ কিছু ঘটনা অতীতেও ঘটেছে। যার মধ্যে একাধিক মামলায় পুলিশ তদন্ত করলেও মূল খুনিরা রয়েছিল ধরাছোঁয়ার বাইরে। লুন্ঠিত অটোরিকশা উদ্ধার হয়নি, খোলেনি ঘটনার রহস্যের জটও। এমন অবস্থায় নরসিংদীর অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মোঃ আনোয়ার হোসেন শামীম নিজেই তদন্তে মাঠে নেমে দেলোয়ার ও অপু হত্যার খুনি চক্রের সদস্যদেরকে গ্রেপ্তার করতে সক্ষম হয়।
–
পুলিশের তদন্তে জানা যায়, দীর্ঘদিন যাবত একই কায়দায় হত্যা, লুণ্ঠনকারী তিনজন আসামিকে তথ্যপ্রযুক্তির সহায়তায় চিহ্নিত ও গ্রেপ্তার করা সম্ভব হয়েছে। গ্রেপ্তারকৃত ব্যক্তিরা হলেন নরসিংদীর পলাশ উপজেলাধীন জয়পুর এলাকার আব্দুল বাতেনের ছেলে এই চক্রের মূল হোতা মোঃ ইসমাইল মৃধা ওরফে কসাই ইসমাইল, একই উপজেলার খানেপুর এলাকার সাদেক মিয়ার ছেলে শাকিল ওরফে ছোট শাকিল এবং নরসিংদী সদর উপজেলার শ্রীনগর দড়িপাড়া গ্রামের বাসিন্দা মৃত দুলাল মিয়ার ছেলে কবির হোসেন ওরফে ইঞ্জিনিয়ার কবির।
–
এর মধ্যে ইসমাইল ও শাকিল প্রথমে টার্গেটের চলাচলের ওপর ভিত্তি করে কয়েকটি নিরাপদ স্পটও ঠিক করতো। তারপর সময় সুযোগ মতো যাত্রী সেজে টার্গেটের অটোরিকশায় উঠে পূর্বনির্ধারিত স্পটে আসার পর টার্গেটকে গরু কাটার ছুরি দিয়ে কুপিয়ে জবাই করে হত্যা করার পর তার অটোরিকশাটি নিয়ে চক্রের অপর সদস্য রিকশা গ্যারেজের মালিক কবিরের কাছে পৌঁছে দিতো। কবির সেই অটোরিকশাটিতে পরিবর্তন এনে এবং নতুন করে রং করে অন্যত্র বিক্রির ব্যবস্থা করতেন।
–
গ্রেপ্তারের পর পুলিশের প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে চক্রের সদস্যরা পূর্বের একাধিক ঘটনায় জড়িত থাকার কথা স্বীকার করেছেন। আসামিদেরকে নরসিংদী জ্যেষ্ঠ বিচারিক হাকিম মেশকাত ইসলামের আদালতে হাজির করা হলে চক্রের সদস্য ইসমাইল ও কবির অন্তত দুটি হত্যা ও অটোরিকশা ছিনতাইয়ের ঘটনার সঙ্গে নিজেদের জড়িত থাকার কথা স্বীকার করে আদালতের সামনে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি প্রদান করেছেন।
–
এ প্রসঙ্গে পুরো প্রক্রিয়ায় অন্যতম নেতৃত্বের ভূমিকায় থাকা নরসিংদীর অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. আনোয়ার হোসেন শামীম বলেন, দীর্ঘ দিনের প্রচেষ্টার ধারাবাহিকতা ও তথ্যপ্রযুক্তির সহায়তায় অভিযুক্ত ৩ আসামিকে শনাক্ত ও গ্রেপ্তার করা সম্ভব হয়েছে। গ্রেপ্তারকৃত আসামিদেরকে আদালতের অনুমতি সাপেক্ষে রিমান্ডে এনে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে। এতে অন্য কেউ জড়িত থাকার তথ্য পাওয়া গেলে তাদেরকেও আইনের আওতায় আনা হবে।
প্রিন্ট